নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

...

অর্ক

...

অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেঁচে থাক ‘গোবিন্দা নিরামিষ হিন্দু হোটেল’

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৩



চট্রগ্রাম শহরের সম্ভবত আন্দরকিল্লায়- ওই যেখানে বিরাট মিনারওয়ালা ঐতিহাসিক একটি মসজিদ আছে, সামনে বড়সড় শানবাঁধানো দিঘি। সম্ভবত লাল দিঘি নাম জায়গাটার। ওর কাছাকাছি, কোনও এক সড়কের পাশে গোবিন্দা নিরামিষ হিন্দু হোটেলটির অবস্থান। মূলত ভাতের হোটেল। পাশাপাশি পাউরুটিও পাওয়া যায়, খেতে দেখেছি অনেককে- ডাল সবজি দিয়ে। এইতো। ভাত ও পাউরুটি’র শুদ্ধ নিরামিষ হোটেল। ওখানে নিরামিষের বাইরে, এমনকি ডিমও পাওয়া যায় না। বছর কতক আগে শেষবার যখন চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম, ওই হোটেলেই নিয়মিত খেতাম। ওদের মেনু ছিল ফিক্সড- সকালে সবজি খিচুড়ি, ডাল, সবজি পোলাও, সাদা ভাত, সাদা পাউরুটি, বিভিন্ন তরকারি। দুপুর হতে হতে সবজি খিচুড়ি ও বুটের ডাল শেষ হয়ে যায়। বাকি আইটেমগুলো থাকে। রাতেও মোটামুটি দুপুরবেলার আইটেমগুলোই পাওয়া যায়। এসবের সাথে শুধু বোধহয় বুটের ডাল আবার যোগ হয়। কাউন্টারের পাশে দেয়ালে সাদা বোর্ডে কালো মার্কার কলমে গোটাগোটা হরফে মেনু’র তালিকা মূল্যসহ দেয়া আছে। দেখি চেষ্টা করে, কতোদূর আজকে স্মরণ করতে পারি।

১. সবজি খিচুড়ি (শুধু সকাল)- ৪০ টাকা
২. সবজি বিরিয়ানি (যে কোনও একটি তরকারি সহ)- ৬৫ টাকা
৩. শিমের বিচি- ৩০ টাকা
৪. শসা মুগডাল- ৩০ টাকা
৫. ফুলকপি ভাজি- ২৫ টাকা
৬. সোয়াবিন- ২৫ টাকা
৭. ডাল- ১৫ টাকা
৮. পাঁচমিশালি সবজি- ২০ টাকা

এটুকুই কোনওরকমে মনে করতে পারছি আজ। দুয়েকটির নামে ও দামে নির্ঘাত হেরফের হয়ে থাকবে। সম্ভবত দুয়েকটি আইটেম ভুলেও গেছি। হলরুমের মতো বেশ বড়সড় খোলামেলা হোটেলটি। সবসময় বিস্তর খালি জায়গা পড়েই থাকে। আশেপাশে আরও অনেক হোটেল রয়েছে। ওগুলোর কোনওটাই নিরামিষ হোটেল নয়। আমাদের দেশের হিন্দুরাও, বা আপামর বাঙালি হিন্দু, সে অর্থে নিরামিষভোজীও নয় (যেমনটা ভারতের মহারাষ্ট্রে দেখেছিলাম, নিরামিষ খাবারের জয়জয়কার)। হিন্দু বলে কথা নেই, সকল ধর্ম বর্ণ, গোত্র সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত হোটেলটি- সে তো বলাই বাহুল্য। বেশ কবার দাড়িওয়ালা টুপি পরা ধার্মিক লোকজনকেও তৃপ্তিভরে খেতে দেখেছি ওখানে। এ ধরণের হোটেলের ধারণাটা হিন্দু ধর্ম থেকে এসেছে বিধায় হোটেলের নামে ‘হিন্দু’ উল্লেখকৃত।

যাই হোক ওখানকার খাবার আমার খুব ভালো লাগতো। নিরামিষ বলে এন্তার তেল মসলায় গুরুপাক নয়। আগে যেমন কোনও এক পোস্টে বলেছিলাম, চট্টগ্রামের মানুষ বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের থেকে তরকারিতে তুলনামূলক তেল মসলা অনেকটাই বেশি খেয়ে থাকে। মাছ মাংস হলে তো কথাই নেই- জবজবে তেল, মসলা মাসলিতে সয়লাব! অনভ্যস্ত বিধায় আমার ওগুলো খেতে সমস্যা হতো। ঘাম ছুটতো শরীর দিয়ে। আমার মতো তেল মসলায় অনভ্যস্ত পর্যটক বা বহিরাগতদের দুপুর রাতের ভোজনের জন্য একটি আদর্শ হোটেল এই গোবিন্দা নিরামিষ হিন্দু হোটেল, এর নিরামিষ খাবারগুলো। এগুলো খেতে যেমন মজাদার তেমনি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর। বিশেষ করে ওখানকার শসা দিয়ে মুগডালের তরকারিটা যারপরনাই খেতে সুস্বাদু। এক্কেবারে অমৃত! এটা নিয়মিতই খেতাম। ত্রিশ টাকা দাম। পরে থোড়া না কী যেন বলে আরও দুবার নিতাম। সত্যি, লিখতে যেয়ে জিহ্বায় পানি চলে আসছে। অন্যান্য তরকারিও খেতে সুস্বাদু। যেমন শিমের বিচি, সোয়াবিনও বেশ ভালো লাগতো। অন্যান্যগুলোও ভালো। কিন্তু শসা মুগডালের জাদুকরী স্বাদের কাছে এগুলোর কোনওটাই নয়। ওদের সকালবেলার খিচুড়িটাও বলিহারি। প্রচুর গাজর মটরশুঁটি ও আলুসহ আরও দুয়েকটি সবজি দেয়াতে এর পুষ্টিগুণও উল্লেখযোগ্য। তবে তরকারি দিয়ে খেতে হয়, শুধু খিচুড়ি খেতে ভালো লাগবে না। নিরামিষ খাবারে মানুষের আমিষের চাহিদা- মাছ মাংসের মতো যথাযথভাবে পূরণ হয় না। ‘সোয়াবিন’এ যাই হোক মোটের ওপর ভালো আমিষ পাওয়া যাবে।

একদল মঙ্গোলীয় চেহারার ছোট ছোট শিশু (শিশুই বলবো কারণ সিংহভাগেরই বয়স দশ থেকে বারো’র ভিতর), ওরাই সম্ভবত হোটেলটির বাবুর্চি, ওয়েটার সব। ওদের দুয়েকজন সিনিয়র সহকর্মীও আছে। পিচ্চিগুলোর ব্যবহার খুব ভালো। শুধু ভালো বললেও যথার্থ হবে না, অত্যন্ত ভালো ও বন্ধু বৎস্যল। ওরা বোধহয় হিন্দু ধর্মালম্বী। একজনের নাম ছিল ‘হরি’। ওদের একজনের সঙ্গে আমার চমৎকার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। নাম জানি না। ও খিচুড়ি খানিকটা বাড়িয়েই দিতো আমাকে। খেয়ে পেট একেবারে ভরে যেত, নড়তে চড়তেও সমস্যা হতো। একজনমাত্র প্রবীণ ওয়েটার ছিল হোটেলটায়। তার সাথেও আমার চমৎকার সম্পর্ক ছিল। বেশ কয়েকবার আমার খাবার পরিবেশন করেছিল সে। কিন্তু থোড়া একবারের বেশি দিতে খানিকটা গজগজ করতো যদিও! এদিকে আমি আবার ওদের ওই শসা মুগডালের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম! দুবার থোড়াতেও পরিপূর্ণ তৃপ্তি মিটতে চায় না! ইচ্ছে করে আরও খাই, আরও। সত্যি খাবারটা খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর ঘ্রাণও চমৎকার।

তিন কি চারদিন ছিলাম সেবার চট্টগ্রামে। ওখানেই মূলত খেয়েছি। ওদের সকলের জন্য আমার ভরপুর শুভকামনা। হয়তো জীবনে আর কোনওদিন কারও সাথে দেখা হবে না! গোবিন্দা নিরামিষ হিন্দু হোটেলে খাওয়ার এইসব মধুর স্মৃতি সারা জীবনব্যাপীই আমাকে নিটোল আনন্দ যোগাবে। হোটেলটির জন্যেও শুভকামনা। বেঁচে থাক ‘গোবিন্দা নিরামিষ হিন্দু হোটেল’। চিরজীবী হোক।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৪

অর্ক বলেছেন: দুঃখিত ছবি দেয়া গেল না। সেভাবে তোলাও হয়নি। হোটেলটা এখনও কি সেখানে আছে? চট্টগ্রামের কারও জানা থাকলে মন্তব্যে জানালে খুশি হবো।

ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: জ্বি ভাই, হোটেলটা এখনও এখানেই আছে। তা আপনি কেন এসেছিলেন বললেননাতো। এরপর আসলে আবশ্যই আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৩

অর্ক বলেছেন: বেড়াতেই গিয়েছিলাম। সম্ভবত ২০১৪/১৫ সালে। আমি নতুন শহর ঘুরে বেড়াতে দারুণ ভালবাসি। যোগাযোগ হতে পারে। ধন্যবাদ ও শুভকামনা।

৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭

সৈয়দ তাজুল বলেছেন:
ওখানে গেলে খাওয়ার মত একটা ঠিকানা তো পেলাম। অন্তত বাঙালি খাবারের... ;) :P

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪০

অর্ক বলেছেন: নিশ্চয়ই। বিশেষ করে শসা মুগডালটা ট্রাই করতে ভুলবেন না! ওখানকার খাবার সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর, পরিবেশ খোলামেলা মনোরম, স্টাফরা সবাই ফেরেশতা শিশু। যাই হোক ব্যাপারটা নিশ্চয়ই ভালো নয় যে, পনেরো জনের মতো শিশু স্টাফ ভারি ভারি কাজ করে চলেছে। অথচ তাদের থাকার কথা ছিল স্কুলে।

অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪৩

সৈয়দ তাজুল বলেছেন:
পুঁজিবাদী দেশে শিশুদের এর চেয়ে বড় পাওয়া কী থাকতে পারে?

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৫৫

অর্ক বলেছেন: বিরাট জনসংখ্যার অভিশাপ তো আছেই। এতো ছোট সীমিত সম্পদের দেশ, এতো বিরাট জনসংখ্যা নিয়ে কোনও রাষ্ট্রেরই সুষ্ঠু গঠন সম্ভব নয়! সে যাই হোক বাচ্চাগুলো খুবই ভালো, অত্যন্ত সহজসরল। শিশু মাত্রই ভালো হয়, কিন্তু ওরা যেন আরও ভালো।

৫| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৪৮

শামচুল হক বলেছেন: নিরামিষ হোটেলের চমৎকার বর্ণনা। ধন্যবাদ

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৫৬

অর্ক বলেছেন: আমারও ধন্যবাদ। সাথে শুভকামনা।

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:৫৮

সৈয়দ তাজুল বলেছেন:
শুভকামনা পৌঁছে দিতে আমার সাথে যোগাযোগ রাখবেন। ;)

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:১০

অর্ক বলেছেন: নিশ্চয়ই রাখবো। থাকবেও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.