নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসিফ তানজির

আসিফ তানজির › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্যাড নিউজ

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৯

এসিআই’র
প্রতারণা, হুমকি আর চাপে দিশেহারা হয়ে
অবশেষে নিম ল্যাবরেটরিজের বাকি ২৫
ভাগ শেয়ারও নামমাত্র মূল্যে ছেড়ে দিতে
বাধ্য হলেন গবেষক ড. এমএ হাকিম। শুধু তাই
নয়, এসিআই’র বিরুদ্ধে দেশে উদ্ভাবিত
ব্রান্ড ধ্বংস করার দুরভিসন্ধি নিয়ে নিম
ল্যাবরেটরিজের শেয়ার কেনাসহ
প্রাণনাশের হুমকির যে মামলা
করেছিলেন; চাপে পড়ে সেই মামলাও তুলে
নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
আর এর মধ্যদিয়ে সমূলে ধ্বংস হয়ে গেলো
বিপুল সম্ভাবনাময় একটি দেশীয় শিল্প
প্রতিষ্ঠান। ষড়যন্ত্রমূলক দুরভিসন্ধির
অপঘাতে হেরে গেলেন একজন দেশপ্রেমিক
বিজ্ঞানী।
বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের উদ্ভাবিত পণ্য
ছড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ড.
হাকিমের কাছ থেকে নিম ল্যাবরেটরিজের
৭৫ ভাগ শেয়ার নিয়েছিলো এসিআই। কিন্তু
সেই স্বপ্নের অপমৃত্যু নিশ্চিত করে এবার
দাফন সম্পন্ন করলো নামমাত্রমূল্যে বাকি
২৫ ভাগ শেয়ার কিনে নিয়ে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক
পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে উদ্ভাবিত ও
প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ড ধ্বংস করে বিদেশি
ব্রান্ডের একই শ্রেণির পণ্যের বাজার
সম্প্রসারণের কূটকৌশলে ড. হাকিম যতটা
না ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার চেয়েও বেশি
হয়েছে দেশ।
ড. হাকিমের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত অন্তত
তিনটি মামলা দায়ের করেছে এসিআই।
প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে তাকে।
যে কারণে বেশ কিছুকাল দেশে বিদেশে
পালিয়েও বেড়িয়েছেন এই বিজ্ঞানী।
অবশেষে প্রাণনাশের হুমকি আর এসিআই’র
দায়ের করা একের পর এক হয়রাণিমূলক
মামলা থেকে রেহাই পেতে বাকি ২৫ ভাগ
শেয়ার বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিয়েছেন
তিনি।
গত ২৯ অক্টোবর পাঠানো
এক চিঠিতে ড. হাকিম জানিয়েছেন, “গত
২৬ নভেম্বর, ২০১৩ ইং তারিখে আমার ও
এসিআই ফরমুলেশনস লিঃ এর মধ্যে
স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে
নিম ল্যাবরেটরিজ (প্রাঃ) লিঃ ও তার
অন্য অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ৭৫%
শেয়ার এসিআই ফরমুলেশনস লিঃ বরাবর
হস্তান্তর করি যা পরবর্তীতে ২৬
ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ইং তারিখে রেজিস্ট্রার
অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এর বিধি
অনুযায়ী রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক
কোম্পানিজ উক্ত শেয়ার হস্তান্তর
অনুমোদন করেন।”
“অতঃপর গত ১২ মে, ২০১৫ ইং তারিখে আমার
ও এসিআই ফরমুলেশনস লিঃ এর মধ্যে
স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে
নিম ল্যাবরেটরিজ (প্রাঃ) লিঃ ও তার
অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের অবশিষ্ট ২৫% শেয়ার
এসিআই ফরমুলেশনস লিঃ বরাবর হস্তান্তর
করি যা বিগত ৪ জুন, ২০১৫ ইং তারিখে
রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ
অনুমোদন করেন।”
“অতএব, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত ও
স্বনামধন্য এসিআই লিঃ এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
এসিআই ফরমুলেশনস লিঃ নিম
ল্যাবরেটরিজ (প্রাঃ) লিঃ ও তার
অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সমূহের শতভাগ মালিক
বটে।”
অথচ এই নিম ল্যাবরেটরিজকে বাঁচানোর
জন্য দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিয়েছিলেন।
খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আকুতি
জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ড. হকিম।
“এসিআই ফরমুলেশনস লিমিটেড কর্তৃক
দেশীয় প্রযুক্তি ও পণ্য ধ্বংস করে বিদেশি
পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে
দুর্নীতি ও দেশের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির
বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন”
শিরোনামে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া সেই
চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন- “মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী, আমি একজন জৈব প্রযুক্তি
বিষয়ক গবেষক এবং দীর্ঘ্য ৩০ বছর যাবৎ
নিম ও অন্যান্য দেশীয় ভেষজ নিয়ে
গবেষণারত আছি। আমার দীর্ঘ দিনের
গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছে
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা
পরিষদ (বিসিএসআইআর), বাংলাদেশ কৃষি
বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ চা গবেষণা
ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)সহ অন্যান্য
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। গবেষণায় উদ্ভাবিত
প্রাকৃতিক প্রসাধনী, হারবাল মেডিসিন,
জৈব সার ও জৈব কীটনাশক নিরাপদ
স্বাস্থ্য পরিচর্যা, জৈব কৃষি উৎপাদন এবং
পরিবেশ রক্ষায় ব্যবহৃত হচ্ছে দীর্ঘ দিন।
এই প্রযুক্তির সম্প্রসারণের জন্য এবং
উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণের
জন্য প্রতিষ্ঠা করেছি বাংলাদেশ নিম
ফাউন্ডেশন এবং নিম ল্যাবরেটরীজ
(প্রাঃ) লিঃ। নিম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে
সমগ্র দেশে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি
প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে
বিগত বিশ বছরে প্রায় এক কোটি নিম গাছ
লাগানো হয়েছে। যা থেকে প্রচুর দেশীয়
শিল্প সামগ্রীর কাঁচা মাল সংগ্রহ ছাড়াও
পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে।
আমার এই কর্মের স্বীকৃতি স্বরূপ আমাকে
দেয়া হয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন
পদক ও রোটারী ইন্টারন্যাশনাল পদক।
নিম থেকে উদ্ভাবিত দ্রব্য সামগ্রী নিম টুথ
পেস্ট, সাবান, টুথ পাউডার, শ্যাম্পু, ফেস
ওয়াশ, নিম জৈব কীটনাশক ও সার
বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর সকল বিপনন
কেন্দ্র, সিএসডি, আড়ং, আগোরা, স্বপ্ন,
নন্দন ও এসএস মার্ট ছাড়াও দেশের বৃহৎ ও
স্বনামধন্য বিপনী কেন্দ্রে বিক্রয় হতো।
দেশের বাজার ছাড়াও নিম টুথপেস্ট, নিম
সাবান, নিমের জৈব কীটনাশক সীমিত
আকারে জাপানেও রপ্তানী হতো। নিমের
এসব প্রসাধনী বিএসটিআই কর্তৃক
বাজারজাতকরণের জন্যও লাইসেন্সপ্রাপ্ত
এবং বিসিএসআইআর কর্তৃক পরিক্ষীত।
নিমের টুথপেস্ট ও সাবান মালয়েশিয়ার
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক
বাজারজাতকরণের জন্যও লাইসেন্সপ্রাপ্ত।
আমি একজন গবেষক হিসেবে ব্যাপক
অর্থশালী না হওয়ার কারণে এসব পণ্য
সামগ্রী ব্যাপক হারে বাজার সম্প্রসারণ
করতে পারছিলাম না। এমতাবস্থায় এসিআই
ফর্মুলেশনস লিঃ এর মালিকানাধীন বৃহৎ
আউটলেট স্বপ্নে বাজারজাতকরণের সময়
এসিআই লিঃ এর কর্ণধার আনিস উদ-দৌলা
আমাকে ডেকে নিয়ে জানতে চান কেন
আমি ব্যাপকভাবে বাজারজাতকরণ
করছিনা। আমি তাকে অবহিত করি যে,
‘আমি একজন গবেষক, সফল ব্যবসায়ী নই,
আমার কোন ভাল সহযোগী নেই এবং
ব্যাপকহারে বাজারজাতকরণের জন্য
পর্যাপ্ত অর্থ নেই।’ তিনি আমাকে এসিআই
ফর্মুলেশনসের এর কাছে প্রথমে ৫১ ভাগ
এবং একপর্যায়ে ৭৫ ভাগ শেয়ার
হস্তাস্তরের প্রস্তাব দেন। আমাকে কোন
ব্যবস্থাপনায় না থেকে গবেষণা ও উন্নয়ন
কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকার প্রস্তাব
দেন এবং বিনিময়ে আমি প্রচুর অর্থ পাব
বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি। আমি সরল
বিশ্বাসে, ব্যাপকভাবে আমার উদ্ভাবিত
প্রযুক্তি দেশে-বিদেশে সম্প্রসারণের
লক্ষ্যে এবং পর্যাপ্ত অর্থপ্রাপ্তির আশায়
এসিআই ফর্মূলেশন্স লিঃ এর কাছে নামে
মাত্র মূল্যে ৭৫% শেয়ার হস্তান্তর করি।
হস্তান্তরের পর ব্যাপকহারে উৎপাদনের
লক্ষ্যে আমার থেকে উদ্ভাবিত ৩২
(বত্রিশ)টি ফর্মূলেশন্সসহ প্রয়োজনীয়
উৎপাদন পদ্ধতি ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে
নেন এবং আমার আওতাধীন অফিস এসিআই
ফর্মূলেশন্স লিঃ অফিসে এবং ফ্যাক্টরী
এসিআই এর শিল্প কারখানা রাজেন্দ্রপুরে
নিয়ে যান। আমার থেকে ব্যবস্থাপনা
নিয়ে নেন। আমাকে পরিচালকের পদ থেকে
পদত্যাগ করান এবং কনসালটেন্ট নিয়োগ
দিয়ে উৎপাদন সমন্বয়, গুণগতমান রক্ষা এবং
নতুন দ্রব্য সামগ্রী উদ্ভাবনের দায়িত্ব
দেন। আমাকে আমার গবেষণা কর্ম চালিয়ে
যাওয়ার এবং উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ডে
সম্পৃক্ত থাকা ও সহযোগিতারও আশ্বাস
দেন নিয়োগপত্রে।
শেয়ার হস্তাস্তর, পরিচালকের পদ থেকে
পদত্যাগ, আমার উদ্ভাবিত ফর্মূলেশন্স
হস্তান্তর, আওতাধীন অফিস ও ফ্যাক্টরী
সরিয়ে নেয়ার পর নানা রকম ছলচাতুরী শুরু
করে। তার সাথে দেখা করতে চাইলে
অস্বীকৃতি জানান। আমাকে নিয়োগ
দিয়েও অফিস এবং ফ্যাক্টরীর কাজকর্ম
থেকে নানা কূট-কৌশলে বিরত রাখে।
চুক্তি অনুযায়ী চলতি মূলধন যেটা তারা
কোম্পানির তহবিলে জমা দেয়ার কথা
তাও দেয়নি।
উল্লেখ্য যে, ২৬/১১/২০১৩ ইং তারিখে
সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় আমাকে
নিয়োগ দেয়ার শর্ত হিসেবে আমার
অধীনস্থ অন্যান্য কোম্পানী বিলুপ্ত করার
প্রতিশ্রুতি ছাড়াও আমি যেহেতু
কোম্পানীর ২৫% শেয়ার হোল্ডার এবং
গবেষণা ও উন্নয়ন বিষয়ক কনসালটেন্ট, তাই
অনুরূপ কোন ব্যবসার সঙ্গে চুক্তির তারিখ
থেকে ৫ বছর জড়িত হতে পারবোনা বলেও
প্রতিশ্রুতি নেন।”
ড. হাকিম তার চিঠিতে আরো বলেন, “আমি
সরল বিশ্বাসে এবং দেশীয় ব্যাপক
সম্ভাবনাময় প্রযুক্তি দেশে বিদেশে
সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তার দেয়া সব শর্ত
মেনে নেই। আমার থেকে প্রযুক্তি,
যন্ত্রপাতি ও সমুদয় গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র
নেয়ার পর দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময়
তিলে-তিলে এই শিল্প কারখানা ও
প্রযুক্তি ধবংস করে ফেলছেন। ব্যাপক
চাহিদা সম্পন্ন এবং বিএসটিআই কর্তৃক
অনুমোদিত ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত পণ্য নিম
টুথপেস্ট, টুথপাউডার ও শ্যাম্পু উৎপাদন
বিনা কারণে বন্ধ রেখে প্রতিষ্ঠিত ব্রান্ড
ধ্বংস করে ফেলেছে। এই সময়ে তার
কোম্পানী অনুরূপ পণ্য বিদেশ থেকে ব্যাপক
হারে আমদানী করে বিক্রয় করছে। শতভাগ
দেশীয় প্রযুক্তি ও কাঁচামালে উৎপাদিত
আন্তর্জাতিক মানের পণ্য সামগ্রী উৎপাদন
কূট-কৌশলে বন্ধ রেখে অনুরূপ বিদেশী পণ্য
আমদানী করার কারণে দেশের ব্যাপক
বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে
এবং দেশীয় পণ্য উৎপাদন বন্ধ রাখায়
জাপান ও মালয়েশিয়ায় বাজারজাতকরণের
লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও দেশী পণ্য
রপ্তানীর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়
থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে যা
দেশদ্রোহিতার শামিল। আমি নোটিসে
তাকে অবহিত করলে আমাকে মানহানি,
দেওয়ানী ও ফৌজদারী মামলায় জড়িয়ে
এবং গুন্ডাপান্ডা দিয়ে জীবন নাশের
হুমকি দিচ্ছে। তাঁর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে
দেশীয় প্রযুক্তি ধ্বংস হয়ে বিদেশী পণ্যের
বাজার সম্প্রসারণের কারণে দেশের অর্থ
বিদেশে চলে যাচ্ছে যা চরম দুর্নীতির
শামিল। এ ছাড়াও তাঁর এই অনৈতিক
কর্মকাণ্ডে রাষ্ট্র প্রচূর রাজস্ব থেকে
বঞ্চিত হচ্ছে। অতএব, দেশীয় শিল্প ধ্বংস
করে বিদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ,
উদ্ভাবকের কাছ থেকে ফর্মূলা নিয়ে তার
সঙ্গে প্রতারণা, তাকে আর্থিকভাবে পঙ্গু,
সামাজিকভাবে হেয় এবং সর্বোপরি
জীবননাশের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দ্রুত
তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দেশীয়
প্রযুক্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং দেশে
বিদেশে ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন প্রাকৃতিক
পণ্য সামগ্রী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান নিম
ল্যাবরেটরীজ (প্রাঃ) লিঃ নামক
কোম্পানীটি রক্ষা করতে সদয় আজ্ঞা হন।”
প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া এই চিঠির
অনুলিপি অর্থমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী,
বাণিজ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, এনবিআর
চেয়ারম্যানসহ দুদক চেয়ারম্যানের দফতরেও
পাঠান ড. হাকিম। চিঠির বর্ণনাতেই
বোঝা যায়, দেশে উদ্ভাবিত ব্যাপক
সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে রক্ষা করতে
কোনোভাবেই দমে যেতে চাননি ড.
হাকিম। তিনি চেয়েছিলেন, যেভাবেই
হোক শতভাগ দেশীয় ফর্মুলা, প্রযুক্তি ও
কাঁচামালে দেশেই অব্যাহত থাকুক
আন্তর্জাতিক মানের এই পণ্য উৎপাদন।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও
রপ্তানি করে আয় হোক বিপুল বৈদেশিক
মুদ্রা। তিনি চেয়েছিলেন
আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হোক নিম
ল্যাবরেটিজ। তার উদ্ভাবিত ফর্মুলা।
তিনি কখনোই চাননি শুধুমাত্র নিজে
লাভবান হওয়ার শর্তে বন্ধ হয়ে যাক নিম
ল্যাবরেটরিজের উৎপাদন। তাহলে শুরুতেই
এসিআই’র কাছ থেকে বিপুল অর্থ নিয়ে
শতভাগ শেয়ারই বিক্রি করে দিতে
পারতেন ড. হাকিম।
সে কারণে এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন
জাগে এতদিনে এত কিছুর পরেও
দেশপ্রেমিক যে উদ্ভাবক দমে যাননি; এখন
কতটা চাপে পড়ে তিনি নামমাত্র মূল্যে
এসিআইকে নিম ল্যাবটেরিজের পুরো সত্ত্ব
ছেড়ে দিয়েছেন?
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিটি
লিখেন ড. হাকিম ২০১৪ সালের ৪ ডিসেম্বর।
এর আগে কয়েক দফায় এসিআই চেয়ারম্যান
বরাবর চিঠি লিখেন তিনি। এসিআই
চেয়ারম্যানকে সর্বশেষ চিঠিটি দেন ড.
এমএ হাকিম ১৭ জুলাই, ২০১৪। এই চিটিতে ড.
হাকিম লিখেন, “উল্লেখিত সূত্রের পত্র ও ই-
মেইল এর ধারাবাহিকতায় আপনাকে
জানাচ্ছি যে, সরকারি-বেসরকারি ও
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘ দুই
যুগের গবেষণায় উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে
তৈরি দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড
নিম ও এ্যালোভেরার পণ্য সামগ্রী
সারাদেশে ব্যাপকহারে উৎপাদনের
মাধ্যমে বাজারজাতকরণের জন্য গত
অক্টোবর, ২০১৩ সালে নিম্ন স্বাক্ষরকারী
৭৫% শেয়ার এসিআই ফর্মুলেশনস এর কাছে
নামমাত্র মূল্যে বিক্রয় করেছে শুধুমাত্র
ব্যাপকভাবে বাজারজাতকরণে লাভের
আশায়।”
“দুর্ভাগ্যজনক হলো, বিগত ৯ মাস
অতিবাহিত হলেও উৎপাদন ও বাজারজাত
তো দূরের কথা ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন ও
দেশের সুনামধন্য বিপনন কেন্দ্রে
বাজারজাতকৃত এবং দের্শে একমাত্র মান
নিয়ন্ত্রণকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠানে বিপুল
অংকের রেভিনিউ দিয়ে সিএম লাইসেন্স
প্রাপ্ত যা ২০১৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ আছে এ
সকল পণ্য যেমন- (১) নিম টুথ পেস্ট (২) নিম
টুথ পাউডার (৩) নিম শ্যাম্পু পর্যন্ত উৎপাদন
ও বাজারজাতকরণ বিনা নোটিশে ও বিনা
কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে যা অত্যন্ত
অনভিপ্রেত। এ বিষয়ে আপনাকে বার বার
অনুরোধ করা হলেও আপনি কোনরূপ ব্যবস্থা
না নেয়া বা সন্তোষজনক জবাব দেয়ার
প্রয়োজনবোধ করেন নাই। সার্বিক অবস্থা
বিবেচনা করে এবং তথ্যানুসন্ধানে নিম্ন
স্বাক্ষরকারীর কাছে প্রতীয়মান হয়েছে
যে, সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার
মাধ্যমে দেশীয় উদ্ভাবিত ও প্রতিষ্ঠিত
একটি ব্র্যান্ড ধ্বংস করে বিদেশী
ব্র্যান্ডের একই শ্রেণীর পণ্যের বাজার
সম্প্রসারণের জন্য দুরভিসন্ধিমূলকভাবে
আপনি ৭৫% শেয়ার কিনে নিয়ে এই
অনৈতিক ও দেশের স্বার্থবিরোধী কাজটি
করছেন।”
“এতএব আপনাকে এই মর্মে শেষবারের মতো
অনুরোধ করা যাচ্ছে যে, আগামী ৩০ জুলাই,
২০১৪ তারিখের মধ্যে যদি উল্লেখিত
পণ্যসমূহসহ শেয়ার হস্তান্তরকালীন যে সকল
পণ্য উৎপাদিত ও বাজারজাত হতো তা যদি
উৎপাদন ও বাজারজাত না করেন তবে নিম্ন
স্বাক্ষরকারী আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও
ক্ষতিপূরণের আইনগত ব্যবস্থা ছাড়াও
দেশের স্বার্থ বিরোধী, অর্থনৈতিক ক্ষতি,
বিদেশী পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের
নিমিত্তে দেশীয় পণ্য ধ্বংস সহ আপনার
অনৈতিক এই কর্মকাণ্ডের জন্য সশ্লিষ্ট
সরকারি, বে-সরকারি ও ব্যবসায়ী
সংগঠনের কাছে নালিশ দায়ের এবং নিম্ন
স্বাক্ষরকারীর উদ্ভাবিত পণ্য ও ব্র্যান্ড
রক্ষার স্বার্থে প্রয়োজনীয় সকল বিকল্প
পন্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।”
ড হাকিম একই দিনে এই চিঠির কপি
শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীসহ
বিভিন্নজনকে দেন।
এসিআই’র প্রতারণা, দুর্নীতি ও দেশীয়
শিল্প ধ্বংসের তথ্যসমূহ মন্ত্রীদের কাছে
তুলে ধরার অপরাধে ড. হাকিমের বিরুদ্ধে
সিএমএম আদালতে ১৫০ কোটি টাকার
মানহানির মামলা করে এসিআই। এছাড়া
একই সময়ে যুগ্ম জেলা জজ আদালতেও একই
কারণ দেখিয়ে পৃথক একটি মানহানির
মামলা করে। এই মামলায়ও ১৫০ কোটি
টাকা মানহানির অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় ড. হাকিমের বিরুদ্ধে এই মর্মে
অভিযোগ আনা হয় যে, মন্ত্রীদের কাছে
চিঠি লেখা এবং চিঠিতে বিস্তারিত তথ্য
তুলে ধরার কারণে এসিআই’র মর্যাদা ক্ষুণ্ন
হয়েছে। মামলা দিয়ে হয়রানি ছাড়াও ড.
হাকিমকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি,
সন্ত্রাসী পাঠিয়ে প্রাণনাশের হুমকিও
দেয়া হয়। প্রাণনাশের হুমকি প্রসঙ্গে ড.
হাকিম থানায় জিডি করেন এবং পরে
মামলাও দায়ের করেন সিএমএম আদালতে।
প্রতারণার মাধ্যমে দেশীয় প্রতিষ্ঠান
ধ্বংসের বিষয়ে শীর্ষ নিউজ ডটকম গত
বছরের ১৪ ডিসেম্বর ‘ফর্মূলা হাতিয়ে নিয়ে
প্রতারণায় এসিআই’ শিরোনামে একটি
প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ড. হাকিম শীর্ষ
নিউজের এ প্রতিবেদটি তার ফেইসবুকে
শেয়ার করেন। শুধু এই অপরাধে ড. হাকিমের
বিরুদ্ধে পরবর্তীতে আইসিটি এ্যাক্টের ৫৭
ধারায় মামলাও করে এসিআই। এই সময় ড.
হাকিমকে বেশ কিছু দিন এসিআই’র
লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীদের ভয়ে
পালিয়েও থাকতে হয়েছে। অবশেষে তিনি
বাধ্য হন এসিআই’র কথা অনুযায়ী তাদের
হাতে পুরো কোম্পানির মালিকানা
অর্থাৎ বাকি ২৫ ভাগ শেয়ারও নামমাত্র
মূল্যে ছেড়ে দিতে। এভাবেই একটি স্বপ্ন
বাস্তবায়নের মাঝ পথে মৃত্যু ঘটেছে। যে
স্বপ্নটি ড. হাকিম শুধু নিজেকে নিয়ে নয়,
গোটা জাতিকে নিয়ে দেখেছিলেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.