নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিড়াল-ইঁদুরে বন্ধুত্ব!

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫

বিড়ালের সাথে ইঁদুরের বন্ধুত্ব! এমন কথা কি কেউ কোনোদিন কল্পনা করেছে? অথচ তা-ই হলো। নির্জলা বন্ধুত্ব হয়ে গেল। বিড়াল-ইঁদুর বন্ধুত্ব।
বিড়াল ছেলে-পেলে নিয়ে বেড়াতে যায় ইঁদুরের বাসায়। আবার ইঁদুরও ছেলে-পেলে নিয়ে বেড়ায় বিড়ালের বাসায়। তাদের আসা-যাওয়াটা বেশ আড়ম্বরের সাথেই হয়। একেবারে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের মতো।
ভূঁইয়া বাড়িতে থাকে বিড়াল আর ইঁদুর। দুই ভাইয়ের দুই সীমানা। এক ভাইয়ের গোলা ঘরে থাকে ইঁদুর আরেক ভাইয়ের বাড়িতে থাকে বিড়াল।
বিড়াল ইঁদুর একত্র হয়ে নানান সুখ-দুখের কথা বলে।
বিড়াল বলে- গিরস্থের বাড়িতে আমরা আরামেই আছি ইঁদুর ভাই। দিন রাত দিব্যি ঘুরে বেড়াই। বাড়ির লোকজন আমাদের বেশ আদর সোহাগ করে। ক্ষুধা লাগলে মিঁউ মিঁউ করি। তাতেও কাজ না হলে গলা বাগিয়ে মি-ঞা-ও, মি-ঞা-ও করে অস্থির করে তুলি। তখন কিছু না দিয়ে আর স্বস্তি পায় না গিরস্থ মশাই। সবার সব খাবারে ভাগ বসাই। কেউ একটু রাগ দেখালে গাল ফুলাই, খামচি দেই। আবার শোবার সময় নরম বিছানা না দিলে লেপের ভেতর মাথাটা কোনোমতে ঢুকিয়ে দেই। তারপর ছোট্ট বাচচাদের সাথে আরাম করে ঘুমাই। ঘুমের সময় গুড়গুড় আওয়াজ তুলি। যত আরাম তত গুড়গুড়ি। আমরা ছোটদের সাথে খাতির করি বেশি। ওরা যা খায় আমাদেরও তাই খেতে দেয়। সুতরাং নো টেনশন।
বিড়ালের এতসব আরাম আয়েশ আর সুখ-শন্তিরি কথা শুনে তো ইঁদুরের চোখা মুখখানা আরো চোখা হয়ে গেল। ইঁদুর বেজার মুখে বড় দুঃখে বল্ল, দেখ্ ভাই বিড়াল, আমাদের আবার এতসব সুখ-সুবিধা নেই। প্রতিদিন রীতিমত যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। ঘরে-বাইরে আমাদের অসংখ্য শত্রু। এত শত্রুর ভেতরেও খাই-দাই, চলি-ফিরি। বাচচা-কাচচা নিয়ে বড় ভয়-ভীতির মধ্যে দিন কাটাই। কঠোর গোপনীয়তা ও সতর্কতার মধ্যে আমাদের চলা ফেরা ও খানা-খাদ্য যোগাড়যন্ত করতে হয়। প্রতিদিন প্রতিটি মুহূর্ত চরম নিরাপত্তাহীনতার মাঝে থাকি। গিরস্থের সাথে আমাদের মান অভিমান, রাগ গোস্যা করার কোনো স¤পর্কই নেই; একেবারে দা-কুমড়া স¤পর্ক। গিরস্থ আমাদের মারার জন্য যা যা করার দরকার তাই করে রেখেছে। বাড়িতে ফাঁদ পেতে রেখেছে, শিকারী কুকুর এনে লালন-পালন করছে। আর তোমরা আমাদের বন্ধু না হলে এখানে টিকে থাকতাম কি না সন্দেহ। আমরা মাত্র কুড়ি বাইশ জন। আমাদের এক মাসের খাবার একটা কুকুর একবারেই খেয়ে সাবাড় করে ফেলে। অথচ কুকুর এনে পুষছে। গিরস্থের লাভ-ক্ষতির কোনো হিসাব বুঝলাম না ভাই।
কুকুরটা সারাদিন খাওয়া-দাওয়া করছে এতে গিরস্থের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ছোট্ট দানা নিয়ে পলায়নপর কোনো ইঁদুর যদি বা কারো নজরে পড়ে তো আর রক্ষা নেই; বাড়িশুদ্ধ শুরু হয়ে যায় তিলিছমাতি কারবার। ওরা সবাই আয় মিমি, আয় আয় বলে বিড়াল ডাকে। আয় আয় কুত কুত, ধর ধর বলে কুকুর লেলিয়ে দেয়। তারপর যে লঙ্কাকান্ড শুরু হয় তা অবর্ণনীয়। আমাদের মত ছোট্ট প্রাণী ইঁদুরের জীবন রক্ষা করা কতটা কঠিন হয়ে পড়ে তখন! কত ঝুঁকিপূর্ণ জীবন আমাদের!
দিনের বেলা বন্ধুর বাড়ি যাওয়া-আসায় বিড়ম্বনা হলেও রাতের বেলা এরা দিব্যি যাতায়াত করে। সুতরাং রাতে এরা প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ করে। তখন কথা-বার্তা, কুশল বিনিময় ও আদর-আপ্যায়ন হয়। বিড়ালের ছানার সাথে ইঁদুর ছানাদের বেজায় খাতির। প্রায়ই এরা এখানে সেখানে খেলাধুলায় মেতে উঠে।
একদিন দুই ভাইয়ের মধ্যে বাড়ির সীমানা নিয়ে প্রচন্ড গন্ডগোল বেধে গেল। এদের মধ্যে প্রথমে গালাগালি পরে হাতাহাতি হয়ে গেল। অনেক ক্ষতির পর দুই ভাই কিরা-কসম কেটে বল্ল, কেউ কারো মুখ দেখবে না কখনো। দুই সীমানার মাঝখানে শক্ত বেড়া পড়ল। ইঁদুর বিড়াল তো দূরের কথা পোকা মাকড়েরও যাতায়াত করার যো নেই।
শক্ত বেড়ার আড়ালে বেশ ভালই আছে দু‘ভাইয়ের পরিবার। কারো সাথে কারো কথা নেই, দেখা নেই। প্রচন্ড আক্রোশে ও জোশের সাথে চলছে তারা। মনের ভেতরে সামান্যতম অনুতাপ অনুশোচনাও দেখা গেল না।
ইঁদুর বিড়ালের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়ে গেল। তিন দিন হয়ে গেল কারো সাথে দেখা নেই, কথা নেই। তারা চুপি চুপি বেড়ার কাছে এসে সামান্য কুশল বিনিময়ের পর চুপ করে চলে যায়। এভাবে চল্ল কয়েকদিন। কিন্তু বিষয়টা আর গোপন রইল না। জানাজানি হয়ে গেল। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে আবারো একচোট বাকযুদ্ধ লেগে গেল। এক ভাই বলছে, “তোর বাড়ির বিলাই কোন সাহসে আমার বাড়িতে চুপি দেয় রে? আরেক ভাই বলছে, “তোর বাড়ির ইঁন্দুর চোরের মত উঁকি মারে কেন রে আমার বাড়িতে?“ আরেকদিন যদি দেখি তবে তোর বাড়ির নচছার ইঁন্দুরের হাড্ডিগুড্ডি ছাতু বানাইয়া ফালামু, কইয়া দিলাম।“ এসব ভয়ানক কথা শুনে ইঁদুর আর বিড়ালের হৃৎক¤পন শুরু হয়ে গেল।
সপ্তাখানেক পর বেড়ার ফাঁক গলে ইঁদুরের সাথে বিড়ালকে কথা বলতে দেখল এক ভাই। আর যায় কোথায়, রাগে-ক্ষোভে শক্ত বেন্দা হাতে বিড়াল মারতে বেরিয়ে গেল সে। আরেক ভাই ওসব দেখে এর চেয়ে দ্বিগুণ ত্যাজে লাঠি-সোঠা নিয়ে ইঁদুরের ওপর গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল। ওরা দুই ভাই সব শক্তি দিয়ে ছোট্ট প্রাণীগুলোকে মারতে গেল। সারা বাড়ি দৌড়-ঝাপ করে দুই ভাই পিটিয়ে একটা বিড়াল ও একটা ইঁদুর মারল। তারপর এরা উঠোনে এসে দাঁড়িয়ে হাপাতে লাগল।
তাদের বৃদ্ধা মা মৃত বিড়াল ও ইঁদুর নিয়ে এসে উঠোনে রাখলেন। পলায়নপর বিড়াল ও ইঁদুরেরা জীবনের মায়া ছেড়ে দল বেধে চলে এলো উঠোনে। মৃত বিড়াল ও ইঁদুরকে ঘিরে তাদের গা চাটতে লাগল। পর®পর দুই শক্রুজাত প্রাণী একত্রে চিঁউ চিঁউ, মিঁউ মিঁউ করে শোক প্রকাশ করতে লাগল। তারা কান্না শুর করে দিল। এদের চোখের জল গড়িয়ে মাটিতে পড়ল।
তাদের অশিতিপর মা আফছুছ করে বল্লেন, ”আমি দুইডা পোলা না পাইল্লা যদি বিলাই আর ইন্দুর পালতাম তাইলেই ভাল আছিল, শেষ বয়সে কারণে-অকারণে এদের মইধ্যে এমুন মারামারি দেকতে অইত না। দুই জাতশক্রু বিলাই আর ইন্দুর শত্রুতা ভুইল্লা একত্রে মিলমিশ কইরা চলতে পারে আর আমার দুই পোলা কথায় কথায় লাডি বেন্দা লইয়া একটার মুন্ডু আরেকটায় ফাডাইতে যায়। আমি যে কেরে এমুন জানোয়ার দুইডারে পেডে লইছিলাম রে আল্লা!”
বৃদ্ধার আহাজারি শুনে ক্লান্ত-শ্রান্ত দুই ভাই আড় চোখে পর®পর অনুতাপের দৃষ্টি বিনিময় করল। তারপর হঠাত আবেগে আপ্লুত হয়ে দুই ভাই পর®পরকে বুকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কান্না জুড়ে দিল। এক ভাইযৈর অশ্রুজল আরেক ভাইয়ের পীঠ গড়িয়ে পড়ল।
বৃদ্ধা মা আনন্দাশ্রু আঁচলে মুছতে মুছতে ঘরে চলে গেলেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

আলম দীপ্র বলেছেন: বাহ ! সুন্দর ভাবনা আপনার ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.