নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাদুর ঘুড়ি ও আকাশছোঁয়ার গল্প

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৪




‘ঘুড়িখেলা প্রতিযোগিতা’ হবে। খবরটা মাকে বলার জন্য লাটাই-ঘুড়ি নিয়ে বাড়ির দিকে উর্দ্ধশ্বাসে ছুটে চলেছে পাচু। চলার পথে তার চঞ্চল পায়ের আঘাতে পথের ঢেলা, ধুলো আর শুকনো গোবর চারদিকে ব্যঙের মতো লাফিয়ে পালাতে লাগলো।

এগারো বছরের পাচু “ঘুড়িবাজ পাচু” নামে এলাকায় পরিচিত।
পাচু ঘুড়িকে এমন ভাবে বশ মানিয়েছে যে তার ঘুড়িখেলা দেখে এলাকার লোকেরা বলাবলি করে, ‘পাচুর ঘুড়ি যাদু জানে। তার ঘুড়ি শুধু সুতার টানে হাওয়ায় ওড়ে না; ঘুড়ি খেলা করে পাচুর কথায়।’

দুই.
পাচু এক হাতে ঘুড়ি আরেক হাতে লাটাই নিয়ে ছুটে চলে এসেছে সমুদ্র সৈকতে। বিদেশি একটি প্রতিষ্ঠান “ঘুড়িখেলা প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করেছে। দেশ-বিদেশের অসংখ্য নামি-দামী মানুষের পদচারণায় মুখরিত সমুদ্র সৈকত। আর আকাশে অসংখ্য ঘুড়ির আনন্দমেলা।

সমুদ্রপাড়ে এসে পাচুর আনন্দ উবে গেলো। এখানে দেশি-বিদেশি নামী-দামি মানুষের ভিড়। সে তার দুই টাকার ঘুড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই প্রতিযোগিতায় কি সে ঘুড়িখেলা দেখাতে পারবে!

খেলা প্রায় শেষের দিকে। পাচু তার ঘুড়িটা এক হাতে বুকে চেপে ধরে আরেক হাতে লাটাই নিয়ে সোজা চলে গেলো আয়োজকদের কাছে। সে বলল, ‘স্যার আমি ঘুড়িখেলা দেখাবো।’ আয়োজকদের একজন ময়লা জামা পরা ছোট পাচুর আপাদমস্তক দেখে একটু অবহেলা করেই বলল, ‘তুমি দেখাবে ঘুড়িখেলা? হাঃ হাঃ হাঃ।’
পাচু দমলো না। সে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘জ্বী স্যার। আমার ঘুড়ি অনেক খেলা জানে। অনুমতি দেন। আমি এখনই খেলা দেখাই।’ আয়োজকরা প্রতিযোগী হিসেবে পাচুর নাম খাতায় তুলল এবং বলল, ‘দেখাও দিখি তোমার ঘুড়িখেলা।’

তিন.
পাচু তার দক্ষহাতে ঘুড়িটা সামনে ছুড়ে মেরেই হাতের লাটাইটা মেসিনের মতো খলখল শব্দে ঘোরাতে লাগলো। দেখতে দেখতে তার ঘুড়িটা এঁকেবেঁকে হঠাৎ উপরে উঠে গেলো। সমুদ্রসৈকতের বালিতে পাচুর ছোট দুটি পা ঘুড়ির সাথে তোলপাড় করছে। আকাশের ঘুড়িটা পাচুর লাটাইয়ের খলখল শব্দের সাথে খেলা দেখাচ্ছে।
পাচু মুখে শিশ মেরে কি যেন একটা ইঙ্গিত করতেই তার ঘুড়িটা উপর থেকে গোত্তা খেয়ে চলে আসে নিচে ঠিক মাটির কাছাকাছি। আবার পাক খেতে খেতে উঠে যায় উপরে। পাচুর লাটাই চালানোর কারুকার্য দেখে সবাই অবাক। আকাশে পাচুর ঘুড়ির খেলা আর মাটিতে পাচু ও তার লাটাইয়ের নৃত্য এমন এক ছন্দ-তাল তুলেছে যে সৈকতের শত শত মানুষের চোখ পড়ল গিয়ে পাচুর ঘুড়িখেলার দিকে। রীতিমতো ভীড় জমে গেলো।

সবশেষে আয়োজকরা বলল, ‘ঘুড়িটা সোজা উপরে তুলে সোজা পথে নামাতে পারবে পাচু?’
“এইটা কোন ব্যাপারই না স্যার, দেখেন ক্যামনে নামাই।” বলল পাচু।

সে অদ্ভুত ভঙ্গিতে লাটাই চালাতে লাগলো। চোখের পলকে তার ঘুড়িটা পনপন করে একদম সোজা উপরে উঠে গেলো। আয়োজকরা উপরের দিকে হা-করে তাকিয়ে বলে, “ওয়াও!”
পাচু লাটাইটা এমনভাবে ঘোরাতে লাগলো যে, তার ঘুড়িটা ঠিক হেলিকপ্টারের মতো উপর থেকে সোজা নিচে নেমে এলো। একদম তার হাতে। আনন্দে লাফিয়ে উঠলো আয়োজক ও দর্শকেরা। সবাই বলাবলি করছে, “এত সুন্দর ঘুড়িখেলা আমরা জীবনেও দেখিনি!”
আয়োজকেরা পাচুকে ধরে টেনে নিয়ে গেলো মঞ্চে। সবার মাঝখানে বসালো তাকে।
শুরু হলো পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।

আয়োজক দলের প্রধান অত্যন্ত আনন্দের সাথে পাচুর অদ্ভুত ঘুড়িখেলার প্রসঙ্গ নিয়ে অনেক প্রশংসা করলেন। এবং পাচুকে শ্রেষ্ঠ ঘুড়িখেলোয়াড় হিসেবে ঘোষণা দিলেন। ঘুড়িখেলায় শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেলো পাচু। পুরস্কার হিসেবে তার হাতে তুলে দেওয়া হলো সনদপত্র, মেডেল আর নগদ এক লাখ টাকা। কেৌতূহলী লোকেরা ছোট্ট ঘুড়িবাজ পাচুকে কাঁধে তুলে নিল এবং আনন্দ মিছিল নিয়ে প্রবেশ করলো পাচুদের ছোট্ট গ্রামে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৭

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: এক সময় বহু ঘুড়ি উড়িয়েছি কিন্ত কুনো লোভেল পুরুষ্কার পাইনি। :(

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৯

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: জাদু জানলে মেডেল পেতেন। হাঃ হাঃ

ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.