নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটোদের ছোটোগল্প: বৃত্ত

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:২৭


‘কী দেইখা তুমি এভাবে খাড়াত্তে পইরা গেলা, একটু খোলাসা করে কওতো বাবা, শুনি।’ লোকগুলো আমার সামনে ঝুকে মুখ বাড়িয়ে বলল।
ইশকুল থেকে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছিলাম। রাস্তার পাশের এই গাবগাছটির তলে আসতেই আমার নাক বরাবর একটি পা ঝুলতে দেখলাম। ইয়া লম্বা পা। আমি থমকে দাঁড়ালাম। ঝুলন্ত পা দেখে আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। আমি পাশ কেটে দু পা সামনে এগুলাম। ওম্মা, পা আমাকে চিঁ চিঁ করে ডাকছে আমার নাম ধরে। আমি পেছনে ফিরে তাকালাম। দেখি, পায়ের বুড়ো আঙুলে ছোট একটি মুখ। চামচিকার মুখের মতন। সেই মুখে আমার নাম ধরে ডাকলো! উফ্ কী ভয়ংকর!

‘তারপর! তারপর!’ জানতে চাইল আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো।
আমি আর কিছু বলতে পারব না। আমার শরীর কাঁপছে।
‘নারে বাবা তোমাকে বলতেই হবে। বিষয়টা স্বাভাবিক না। আজ তুমি খপ্পরে পড়েছ, কাল পড়বে আমার ছেলে, পরশু তার মেয়ে। তুমি নির্ভয়ে ব্যাপারটা খুলে বলো। বৈদ্যের জন্য অলরেডি লোক পাঠিয়ে দিয়েছি।’

তারপর আমি পায়ের পাতা থেকে ধীরে ধীরে উপরের দিকে তাকালাম। দেখি,ওই উঁচু ডালটাতে কী একটা বসে আছে। গায়ের রং অর্ধেক সাদা আর অর্ধেক কালো। কান দুটি খাড়া। চোখ দুটি আগুনের মতো জ্বল জ্বল করছে। চোখে চোখ পড়তেই আমি পাকখেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। মোচড় দিয়ে ওঠেই দেখি আমার চারপাশে আপনারা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। এখন সরেন, আমি বাড়ি যাব।

এক বয়স্ক লোক চোখ বড় করে বলল, ‘বাড়ি যাবে মানে? তুমি কি জানো তোমার ওপর দিয়ে কত বড় বিপদ বয়ে গেছে? এই যে বৈদ্য মশাই এসে গেছে। এখন দেখবানে, ভূতের পা ঝুলানির মজা!’


দুই.
লম্বা চুল দাড়িওয়ালা চিকনা মতন একটা লোক এলো। মোছে ঢাকা ঠোঁট। তার আঙুল ভর্তি আংটি। কাঁধে একটা ঝোলা। লোকটা আসতেই জায়গা করে দিল সবাই। তিনি আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকালেন। তারপর একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বললেন, ‘অল্পের জন্য রক্ষা।’ লোকটা কাঁধের ঝোলা থেকে একটা বাঁকা কাঠি বের করলেন। কাঠিটা আমার চোখের সামনে ধরে বললেন, ‘বল্ এর রং কি?’
বাদামি।
‘সিধা না বেকা?’
বাঁকা।
‘এই মিঞারা সরেন সরেন।’ বলেই লোকটা কাঠিটা টেনে আমার চারপাশে গোল করে বৃত্ত আঁকলেন এবং বললেন, ‘এই দাগের মইধ্যে কেউ ঢুকবি না। ঢুকলে রোগীর ক্ষেতি হবে আর তোদের রক্ত বমি হবে। আর এই রোগীর পক্ষের লোক কই? জলদি ডাকেন।’
সবাই ডান বাও চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল। এক লোক বলল, ‘আমি গিয়ে নিয়ে আসি।’

পাগলের মতো ছুটে এলেন বাবা। ‘কী হয়েছে, কী হয়েছে বাবা তোর’ বলতে বলতে আমার কাছে আসতেই বৈদ্য চিৎকার করে বলে উঠল, ‘খামুস সাহেব, খামুস। কোন পিতা ছেলের অমঙ্গল চাইতে পারে না। খামুস।’

আশেপাশের লোকেরা বাবাকে ফিসফিস করে বলছে, ‘অল্পের জন্য আপনার পোলা রক্ষা পাইছে। ওই ডাল থেকে হ পরায় চল্লিশ পঞ্চাশ হাত লম্বা একটা পাও নেমে এসে আপনার পোলার উপরে গিয়ে আছাড় খাইয়া পড়ছিল। আপনার পোলা উপরে তাকাইয়া দেখে, ঘোড়ার মতো কী যেন একটা বইসা আছে। অর্ধেক লাল না কালা। ঠাস কইরা পাইরা গেলো গা মাটিতে। আমরা না থাকলে এতক্ষনে তার বারোটা বাজতো।’

বৈদ্য বাবাকে বলল, ‘আপনেরা কোনকালে কোন পূণ্য করেছিলেন বোদয়। নইলে এতক্ষনে চাঙ্গারিত কইরা এই ছেলেকে বাইতে নিয়া গুষ্টিশুদ্ধ চিক্কুর পারতেন, লাভ অইত না কিছু। কপাল বালা আমি আইসা পড়ছি। এহন বলেন, ছেলের চিকিস্যা করাইবেন? নাকি এম্বায় লইয়া যাইবেন গা, আপনার ইচ্ছা।’

বাবা কি জানি বলতে চাইল। পাশের লোকগুলো হুমড়ি খেয়ে এসে বাবাকে বোঝাতে লাগল, ‘হায় সর্বনাশ! দোহাই লাগে, চিকিস্যা না লইয়া এই পোলারে ঘরে নিয়া যাইয়েন না। বিরাট অমঙ্গল হবে।’
আমি চিৎকার করে বললাম, বাবা আমার কিছুই হয় নাই। আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো।
বৈদ্য আমাকে একটা ধমক মেরে থামিয়ে দিল। তারপর তিনি বাবার কানে কানে কী যেন বললেন। বাবা বললেন, ‘আচ্ছা আপনি যেটা ভাল মনে করেন। আমার ছেলের যেন কোন ক্ষতি না হয়, সামনে তার পিএসসি পরীক্ষা।’

বৈদ্য বাবাকে পরামর্শ দেওয়ার মতো করে বলল, ‘আমি যেই চিকিস্যাটা এখন করব, এর রেট পাঁচ হাজার টেকার এক পয়সাও কম না। আপনি ভদ্রলোক মানুষ। আমারে দুই হাজার এক টেকা পঞ্চাশ পয়সা দিলেই চলবে। এইটা ব্যবসা না। জীবন-মরণ সমস্যা। যান টেকাটা এখনই গিয়ে নিয়ে আসেন। আপনার ছেলে যেমন আছিল ঠিক তেমনি পাবেন। এসব কাজে দেরী মানেই ক্ষেতি। যান, যান।’

‘যাই, দুই হাজার এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে আসি’ বলেই বাবা ভিড় ঠেলে বেরিয়ে গেলেন।
তিন.
শুরু হলো আমার আজব চিকিৎসা।
বৈদ্য তার ঝোলা থেকে বের করল নিমের ডালা, আঁকাবাঁকা লাঠি আর আধমরা একটা কাগলাস। সে মন্ত্র পড়তে পড়তে এগুলো আমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত ছোঁয়ালো। তারপর শুরু করল ভূত-পেত্নী আর দুষ্টু জ্বিন-পরিকে গালাগাল। সে বৃত্ত ধরে চারদিকে ঘুরছে আর আমার মুখ বরাবর ফু দিচ্ছে। দাঁড়িয়ে থাকা লোকেরা বলাবলি করছে, ‘বৈদ্য একখান, মরা খাড়া কইরা ফালায়। যার নাম দাংশু।
বৈদ্য হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ছেলের বাপ কই, আইছে নি, দেখ্।’

‘ওরে আল্লা, ছেলের বাপ আইছে’ বলেই লোকগুলি দৌড়ে পালাতে লাগল। বাবার সাথে পুলিশ।
পুলিশ এসেই থাপমেরে বৈদ্যকে ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে বলল, ‘এই পাতানো বাটপারি ছাড়স নাই এখনও। এইবার ছাড়াছাড়ি নাই; তোরে লাল দালানের ভাত খাইয়ে ছাড়ব।’ পুলিশ তাকে নিয়ে চলে গেলো।
আমি মোচড় দিয়ে ওঠে দাঁড়ালাম এবং বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি চলে গেলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.