নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশুতোষ গল্প: ভূত ও বৃত্ত

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৩১

লোকগুলো আমার সামনে মুখ বাড়িয়ে বলল, ‘কী দেখে তুমি এভাবে হঠাৎ মাটিতে পড়ে গেলে, একটু খুলে বলো তো, শুনি।’
স্কুল থেকে হেঁটে বাড়ি যাচ্ছিলাম। রাস্তার পাশের এই গাবগাছটির তলে আসতেই আমার নাক বরাবর একটি পা ঝুলতে দেখলাম। ইয়া লম্বা পা। আমি থমকে দাঁড়ালাম। ঝুলন্ত পা দেখে আমার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। আমি পাশ কেটে দু পা সামনে এগুলাম। ওম্মা, পা আমাকে চিঁ চিঁ করে ডাকছে আমার নাম ধরে। আমি পেছনে ফিরে তাকালাম। দেখি, পায়ের বুড়ো আঙুলে ছোট একটি মুখ। চামচিকার মুখের মতন। সেই মুখে আমার নাম ধরে ডাকলো! উফফ কী ভয়ংকর!
‘তারপর! তারপর!’ জানতে চাইল আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলো।
আমি আর কিছু বলতে পারব না। আমার শরীর কাঁপছে।
‘বাবা তোমাকে বলতেই হবে। বিষয়টা স্বাভাবিক না। আজ তুমি খপ্পরে পড়েছ, কাল পড়বে আমার ছেলে, পরশু তার মেয়ে। তুমি নির্ভয়ে ব্যাপারটা খুলে বলো। বৈদ্যের জন্য লোক পাঠিয়ে দিয়েছি।’

তারপর আমি পায়ের পাতা থেকে ধীরে ধীরে উপরের দিকে তাকালাম। দেখি,ওই উঁচু ডালটাতে কী একটা বসে আছে। গায়ের রং অর্ধেক সাদা আর অর্ধেক কালো। কান দুটি খাড়া। চোখ দুটি আগুনের মতো জ্বল জ্বল করছে। চোখে চোখ পড়তেই আমি পাকখেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। মোচড় দিয়ে ওঠেই দেখি আমার চারপাশে আপনারা ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছেন। এখন সরেন, আমি বাড়ি যাব।
এক বয়স্ক লোক চোখ বড় করে বলল, ‘বাড়ি যাবে মানে? তুমি কি জানো তোমার ওপর দিয়ে কত বড় বিপদ বয়ে গেছে? এই যে বৈদ্য মশাই এসে গেছে। এখন দেখতে পারবে, ভূতের পা ঝুলানির মজা!’


দুই.
লম্বা চুল দাড়িওয়ালা চিকন মত একটা লোক এলো। মোছে ঢাকা ঠোঁট। তার আঙুল ভর্তি আংটি। কাঁধে একটা ঝোলা। লোকটা আসতেই জায়গা করে দিল সবাই। তিনি আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকালেন। তারপর একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বললেন, ‘অল্পের জন্য রক্ষা।’ লোকটা কাঁধের ঝোলা থেকে একটা বাঁকা কাঠি বের করলেন। কাঠিটা আমার চোখের সামনে ধরে বললেন, ‘বল্ এর রং কি?’
বাদামি।
‘সোঝা না বাঁকা?’
বাঁকা।
‘এই যে ভাই আপনারা সরে দাঁড়ান।’ বলেই লোকটা কাঠিটা টেনে আমার চারপাশে গোল করে বৃত্ত আঁকলেন এবং বললেন, ‘এই দাগের ভেতর কেউ ঢুকবে না। ঢুকলে রোগীর বিরাট ক্ষতি হবে আর তোদের রক্ত বমি হবে। আর এই রোগীর পক্ষের লোক কোথায়? জলদি ডেকে নিয়ে আসেন।’
সবাই ডান বাও চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল। এক লোক বলল, ‘আমি নিয়ে আসছি।’

পাগলের মতো ছুটে এলেন বাবা। ‘কী হয়েছে, কী হয়েছে বাবা তোর’ বলতে বলতে আমার কাছে আসতেই বৈদ্য চিৎকার করে বলে উঠল, ‘খামুস সাহেব, খামুস। কোন পিতা ছেলের অমঙ্গল চাইতে পারে না। খামুস।’
বৈদ্য বাবাকে বলল, ‘আপনারা কোনকালে কোন পূণ্য করেছিলেন বোধ হয়। নইলে এতক্ষণে চেঙ্গদোলা করে এই ছেলেকে বাড়ি নিয়ে গুষ্টিশুদ্ধ চিৎকার করে কাঁদতেন, লাভ হতো না কিছুই। কপাল ভালো আমি এসে পড়েছি সময়মত। এখন বলেন, ছেলের চিকিৎসা করাবেন, নাকি নিয়ে যাবেন, আপনার ইচ্ছা।’
বাবা কি জানি বলতে চাইলেন। পাশের লোকগুলো হুমড়ি খেয়ে এসে বাবাকে বোঝাতে লাগল, ‘হায় সর্বনাশ! দোহাই লাগে, চিকিৎসা না নিয়ে এই ছেলেকে ঘরে নিয়ে যাবে না। অমঙ্গল হবে।’
আমি চিৎকার করে বললাম, বাবা আমার কিছুই হয়নি। আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো।
বৈদ্য আমাকে একটা ধমক মেরে থামিয়ে দিল। তারপর তিনি বাবার কানে কানে কী যেন বললেন। বাবা মলিন মুখে বললেন, ‘আচ্ছা ঠিক আছে, তবে আমার ছেলের যেন কোন ক্ষতি না হয়, সামনে তার পিএসসি পরীক্ষা।’
বৈদ্য বাবাকে পরামর্শ দেওয়ার মতো করে বলল, ‘আমি যেই চিকিৎসা এখন করব, এর রেট পাঁচ হাজার টাকা থেকে এক পয়সাও কম না। আপনি ভদ্রলোক মানুষ। আমাকে দুই হাজার এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা দিলেই চলবে। এটা ব্যবসা না; জীবন-মরণ সমস্যা। যান টাকাটা এখনই গিয়ে নিয়ে আসেন। আপনার ছেলে যেমন ছিল ঠিক তেমনি পাবেন। এসব কাজে দেরী করা মানেই ক্ষতি। যান, যান।’
‘যাই, দুই হাজার এক টাকা পঞ্চাশ পয়সা নিয়ে আসি’ বলেই বাবা ভিড় ঠেলে বেরিয়ে গেলেন।


তিন.
শুরু হলো আমার আজব চিকিৎসা।
বৈদ্য তার ঝোলা থেকে বের করল নিমের ডালা, আঁকাবাঁকা লাঠি আর আধমরা একটা কাগলাস। বৈদ্য মন্ত্র পড়তে পড়তে আমার মাথায় কাগলাসটা বসিয়ে দিলেন। তারপর শুরু করল ভ‚ত-পেত্নী আর দুষ্টু জ্বিন-পরিকে গালাগাল। তার সাথে কাগলাসটি ঠেলে ঠেলে আমার মাথা থেকে পিঠ বেয়ে পায়ের পাতায় গিয়ে বসলো। বৈদ্য নেচে গেয়ে ও মন্ত্র পড়তে পড়তে বৃত্তের চারদিকে ঘুরছে। মাঝে মাঝে আমার মাথায় গাল ফুলিয়ে ফু দিচ্ছে। চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কৌত‚হলী লোকেরা বলাবলি করছে, ‘এমন বৈদ্য এই এলাকাতে নেই, তার তন্ত্র-মন্ত্রে মড়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যায়। যার নাম দাংশু।’
বৈদ্য হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ছেলের বাবা কোথায়?, আসছে কি না দেখ।’
‘ওরে বাপরে, ছেলের বাবা আসছে’ বলেই লোকগুলি দৌড়ে পালাতে লাগল। বাবার সাথে পুলিশ।
পুলিশ এসেই থাপমেরে বৈদ্যকে ধরে হ্যাঁচকা টান মেরে বলল, ‘এই পাতানো বাটপারি ছাড়িসনি এখনও? এইবার আর মাফ পাবি না; লাল দালানের ভাত খাইয়ে ছাড়ব তোকে।’ পুলিশ তাকে নিয়ে চলে গেলো।

আমি মোচড় দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম এবং বৃত্ত থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ি চলে গেলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.