নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাবচুরি

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৭

‘যাবি নাকি?’
‘কই?’
‘মিনুদের বাড়ি।’
‘এত রাতে!’
‘ডাব খাবো। দেখিসনি, মিনুদের ঘরের কোণে গাছটায় কচি কচি ডাব। কাদিশুদ্ধ সাবাড় করে দেবো।’
‘মিনুটা যা ত্যান্দড়রে বাবা! এই ডাকাত মেয়ে টের পেলে আর রক্ষে নেই; চিল্লাচিল্লি করে পাড়া মাথায় তুলবে, তখন?
‘এই যে কালো কাপড়টা দেখছিস, এটা গায়ে প্যাঁচিয়ে ভূত হয়ে এমন ভয় দেখাবো, মিনু ঠাস্ করে পড়ে যাবে মাটিতে। তখন তার চিল্লাচিল্লি করার জোর থাকবে না, মুখ দিয়ে সমানে লাল-নীল ফেনা বেরোবে; আর এই ফাঁকে তুই ডাব নিয়ে সোজা চলে আসবি বাংলা ঘরে। চল্।’
গাছতলায় গিয়ে কবির ফিসফিস করে কাঁপাস্বরে বলল, ‘ভয়ে আমার মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, বুকটা কেমন ডিব ডিব করছে, দেখ।’
‘ভীরুদের মতো কথা বলিস না তো! যা, উঠ্ গিয়ে, আল্লাহ্ ভরসা।’
কবির কষে নেংটি দিল। সে হাতের তালুতে থুতু ঘষিয়ে গাছে উঠছে। আমি গায়ে কালো কাপড় প্যাঁচিয়ে গাছের আড়ালে গিয়ে ভূতের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।

দুই.
ঘটাংঘট শব্দে দরজা খুলে গেলো। ভয়ে আমার বুক ডিব্ ডিব্ করছে আর কানে করছে শো শো শব্দ। মিনু ঘর থেকে বেরিয়ে বিড়ালের মতো হেঁটে গাছ তলায় গিয়ে উপরের দিকে তাকালো। আমি ধুম করে সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই মিনু একটা চিৎকার করে আমাকে খাবলা মেরে ধরে ফেলল। আমি কোনো মতে ছুটে দিলাম ভোঁ দৌড়। কিন্তু কম্বলটা রয়ে গেলো মিনুর হাতে। মিনু গাছের দিকে তাকিয়ে ‘ডাবচোর ডাবচোর করে চিৎকার করতে লাগল। কবির অর্ধেক গাছ নেমে ডাবসহ লাফিয়ে পড়ল। ফট্টাস করে একটা শব্দ হলো। দুঃসাহসী মিনু পানিতে মাছ ধরার মতো খপ্ করে ধরে ফেলল কবিরকে। আর যায় কই। গাছের তলে চোরে, ডাবে আর মিনুতে মাখামাখি। একচোট কোস্তাকুস্তি হয়ে গেলো। মিনু ছাড়ে না ডাবচোরাকে।
কবির গায়ের গেঞ্জি খুলে উর্দ্ধশ্বাসে দিল দৌড়। সে হাঁচোড়-পাঁছোড় করে বাংলাঘরে এসে বেদম হাঁপাচ্ছে। নেংটি অর্ধেক খোলা, গায়ে খামচির দাগ। আমি বললাম, ‘তোকে চিনতে পারে নি তো আবার?’
সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘চুপ, কোন কথা বলবি না তুই। জীবন নিয়ে টানাটানি। পানি দে, পানি খাব।’
আমি তাকে কী বলে শান্ত্বনা দিব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।

তিন.
সকালে আমাদের ডাক পড়ল মিনুদের বাড়ি। গেলাম। উঠোন ভর্তি মানুষ। ডাবচুরির নালিশ বসেছে। আমি আর কবির মাতবরের সামনে গিয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়ালাম। আমাদের দেখে একটা গূঞ্জন শুরু হলো। লজ্জায় আমাদের মাথা হেট হয়ে গেলো।
ঘর থেকে বিছার মতো লাফিয়ে এলো মিনু। সে এক হাতে কালোকাপড়ের টুকরো, ছেঁড়াফাঁড়া গেঞ্জি দেখিয়ে বলল, ‘আপনারা দেখেন, ডাবচুরির প্রমাণ দেখেন। এরা আজ করেছে ডাব চুরি কাল করবে ডাকাতি।’
মাতবর বড় ভাল মানুষ। তিনি আমাদের কাছে টেনে নিয়ে বললেন, ‘বাবারা, ডাব চুরি করতে গেলি কেন, চাইলে কি দিত না?’
‘চাইলেও দেয় না, না চাইলেও দেয় না। এদের মতো কিপটা মানুষ এই গাঁয়ে নাই। চুরি করব না তো কি।’ অভিমানে বলল কবির।
তার কথা শুনে সবাই হো হো হি হি করে হেসে উঠল। মিনু রাগে গজ গজ করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। মাতবর বলল, ‘মিনু দুই গ্লাস ডাবের পানি নিয়ে আয় তো মা।’
মিনু পানির গ্লাস নিয়ে এসে মাতবরের হাতে দিল। তিনি আমাদের হাতে গ্লাস দিয়ে বললেন, ‘নে খা।’ আমি মনে করেছি এটা বোধ হয় চুরির কোন শাস্তি। আমরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে খেয়ে ফেললাম। মাতবর আফছুছ করে বললেন, ‘আহারে আমরা এ বয়সে কত কি করেছি। এ সব নিয়ে বিচার-নালিশ হয় নাই। পোলাপান মানুষ, এরা এই সামান্য ডাব খেতে গিয়ে মেলা নাজেহাল হয়েছে। আর চুরিমুরি করিস না বাপ, যাহ।’
হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কিন্তু চলে আসার সময় মিনু ‘`ডাবচোর ডাবচোর’ বলে গ্লাসের অবশিষ্ট পানি ছুড়ে মারল আমাদের গায়ে।
মিনুর দেওয়া নাম দুটি আমাদের গায়ে আজও আঁঠার মতো লেগে আছে!

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: বাহ্!
এটা কত সালের কাহিনী ভাই???

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ১৯৭৮

২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২

নতুন নকিব বলেছেন:



মজার স্মৃতি আওড়ালেন আরও মজা করে।

অনেক ধন্র্যবাদ।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: হারানো শৈশব আহা মনে পড়ে যায!
শুভেচ্ছা নিন।

৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৪১

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: কিতা করিলো এটা মিনু :-B

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগতম।
আমরা যাহা করিয়াছি আর মিনু যাহা করিয়াছে তাহা মন্দ নহে।
স্মৃতি আওড়াউ।

৪| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:১০

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: মিনু নামের মেয়ে গুলা
ডায়নি টাইপের হয়...

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২১

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: হাহহা হাহ।

ভাই আপনিও কি ধরা-টরা খাইছিলেন, মিনুর হাতে?

৫| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আহা রে !!!
বড্ড পাষাণ মিনু।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৩২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: তার বিয়ে হইল। ঘর ভাঙল না।

৬| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



এই ডাকাত মেয়ে কোন এলাকার?
চিটাগং'এর মেয়েরা সেই আমলে জ্বীনভুতের ভয়ে রাতে একা বের হতো না।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ইত্তা নসিন্দির মাইয়া।
ডাকাইতের বাবা।

৭| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৫

ৈতয়ব খান বলেছেন: ভাল লাগলো। তবে এত ঝুঁকি নিয়ে গাছে উঠে ডাব খেতে গেলে নাজেহাল হতে হয়। আমি হলে একটা এয়ারগান যোগাড় করতাম। তারপর গুলি করে ডাব ছ্যাদা করে গাছের নিচে মুখ হা করে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এতে নো শব্দ, নো চিল্লাচিল্লি, নো ধরা পড়ার ঝামেলা।
পরের বার ডাব চুরি করতে গেলে আমার ফর্মূলাটা ট্রাই করে দেখতে পারেন।

৮| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:১৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপনাদের অভিশাপে ভালোবাসা বেশি ছিলো না;
তাই সে সব অগ্রাহ্য করে সংসারে টিকে গেলো B-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.