নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

বিএম বরকতউল্লাহ

জানতে চাই।

বিএম বরকতউল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খুকী ও মেঘ

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৩৩


আকাশে মেঘ দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠল খুকী। সে হাসিমুখে বলল, এই মেঘ, তোমরা কই যাও এমন করে? আমাদের বাড়ি চলে আসতে পারো না? এই দেখো আমাদের ঘর। এই যে সাদা উঠোন। এই যে আমাদের গাছ, পুকুর আর ফসলের মাঠ। তোমরা চলে আসো আমাদের বাড়ি। বসতে দেবো পিঁড়ি আর খেতে দেবো মুড়ি। দারুন মজা হবে। আমি খেলা করব তোমাদের সাথে।
এক টুকরো মেঘ একটু নিচে নেমে এসে বলল, ‘এই মেয়ে কার সাথে কথা বলছ তুমি?’ মেঘের কথা শুনে খুশিতে টগবগিয়ে বলল, ‘কার সাথে আবার, তোমাদের সাথে কথা বলছি।’
মেঘ আরেকটু নিচে এসে বলল, ‘তুমি কে গো?’
‘বারে! আমাকে চেন না বুঝি? আমি খুকী।
মেঘ বলল, ‘তুমি তো খুব মজা করে কথা বলতে পার দেখি। কী কথা বলো তুমি?’
খুকী অভিমানে গাল ফুলিয়ে বলল, ‘কী কথা বলব আবার। দেখছ না আমার যে কোন সাথী নেই। মা-বাবা সারাদিন ওই দূরের জমিতে গিয়ে কাজ করেন। এ বাড়িতে আমি একদম একা। আশপাশে বাড়ি-ঘর নেই। আমি কারও সাথে কথা বলতে পারি না, খেলতেও পারি না। এখন বুঝতে পেরেছ কত বড় দুঃখ আমার?’
মেঘ মায়া করে বলল, ‘ইশ্, আসলেই তোমার অনেক দুঃখ। এখন তোমার জন্য আমি কী করতে পারি, বল তো?’
‘আমাকে নিয়ে চলো না তোমাদের দেশে?’ আবদার করে বলল খুকী।
মেঘ বলল, ‘আমাদের দেশে? কীভাবে যাবে, তোমার যে পাখা নেই।’
‘কেন, তোমার পিঠে চড়ে যাব!’ ঝটপট জবাব দিল খুকী।
‘তোমার তো বেজায় সাহস!’ বলল মেঘ।
খুকী বলল, আমি একটুও ভয় পাই না, আমার অনেক সাহস।
মেঘ রাজি হয়ে বলল, ‘খুকী তুমি কি আমার পিঠে বসতে পারবে?’
খুকী মাথা কাত করে বলল, ‘হ্যা খুব পারব।’
মেঘ আরেকটু নিচে নেমে এসে পিঠ বাঁকা করে বলল, ‘এবার লাফ দিয়ে বসে পড়ো আমার পিঠে।’
খুকী বলল, ‘আমি এত উঁচুতে উঠব কী করে? তুমি উঠোনে এসে বসো।’
মেঘ বলল, ‘আমি মাটি ছুঁতে পারব না। মাটির ছোঁয়া লাগলেই আর আমাকে খুঁজে পাবে না তুমি। আমি পানি হয়ে মিশে যাব মাটিতে, তখন?’
খুকী বলল, ‘তাহলে দাঁড়াও, আমি আসছি।’ সে দৌড়ে গিয়ে নিয়ে এলো একটি জলচকি। খুকী জলচকির উপর পা রেখে এক লাফে চড়ে বসল মেঘের পিঠে। মেঘটি খুকীকে নিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে লাগল। খুকী নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সে দেখে, বাড়ি-ঘর, গাছপালা, সব ছোট হয়ে আসছে। অনেক উপরে উঠে গেল মেঘ। খুকী একটুও ভয় পেল না। সে সোজা চলে গেল মেঘের দেশে। খুশির সীমা নেই তার।

দুই.
খুকীকে নিয়ে গিয়ে মেঘ তার মাকে বলল, ‘মা, মা, দেখো কাকে নিয়ে এসেছি।’
মেঘের মা খুকীকে দেখে অনেক খুশি হয়ে গেল। বলল, ‘কেমন আছ তুমি? বাড়ি কই তোমার?’ খুকীও অনেক কথা বলল মেঘের মা’র সাথে। মেঘের মা খুকীর কথা শুনে তার নাক টিপে দিয়ে বলল ‘পাকনা বুড়ি’।
খুকীকে পেয়ে মেঘেরা খুব খুশি। তারা তাকে নিয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। ছোট একটি মেঘ এসে বলে, ‘আমার পিঠে বসো তো খুকী।’ সে বসতেই মেঘটি ছুটে চলে যায় সবুজ পাহাড়ের চূড়ায়। আবার আরেকটা মেঘ তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যায় সাগর আর বনের উপরে। খুশিতে খুকীর মুখ চিকচিক করে ওঠে।
খুকী মেঘের মাকে বলল, তোমাদের বাড়ি কোথায়? আর কীভাবে তোমরা আকাশে ভেসে বেড়াও?’
মেঘের মা খুকীর কথা শুনে হাসতে হাসতে বলল, ‘আমাদের বাড়ি আকাশে, বাতাসে, পুকুরে, নদীতে, সাগরে, পাহাড়ে, বুঝেছ?’
খুকী চোখ বড় করে বলল, ‘ওরে বাবা! এতগুলো বাড়ি তোমাদের? তোমরা অনেক বড়লোক নাকি? আমি তো তোমাদের খালি আকাশেই দেখি, আর তো কোথাও দেখি না।’
মেঘের মা বলল, ‘আমরা তোমার আশপাশেই থাকি। আমরা হলাম পানি। পানি কঠিন হয়ে মেঘ হয় আর মেঘ গলে গিয়ে হয় বৃষ্টি। বৃষ্টি হয়ে নেমে পড়ি মাটিতে। পরে কলকল করে চলে যাই পুকুরে, নদীতে-সাগরে। তারপর সুরুজ মামার রোদের তাপে পানি থেকে হয়ে যাই পানির কণা। বাতাসে ভেসে বেড়াই। তখন আমাদের বলে বাষ্প। তারপর বাতাসে ভেসে অনেক উপরে উঠে পড়ি। সেখানে আমরা একজনের সাথে আরেক জন লাগালাগি করে থাকি। এই যে দেখছ আমাকে, আমার ভেতরে আছে অনেক অনেক পানির কণা। এভাবে সব কণা মিলে হয়ে গেলাম মেঘ। তারপর মনের খুশিতে ঘুরে বেড়াই আকাশে। বুজেছ এবার?’
খুকী দুই হাতের তালু ঘষিয়ে বলে, ‘কি মজা, কি মজা। আমিও মেঘ হব, বৃষ্টি হব। আমি আকাশে উড়ে বেড়াব। তারপর মাটিতে নেমে আসব। আর পুকুরে, সাগরে গিয়ে সাঁতার কাটব। আমাকে মেঘ বানিয়ে দাও না।’
মেঘের মা খুকীর গাল টিপে দিয়ে বলল, ‘বোকা মেয়ে, আকাশে উড়তে তোমাকে মেঘ হতে হবে কেন, এমনিতেই উড়তে পারবে তুমি।’
খুকী ডান বাম তাকিয়ে বলল, ‘আমার যে পাখা নেই, কীভাবে আকাশে উড়ব আমি!’
মেঘের মা বলল, ‘পাখা নেই তো কী হয়েছে। ইচ্ছে করলে তুমি পাখা ছাড়াই আকাশে উড়তে পারবে।’
‘সেটা কীভাবে? আমাকে বলোনা।
‘লেখাপড়া করলেই মানুষ অনেক বড়ো হতে পারে। আর বড়ো মানুষেরা ইচ্ছে করলেই আকাশে উড়তে পারে। বলল মেঘের মা।
‘তাই নাকি!’ বলল খুকী। ‘তাহলে আমি অনেক লেখাপড়া করব আর অনেক বড়ো হবো। তখন আমি উড়ে উড়ে চলে আসব তোমাদের কাছে। আমি অনেক জোরে ছুটে বেড়াব, তখন তোমরা কেউ পারবে না আমার সাথে, বলে দিলাম, হু।’
মেঘের মা আদর দিয়ে বলল, ‘ঠিক আছে খুকী, দেখা যাবে তখন কে বেশি জোরে ছুটতে পারে।’
হঠাৎ করে খুকী বলে উঠল, ‘আমি এখন বাড়ি যাব।’
খুকী মেঘের পিঠে চড়ে শোঁ শোঁ করে ফিরে এলো বাড়ি। খুকীর এখন একটাই ভাবনা। পড়ালেখা করবে। অনেক বড়ো হবে। আর ইচ্ছেমতো উড়ে বেড়াবে আকাশে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:০২

এম. হাবীব বলেছেন: পাকনা বুড়ী...

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
পাকনাবুড়ি না কি এত কথা বলে!!

২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অনন্য লেখা I

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৩৩

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: আকাশে মেঘ জমলে আমরা সবাই খুশি হই। একজন রিকশাচালক পর্যন্ত খুশীতে একটা বেনসন সিগারেট ধরায়।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১২

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ভারি মজার তথ্য দিলেন তো! একটা ছবিও যদি দিতে পারতেন!

৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৫

রামিসা রোজা বলেছেন:
খুকির মনের আশা পূরণ হোক । কবে যে খুঁজি,
প্লেনে উঠে কিছুটা হলেও মেঘের দেখা পাবে।
খুবই সুন্দর হয়েছে গল্প।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৪৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: স্বাগত।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:


এই ধরণের লাখ লাখ খুকীদের বাংগালীরা ঘরের চাকরাণী বানায়েছে, মগজহীন জাতি!

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪৬

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: শিশুদের প্রতি মানবিক না হলে দেশ আগাবে কেমনে?

৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৪০

সাবিনার বচন বলেছেন: শিশুসুলভ শিক্ষণীয় গল্পে +++++++++++

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪৭

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.