নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কারো কেউ নই তো আমি , কেউ আমার নয় , কোন নাম নেইকো আমার শোন মহাশয়।।

বাবুরাম সাপুড়ে১

নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে আরেকটুকাল বেঁচেই থাকি বাঁচার আনন্দে

বাবুরাম সাপুড়ে১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আর্ট অফ নিগোশিয়েশন

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১

জয়ন্ত রায় এক মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর উচ্চপদে অধিষ্ঠিত । মধ্য তিরিশের ঝকঝকে উচ্চ শিক্ষিত যুবক জয়ন্ত খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আপন কর্মক্ষমতা এবং পরিশ্রমের জোরে কোম্পানীর কোর-ম্যানেজমেন্ট গ্রুপের এক গুরুত্বপুর্ণ সদস্য হয়েছে। সাউথ-ইস্ট এশিয়ার রিজিওনাল হেড অফিসের ৩৫ তলায় ম্যানেজিং ডিরেক্টরের সুবিশাল কর্ণার অফিস টা তাকে যেন মাঝে মাঝে হাতছানি দিয়ে ডাকে। মনে তার অনেক উচ্চাশা। অফিসে তার উন্নতির এস্কালেটর তর্ তর্ করে এগিয়ে গেলেও জয়ন্ত ঘরের দুই মহিলা কে নিয়ে বিপদে আছে ,কি করবে কিছুই বুঝতে পারে না।

ঘটনা একটু খোলসা করা যাক। না না আপনারা অন্য কিছু ভাববেন না। ঘরে আছে তার থেকে দু -বছরের ছোট বিদূষী সুন্দরী স্ত্রী জয়িতা এবং তাদের প্রানপ্রিয় কন্যা সাত বছরের সঞ্চিতা। জয়িতার সাথে প্রেম করে বিয়ে। মনে আছে বিয়ের আগে ঘণ্টার পর ঘন্টা গল্প হত। তার স্বপ্ন ,উচ্চাশা ,ভবিষ্যৎ জীবন পরিকল্পনা সবকিছুই জয়িতাকে বলতো। দুচোখে বিস্ময় নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মুগ্ধ হয়ে জয়িতা শুনে যেত তার কথা ,মাঝে মাঝে মিষ্টি কথায় নিজের মতামত জানাতো। আজকাল জয়িতা তার সাথে ঠিক সেই টোনে কথা বলে যে ভাবে সে তাদের সাত বছরের মেয়েকে শাসন করে --এটা করবে না ,ওটা করবে না , নাক খুটছো কেন , আজ এক্সারসাইজ করোনি কেন , আজকাল তুমি আমার কোন কথাই শোনো না ইত্যাদি ইত্যাদি।
দেশী ঘিয়ের লাড্ডু আর আলু-পরোটা তার প্রিয় খাবার কিন্তু স্ত্রীর ঝাড়ি খেয়ে সে খাবার ছাড়তে হয়েছে।

প্রেমময়ী স্ত্রী না ন্যাগিং মা বোঝা মুশকিল।

একটা সময় ছিল যখন সে বলতো ,জয়িতা শুনতো । এখন সে কোন কথা বলতে গেলে স্ত্রীর চোখ -মুখের অভিবক্তি অনেকটা এই রকম : এই একই কথা গত দশ বছরে ১৮৫ বার শুনলাম ,কান পেকে গেলো।

কন্যাটি আরেক কাঠি ওপরে। যেন জয়ন্তর মৃত ঠাকুরমা ফিরে এসেছে। জয়ন্তর সাথে সে ঠিক সেই টোনে কথা বলে যে ভাবে তার ঠাকুরমা ত্রিশ বছর আগে বলতো।

জয়িতা এখনো গাড়ী চালাতে শেখেনি ,তার প্রয়োজন ও মনে করে না। কিন্তু ড্রাইভার শুদ্ধু গাড়ী সে অসাধারণ দক্ষতায় চালনা করায়। ড্রাইভারটা কে সেটা আপনারা অনুমান করে নিন।

জয়ন্তর আরেক সমস্যা সে তার নিজের পছন্দ মত পোষাক কিনতে পারে না। তার নাকি ড্রেস সেন্স নেই। কিছুটা যে কম সেটা সে মনে মনে স্বীকার করে। ক্যাজুয়াল পোষাক সে নিজে কিনলেও অফিসের ফরমাল ড্রেসের ব্যাপারে জয়িতা ভীষণ খুঁতখুঁতে। দামী ব্র্যান্ডেড পোষাক ছাড়া সে জয়ন্তকে অন্য কিছু পরতে দেবে না। জয়ন্ত মাঝেমধ্যে একটু গাঁইগুই করলে তার একটাই উত্তর :তুমি অফিসের কেরানী না উচ্চপদস্থ অফিসার ? তোমার একটা মান -সম্মান নেই ?

কোন পুরুষই বোধ হয় কয়েক বছরের বিবাহিত স্ত্রীর চোখে হিরো নয় ,বিয়ের আগের পরিস্থিতি যাই থাকুক না কেন।

রোজকার বাজারহাট জয়িতাই করে নেয়। জয়ন্ত সময় পায় না , অফিসে কাজের প্রচন্ড দায়িত্ব। সকাল আট টায় বেরিয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে রাত ৯ টা। এক রবিবার জয়ন্ত বাজার করতে চাইলো। আগের দিন তার মেয়ে সঞ্চিতা গলদা চিংড়ির মালাইকারী খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। জয়ন্ত চললো বাজারে। এক দোকানে বেশ বড় সাইজের গলদা চিংড়ি দেখে জয়ন্তর প্রশ্ন :
--চিংড়ি কত করে ?
--১৩০০ টাকা করে বেচছি বাবু ,নেন আপনার জন্যে ১২৫০ টাকা। ক -কেজি নেবেন?
--চিংড়ি ভাল হবে তো ?
--একদম টাটকা বাবু ,এই হাতে নিয়ে নিজে পরখ করে দ্যাখেন।
--না না থাক ,হাত দেওয়ার দরকার নেই ,তুমি বলছ যখন ,ভালোই …
বাজারে সে হাত দিয়ে মাছ-টাছ পরখ করা পছন্দ করে না। হাত ধোয়ার জায়গা নেই ,রুমালে আঁশটে গন্ধ হয়ে যায়।
--তবে দাও ২ কেজি।
--ওরে কালু, বাবুকে ভালো দেখে দু-কেজি চিংড়ি দে। বড় সাইজ দিবি।
২৫০০ টাকা দিয়ে জয়ন্ত দু কেজি চিংড়ি নিয়ে এলো।

চিংড়ির মালাইকারী টা জয়িতা অসাধারণ রান্না করে। সারা ডাইনিং রুম যেন সুগন্ধে ম ম করছে।
--চিংড়ি কত করে কিনলে? খেতে বসে জয়িতার প্রশ্ন।
--কি ! এগুলো ১২৫০ টাকা করে? তোমাকে কি সবাই ঠকায় ?
--মানে?
--মানে এই একই সাইজের চিংড়ি তো আমি চার দিন আগে ৮৫০ টাকা কেজিতে নিয়ে এলাম ,খেলে না সেদিন ?
-হ্যাঁ মানে ....
--বাজারে গিয়ে একটু দরদাম ও কি তুমি করতে পার না?
--এ:এ:… বাবাকে ঠকিয়েছে ,বাবাকে ঠকিয়েছে ........ মাঝখান থেকে সঞ্চিতা হাততালি দিয়ে উঠলো।

জয়ন্ত আজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেড়িয়েছে। তার গন্তব্য ফ্যাশন স্ট্রীট -এখানে প্রচুর শাড়ির দোকান। আগামীকাল জয়িতার জন্মদিন। বালুচরী শাড়িতে জয়িতাকে দারুন মানায়। জয়ন্ত শুনেছে ফ্যাশন স্ট্রীটএ দর-দাম করতে হয়। সে একটু নার্ভাস।
প্রায় একঘন্টা পরে হাতে একটা শাড়ির প্যাকেট নিয়ে ঘেমে-নেয়ে সে বাইরে এলো। মনটা বেশ খুশী খুশী লাগছে। এই দারুন শাড়িটা জয়িতার পছন্দ হবেই।

বাড়ীতে এসে একটা বিজয়ীর হাসি দিয়ে:
--দেখো এটা পছন্দ হয় কিনা?
--আরে বাঃ এত দারুন শাড়ি ,তোমার পছন্দের সত্যি তারিফ করতে হয়।
শাড়িটা দেখে জয়িতা খুশি তে ডগ-মগিয়ে উঠল।
--হুঁ , আমার তো ড্রেস সেন্স ই নেই , তোমার তো পছন্দই হয় না কিছু।
একটু কপট রাগ দেখালো জয়ন্ত।

একঘণ্টা পর।
--আঁআঁ :.......... এই শাড়িটার দাম ১০,০০০ টাকা ?
চোখ কপালে তুলে জয়িতার প্রশ্ন। জয়ন্তর শার্টের পকেটে রাখা বিলটা সে দেখে নিয়েছে।
--না মানে অনেক দরদাম করে ১০০০ টাকা কমিয়েছি ,এর নিচে আর দিতে চাইলো না।
স্ত্রীর দিকে তাকাল জয়ন্ত। জয়িতার কপালে ওঠা চোখ যেন আর নামতে চায় না।

পরের দিন সকালে স্ত্রী কে উইশ করে জয়ন্ত অফিস বেরিয়ে গেল। আজও তাড়াতাড়ি ফিরবে। শহরের একটা বিখ্যাত রেঁস্তোরায় সিট্ বুক করে রেখেছে ,রাত্রে সেখানেই স্ত্রী ,কন্যাকে নিয়ে ডিনার।

নতুন বালুচরী তে সত্যিই অসাধারণ লাগছে জয়িতাকে। অবশ্য জয়িতাও খুব সুন্দর করে শাড়িটা পরতে পারে। শাড়ি পরা টা একটা আর্ট ,অনেক মেয়েই সেটা পারে না। জয়িতা খোঁপাতে বেলী ফুলের মালা জড়াতে ব্যস্ত। স্ত্রীর দিকে এক ঝলক দেখে জয়ন্তর মনে হল বিয়ের আগের থেকে জয়িতা যেন এই ক বছরে আরো সুন্দরী হয়েছে। মনের মধ্যে পুরোনো দিনের একটা গানের দু -কলি গুনগুনিয়ে উঠলো :
"..... কতো না রঙ-বাহারী ফুলের মালায়
খোঁপাটি বাহার করে সবাই সাজায়
বেলী ফুল এমন করে এলো খোঁপায়
ক-জনা তোমার মতো ছাইতে জানে ...."
গানে বেলী ফুল ছিল না জুঁই ফুল ছিল জয়ন্ত ৩০ সেকেন্ড ভেবেও ঠিক মনে করতে পারল না।

রেস্তোঁরাতে অসাধারন সময় কাটলো। জয়িতার প্রিয় ডিশগুলো অর্ডার করা হয়েছিল। খুব ভালো খাবার। ছোট্ট সঞ্চিতারও খুব ভালো লেগেছে।
বেয়ারা বিল দিয়ে গেল। ৫০০০ টাকা। জয়ন্ত ক্রেডিট কার্ড বের করছে এমন সময় জয়িতা তার পার্স থেকে ৫০০০ টাকা বের করে বেয়ারার হাতে দিল।
--তুমি টাকা দিচ্ছ কেন?
--দিলাম ,এমনিই ,আমার ইচ্ছা ....
জয়িতা কেমন যেন এক রহস্যময় মুচকি হাসি দিল।
--মানে?
ওদিকে সঞ্চিতাও যেন হেসে উল্টে পড়ছে।
জয়ন্ত কিছুই বুঝতে পারছে না।
--এই তুই হাসছিস কেন?
--ও বাবা , কি হয়েছে জানতো ,সকালে তুমি অফিস বেরিয়ে যাওয়ার পর আমি আর মা ফ্যাশন স্ট্রীট গিয়েছিলাম। মা সোজা ওই দোকানে গিয়ে শাড়িটা পছন্দ হয়নি বলে ফেরত দিয়ে দেয়। তারপর অন্য একটা দোকান থেকে ওই একই ধরণের শাড়ি অনেকক্ষণ ধরে দাম করে ৫০০০ টাকায় কিনেছে।এই শাড়ি টা আগেরটার থেকেও বেশি সুন্দর ,তাই না বাবা ?
জয়ন্ত পাংশু মুখে শুকনো গলায় মেয়েকে শুধু বলতে পারল --হ্যাঁ ,তাইতো মা।
আড়চোখে জয়িতার দিকে তাকিয়ে দেখলো হাসির দমকে তার শরীর যেন ফুলে ফুলে উঠছে।

রাত্রে বিছানায় শুয়ে জয়ন্ত ভাবতে লাগলো একজন দক্ষ উচ্চপদস্থ অফিসার হিসাবে অফিসে তার সুখ্যাতির কথা। এই তো কদিন আগে তার কোম্পানী একটা মাল্টি -মিলিয়ন ডলারের কনট্রাক্ট সাইন করলো। তার আগে প্রায় ছ মাস ধরে এই ডিল টার জন্য জয়ন্ত ছিল তার কোম্পানীর তরফ থেকে প্রধান নিগোশিয়েটর। কোম্পানীর প্রায় এক মিলিয়ন ডলার সে সেভ করেছে। ম্যানেজিং ডিরেক্টর ব্যাক্তিগত ভাবে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পরের প্রোমোশন তার বাঁধা।

অনেক রাত্রে প্রেমঘন মুহুর্তে জয়িতা তাকে জড়িয়ে ধরে বললো
--এই শোনো, পরের জন্মে তুমি আমাকেই বিয়ে করবে তো?
জয়ন্ত মনে মনে বললো , --নিকুচি করেছে পরের জন্মের ,এই জম্ম উদ্ধার হলে বাঁচি। মুখে বললো :
-- হ্যাঁ ডার্লিং সে তো নিশ্চই। তোমাকে ছাড়া আর কাউকে তো আমি ভাবতেই পারি না।
জয়িতা আবেগে উদ্বেলিত হয়ে তাকে আরো ভালো করে জড়িয়ে ধরলো।
--কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
-- কি শর্ত?
-- পরের জন্মে আমি স্ত্রী হতে চাই আর তুমি হবে আমার স্বামী।
















মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৫

গেম চেঞ্জার বলেছেন: দারুণ হয়েছে গল্প!! নেগোশিয়েট করতে মেয়েরাই আসলে বেশি দক্ষ!!

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২২

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: ----নেগোশিয়েট করতে মেয়েরাই আসলে বেশি দক্ষ!!
ঠিক বলেছেন। কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ।

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫১

হাসান মাহবুব বলেছেন: হাহা! মজার গল্প।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০১

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.