নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কারো কেউ নই তো আমি , কেউ আমার নয় , কোন নাম নেইকো আমার শোন মহাশয়।।

বাবুরাম সাপুড়ে১

নিভন্ত এই চুল্লিতে মা একটু আগুন দে আরেকটুকাল বেঁচেই থাকি বাঁচার আনন্দে

বাবুরাম সাপুড়ে১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

Be responsible . Don\'t use a condom tonight !! বি রেস্পন্সিবল। ডোন্ট ইউস এ কন্ডোম টুনাইট !!

১৪ ই জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৬

এটা একটা বিজ্ঞাপন !
কিছুদিন আগে জারোয়াদের নিয়ে একটা পোস্ট লিখেছিলাম। ভারতের আন্দামানে ৭০ হাজার বছর আগের থমকে যাওয়া সময়ে বাস করা বিলুপ্ত প্রায় এক ক্ষুদ্র আদিম জনগোষ্ঠী নিয়ে ছিল সেই লেখাটা।সংখ্যায় তারা ৪০০-৫০০। বিজ্ঞাপনটির টার্গেট অডিয়েন্স জারোয়ারা নয় --তারা লিখতে পড়তে জানে না।

আজকের এই লেখাটি আরেক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী নিয়ে।না আন্দামানের গহীন জঙ্গলে নয় ---মূলত ভারতের বানিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ে এদের বাস। এছাড়াও আছে এরা ছড়িয়ে -ছিটিয়ে এখানে ওখানে বিভিন্ন শহরে অল্প সংখায়। এরা কোন অসহায় আদিম জনগোষ্ঠী নয়--আধুনিক শিক্ষায় ,সম্পদে ,ব্যবসা -বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক শক্তি , প্রভাব প্রতিপত্তিতে এদের সমকক্ষ কমিউনিটি ভারতে আর দ্বিতীয় নেই। মুম্বাইয়ের মত শহরের এক-চতুর্থাংশ রিয়েল এস্টেটের মালিক এরা। গত শ -দেড়শো বছরে ভারতের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে এরা নেতৃত্ব দেয় নি বা অবদান রাখে নি। কিন্তু এরা হারিয়ে যাচ্ছে, কমছে এদের জনসংখ্যা ,বর্তমানে এরা সংখ্যায় মাত্র সত্তর -পঁচাত্তর হাজার। আর হয়তো কয়েক দশক --অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন না হলে হয়তো চিরতরেই হারিয়ে যাবে এরা। দীর্ঘদিন ধরে ওপরের বিজ্ঞাপনটি ভারত সরকারের মাইনোরিটি অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রি প্রচার করছে --টার্গেট অডিয়েন্স এরা। কিন্তু এরা কারা ? এদের সম্পর্কে জানতে পিছোনো যাক ১২০০ সাল।এদের পূর্ব পুরুষদের এক রহস্য ভরা করুণ কাহিনী !

সময়টা তখন নবম শতকের কোন এক সময় । স্থান : পশ্চিম ভারতের গুজরাটের সমুদ্র বন্দর সনজন। সনজন শাসন করছেন হিন্দু রাজা জডী রানা। রাজার কাছে খবর গেল কয়েকটা নৌকা ভর্তি ভিন দেশীয় কয়েকশো নর -নারী -শিশু এসে ভীড় জমিয়েছে বন্দর শহর সনজনএ। তারা রাজার আশ্রয় প্রাথী।তারা জরাথ্রুষ্ট ধর্মানুসারী , তৎকালীন পারস্যের (অধুনা ইরান ) আদি অধিবাসী।আরবদের পারস্য আক্রমণের ফলে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে ইসলাম। জান -মান এবং ধর্ম বাঁচাতে তাদের ভারতে পলায়ন এবং রাজার আশ্রয়প্রাথী।
রাজা প্রথমে রাজী হলেন না। একে তো এরা ভিনদেশী ,ভিন্নধর্মী তার ওপর ভিন্নভাষী।তিনি অনাহুত অতিথিদের কাছে একটা কানায় কানায় পূর্ণ দুধের পাত্র পাঠিয়ে দেন। ভাষার সমস্যা ছিল তাই এক উপচে ওঠা পাত্র পাঠিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তাঁর রাজ্য পূর্ণ --তিনি অতিরিক্ত কাউকে ঠাঁই দিতে পারবেন না। অতিথিরাও নাছোড়বান্দা , তাদের ফিরে যাওয়ার আর কোন রাস্তা নেই --তারা ওই পাত্রে কিছুটা চিনি ঢেলে সেটা রাজার কাছে ফেরত পাঠায়।অর্থাৎ তারা বোঝানোর চেস্টা করে চিনি যেমন দুধে মিশে তার মিষ্টতা বাড়ায় , তারাও তেমনি মিলেমিশে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের সাথে রাজার প্রজা হয়ে বসবাস করবে।তবে তাদের আর একটা আর্জি ছিল --তারা জরথ্রুষ্ট ধর্মানুসারী - সাথে করে এনেছে তাদের পবিত্র অগ্নি --তারা তাদের উপাসনাস্থল স্থাপনের অনুমতি চায়।রাজা শেষমেশ আশ্রয় দেন তাদের --অধিকার দেন তাদের নিজেদের উপাসনালয় স্থাপনের এবং ধর্ম পালনের।

তারপর কেটে গেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। ওই রাজার কাছে অনাহুত অতিথি পার্সিদের উত্তরপুরুষরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে রাজাকে দেওয়া তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিশ্রুতি। দুধের মধ্যে চিনির মতো মিশে গেছে তারা স্থানীয় জনগণের সাথে --শুধু তাই নয় চিনি যেমন দুধের মিষ্টতা বাড়ায় তেমনি তারা সমৃদ্ধ করেছে স্থানীয়দের। সময়ের কাল পরিক্রমায় তাদের মাতৃভাষা ফারসি ছেড়ে তারা গ্রহণ করে গুজরাটি ভাষাকে আপন মাতৃভাষা হিসাবে। ভারতে বসবাসকারী পার্সিরা মূলত গুজরাটিভাষী ।


ইতিহাস ছেড়ে এখন বর্তমানে প্রবেশ করা যাক --আধুনিক পার্সি দের সম্পর্কে কিছু জানা যাক। আগেই লিখেছি পার্সিরা জরাথ্রুস্ট ধর্মানুসারী।পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন এই ধর্ম। একেশ্বরবাদী এই ধর্মে ঈশ্বরকে আহুদা মাজদা নামে ডাকা হয়। যেহেতু এরা প্রাচীন পারস্যের আদি অদিবাসী ছিল তাই এরা পার্সি নামে পরিচিত।এদের উপাসনা স্থলকে বলা হয় ফায়ার টেম্পল। পার্সি বালকদের ধর্মে আনুষ্ঠানিক ভাবে দীক্ষিত করার জন্য যে আচার অনুষ্ঠান পালিত হয় তার নাম নভজোৎ। সাত বছর বয়স হওয়ার আগে কারো নভজোৎ হয় না। এদের ধর্মগ্রন্থের নাম আবেস্তা
পার্সি বালকের ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ


পার্সিদের উপাসনা স্থল -ফায়ার টেম্পল


পৃথিবীতে পার্সিদের সংখ্যা এখন মাত্র একলাখের কিছু বেশি --এর অধিকাংশই ভারতে -প্রায় ৭০-৭৫ হাজার। এর আশি শতাংশ মুম্বাইএ , বাকিরা ছড়িয়ে আছে গুজরাট ,কলকাতা এবং আরো কিছু শহরে অল্প সংখ্যায়। ভারত ছাড়া আমেরিকা ,কানাডা এবং ব্রিটেনসহ হাতেগোনা কয়েকটি দেশ ব্যতিত এদের আর কোথাও অস্তিত্ব নেই।

পার্সিদের মধ্যে নারী -পুরুষ নিৰ্বিশেষে শিক্ষার হার ১০০ শতাংশ ,অর্থনৈতিকভাবে এরা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ভারতের সর্ববৃহৎ ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রূপের মালিক পার্সি টাটারা। সল্ট থেকে স্টীল ,ফাইভস্টার হোটেল চেন তাজ গ্রূপ অফ হোটেলস থেকে বিশ্বের সব থেকে দামী গাড়ী ব্র্যান্ড জাগুয়ার -ল্যান্ড রোভার টাটা গোষ্ঠীর।ব্যবসা ছাড়াও দেশের অসংখ্য এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে হাসপাতাল টাটারা পরিচালনা করে। ক্যান্সার চিকিসৎসার জন্য বিখ্যাত টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের নাম অনেকেই শুনে থাকবেন। টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসার বাৎসরিক টার্নওভার পৃথিবীর অনেক দেশের জিডিপির থেকে বেশি। টাটা ছাড়াও গোদরেজ ,সাপোরজি -পালোনজি ইত্যাদি অনেক সংস্থা পার্সিদের।
শুধু ব্যবসা নয় -সমাজের প্রায় সবক্ষেত্রে পার্সিরা উৎকর্ষের স্বাক্ষর রেখেছে। কিছু বিখ্যাত পার্সির ফটো দেখুন।












অত্যন্ত সফল ,উচ্চশিক্ষিত এবং সম্পদশালী এই পার্সিদের তাহলে সমস্যা কোথায় ??

সমস্যা এদের মধ্যে অত্যন্ত কম জন্মহার এবং পরিণতিতে ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যা। উচ্চশিক্ষিত নারী -পুরুষ অধিকাংশই বিয়ে করেনা এবং করলেও শিশু জন্মহার জনসংখ্যার রিপ্লেসমেন্ট লেভেল থেকে অনেক কম। এই ভাবে চলতে থাকলে আর হয়তো কয়েক দশক। বর্তমান জনসংখ্যা যে মাত্র কয়েক হাজার। ১২০০ বছর আগে তৎকালীন পারস্য থেকে বিতাড়িত পার্সিরা হয়তো পৃথিবী থেকেই নিশ্চিহ্ন হবে চিরতরে। ভারত সরকারের মাইনরিটি অ্যাফেয়ার্স মিনিস্ট্রি চেষ্টা চালাচ্ছে এদের বিয়ে এবং জন্মহার বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে। এই সূত্রেই নিচের এই বিজ্ঞাপন। মোদ্দা কথা হলো পার্সি ছাড়া ভারত চিনি ছাড়া দুধের মতোই তার মিষ্টতা হারাবে।



নিচে আরও কিছু বিজ্ঞাপন দেখুন।








পার্সি বিয়ে

পার্সি পরিবারে জমজ সন্তানএর জন্ম সংবাদ পত্রে খবর হয়।

এক পার্সি মা ও তার সন্তান

পার্সিদের দের সাথে আমার অনেক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে। দীর্ঘদিন এক পার্সি পরিবারে আমি পেয়িং গেস্ট ছিলাম। কর্ম ক্ষেত্রে অসাধারণ কিছু পার্সি সহকর্মী পেয়েছি ।

আর ও হ্যাঁ , পার্সি দের খাবার অসাধারণ --কিছু পার্সি ডিশের নমুনা দেখুন।


বিখ্যাত পার্সি খাবার ধনসক


ঘরে ধনসক বানাতে চান ?? খুব সোজা !
এখানে দেখুন :

রেফারেন্স : ইন্টারনেট ,আনন্দবাজার , বিভিন্ন পত্র -পত্রিকা এবং আমার কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:০৯

কলিমুদ্দি দফাদার বলেছেন: আমি শুধু যানতাম বোমান ইরানি, রতন টাটা এরা অগ্নি পুজারক ভিন্ন ও প্রাচীন এক জনগোস্টি। এত বিস্তারিত জানতাম নাহ।

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৫

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: জানাতে পেরে ভালো লাগছে।

২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:১৭

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: অজানা বিষয় জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ জনাব।

৩| ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:১৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভারত সরকারের পার্সিদের প্রতি এত মায়া মমতা না দেখিয়ে সকল ধর্মের মানুষকে নিয়ে 'ভারতীয়' হিসেবে দেশ চালালেই তো হয়। অনেক কিছু জানলাম।

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৭

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: বাড়ীর সবচেয়ে ছোট সন্তানই তো সবচেয়ে বেশি আদর পায় !

৪| ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৬

টারজান০০০০৭ বলেছেন:
ধনী , উচ্চশিক্ষিত, প্রভাবশালী পরিবার, জনগোষ্ঠী যেখানে দারিদ্রতা থাকেনা , থাকেনা অভাব, তারা একসময় সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়, একসময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় , অথবা অন্য জনগোষ্ঠীর সাথে মিশে যায় ! অর্থনৈতিক সফলতা, ক্যারিয়ার, জীবনকে উপভোগের চিন্তা , নারীদের সন্তান নিতে নিরুৎসাহিত করে। ইহুদি জনগোষ্ঠীরও একই অবস্থা ! আরেকটি বিষয় , ইহুদি ও পার্শি ধর্মে ধর্মান্তর নাই , জন্ম ব্যাতিত অন্য কেউ ধর্মে আসতে পারেনা। যার কারণে জন্মহার না বাড়ালে এরা বিলুপ্ত হবেই !

১৮ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:২০

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: আমি দেখছি আপনি ইদানিং ব্লগে এর-তার ইয়ে-ফালানো বন্ধ করে ভালো ভালো কমেন্ট করছেন! গুড। ধন্যবাদ।

৫| ১৮ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:২৯

বারিধারা বলেছেন: @টারজান০০৭, ইহুদী ধর্মে ধর্মান্তর নেই - একথা কই পেলেন? লিসা নাজিব হালাবি নামের ইহুদী মহিলা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন জর্ডানের বাদশাহ হাসানকে বিয়ে করতে। একই ভাবে ট্রাম্প কন্যা ইভানকা ইহুদী ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে জারেড কুশনারকে বিয়ে করতে।

১৯ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:১৫

বাবুরাম সাপুড়ে১ বলেছেন: জুডাইজম ধর্মে কনভার্সন খুব একটা ডিফিকাল্ট নয় কিন্তু পারসী ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া প্রায় অসম্ভব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.