নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক;
ত্রস্ত পায়ে একজন রোগা পাতলা নারী হনহন করে হাঁটছে গলির মাথায় অস্থানে গড়ে ওঠা ভাগাড়টার দিকে। তখনো সূর্য ওঠেনি। হলুদ নিয়নের আলোয় তার পড়নের একপেড়ে সাদা শাড়ি ঘোলাটে লাগে। তবু মনে হল সাদা থান। বুকের কাছে পুটলী পাকানো কিছু দু’হাতে জড়িয়ে সে অনেকটা ছুটে যায় ভাগাড়ের কাছে। এলাকার মানুষ ডাস্টবিন না পেয়ে এখানেই ময়লা ফেলতে শুরু করায় দিন দিন জায়গাটা ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে। লোকে নাকে কাপড় দিয়ে কোনোমতে গলি হতে বের হত। নারী ক্ষণিকের তরে থমকে দাড়ায়। কী যেন ভাবে এক মুহূর্ত। এদিক ওদিক দেখে সতর্কভাবে। যদিও এত ভোরে কাকপক্ষীও জাগেনি। দু’হাতে ধরে বুকের কাছের পুটলীটা ভাগাড়ে রাখে আস্তে করে। তারপরই উল্টো যেদিক থেকে এসেছিল, সেদিকে ছুটতে শুরু করে। একবারও পেছন ফিরে দেখে না। সে কি কিছুকে ভয় পেয়েছে?
দুই;
কুকুর আর কাকেরা বাচ্চাটাকে আরেকটু হলে প্রায় খেয়েই ফেলেছিল।
সকাল হতে ট্যাও ট্যাও কান্নার আওয়াজ আসছিল গলির শেষে বড় রাস্তার ধারে যেখানে পাড়ার লোকেরা ময়লা ফেলে সেখান থেকে। বাচ্চার কান্না শুনে পাড়ার কুকুরগুলো প্রথমে আগ্রহী হয়ে কাছে আসে। তারা বিষয়টাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে আজকাল। মাঝে মধ্যেই মানুষের বাচ্চারা পড়ে থাকে ভাগাড়ে। একদিন, দুদিন বয়সি নবজাতক। বেশিরভাগই কিছুক্ষনের মধ্যে মারা যায়। কাউকে কাউকে মৃতই নিক্ষেপ করে যায় তাদের মানুষ (নাকি অমানুষ?) মা কিংবা বাবা। কাকগুলো শুধু বাড়তি উৎপাত হয়ে তাদের খাবারে ভাগ বসায়। আজকের বাচ্চাটাও প্রথমে বুঝতে পারে না কী হল। সে কেন এখানে সেটা বোঝার মতো বুদ্ধি তার হয়নি। শুধু যখন পঁচা আবর্জনায় তার ঠান্ডা লাগা শুরু হয়, সে ট্যাও ট্যাও করে মায়ের ওমের দাবী জানাতে থাকে। নিশাচর চার পাঁচটা কুকুরের আগ্রহের উদ্রেক করে সেটা। ওরা গন্ধ শুঁকে, শব্দ শুনে দৌড়ে এসে পড়ে। গোল হয়ে দাড়িয়ে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ার অপেক্ষা করে। শত হলেও জ্যান্ত একটা মানুষের ছানা। কেউ কেউ হালকা করে বাচ্চাটার হাতে, পায়ে মৃদু কামড়ও বসায়। বেশিক্ষন তাদের এই সংকোচ বোধ থাকবে না। নিয়নের আলো কোনো দ্বিধাকেই দীর্ঘস্থায়ী করায় না (!)
তিন;
সূর্য উঠতেই পার্কে হাঁটতে যাবার জন্য মানুষের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। তাদের মধ্যে কারো নজরে পড়ে ঘটনাটা। প্রথমে সে খেয়াল করেনি, কুকুরগুলো কী দেখে এমন করছিল। হঠাৎই তার কানে ট্যা ট্যা আওয়াজটা আসে। ততক্ষণে কুকুর আর কাকের মধ্যে নবজাতকটাকে নিয়ে লড়াই বেঁধে গেছে। নরমাংসের অধিকার নিয়ে। শুধু একটা কুকুরের বাচ্চা (!) মানুষের বাচ্চাটাকে (!) আগলে দাড়িয়েছিল। একজন দু’জন করে মানুষ জমতে থাকে। খবরটা আস্তে আস্তে পাশের মহল্লায় ছড়ায়। আরো মানুষ আসে। ভীড় পড়ে যায় ভাগাড়টার পাশে। কেউ কেউ পুলিশ ডাকতে বলে চিৎকার করে। কেউ আবার হাসপাতালে নেবার কথাও বলতে থাকে। কলিকালের নষ্ট হয়ে যাওয়া সমাজ নিয়ে হা হুতাশ প্রকাশ করেন মুরব্বীরা মাথা নেড়ে। মানুষের বাচ্চাটা সমানে কেঁদে চলে। তার মাতৃদুগ্ধ চাই, মায়ের ওম চাই। হাত পা ছড়িয়ে চিৎকার করে সে নিষ্ঠূর পৃথিবীর বিরুদ্ধে অনুযোগ করে। উত্তেজিত জনতাকে বাচ্চাটির উদ্ধারের চেয়ে জামানার অধঃপতন নিয়ে বেশি আগ্রহী মনে হয়। কুকুর আর কাকের ভীড়ে মানুষের বাচ্চটিকে দেখতে অসুবিধা হয় জনতার। কেউ একজন তীক্ষ্ন গালি ছোড়ে, “সরে যা কুত্তার বাচ্চারা (!)।
চার;
হঠাৎই ভীড় ঠেলে একজন নারী ঢুকে পড়ে দৃশ্যপটে। ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশুটাকে বুকে তুলে নেয়। ছোট্ট শরীরটার কয়েক জায়গা হতে রক্ত ঝরছে। কাপড়ের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাটাকে। পাগলের মতো তাকে বুকে জড়ায়। “আহা! কোন মায়ের বুকের ধন, পইড়া রইছে মাটিত”, ”কোন মায়ের সাত রাজার ধন এইহানে ফালাইয়া গ্যাছে।” উত্তেজিত জনতাকে সে জানায়, বাচ্চাটাকে সে পালক নিতে চায়। দ্বিধাগ্রস্থ জনতার ভীড়ে একটা মৃদু আলোড়ন ওঠে। তারা হাফ ছেড়েও বাঁচে। যাক, ঝামেলা হতে বাঁচা গেল। মহিলা এসে তাদের একটা যন্ত্রনা হতে বাঁচানোয় তারা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। ফলে নারীকে কেউ বাঁধা দেয় না (আসলে দিতে চায় না।) এমন সদাশয় ভীড়ের মধ্যে কয়েকজন ছিল প্রবল মানবতাবোধসম্পন্ন। তারা তীব্র শ্লেষের সাথে শিশুটার অচেনা বাপ-মায়ের উদ্দেশ্যে একটা অকথ্য গালি ছোড়ে “................কইর্যা ফালাইয়া থুইয়া যায় ক্যা, ...............পয়দা করার কালে মনে থাহে না?” একজন সজোরে অভিশাপ দেয়, “খোদায় য্যান হ্যার এমুন রাক্ষুইস্যা বেজন্মা বাপ-মায়রে গজব দিয়া ধ্বংস করে। হ্যাগো কোল য্যান উজাড় হয়া যায়।”
নারী ততক্ষনে মানুষের বাচ্চাটাকে বুকে নিয়ে রওনা হয়েছে বাড়ির দিকে। অভিশাপ শুনে সে তীক্ষভাবে চিৎকার করে ওঠে, “না না আল্লাহ, বুকের ধন বারবার কাইড়ো না (!!!)।”
সূর্যের আলোয় নারীর একপেড়ে সাদা শাড়ি আরেকটু উজ্জ্বল লাগে (!)
১৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:০২
বেচারা বলেছেন: জ্বি। ঠিক।
২| ১৫ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯
তারেক_মাহমুদ বলেছেন: মাতৃত্ব একটু জৈবিক প্রেষণা, যা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত।
১৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:০৫
বেচারা বলেছেন: সত্যি কথা। মানুষ সেটা ভুলে যেতে চাচ্ছে।
৩| ১৫ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৯
মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: পছন্দের ডায়লগঃ /সাহসী উক্তি!
@"“................কইর্যা ফালাইয়া থুইয়া যায় ক্যা,...............পয়দা করার কালে মনে থাহে না?”"
@" কেউ একজন তীক্ষ্ন গালি ছোড়ে, “সরে যা কুত্তার বাচ্চারা (!)।"
ভয়াবহ পরিস্থতি!!!!!
বাচ্চা যদি একটা পাওয়া যায়, বুঝবেন
গর্ভপাত করেছে আরো ১০০জন,
পিল খেয়েছে ১০০০জন,
আর কন্ডমসহ জিংজিং করেছে ১০,০০০জন।
পার্ক, রিক্সা, চিপাচাপা, ইমো, ফোনসেক্স আরো ১০০,০০০জন।।
১৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:০৬
বেচারা বলেছেন: আফসোস।
৪| ১৫ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৪
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: এমন ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহ ঘটছে।ভাল লিখেছেন।
১৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:০৬
বেচারা বলেছেন: ধন্যবাদ। সাথে থাকুন। পরিবর্তন নিশ্চই হবে।
৫| ১৫ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৭
অনুতপ্ত হৃদয় বলেছেন: এরকম ঘটনা ঘটেই চলেছে এই সমাজে দিনের পর দিন
১৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:০৭
বেচারা বলেছেন: আলো আসবে। আসবেই।
৬| ১৫ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৪০
জাহিদ হাসান মিঠু বলেছেন:
বর্তমান অতি আধুনিক সমাজের এটাই বৈশিষ্ট্য, বৈধ সম্প্রর্কের চাইতে অবৈধ সম্প্রর্কে ব্যক্তিস্বাধীনতা বেশি। তারপর ফলাফল আসে এরকম।
ধন্যবাদ।
১৯ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:০৭
বেচারা বলেছেন: আমরা একটু বেশি আধুনিক হয়ে যাচ্ছি।
৭| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা আরেকবার পড়লাম।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: যে নারী জন্ম দেয় সে মা। আর মাতৃত্ব আসে হৃদয়য়ের গভীর থেকে।