নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হ্যাডোমিক ভারসেস

১৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৫৯

জব স্যাটিসফ্যাকশন আর জব পাওয়ার (যেটিকে ঘাঁটিয়া ভাষায় হ্যাডোম বলা হয়) কোন জবে সব চেয়ে বেশি জানেন?

আপনার মাথায় হয়তো চট করে বিসিএস, পুলিশ, উকিল-এদের কথাটাই সবার আগে আসবে। আর সেই আসাটা যে খুব অমূলক-তাও নয়। আফটার অল, পাওয়ার এপ্লিকেশনে তাদেরই তো আমরা বেশি দেখি। আগে শুনতাম-পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা। এখন, পুলিশকে ছুঁলে ৩৭ ঘা; এমনকি সামান্য টিকিট চেকার ছুঁলেও ঘা-ই ঘা।

না, তারপরও আমি মনে করি, দেশে সবচেয়ে হ্যাডোমিক (না, এটমিক বলিনি কিন্তু, আপনি বড্ড তাড়াহুড়া করেন) পেশা হল দুটো-ড্রাইভার আর কাজের বুয়া।

কনফিউজড হবেন না। এমনিতে, উগান্ডায় এখন সবাইই হ্যাডোমিক। রাস্তায়, বাজারে, বাসায়, মহল্লায়, গাড়িতে, ট্রেনে, স্টেশনে, মাঠে, অফিস-আদালতে যে কাউকে আপনি সামান্য চ্যালেঞ্জ করুন, সামান্য প্রতিবাদ করুন, সামান্যতম ন্যায্য প্রশ্ন করুন, সাথে সাথে আপনাকে সে শুনিয়ে দেবে-

”ওই মিয়া, বাড়ি কই?” (বাড়ি যদি নেপালগঞ্জ না হয়, আপনি উন্নত নাসারন্ধ্র নিয়ে বাসায় ফিরতে পারবেন না।)

বলছিলাম হ্যাডোমিক জব নিয়ে।

বাসার কাজের বুয়াদের নিয়ে বেশি বলব না। কারন তাদের নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা কম। যেদিন হতে নিজের পরিবার হয়েছে, মানে, শশুর কন্যার কাছে নিকাহ বসেছি, সেদিন হতে আজ তক-মানে, ১৩ বছরে মাত্র ১ জন বুয়ারই সাহায্য নেবার কাবেলিয়াত হয়েছিল। তাই বুয়ার উপাখ্যান তিন লাইনে শেষ করছি।

বুয়ার নাম সাবিনা।
বয়স-১৩ বছর।
কর্মকাল-১৯ দিন।

অবদান: গহনা চুরি, ফ্রিজ লুট, ইন-সাবোর্ডিনেশন (মানে কাম করতে পারুম না), নালিশ-এ-মোকদ্দমা।

কাহিনী হল, আজ হতে বছর দশেক আগে, গিন্নীর একাকিত্ব দূর করতে একটি বাচ্চাকে আমরা নিই। যদিও গৃহকর্মী তথা বুয়ার সেবা নিতে আমাদের দু’জনেরই প্রবল আপত্তি এখনো আছে, তখনো ছিল।

ছোটবেলার হিসেব আলাদা। তখন আমাদের কলোনীতে তিনজন ‘............র মা’ ছিল স্থায়ী বুয়া। তারা তিনজন ও তাদের বিশাল পরিবারের বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা কন্যা ও পুত্রবধূরাই ছিল কলোনীর কমোন বুয়া। তিন ‘..................র মা’ এর সিন্ডিকেট।

বাসার কাজের পাশাপাশি সেই লটবহরের কন্যা ও বধূরা কারো কারো মনোরঞ্জন সেবাও দিত। নিয়মিত মাসোহারা বা খ্যাপের ভিত্তিতে। সে কথা আজ থাক।

তো, সাবিনাকে পার্টনার নিটোলের সঙ্গদানের জন্য নেয়া হয়। তার কাজ ছিল তাকে ২৪/৭ সঙ্গ দেয়া। আর ফাউ হিসেবে ঘরের কাজে সাহায্য করা। ‘সাহায্য’ বলেছি, কাজ করা তার মূল অধিকারে ছিল না। তাকে আমাদের সাথে বসিয়ে খাওয়ানো হত, একই মিল। ঘুমাতে দেয়া হত সিঙ্গেল একটা বেডরুমে। নতুন বিছানা, মশারি ও কাপড়চোপড় দেয়া হল। আলাদা সাজুগুজুসহ।

কাজে যোগ দেবার ৭ম দিনেই তিনি আমার স্ত্রীর সাথে বাসার বাইরে ঘুরতে যেতে বা বাজার/শপিংয়ে সঙ্গ দিতে অস্বীকৃত হলেন।
৮ম দিনে বালতিতে ডিটারজেন্ট দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে সেটা না কেঁচে সোজা পানিতে ধুয়ে ফেলাকেই কাপড় ধোয়া হিসেবে উপস্থাপন করলেন,

৯ম দিনে সিরিয়াল চলার সময়ে ভাত বাড়তে অস্বীকৃত হলেন, ১০ম দিনে খাবারে সবজি খেতে অস্বীকার করলেন, ১১তম দিনে ফ্রিজের সব মিস্টি খাবার ও আচার গোপনে বাটি হতে খেয়ে মুখ লাগিয়ে রাখার সুঅভ্যাস নিয়ে ধরা পড়লেন,

১২ তম দিনে আমার স্ত্রীর এমিটিশনের গহনা নিজ ব্যাগে অন্তরীন করে ধরা পড়লেন। ১৩ তম হতে ১৮ তম দিন তাকে কাউন্সেল ও প্রবোধ দান করা চলল-যে তোমার চাকরি বহাল থাকবে, কোনো বিচার-সালিশ হবে না।

তারপরও ১৯ তম দিনে তিনি রুদালী নারীদের মতো গড়াগড়ি করে কান্না শুরু করায় ১৯ তম দিবসে তাকে সবেতন বিদায় করা হল।


সেই হতে বুয়া চ্যাপটারের দ্বার বিএনপি-আম্লীগের মিলনের মতো চিররুদ্ধ। আমরা দু’জনেই ঘরের স্থায়ী বুয়া। ভারী কাজগুলো আমার। হালকাগুলো গিন্নীর। সুখের বিষয়, বুয়াগিরী করতে করতে আমি বেশ কিছু অলটারনেটিভ স্কীল হাসিল করে নিতে পেরেছি।

চাকরি বাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়লে পুরুষ বুয়ার কাজ করে পেট চালাতে দিব্যি পারব। যেমন-আমি ভাল কাপড় ধুতে পারি, বাসন-কোসন আমার স্ত্রীর থেকেও ভাল মাজতে পারি, ঘর মোছায় আমি যেকোনো নারীকে হারাতে পারব। কাপড় আয়রন করতে জানি, তরকারী কুটতে না জানলেও পেঁয়াজ মিহি করে কুঁচাতে পারি, মুরগী পিস করতে পারি, মুরগীর পা (আমার পার্টনারের প্রিয় খাবার) সুন্দর করে পরিষ্কার করতে পারি। কী, লাগবে নাকি পুঁয়া (**পুরুষ+বুয়া = পুঁয়া)


মূল ডিশ শুরু করার আগে দিয়ে আমার সহকর্মীর ছোট্ট একটা অভিজ্ঞতা বলে যাই। সকালে অফিস যাবার আগে আমার ষাটোর্দ্ধ সহকর্মী সকালে নাস্তা খাবার সময়ে তার বুয়াকে বলেছেন, “খালা, রুটিটা এত মোটা করে না করে আরেকটু পাতলা করলে ভাল হত না?”

”রুডি এরতোন পাতলা করতারুম না। খালাম্মা, রুডি আরু ফাতলা ছাইলে নুতুন বুয়া আনি লন আর আমারে বিদায় দ্যান য্যান।”
বুয়া নিয়ে আর কিছু বলব না।

হ্যা, ঢাকার বুয়ারা রোজ কতগুলো বাসায় কাজ করেন, কত ঘন্টা করে, কত ক্যাটেগরীর কাজ করেন আর তাতে মোট আয় কত, তাদের প্রতি কাজের প্রতি ঘন্টা আয় কতটা আকাশ ছোঁয়া, বুয়ারা কীভাবে গ্রামে জমি কেনার মতো হ্যাডোম হয়-তা নিয়ে গবেষণা হতেই পারে।

আর আপনার যদি তাতে এতই ইর্ষা হয়, তাহলে আপনি বুয়া হবার নিয়ত করে নিন। কামাই ও হ্যাডোম খারাপ না। আর যদি গায়ে গতরে মাংস লাগাবার সাধ জাগে, মানে, বুয়া হায়ার করার খাহেশ জাগে, তাহলে কাবাডি খেলবার জন্য আগে রেডি হোন।

এবার আসি শোফার তথা চালক ওরফে ড্রাইভার এর প্রসঙ্গে। আজ আসলে ড্রাইভারদের নিয়েই বসেছি। এই সম্প্রদায়কে নিয়ে আমি পেশাগতভাবে কাজ করি গত অন্তত ১০ বছর। আমাকে আপনি রীতিমতো একজন বিশেষজ্ঞ বলতে পারেন। নারীর মনও হয়তো সাধনা করলে বোঝা সম্ভব হতে পারে, কিন্তু, ড্রাইভারদের হৃদয়াঞ্চলের ভেদ তারা নিজেরাও বোঝেনা।

আপনি যদি কথাটা শুনে আকাশ হতে পড়েন, তাহলে আমি আর বলব না, যে, এমনকি মেসি বা রোনালডোর চেয়েও বেশি জব পাওয়ার এনজয় করেন চালক বেরাদররা।

এমনকি মেসি বা রোনালডোরাও মৌসুমে ক্লাব পাবে কিনা-তা নিয়ে সামান্য হলেও টেনশন করে। কিন্তু এই গোষ্ঠীর চাকরি হারানো নিয়ে কোনো ভয় নেই। বেতন কত আর খরচ করব কত-সেই ভাবনার বালাই নেই। পকেটে কত আছে-সেই ভাবনাও নেই। কাল বাজার হবে কিনা-টেনশন নেই। বেতন পেয়ে সেই রাতেই জুয়া খেলে সব উড়িয়ে দিতেও ভয় নেই। জানের ডর নেই। মরার চিন্তা নেই।

রাস্তায় কীভাবে চললে দুর্ঘটনা হত না-তা নিয়ে কোনো জ্ঞান নেই। রাস্তায় তার দোষে অন্য কারো ক্ষতি হলে স্যরি বলবার প্রশ্নও নেই। নিজে পাতলা খান হলেও রাস্তায় তারই স্বজাতিদের সাথে রক্তাক্ত ডগফাইটে যাবার দুঃসাহস দেখাতে (যেখানে নিজের দুটো দাঁত খুইয়ে আসবে) বিষয়ে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। ঢাকার রাস্তার ট্রাফিক আর গাড়ি চালনার সাতসদাই নিয়ে একটা সুদীর্ঘ লেখা লিখেছিলাম। ৮ জন পড়েছিলেন। ওখানে এই নারায়নী সেনাদের নিয়ে বিষদ লিখেছি, পড়ে নিয়েন।


জগতে নগদ নারায়ন দেবতার পাঁড় ভক্ত বলে যদি কেউ থাকে, তার নাম ড্রাইভার। আপনি তাদের ২ হাজার টাকার একটা প্যান্ট গিফট করুন। সে খুশি হবে। কিন্তু তৃপ্ত হবে না। কিন্তু, তাকে এর বদলে নগদ ৩০০ টাকা দিন। আপনাকে সাতবার ষাষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করবে।

নগদ নারায়ন বন্ধ করবেন, পরের দিনই আপনার সাধের গাড়িখানার পশ্চাৎদেশে তিনখানা আলতো চুমুর দাগ আবিষ্কার করবেন। আর তা না হলে, রাস্তায় আরেক পেলাশটিকের সাথে ডগফাইট উপভোগ করবেন।


জেনে অবাক হবেন, যে, আপনার বাসায় এই আক্রার দিনে মাসে কতবার ইলিশ মাছ আর গো-মাংস আসে-তা আঙুলের কর গুনে বলতে পারলেও তাদের ঘরে মিস নেই। জৈষ্ঠ্য মাসে তাদের মধুমাস উদযাপনে ক্ষ্যামা নেই। ২২ বছর বয়সী অর্বাচীন ড্রাইভার, তার ৪ বছর বয়সী বাচ্চা বিদ্যমান। অবিবাহিত ড্রাইভারদের মোলাকাত আমি বলতে গেলে পাইই নাই, তা তাদের বয়স যা-ই হোক। বিশ্বাস না হলে একটু মূলা চিবিয়ে নিন।


আমার সুহৃদদের মধ্যে একজন আছেন ব্রুনাই, থুরি নারায়নগঞ্জের বাশশা। তার ড্রাইভার মোফাজ্জল এই এরেনাতে একজন মহিরুহ, কিংবদন্তীও বলা চলে। মোফাজ্জলকে নিয়ে সে প্রায়ই একটা না একটা কেচ্ছা লিখত। আর আমরা সেটা পড়ে হাসতে হাসতে হেঁচকি তুলতাম। ইদানীং কেচ্ছার সংখ্যা কমে গেছে। সম্ভবত মোফাজ্জল ড্রাইভিং বাদ দিয়ে বকরীর খামার দিয়েছে।

নিন্দুকেরা টিটকারী দিয়ে বলে, একজন সুন্দরী নারীর মোহময় ডাক উপেক্ষা করে অবলীলায় চলে যেতে পারে-এমন বুকের পাটওয়ালা মহামানবদের রিক্সাওয়ালা বলে। এটাকে সামান্য রং বদলিয়ে বললে বলা যায়, একটা অতি চমৎকার চাকরিকে পায়ে দলে, স্রেফ-”ধূরো, আর বাল্লাগেনা”-বলে ছেড়ে যেতে পারে যে মহাবীর খালেকজেন্ডার-তার নাম ড্রাইভার।

নিন্দুকেরা আরো বলে মেয়েদের মন বোঝা নাকি দেবতারও অসাধ্য। মিথ্যা কথা। মেয়েদের সবচেয়ে ভালো বোঝে-কাপড় বিক্রেতা আর দর্জিরা। আর সেই সূত্র ধরে, হিউম্যান সাইকোলজির ভেরিয়েশন বোঝার জন্য সবচেয়ে কার্যকর গিনিপিগ হল ড্রাইভার। এই জনগোষ্ঠীকে খুব কাছ হতে যদি আপনি অবজারভ করেন, তাহলে আপনার খুব বিরল অভিজ্ঞতা হাসিল হবে, যে, মানুষের সাইকোলজি কত বিচিত্র ও ক্রূঢ় হতে পারে।


না, না, নেগেটিভলী নেবেন না। আমি এই পেশাকে অসম্মান করছি না। এই পেশাজীবিদের অসম্মান করাও আমার লক্ষ্য না। আমি শুধু বৈচিত্র ও কুটিলতার দিকটাই বলতে চেয়েছি। তাছাড়া, ভিক্ষার চালের যেমন কাড়া-আকাড়া নেই, তেমনি ঠ্যাকারও নেই কোনো ঠ্যাকনা। ঢাকা শহরে গাড়ি নিয়ে যদি আপনি চলতে চান, ড্রাইভার রাখতে বাধ্য।

চালানোর জন্য না হলেও, গাড়ির নিরাপত্তার জন্য তো বটেই। তা না হলে নিউমার্কেট বা গুলিস্তানে গাড়ি পার্ক করে দু’টাকার কচুশাক বা আন্ডারপ্যান্ট কিনতে গেলে এসে দেখবেন, গাড়ি কানা, মানে লুকিং গ্লাস বস্তুখানা ধোলাইখালে চালান হয়ে গেছে। অবশ্য শোফার রেখে গাড়ির লুকিং গ্লাস হেফাজত করলেও একাকী ড্রাইভারকে চারনভূমিতে ছেড়ে দিলে আপনার গাড়ির ’ত্যাল’ অন্যের গাড়িতে জ্বালানিশক্তি যোগাতে চলে যাবে। সাধু সাবধান।

তাই যাকে রাখতে আপনি বাধ্য, তার বদ খাসলত দেখে দমে গেলে হবে না। পথে নামুন, খুঁজুন, বাঁছুন, কাশুন। আর তুলনামূলক পছন্দকে মাথায় রেখে ড্রাইভার হায়ার করুন। এবং, অতি অবশ্যই ড্রাইভার পোষার ক্ষেত্রে স্মার্ট হোন।

তাও যদি না পারেন, আমাকে ক্ষ্যাপে নিতে পারেন। ড্রাইভার ইন্টারভিউ করার বিষয়ে আমি একজন বিশেষজ্ঞ। এই বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা শুনলে আপনার গর্ভপাত কিংবা ক্ষনপতনও হয়ে বসতে পারে। আমার পার্টনার নিটোল মাঝে মধ্যে আক্ষেপ করেন, ইস, এই ড্রাইভারের সব ভাল, শুধু ওই খাসলতটা যদি না থাকত; ইশ, এই ভদ্রলোক ভালই ছিলেন, শুধু যদি গাঁজা খাবার বিষয়টা লুকিয়ে রাখতে পারত।” আমি তাকে ঠান্ডা করি, “দেখো, কলা কিনলে খোসাও কিনতে বাধ্য।”

ড্রাইভাররা যে ভয়ানক স্ট্রেসের চাকরি করেন, সেটাকে সামাল দেবার যোগ্যতা অর্জন করার যাত্রায় একজন মানুষ তথা ড্রাইভাররা ট্রান্সফর্মড মানুষ হিসেবে ওইসব ভাল ও মন্দ-সবকিছুকেই নিজেদের অবচেতনেই নিজের মধ্যে প্রোথিত করে নেন। ভাল ড্রাইভার পেতে গেলে ওইসব বৈশিষ্টও বাই ডিফল্ট মেনে নিতে হবে।

ড্রাইভার ইন্টারভিউ’র সবচেয়ে দারুন বা নিদারুন অভিজ্ঞতার একটা বলি?

একবার একজন ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, “ঈদের আগে আগে এমন একটা চাকরি ছেড়ে দিলেন কেন-বলবেন কি?”

”স্যাআআআআর, ছাইড়া দিলাম আঁরি।”

বাদবাকিদের সাথে মোয়ামালাতে কিংবা বাতচিতে যেসব অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা নিয়ে একটা ওডেসি লিখে ফেলা যাবে। আমি চাকরি ছেড়ে দেবার উপলক্ষ্য হিসেবে তাদের হতে যা যা এযাবত জানতে পেরে ‘স্পিকার’ বনেছি, তার কয়েকটা বলে শেষ করি-

১. ঢাকার রাস্তায় ৪০ কিলোমিটারের বেশি স্পিডে গাড়ি চালাতে না করায় চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।

২. মামা শশুরের চল্লিশায় যাবার জন্য ৩ দিন ছুটি চেয়ে পায়নি। তাই ছেড়ে দিয়েছে।

৩. ঈদের ছুটি শেষে ফোন বন্ধ রেখে ৭ দিন পরে কাজে যোগ দিতে আসায় আর রাখে নাই।

৪. গাড়ি চালাবার সময়ে ফেসবুকিং করত। এমন করতে না করায় ছেড়ে দিয়েছে।

৫. মামা ইলেকশনে দাড়াবে। তার দাড়ানো ঠিক হবে কিনা-তা ঠিক করতে এক পারিবারিক মেজবানে যোগ দিতে বাড়তি ছুটি চেয়ে পায়নি। ত্যাজের ধাক্কায় খোদা হাফেচ করে দিয়েছে।

৬. মালিকের মিসেসের সাথে লাইন মারার চেষ্টা করেছিলাম। ধরা পরে চাকরি হারিয়েছে। (এটা অবশ্য মালিক তরফে জ্ঞাত।)

৭. বসের গাড়ির তেল গোপনে বেঁচে দিত। গাড়ি গ্যাস করা হল। ড্রাইভারও চাকরি ছাড়ল (এটা গায়েব হতে জেনেছি।)

৮. বাসের সাথে ধাক্কা লাগিয়ে গাড়ি থোতা করে দিয়ে অর্ধলক্ষ টাকার খরচ বাঁধিয়ে দিয়েছে। সেজন্য বকা দেয়ায় ব্যাডারে মুখের উপরে না কইরা চইল্যা গ্যাছে।

৯. মালিকের মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে নিজের বউকে নিয়ে স্কুলের সময়ে তিনশো ফিট বেড়াতে যেত। মালিকের ট্র্যাকারে ধরা খেয়ে ঘ্যাচাং।

১০. মালিক পাজেরা বেঁচে দিয়ে সেডান কিনেছেন। সস্তা গাড়ি চালাবে না, তার একটা ইজ্জত আছে না?-চাকরি হতে ইস্তফা।

১১. অনেক দিন এক মালিকের সাথে চাকরি করে আর ভাল লাগছিল না। রুচী বদলানোর জন্য চাকরি ছেড়েছি।

বাকিগুলো ভাষায় প্রকাশের বাইরে-বিধায় ক্ষ্যামা দিলাম। তো, এত নির্দিধায় ও তুচ্ছ কারনেও ইচ্ছে হলেই চাকরি ছেড়ে দেবার মতো বুকের পাটা যেই চাকরিতে আছে, তাকে সবচেয়ে হ্যাডোমিক জব বা জব পাওয়ার বলাতো যেতেই পারে, তাই না ফ্রান্স? ইউক্রেইন? উগান্ডা?
হ্যা, কখনো জেনারেলাইজ করবেন না। জগতের সকল মানুষ এক না। আর পেশা হিসেবে ড্রাইভিং খুব খারাপও না। অন্তত বসের মুখের ওপর হ্যাডোম দেখিয়ে পত্রপাঠ চাকরি ছেড়ে চলে যাবার মতো সুখটাতো অর্জন করাই যায়।

খুব সম্প্রতি একটা খবরে দেখলাম, একজন পিকআপ ড্রাইভার পড়ে থাকা ২৫ লাখ টাকা পেয়ে সেটা মালিককে ফেরত দিয়েছেন। আপনি পজিটিভ মানুষ হলে এই শেষ লাইনটা মনে রাখবেন। নেগেটিভ হলে বাকিটা লেখা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৪

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: চমৎকার লিখা ।

১৮ ই মে, ২০২২ দুপুর ১২:৪১

বেচারা বলেছেন: আপনার নামও চমকপ্রদ।

২| ১৬ ই মে, ২০২২ রাত ৯:৪৯

গরল বলেছেন: রম্য হিসেবে চমৎকার লিখেছেন, আপনার লেখার ধরণটা উপভোগ্য। বুয়ার ব্যাপারে তেমন কোন অভিযোগ আমি শুনতাম না, বউ নিজেই সামলাত। আমার বউ কাজ ভিত্তিক বুয়া রাখত, তাই সকালের বুয়া, বিকালের বুয়া আর একটা ছিল সাপ্তাহিক বুয়া যে শুধু ভারি কিছু কাজই করত। কে কি কাজ করত আমি জানি না কারণ আমি অফিসে যাওয়ার পর বুয়া আসত আর অফিস থেকে আসার আগেই সব চলে যেত। শুক্র শনি বার শুধু সকালের বুয়া আমার ঘুম থেকে উঠার আগেই চলে যেত। তবে আমার অফিসের শার্ট প্যান্ট আমি বুয়াদের ধুতে দিতাম না কারণ তারা শার্টের কলার নষ্ট করে দিত, তাই নিজেই ঢুতাম, পরে ম্যাশিন কিনে নিয়েছিলাম।

আর আমার ড্রাইভার ভাগ্য ভালোই বলতে হবে কারণ আমি সব অবিবাহিত ড্রাইভার পেয়েছি। যেহেতু গাড়ি ও ড্রাইভার দুটোই অফিস থেকে পাওয়া তেমন কোন ঝামেলা হত না। আর অফিসের গাড়ি পাওয়ার আগে আমার পুরান গাড়ি আমি নিজেই চালাতাম। অনেকের মত ড্রাইভার দিয়ে আমি বাসার কোন কাজ করাতাম না, এমন কি আমি নিজের বাজার নিজে করে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসতাম। বাজারে পাঠানো তো দুরের কথা, তাই তারা আমাকে অনেক সম্মান দিত। অবশ্য যেহেতু নিজের গাড়ির ড্রাইভার না সেজন্য হয়ত আমার ঝামেলা কম ছিল, তবে এক বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম যে তার নাকি গাড়ির স্টিয়ারিং বেচে দিয়ে অন্যটা লাগিয়ে দিয়েছিল।

১৮ ই মে, ২০২২ দুপুর ১২:৪৩

বেচারা বলেছেন: বাড়িওয়ালাদের নিয়েও আমার একটা একক লেখা আছে। সবই অভিজ্ঞতার প্রজন্ম।

আপনার লাইফস্টাইল বরাবর আছে। ঝামেলা কম।

দীর্ঘ প্রতিক্রিয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। সমৃদ্ধ হলাম।

৩| ১৭ ই মে, ২০২২ রাত ১:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি অভিজ্ঞ মানুষ।

১৮ ই মে, ২০২২ দুপুর ১২:৪৩

বেচারা বলেছেন: তা বটে। তবে বেশিরভাগই বাজে অভিজ্ঞতা। হা হা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.