নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

চে গুয়েভারার ফেসবুক চ্যালাচামুন্ডা এবং নব্য বাঙাল কমিউনিস্টদের বিপ্লব মানস

১২ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৪:১৯


আখ্যান-১:

অন্ধকারের বিভিষীকায় নিমজ্জনরত দেশমাতৃকা আর প্রায় অস্তমিত মনুষ্য সভ্যতাকে উদ্ধারে সংগ্রামরত একজন ফেসবুক বিপ্লবীর আলেখ্য দিয়ে এই আখ্যান শুরু করছি।

গহীন রাত। নিশুতি বিশ্ব চরাচর।

গৃহকোণের আরামে গা এলিয়ে, শীতক যন্ত্রের আদুরে ঠান্ডা পরিবেশের আবেশে, বেড সাইড ল্যাম্পের মৃদু আলোয়, পার্শ্বেই বিপ্লবী ’শয্যাসঙ্গী’ অথবা কাজের মাতারির (বুয়া) রেখে যাওয়া ধোঁয়া উদগীরনকারী এক পেয়ালা গরম কফি অথবা চায়ের সাথে ভক্তদের উপহার দেয়া সিরামিকের এ্যশট্রেতে নিকোটিনের জলন্ত চেতনা, ওদিকে কী-বোর্ডের টকাটক টকাটক, খ্যাট খ্যাট, খটাশ শব্দের ঝড়ের মধ্য দিয়ে জনৈক কী বোর্ড বিপ্লবী রাত গভীরে দেশ ও জনতার বিশেষ কোনো ভাইরাল নিয়ে বিশেষ চিন্তা ও মায়া(বড়ি) সহকারে বিপ্লবী একখানা স্টাটাস প্রসব করছেন।

প্রসব গৃহের যাবতীয় আয়োজন অতি লাস্যময়ী ও আবেদনময়ী। কী-বোর্ড বিপ্লবী ঘন্টা তিনেক প্রসব যাতনা (উপ)ভোগ করে অবশেষে থামলেন। আগা-গোড়া স্টাটাসখানার দিকে তাকিয়ে একখানা তৃপ্তির হাসি হাসলেন। অঙ্গুলিসমূহের আরো কিছু কলাকুশলে স্টাটাসখানা ’বদনপুস্তকে’ পোস্ট করে চক্ষু নিমিলনপূর্বক আগামীকাল প্রভাতে স্টাটাসখানা কী তরিকায় ভাইরাল হবে, আর তার ভক্তবৃন্দ বিপ্লবের মহান মন্ত্রে কী পরিমাণ উজ্জীবিত হবেন-তা ভাবতে ভাবতে কপালের শ্বেদ মুছে আরেকখানা নিকোটিন দন্ডে অগ্নি-সংযোগ করে এতক্ষণ বিপ্লবী জোসে আটকে রাখা তলপেটের হরিদ্রা বর্ণ ইউরিক জলের চাপ প্রশমিত করতে বাহ্যখানায় চললেন।

আমরা তাকে এবার নিদ্রা যাবার অবকাশ করে দিয়ে আরো আরো জ্বালাময়ী বেডরুম বিপ্লবের নিশাস্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিই। ততক্ষণে বরং আমরা বাংলা ভূখন্ডে নয়া বিপ্লববাদের উৎস নিয়ে খানিক রগঢ় করে আসি। তবে কথা দিচ্ছি, এই রগঢ়ে কোথাও আমি এই ভূখন্ডের ‘অরজিনাল’ বিপ্লবী ও সমাজতন্ত্রী দাবীদার দলসমূহের নেতাদের ইদানিংকালের ভোটান্বিত (ভোট+জনিত) ’হজ্বযাত্রা’ নিয়ে একটি কটাক্ষও করব না। মস্কোতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরা এই সাবেক ‘কমুনিশ’ আর হালের ‘গণতন্ত্রী’দের পাবলিক সেই কালেও পোছেনি, একালেও ’ল্যাপেনি’।

আখ্যান-২:

ঠিক কখন ও কীভাবে জানা নেই, তবে এটা ঠিক, যে, কী করে কী করে যেন বঙ্গীয় ব-দ্বীপের ৩৩ কোটি দেবতা আর ১৯ কোটি ঊণ-মনুষ্য সন্তানের মাথায় হারকিউলিস নামক এক ম্লেচ্ছ দেবতা একটা শক্ত আসন করে নিয়েছেন।

বঙ্গদেশে মাসলম্যান হারকিউলিসের প্রচুর ভক্ত। প্রচলিত আইন, বিরাজমান সিস্টেম, ভূখন্ডের ঐতিহ্য, রাষ্ট্রীয় কাঠামো-এসবের ওপর মানুষের ভক্তি ও বিশ্বাস উঠে যাবার নানা কারন এখানে প্রকটভাবে বিরাজমান-সেটা সত্যি। তা সত্ত্বেও হারকিউলিসের প্রতি অতি ভক্তিটা আমার কাছে একটু বাড়াবাড়ি লাগে।

এই দেশের সিনেমা টিভিতে আমরা অহরহ দেখে থাকি, শেষ দৃশ্যে অপুষ্ট পুলিশ তার কাঠের বন্দুক নিয়ে হাজির হয় আর সেই চিরাচরিত ডায়লগ ছাড়ে, “হ্যানচাপ, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।” যদিও এই বাক্যটি বঙ্গদেশে এখন একটি সারকাজম। আইন হাতে বা পায়ে তোলা, পপুলার জাজমেন্ট, মব ট্রায়াল, মিডিয়া ট্রায়ালই এখন এদেশের হত্তাকর্তা।

তো, বলছিলাম, বঙ্গবাসী এখন সব কিছুতে হারকিউলিসকে খোঁজে। কোষ্ঠকাঠিন্য হতে মোগাদিসু, ব্রাত্য খাইছু হতে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ইস্যূ-সবকিছুতে মানুষ একজন হারকিউলিসের উপস্থিতি কামনা করে। সব বিপদ, অসঙ্গতি, দুর্গতি হতে কোনো এক দুর্গা দুর্গতিনাশিনী ওরফে হারকিউলিস তাদের উদ্ধার করবে-এই আশায় দিন গুজরান। (সেজন্যই বোধহয় প্রতি ১ বছর পর পর নিয়ম করে একজন ইমাম মাহদী দাবিদার আবির্ভূত হন বাংলার ভাগ্যাকাশে।) ফেসবুকে হারকিউলিসদের জয়গান। রবিনহুডেরও প্রশস্তি এখানে ব্যপক। রয়েছে হারকিউলিস বা রবিনহুডের লোকাল সংস্করনও। লোকালরা জনগণের জিঘাংসা ও অতৃপ্ত প্রতিশোধস্পৃহার প্রতিভূ হয়ে রাতের আঁধারে (কথিত) ধর্ষককে খুন করে, পবিত্র গ্রন্থের (কথিত) অবমাননাকারী নামাজিকে পুড়িয়ে মারে, জালিম সরকারের ‘দালাল’ পুলিশের কনসটেবলকে হেলমেট দিয়ে পিটিয়ে মারে, আবার হারকিউলিস কখনো কখনো ফেসবুক লাইভ দিয়েও জনতাকে নির্বান দান করে। (পাঠক হয়তো বিভ্রান্ত হতে হেতে বেঁচে গেলেন।)

ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায় এই হারকিউলিসের স্বরুপ। হারকিউলিস এই লুপ্তকাম ও অতৃপ্তকাম জনতার উর্বরভূমিতে এক মূর্তিমান দেবতা, সে যেন জনমানুষের অতৃপ্ত প্রতিশোধস্পৃহা, আক্রোশ, ক্ষোভ, বিক্ষোভ, বাসনা, হতাশা, প্রতিবিধানের ঈশ্বর। এই ভূখন্ডে ব্যাটম্যান বা রোপোকপ কিংবা ডার্ক জাস্টিস নামক সিরিয়ালগুলো তাই ব্যপক আদৃত হয়।

এরদোয়ান হতে বেরেস্তার কূ-মন,

মাহাথির হতে পুটিন হয়ে সেফুদার গিলোটিন,

ট্রাম্প হতে ইমরান খান হয়ে মুসকান,

ঘটক পাখি হতে জনাদুই সাকি-কত লোকাল ও আন্তর্জাতিক হারকিউলিস ও রবিনহুডে মুগ্ধ বঙ্গবাসী।

বেডরুমের আরামে ডুবে বঙ্গবাসী কোনো এক হারকিউলিসের আগমনের প্রত্যাশায় দিন গুজরান করে, যে এসে তাদের সমস্ত দুর্যোগ হতে রক্ষা করবে। ডার্ক জাস্টিসের নায়কের মতো এসে কেউ সমস্ত অন্যায়ের প্রতিবিধান করবে। স্পার্টাকাস আকাশ হতে টুপ করে নেমে আসবে।

ঘরে ঘরে মাও জে দং পয়দা হবে এবং সে-ই এসে যা করার করবে-সেই দিবাস্বপ্নেই বিপ্লব ধরা দেয়। এদেরই কেউ আবার বেডরুম বিপ্লবে রত হয়।

আখ্যান-৩:

এই পরজীবি বিপ্লবীরা পরের পয়সার ওপর ভর করে যতই বিপ্লব করে যাক না কেন, যতই তাদের পরনের জাঙিয়া হতে নিকোটিন দন্ডের কড়ির যোগান এদের পিতৃদেবের জেব হতে নির্গত হোক না কেন, যতই তাদের কাছে পল্টনের ময়দান বিস্মৃত বা অশ্রুতপূর্ব কোনো এলডোরাডো হয়ে থাক না কেন, তাদের ভার্চুয়াল কন্ঠস্বর তথা টেক্সটের জ্বালাময়ী স্বাদ কিন্তু কোনাক্রমেই ঝাঝালো রামের থেকে কম তেজি নয়।

বেডরুম বিপ্লব-এই শব্দের সাথে আমি নতুন করে পরিচীত হই কয়েক বছর আগে (সম্ভবত শাহবাগ ভারসাস শাপলাবাগ আন্দোলন অথবা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে)। কী-বোর্ড বিপ্লবও বলা যেতে পারে একে।

বিপ্লবের মহান মন্ত্রে উজ্জিবিত এই কমরেড ও তাদের ভক্তদের সদর্প বিচরন, বিস্তার, আগ্রহের জায়গা কিন্তু একটি নয়।

বরং, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের অসংখ্য স্তরে তাদের বিরাজ, তাদের বিকাশ। কর্পোরেটের চৌহদ্দিতেও তাদের অনুপ্রবেশ বীরদর্পে, যা নিয়ে কানাকিঞ্চিত বাৎচিত থাকবে লেখায়।

তবে আপনি নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে লেখাটি পড়তে থাকুন। আমি নিজে শাহবাগ তথা ’প্রজনন চত্বর’ কিংবা শাপলাবাগ তথা বোলোগ চত্বর-কোনোটার ভক্ত নই। তবে যদি আপনি নিজেও একজন বিপ্লবী হন, ফেসবুকের মাতম পড়ে পড়ে আপনারও মনে হয় যে, বিপ্লব এসে গেল বলে, আর, যদি সবকিছুতেই আপনি বিপ্লব বিপ্লব গন্ধ পান, তাহলে আমাকে মুক্তমনে বিপ্লবী গালাগাল করতে পারেন।

বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক। কমরেড, লাল সেলাম।

সেলাম দিয়ে আরেকটু গভীরে দৃষ্টিপাত করি।

কী-বোর্ড বিপ্লবী নামের একরকম নতুন প্রজাতির পরজীবি যে ধরিত্রীর বুকে ছড়িয়ে পড়েছে-সেটা খুব বেশিদিন হয়নি, বিশেষত বঙ্গদেশে। বিপ্লব আর প্রতিবিপ্লব নিয়ে বহুকাল ধরে এমনিতেই বড় মুশকীলে আছে এখানকার আম ও ‘কাম’ জনতা। এখানে জোয়ার ভাটার টানে ঋতুমতি প্রকৃতির মতো রাজা বদল হয়, রাজার চ্যালাচামুন্ডা (রাজকীয় হিতৈষী বা রাজঅমাত্য নাম দিয়ে) আর রাজকীয় ’কুত্তা’দের (কর্তা বলতে গিয়ে বানান ভুল হয়ে গেছে) বহর বদল হয় আর বিপ্লব ও বিদ্রোহের সংজ্ঞা বদল হয়। বিদ্রোহী বদলে হয়ে যায় মহান বিপ্লবী, আর ঋতু বদলালে দধিচি হয়ে যান কেহেরমান ডাকু। হবেই বা না কেন? ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের রাজাকার ও দালালরা যদি দেশের মন্ত্রীত্ব পেতে পারে, তাহলে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম তো ’গন্ডগোলকারী’ আখ্যা পেতেই পারেন। তায় আবার সেরের ওপর সোয়া সের হয়ে এসে জুটেছে এই কী-বোর্ড বিপ্লবীকূল। নানারুপ ফেসবুক নীতিগদ্য, বিপ্লবী সমাজতন্ত্রের টেক্সটিনি (টেক্সট+মিউটিনি) দিয়ে তারা আমাদের আলোর পথ দেখাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

এতক্ষণে আপনার হয়তো একটা ক্ষীণ সন্দেহ হচ্ছে। জ্বি, ঠিকই ধরেছেন, আসলে আমি বৈপ্লবিক সমাজতন্ত্র, বিপ্লব, খেলাফত ও সাম্যবাদের মাদকে বুঁদ একটি জাতির ও তাদের বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী জাগ্রত মোমিন বান্দাদের ’স্তুতি’ করার চেষ্টা করছি। এই বিপ্লবী বান্দারা তাদের নিজেকে বাদে বাকি সবাইকেই মনে করে ধনী, লুটেরা ও পুঁজিবাদী শ্রেনীশত্রু। প্রলেতারিয়েত, বুর্জোয়ার মতো বিলিতি শব্দের পাশাপাশি লুটেরা, ধনীক, শোষক-ইত্যাদি তাদের প্রিয় শব্দ ভান্ডার। বদনপুস্তকের প্রতিটি চিপা, প্রতিটি পোস্টই তাদের বিপ্লবক্ষেত্র। কী-বোর্ডই হল তাদের তলোয়ার, রাশি রাশি টেক্সট হল তাদের এনোফিল্ড বন্দুকের কার্তুজ।

এহেন বিপ্লবীদের দেশে ঘৃনা, বিপ্লবী গালাগাল ও বিদ্বেষের উদগীরণ মড়কের পর্যায়ে চলে গেছে। ঘৃনা আর গালাগালের তুবড়ি ছোটানোই এখানে বিপ্লব। এমনকি বদনপুস্তকের সামান্য জনপ্রিয় বা মেজরিটির বিপক্ষের যে কাউকেই কাল্পনিক শ্রেণীশত্রু বানিয়ে বিপ্লব বিপ্লব খেলা তাদের সখ। যাকে মনে চায় সাবজেক্ট ও টারগেট বানিয়ে চামড়া ছোলা, একই ইস্যুতে আজ পক্ষে, কাল বিপক্ষে টেক্সটের তুবড়ি ছড়িয়ে যাওয়াই এদের বিপ্লব। এদের ওয়াজ শুনলে মনে হবে, বিপ্লব এই এসে গেল, এসে গেল বলে। মজাই মজা।

আখ্যান-৪:

এই বিপ্লবীরা গালাগালের তুবড়ির নাম দিয়েছে বাকস্বাধীনতা।

এমনিতে বাকস্বাধীনতা নিয়ে প্রচন্ড সোচ্চার বঙ্গীয় জনগন। মুক্তভাবে কথা বলার সুযোগ দেবার আমজনতার গরম গরম দাবি সোশ্যাল মিডিয়াতে জ্বলজ্বল করে।

সামাজিক মাধ্যমের অবাধ ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায়, কোনো এক যাদুবলে, গোটা দেশই যেন বাকস্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাধীনতায় দিক্ষিত হয়ে পড়েছে। গোটা দেশ যেন, একটি অভিন্ন জাতে পৌছে গেছে।

সাম্যবাদের মহান মন্ত্রে উজ্জিবিত হয়ে গোটা দেশের তামাম আমজনতা, চাড়াল হতে মোড়ল, শেখ হতে ডোম, মুচি হতে ব্রাহ্মন, মন্ত্রী হতে পাতি, কৃষক হতে শিল্পপতি, বুয়া হতে নেত্রী-সব শেণীবিভেদ, সব সাম্প্রদায়িক গন্ধ মুছে গিয়ে যেন এক অভিন্ন সাম্যতায় পূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে দেশে। অন্তত মনে মনে সেই সুখানুভূতিতে ভোগেন-এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়।

ফলাফল,

কী বয়স, কী পজিশন, কী সম্পর্ক, কী পরিচয়-কোনো বাছবিচার নেই। সবাই সবাইকে ভাবছে C-B আবদুল্লা।

যাকে যা মন চায়, বলে দিচ্ছে। যাকে যা মনে চায়, কমেন্ট করছে। যাকে যেভাবে ইচ্ছা, ধুয়ে দিচ্ছে। যেখানে যেমনটা ইচ্ছা, বমি করে দিচ্ছে। ন্যুনতম বুঝুক না বুঝুক, খানিকক্ষণ গালি দিয়ে দিচ্ছে। বিশেষত ফেসবুকের নিরাপদ দূরত্বে বসে থেকে কাউকে গালাগাল করতে তো কাউকে ডরাতে হয় না।

সরকারের মন্ত্রী হতে রাষ্ট্রের সান্ত্রী-যে কাউকে ফেসবুকে ধুয়ে দিলাম, যে কাউকে তার ফেসবুক পেজে গিয়ে ট্রল করলাম, সাকিবালের পেজে গিয়ে তার স্ত্রীর বুকে ওড়না ওঠালাম, ফার্মগেটের ফুটপাতে বাম হাতে জলত্যাগ যন্ত্র ধরে জলবিয়োগ করতে করতে ডান হাতে স্মার্টফোনে ফেসবুকে দুপুর শর্মাকে ”.....শ্যা.........গী” গালাগাল করে জেহাদ সারলাম কিংবা ঝাকানাকা বাইকের পেছনে চেপে বয়ফ্রেন্ডের গায়ের সাথে জোঁকের মতো লেপ্টে থেকে চলতে চলতেই ব্রাউনিয়া কিংবা প্রভারা যে নারী জাতির কলঙ্ক-তা কমেন্ট করে দিলাম-না, ’ন ডরাই’।

আর ডরাবই বা কেন, আমরা তো আর শ্রেনীবিভেদে বিশ্বাসী নেই। আমরা সবাই রাজা। আমরা সবাইকে সমান নজরে দেখতে শিখে গিয়েছি। সাম্যবাদের ও সমানাধিকারের বন্যায় অবগাহন করছি আমরা। আমাদের গ্রাম ও শহর এক হয়ে গেছে-সবাই সকালে ঘুম ভেঙে চা খায় (আগে জানতাম মানুষ ঘুম ভেঙে ’মুততে’ যায়।)। আমাদের পুরুষ ও নারী এক হয়ে গেছে (বাইকের পেছনে উভয়ের পা ’ছ্যাড়াইয়া’ বসার স্টাইল অন্তত তাই বলে।)। আমাদের নাপিত আর সি.ই.ও একাকার হয়ে গেছে (কারন উভয়েই মিয়া জুলেখাকে ফলো করে।)। আমাদের আম্লীগ আর বিম্পীও এক হয়ে যায় (শুল্কমুক্ত গাড়ি আনার অধিকার ভোগের বেলায়।)

তাই, আমরা কাউকে আর সমঝে চলতে, কাউকে সম্মান বা সমীহ করে চলতে, কোনো সামাজিক নর্মস মেনে চলতে আর বাধ্য নই। ছাত্র অবলিলায় তার শিক্ষককে ফেসবুকে “...........পোলা” বলে গাল দিচ্ছে। পাড়ার হরি ডোমের ছেলে হয়তো সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাহেবের স্টাটাসে “................র পোলা” দিয়ে কমেন্ট করছে। লালকুঠি বাজারের আলু বিক্রেতা মতি মিয়া ট্যাঁকের মোবাইল তুলে ফেসবুকে ও.কা স্যারের পোস্টের নিচে ’গরীব মারার বাজেট কিংবা আম্লীগের Phussy chai’ কমেন্ট করে দিচ্ছে; কোনো বাঁধা নেই। সব সমান যে। Freedom of speech এর স্বর্গভূমে এসে পড়লেন যেন।

কিন্তু বাকস্বাধীনতার এই তীর্থভূমে বাকস্বাধীনতার প্রধান অন্তরায় কে জানেন?

এই আমজনতাই। (আম জনতার স্বরুপ জানতে হলে কলকাতার চন্দ্রীল বাবুর একটা বক্তৃতা শুনতে পারেন।)

সিটিজেন, নেটিজেন বা সোশ্যাল মিডিয়াজেনসহ দেশের মেজরিটি আমজনতার ভয়ে আপনি মন খুলে কোনো কথা কোনো মাধ্যমে বলতে পারবেন বলে মনে করেন? আপনাকে সবসময় মাথায় রাখতে হবে, কোনো ইস্যুতে মেজরিটি কোন দিকে পালে বাতাস দিচ্ছে। অন্যথায় কল্লা না কাটলেও আপনার টাইমলাইন নোংরা গালিতে ভরতে বাকি থাকবে না। অধিকার দাবিদার আমজনতাই এদেশে বাকস্বাধীনতার বড় খুনী।

আমজনতার ভাষ্য হল, ”কথা বলো, তবে অবশ্যই আমার সাথে একমত হয়ে..................তুমি মুক্তভাবে কথা বলবে, তবে এটা, ওটা, সেটা, অমুকটা, তমুকটা, সমুকটা আর এটা একটু ওটা একটু বাদ দিয়ে বলবে......... যেন কারো ’অনুভূতি’ আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেটা খেয়াল রেখে”;

এবং

সবসময় মেজরিটিকে চোখ বুজে সঠিক মানতে হবে”-এটাই হচ্ছে- যথাক্রমে এই দেশে বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের প্রধান প্যারামিটার।

বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের এই আধুনিক বঙ্গরুপের উদ্ভাবক, প্রচারক ও ফলোয়ার রাষ্ট্র হতে পাতি ফেসবুক লেখক তক সবাই।

তাই, কারো কথা ও লেখায় উত্তর বা কমেন্ট দেবার আগে সবিনয়ে জেনে নেয়াটাই এখন রীতি-”ভেইয়া/আপ্পি, আমি কি একটুউউউ কমেন্ট করতে পারি?”

প্রসঙ্গত, কবি লে.জে.হু.মু বলেন-

বাকস্বাধীনতার দাবীতে তুমি মুখে রক্তগঙ্গা তুলে মরো।
তুমি নিজেকে দশবার দুঃশাসনের করাতে দু’খান করে দেখাও।
তবু তুমি পাবে না তোমার কাঙ্খিত বাকস্বাধীনতা।
বড়জোর পেতে পারো প্রিয়ংবদার পুরষ্কার।

আখ্যান-৫:

গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও জনতার মুক্তি নিয়ে এই ক্ষণে একটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শুনুন।

বেশ কিছু বছর আগে।

ফেসবুকের কোনো একটি শিল্প-সাহিত্য ভিত্তিক গ্রূপে একজন মোটামুটি জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব’র পরিবেশিত একটি শিল্পকর্মের ওপর নিজস্ব মতামত ও পর্যালোচনা লিখেছিলাম।

ব্যক্তিত্ব নিজে তাকে সহজভাবেই নিয়েছেন। চমৎকার করে প্রতিউত্তরও করেছিলেন।

বাঁধ সাধলেন তার ভক্তরা।

তারা আমাকে মোটামুটি তুলোধুনো না করলেও বাকধুনো করলেন। আমার শিল্পবোধ নিয়ে কটাক্ষ করলেন। ওই গান অমন নাঁকি সুরেই গাইতে হয়-তেমন শাস্ত্রীয় জ্ঞান দিলেন।

আমি অতবড় একজন শিল্পীর সমালোচনা করার মতো কোন ‘C B আব্দুল্লা’ সেই প্রশ্ন করলেন। কয়েকজন বহুল পরিচীত ‘চ্যাতনা’ বড়িও নিয়ে এলেন।

উদীয়মান শিল্প সমালোচক হবার খাহেশ আমার সেদিন মাঠে নয়, ঘাটে মারা গেল।

সেদিন হতে আমি জানি, গণতান্ত্রীক এই প্রজাতন্ত্রের ততোধিক স্বাধীন সামাজিক মাধ্যমে আমাকে দেখতে হবে, সবাই যদি জিরো মলমকে বা ডাকতোর মফিজকে পঁচায়, তাহলে আমি শুধু তাকে পঁচাতে পারব, তাকে প্রশংসা করতে পারব না;

সবাই যদি জড়িমণিকে সহানুভূতি দেখায়, তাহলে আমিও সহানুভূতিশীল পোস্ট দেব, যদি সবাই নরসিংদীর ট্যাংক টপ পরা মেয়েটাকে ‘....শ্যা” বলে গালি দেয়, তাহলে আমার জন্য বাকস্বাধীনতা হবে, তাকে ‘....গী’ বলে গাল দেয়া। দেশে যদি হঠাৎ কোনো ইস্যুতে একদল লোকের ‘চ্যাতোনা’ কিংবা আরেকদলের ‘......নুভূতি’ আহত হয়, তাহলে আমাকে ও তাবৎ পাবলিক ফিগারকে অবশ্যই একটা করে ফেসবুক পোস্ট দিতে হবে সেই ‘....নুভূতি’ আহত করার প্রতিবাদ করে। ঘটনা দ্যাশে হোক বা বিদ্যাশে। চুপ থাকার অধিকার আমার আবার নেই।

গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নিয়ে হেঁদিয়ে মরা বঙ্গজনতার ব্যক্তিগত চৌহদ্দিতে গণতন্ত্র চর্চার অভিজ্ঞতা এমনই। ঠিক একই রকম চরিত্র তাদের সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদ চর্চার।

আমি বসে বসে ভাবি, তিনশো বছর আগের France, Russia কিংবা Chinaর মানুষ যদি জানত, যে, ভবিষ্যতে ফেসবুক নামের একখানা অভিনব হাতিয়ার পয়দা হবে, যেখানে ঘরে বসেই বিপ্লব করা যাবে, তাহলে দুনিয়ার ইতিহাসটা অন্যরকম হতে পারত। ‘৭১ সালে যদি বিপ্লবের এই হিরন্ময় হাতিয়ারখানা থাকত, তাহলে বাংলাদেশ কতদিনে স্বাধীন হত-কোনো ধারনা আছে আপনার?

সুখের বিষয়, বাংলাদেশে ফেসবুক বিপ্লব নামের বস্তুখানা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। একদল বিপ্লবী ফেসবুকেই বিপ্লব সংঘটন করে ফেলছেন। যেখানে শ্রেণীশত্রু নিধনের হাতিয়ার হল হেটস্পিচ ও কষা কমেন্ট।

আখ্যান-৬:

বঙ্গদেশের আনাচে কানাচে গিজ গিজ করে অসংখ্য 'স্বাপ্নিক সমাজতান্ত্রীক'। কোরবানি এলে, বৈশাখ এলে, ইদ এলে, জাতীয় সঙ্গীতের কোনো আয়োজন হলে, এমনকি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন হলেও এরা রব তোলে, এভাবে ভোগে না দিয়ে টাকাগুলো গরীবদের দিয়ে দিলে কাজে দিত।

এরাই রোজ যিকির তোলে, কেন রাস্তায় এত দামী গাড়ি চলে। কেন বড়লোকেরা এত বড়লোক। গরীবের জন্য, শ্রমজীবী মানুষের জন্য খুব মর্মবেদনা। গার্মেন্টস শ্রমিকের জন্য তো পারলে গোটা দেশের সবাই জান দিয়ে দেয়।

কিন্তু মুশকীল হল, কাউকে গালি দিতে, ছোট করতে, রাগ ঝাড়তে আজও তারাই বলে,

-ব্যাটা গার্মেন্টস,
-রিক্সাওলার মতো কথা বলবি না,
-লেবারের মতো বেতন কেন,
-তোকে কাজের মেয়ের মতো লাগছে,
-বস্তির মেয়েদের মতো কথা বলবি না,
-ফুটপাতের জুতা পড়ছিস মন হয়,
-বেশি বাড়াবাড়ি করলে জাইল্লার ঘরে বিয়ে দেব,
-চাষাভুষার মতো কাপড় পরে আসো কেন?

সমাজতন্ত্র কেবল ভাবনায়। রক্তে কিন্তু সেই জন্মগত নীল আভিজাত্য।

খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা বাঙালীরা ব্যক্তিজীবনে প্রচন্ড রকম পূঁজিবাদী, ফ্যাসীবাদী চরিত্রের হলেও নিজ নিজ কর্মস্থলে তীব্রতম সমাজতান্ত্রীক ফেরেশতা একেকজন।

নিজের জন্য নিজ নিজ অফিসে এটোমিক স্কেলে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের প্রয়োগ চাই। সেটা হয়ে গেলে চারপাশের সবার জন্য তীব্রতম কমিউনিস্ট সুযোগ সুবিধা চাই। মালিক আর শ্রমিক-দু’জনেই পারলে মার্সিডিজ চাই। কোম্পানীর পয়সায় বা সরকারী পয়সায় উদার হাতে দান দক্ষিণা, সুযোগ সুবিধা সবার জন্য বিলিয়ে নিজ নিজ স্বর্গ নিশ্চিত করার সমাজতন্ত্রে আমরা লেনিনকেও হারিয়ে দিই।

যদিও ব্যক্তিজীবনে ও নিজ নিজ পরিবারে আমাদের এই উজ্জিবিত সমাজতান্ত্রীক কমরেড কমরেড খেলার উত্তেজনা বড়জোর বাসার কাজের মেয়ের ওপর সাম্যবাদী প্রক্রিয়ায় প্রশমিত করে তাকে প্রেগনেন্ট করে দিয়ে এবোরশনের জন্য শ’দুয়েক টাকা ছুড়ে দেবার মধ্যেই সীমিত রাখি।

আমরা সাম্যবাদী।

[ও হ্যা, সবাই এক না-এটা বলে না দিলে আবার মানহানি মামলা হতে পারে।]

কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের নিয়ে এই কথাটা কোনো এক মহাত্মন বলেছিলেন-

”তুমি যদি তোমার ২১ বছর বয়সে কমিউনিস্ট না হয়ে থাকো, তুমি বোকা।
কিন্তু তুমি যদি তোমার ৪০ বছর বয়সেও কমিউনিস্ট থাকো, তুমি মহাবোকা।” [সংগৃহিত ও পরিমার্জিত।]

আমার অতি প্রিয় একজন প্রয়াত কমরেড অবশ্য এই তীব্র বিষোদগারের উর্দ্ধে থাকবেন চিরজীবন।

সমাজতন্ত্র একটি অত্যন্ত মানবিক আবেদনময় সমাজব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক মতাদর্শ। কিন্তু মুশকীল বাঁধে সবখানে এর বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়নকারীদের নিয়ে। রাশিয়া, কিউবা, ভেনেজুয়েলা, চীন, কোরিয়া, পশ্চিমবঙ্গে সমাজতন্ত্র পাশ করেছে, নাকি ফেল, সেই মতামত দেবার আমি কেউ নই।

আমি আমাদের দেশে নানারকম উদীয়মান, নব্য সাম্যবাদী, সখের সমাজতান্ত্রীকদের নিয়ে চিন্তিত। পুরোনো সাম্য ও সমাজবাদী কমুনিস্টরা তো বহু আগেই পঁচে গেছেন-তাই তাদের নিয়ে ভাবি না। তাদের মার্কসবাদ, লেনিনবাদের মা-ও-বাদ, বাপও বাদ; সবই বাদ। সবই এখন সিংহাসন আর হাড্ডির লোভের কাছে বাঁধা পড়েছে। চে গুয়েভারার এককালের ভক্তরা এখন বাইডেন, শিপিঙপিঙ কিংবা পুটিন শিবিরের কমরেড।

আখ্যান-৭:

নানা মাধ্যমে সাম্যবাদ, সমানাধিকার, সমাজতান্ত্রীক ব্যবস্থা নিয়ে ক্রমাগত কথা বলে যাওয়া মানুষদের আবেদনটি আপাত দৃষ্টিতে খুব যৌক্তিক ও মানবিক। মুশকীল হল, আমরা একটু তলিয়ে দেখলে দেখব, সত্যিই কি সমাজতন্ত্র আমরা চাই? আর সেটা কি বঙ্গদেশে সম্ভব?

বাস্তবতা হল, বঙ্গদেশে সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্র ফেসবুকে “শোষকের কালো হাত গুড়িয়ে দাও” টাইপের জলন্ত স্ট্যাটাসে সীমাবদ্ধ। ইদানীং তার সাথে যোগ হয়েছে নতুন এক ফ্যাশন-বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফ্যাশন। (এই ফাঁকে একটু ব্যক্তিগত দুঃখও ঝাড়ি।) কথায় কথায় গার্মেন্টস, গার্মেন্টস মালিক, গার্মেন্টসের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট, গার্মেন্টস সেক্টরের সিনিয়র প্রোফেশনালসদের মুন্ডুপাত। গারমেন্টসের মুন্ডুপাত দিয়ে আমাদের নব্য সমাজতন্ত্রীরা হাত পাকায়।

হুমকী ধমকী শুনে মনে হয়, বাংলাদেশে একমাত্র গার্মেন্টস সেক্টরেই কমপ্লায়েন্স নেই, আইন নেই, শাসন নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই, নৈতিকতা নেই, ভাল কিচ্ছু নেই। খালি বস্তায় বস্তায় টাকা বিদেশে যাচ্ছে। আহ! বাংলাদেশের বাদবাকি সেক্টরগুলো নিশ্চয়ই ফেরেশতা ও দেবতা। (ত্যানা প্যাঁচকরা আবার শুনুন, কথাটা হচ্ছে একতরফা ও একচোখা ব্লেম গেম নিয়ে।)

যেকোনো যৌক্তিক ও ন্যায্য বিষয় নিয়ে কথা বলা সবসময়ই স্বাগত, কিন্তু অতি কথন এবং অতিশায়ন সবসময়ই বক্তার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন জাগাবেই। যেইসব মহতি ব্যাক্তিবর্গ মিনিমাম ওয়েজ নিয়ে শ্রমিকদের পক্ষে মাঝে মাঝে তীব্র শোকে অর্গানিক মাতম প্রকাশ করেন, তাদের কাছে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে,

আপনারা যার যার বাসার কাজের বুয়া, বাজারের মিন্তি, রিক্সাওলা, ড্রাইভারদের মিনিমাম ওয়েজ কোন গ্রেডে কত বাড়িয়ে দিয়ে এই LEED CERTIFIED শোকটি করছেন, তা যদি একটু শেয়ার করতেন, তবে উপকার হত।

সমাজতন্ত্রের ছিটেফোঁটা নিজের নিজের জীবনে ও পরিবারে না থাকলেও অন্যের জীবনে, ক্যারিয়ারে, প্রতিষ্ঠানে, পরিবারে সমাজতন্ত্রের দাবীতে আমরা সোচ্চার। মালিকের কেন বিএমডব্লু গাড়ি থাকবে-আমাদের ঘুম আসে না। অথচ আমার হাতে আইফোন কেন আছে-সেটা দেখি না। পি.কে গোলদার বেগমগঞ্জে টাকা পাচার করল কেন-আমরা প্রজ্বলিত, কিন্তু, আমি কেন অমুকের পাওনা টাকাটা শোধ করছি না-সেটা ভাবি না। উপদেশের দেশ একটা।

আখ্যান-৮:

বঙ্গীয় ফেসবুক বা বঙ্গসবুক আকাশ হতে অর্জিত একটি রাজনৈতিক পাঠ এই সুযোাগে বলি আপনাদের। বাংলাদেশে দুটি রাজনৈতিক দল আছে-একটি হল আম্লীগ, আর আরেকটি হল, এ্যান্টি-আম্লীগ বা বিম্পিলীগ। সামাজিক মানুষ হতে হলে আপনাকে যেকোনো একটা দলে যোগ দিতেই হবে।

তো বঙ্গসবুক আকাশে চোখ কান পাতলে যেই তীব্র মাত্রায় রাজনৈতিক সচেতনতা [আসলে অক্ষম ও সুবিধাবাদী বিপ্লবীদের চিকনি চামেলি বিক্ষোভ] চোখে পড়ে, তার কিছু কামসূত্র, মানে যোগসূত্র ও প্রবণতাসূত্র পেলাম।

এঁরা নিজেদের পরিচয় দেন গণতন্ত্র প্রণয়ী। দ্যাশে ভোটের অধিকার না থাকায় এঁরা রাতে ঘুমাতে পারেন না। একটা ‘সেইরাম’ ভোট হলেই দেশটা স্বর্গে চলে যেত-এমনটাই ভাব। সেই ক্ষোভ ও দেশপ্রেম এঁরা বঙ্গসবুকে ঢেলে দেয়। সরকার যাই করুক, এঁরা পত্তম আলু, বিবিসি আর বিডিনিউজের পেজের নিচে তা নিয়ে আলু চটকাবেই। অনেকটা বউয়ের সাথে না পেরে কাজের মেয়ের ওপর ঝম্প দেবার মতো।

এই সুবিধাবাদী গোষ্ঠীকে আম্লীগ বা বিম্পি তথা সরকার যদি আজকে মাগনা ৫০০ পিস স্বর্গের টিকিটও এনে দেয়, এঁরা বলবে, ওইডা ইন্ডিয়ান স্বর্গের, ওর মধ্যে খালি লাল গ্যান্দা গাছ আছে। ৭০ টা হুর নাই। ওইডা মানি না। যাহোক। ইন্ডিয়ার নায়িকাদের অবশ্য তাদের ভাল লাগে। অথবা, ওই হুর পাকিস্তানের, ওই গেলমান বার্মার। ওই শরাব চায়নারটা আরো ভাল ছিল-ইত্যাদি। ফেসবুকে সরকারকে যতই গালাগাল করুক, দিন শেষে পূর্বাচল বা পদ্মা পাড়ের একখানা প্লট কিন্তু আবার সরকারের হতে বাগাতেই হবে। ফেসবুকে বা টকশো-তে রক্তচক্ষু করে গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে পদ-পোস্ট-ডিল বাগানোর পর কুঁই কুঁই করা বিপ্লবের মঞ্চায়ন এই বিপ্লবী দেশের মঞ্চে বেশ মজাই লাগে।

ভোটের অধিকারকামী (সমকামী বলিনি, খিয়াল করে কিন্তু) এক জাতি আমরা। আমাদেরকে একদল সুবিধাবাদী ও ধান্দিবাদী (গান্ধিবাদীর বিপরীত) গণতান্ত্রীক বিপ্লবী শিখিয়েছেন, ভোটই হল বিপ্লব, ব্যালটই হল বিপ্লবের হিরন্ময় হাতিয়ার। ফেসবুকে ভোটের অধিকার চেয়ে ম্যাৎকার করা ও সরকারের পিন্ডি চটকানো মহাত্মনদের আমার একটা প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছে করে।

ধরুন, এই শুককুর বার (যার হালের ক্রেজি নেম জুম্মা মোবারক) বঙ্গদেশে একটি পুত, পবিত্র, বিশুদ্ধ, সহিহ ইলেকশন হল আর তাতে যেকোনো একটি নতুন দল ও সরকার মসনদে বসল।

তার পরে, দেশে ঠিক কী কী বা কোন কোন মহান বিপ্লবটা ঘটে যাবে? দেশ কি মদীনা সনদে চলা শুরু করে দেবে? চালের দাম কি ৯ টাকা হবে? রানা প্লাজার মালিকের কি ফাঁসি হবে? সাগর-রুনীর খুনিরা কি শাস্তি পাবে? অথবা, বলুন, দেশে কি ব্লাসফেমী আইন চালু হবে? আমিতো মনে করি, এঁরা প্রতিদিন যেই সুশীলজনিত কোষ্ঠকাঠিন্যতে টাট্টিখানায় ঘন্টাখানিক সংগ্রাম করেন, সেই রুটীনেও বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না। বিপ্লব তো বহুত দূর।

ভোট দিয়ে আপনারা করবেনটা কী? ভোট নিয়ে বাঙালী এত সিনিক কেন? বাঙালী কি বোঝে না সেই পুরোনো শিক্ষা-”ভোটের পরে ফচ করে না।”

[আমার কোনো রাজনীতি বা দল প্রীতি নেই। করোনার বাড়াবাড়ির সময়ে এক পৌরসভা নির্বাচনের প্রহসন নাট্যস্থ হবার টিভি নিউজে দেখলাম, একজন অশিতিপর বৃদ্ধা লাঠি ভর করে, দুই সন্তানের কাঁধে ভর দিয়ে সিঁড়ি ভেঙে দোতলায় উঠছেন ভোট দিতে। এই বাঙালীর এত তেল, এত রাজনৈতিক সচেতনতা। করোনার সেই ভয়াবহ সময়ে একজন ৮০ বছরের বৃদ্ধা কীভাবে ভোটকেন্দ্রে যাবার বিবেক করেন আর তার সন্তানরাই বা তাদের মাকে কীভাবে বাড়ির বাইরে যেতে দেন সেটা ভেবে কুলকিনারা না পেয়ে এই প্রশ্নটি আমার মনে জাগে।]

আখ্যান-৯:

ফেসবুক বিপ্লবীদের একটি অংশের একান্ত করপোরেট সংশ্রব নিয়ে বলব বলেছিলাম। বলছি, শুনবেন?

কর্পোরেট বিপ্লবীদের মূল টার্গেট এমপ্লয়ার এবং তাদের নিয়োগকৃত বড় কর্তারা (বিশেষত হুদাই রাকচে ডিপারমেন বা এইছাড় কত্তারা)।

আমরা যারা কর্পোরেটে নিয়োগ কার্যক্রমে জড়িত আছি, বিপ্লবী সমাজতান্ত্রীকরা তাদেরও সবক দেন। গরম গরম কমেন্ট করে, এশটাটাশ প্রসব করে তারা আমজনতার দাবী নিয়ে আমাদের ডিসকোর্স ঠিক করে দেন। তাদের ওয়াজ মতে, আমাদের নৈতিক ও ঐশী দায়ীত্ব হল, ন্যুনতম ৫০ হাজার টাকার নিচে বেতন যেসব চাকরীর, সেগুলো প্রকাশ, প্রচার, নিয়োগ না করা। পদ যাই হোক, বেতন যেন ৫০ এর নিচে না হয়।

কেন?

৫০ হাজার টাকার নিচে বেতন অফার করলে আমাদের ‘কিছু’ অভিমানি ভাইবোন আহত বোধ করেন, অপমানিত বোধ করেন, হিংস্র বোধ করেন। আফটার অল, আমাদের চার চারটা সার্টিফিকেটের দাম তো ৫০ হাজারের কম হয় না।

আমি ’সহমত ভাই’দের সাথে ‘সহমত’।

এই সম্মানিত ‘কিছু’ অভিমানি ভাইবোনদের আত্মসম্মানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাবোধ জানিয়ে মাঝে মাঝে মনে হয়, ৫০ হাজার না হলে সার্কুলার দেয়াই বন্ধ করে দিই। যারা স্টার্টিং পজিশনের স্যালারী ৫০ হাজার দেবার মুরোদ রাখে না, তাদের আবার কর্মী হায়ার করার খাহেশ থাকবে কেন? কুঁজোর আবার চিৎ হয়ে শোবার শখ।

আমাদের দায়ীত্ববোধ আছে না দেশের, দশের প্রতি? দশের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কিছু কিছু বিপ্লবী অবশ্য দাবী তুলতে শুরু করেছেন, অফিস-আদালতে ইন্টারভিউ ছাড়াই চাকরি দেয়া শুরু করতে হবে। (হাসবেন না, আমার এক বিপ্লবী পেশাজীবি সুহৃদ ও তার স্যাঙ্গাতরা এমনটাই বিশ্বাস করেন।)

[বি.দ্র. এই দাবীটা সারকাস্টিক, নাকি আমার পোস্টটা সার্কাস্টিক-তা বুঝবার চেষ্টা করতে গিয়ে দেড় ঘন্টা অজ্ঞান থাকুন।]

আখ্যান-১০:

আবার ধরুন, ফেসবুক বা লিংকডইনে বিপ্লবের প্রসব যাতনায় যে শুধু এই কী-বোর্ড বিপ্লবীরাই ভোগেন, তা কিন্তু নয়। আমরা, মানে যারা নিজেদের নিরীহ ল্যাখোক, শ্রোতা বা পাঠক ভাবি, তারাও কিন্তু সমানে ভুগি। কীভাবে?

আমরা যারা ‘আঁতেল’, মানে সামাজিক মাধ্যমে নিরীহ ও নিরাপদ সুখপদ্য গদ্য লিখি, বলি, আমাদের নানা ধরনের ভ্যালু এ্যাডিং কাজের পোস্ট দিই, যাদের লেখা ও কাজ দেখে নেটিজেনরা বাহা বাহা করেন আর আমাদেরকে বিশাল হাস্তি ভাবেন (হয়তো কিঞ্চিত ইর্ষাও করেন) তাদের বিষয়ে হয়তো সবাই ভাবেন (নিজেও হয়তো ভাবি) যে, এগুলো আমাদের পোর্টফোলিওতে ভ্যালু বাড়িয়েই যাচ্ছে, বাড়িয়েই যাচ্ছে, আর চাকরির বাজারে আমাদের দর বাড়িয়েই যাচ্ছে।

হ্যা, যাচ্ছে, সত্য।

তবে এই বিপ্লব বিপদও বাড়াচ্ছে।

কীভাবে?

কয়েকদিন আগে আমার বিপদে পড়া সুহৃদকে বলছিলাম সে কথা। যিনি ইফোর্ট ও ইনিশিয়েটিভের বিচারে একজন জলন্ত আগ্নেয়গিরির মতো। অন্তত আমার মূল্যায়নে। তো, এতে ভাল না হয়ে বিপদটা কোথায়?

১. চাকরি যিনি দেবেন, মানে প্রতিষ্ঠানের টপ ম্যানেজমেন্ট, তাদের আপনার, আমার এসব ফেসবুক/লিংকি কাম কাজ দেখার সময় কই? আর যদি দেখেনও, তাহলেও ভাবেন-এই ব্যাটা ম্যানেজার/জিএম তো দেখি সারাক্ষন ফেবুতে পড়ে আছে। তাকে নিলে তো কাজকাম করবে না। সারাক্ষণ ফেবুতেই থাকবে।

২. চাকরির বাজারে মালিকদের পরেই ঈশ্বর হলেন বিভিন্ন বিভাগীয় টপ বস। বিশেষত এইচআর কর্তারা। তো, তারা যখন দেখেন, আপনার জ্ঞান, ইফোর্ট, এনার্জি ও সার্বিক যোগ্যতা, যা সামাজিক মাধ্যম হতে তারা ধারনা পাচ্ছেন, তাতে আপনি তাদের একজন বিগ কমপিটিটর। আপনাকে কোম্পানীতে ঢুকতে দিলে তার চেয়ার নড়বড়ে হয়ে যাবে। সুতরাং, সে তো চাইবে, আপনি যাতে এন্ট্রি না পান। আপনার সিভি যদি তার হাতে পড়ে, তিনি নিশ্চয়ই জামাই আদর করে আপনাকে ইন্টারভিউ বোর্ডে ডাকবেন না?

৩. আপনার, আমার কাজের বহর ও ধরন অনলাইনে ব্যস্ত থাকা অনেকেরই চরম ইর্ষার কারণ। এটা অনেকটা নিষ্কাম ইর্ষা আর অনেকটা নিষ্ফল ইর্ষা। কিন্তু ফলাফল একই। আপনার এই সমৃদ্ধ পোর্টফোলিও আপনার অজান্তেই বাজারে আপনার প্রচুর হেটার, কমপিটিটর ও ‘ল্যাঙ্গোট’ (ল্যাং মারতে চায় যে) জন্ম দিচ্ছে। এই ল্যাঙ্গোটরা চাকরি বা ক্যারিয়ারের বাজারে যেটুকুই হোক, যেভাবেই হোক, যেই সুরতেই হোক, আপনাকে ল্যাং মারার সুযোগ খুঁজতে থাকবেন। আর দশটা সুযোগ খুঁজলে একটা তো পাবেই।

এবার বুঝে দেখুন, আপনার সুবিশাল সামাজিক মাধ্যম ও অফলাইন বিপ্লবী কার্যক্রম কীভাবে আপনাকে আকাশে তোলার পাশাপাশি আপনার বিপদও বাড়াচ্ছে।

[এই গল্প কোনো আজগুবি গপ্প না। বাস্তব দেখে শেখা গপ্প। আর যারা আমাকে আবোলতাবোল বকিয়ে হিসেবে চেনেন, তারা বরাবরের মতোই আদ্দেক পড়ে ফোঁৎ করে শব্দ করুন আর ইনবক্সে কোনো জাস্ট ফ্রেন্ডের সাথে চ্যাটে মত্ত হোন। নো চিন্তা, ডু ফুর্তি।]

আখ্যান-১১:

বাজে কথা ছাড়ি। একটু সামাজিক আন্দোলনের দিকে নজর ঘুরাই।

বাংলাদেশে ফ্রাস্ট্রেটেড মানুষের মোট সংখ্যা কত? আর অতৃপ্তকাম পরশ্রীকাতর মানুষের?

উত্তর না জানলে ক্ষতি নেই। আমি একটা কেস হিস্ট্রি নিয়ে বাৎচিত করি। দেখুন, জানতে পারেন কিনা।

একবার কোনো এক ঈদে ভড়ংকে ৭০০ টাকার পাঞ্জাবি ১ সপ্তাহের ব্যবধানে ১৩০০ টাকায় বিক্রী করায় বিরাট সাজা দেয়া হয়েছিল। জেগে উঠেছিল বঙ্গদেশের জাগ্রত জনতার স্বদেশ চেতনা, ন্যায়বোধ। পারলে আবেদ সাহেবকে ফাঁসি দেয়-এমন অবস্থা।

ভাল লাগে। এই ইর্ষাতুর ন্যায়বোধ।

কিন্তু, যদি আপনার অর্বাচিন মনে প্রশ্ন জাগে, যে,

২০ টাকার বেগুন রোজার আগের দিন ২০ টাকা আর পরের দিন ৮০ টাকা।
২৫ টাকার পেয়াজ ২ দিন বাদে ৫০ টাকা।
মাংসের দাম ৬৫০ নির্ধারন করে দেবার পরও ৭৫০ টাকা।
৪৫০ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার ১২০০ টাকা।
১০ টাকা পার জিবির স্থলে ডাটা ১০০ টাকা।
১ তারিখে গাবতলি আরিচা ৩০ টাকা বাস ভাড়া হয়ে যায় ১৫০ টাকা।
১ কোটি টাকার রাস্তা ২০ কোটিতে।
আমাদের গার্মেন্টসে ২ ডলারে প্যান্ট বানিয়ে নিয়ে তা পশ্চিমের আউটলেটে ১২ ডলার যখন হয়,

কতজনকে জরিমানা আর জেল দেয়া হয় তখন? (খুব সহজেই এই দ্বন্দ্বের উত্তর দিয়ে বসবেন না, যে, এসেনশিয়াল কমোডিটি আর পোষাকের তুলনা হতে পারে না)।

কার্যত ভড়ংকে জরিমানা করায় তীব্র উল্লাসের মধ্যে আমি কেন যেন ন্যায্যতা ও নৈতিকতার ছায়া দেখিনা। বরং কেন যেন সাকিব আল হাসানের মতো হিরের টুকরো ছেলের প্রতি আমাদের তীব্র ইর্ষাকাতরতার একটা মিল খুঁজে পাই। হাসছেন? হাসুন। কিন্তু ভড়ংয়ের বিচার দেখে ফেসবুকি দেশপ্রেম যে নিরেট দেশপ্রেম নয়, তা নিশ্চিত। (ক্ষেপে যাবেন না দাদা, ভড়ংয়ের উদাহরন স্রেফ উদাহরনই, সিরিয়াস ডিবেট না।)

১ সপ্তাহ আগে যদি ৭০০ হয়, সেটা ১ সপ্তাহ পরে ১৩০০ হতে পারবে না-এমন কোনো আইন কি আছে দেশে? ওপেন মার্কেট ইকোনমিতে দাম বেঁধে দেবার কোনো আইন কি থাকে? এই কি সেই সরকারী দপ্তর না, যারা চালের দাম যখন ৯০ টাকা হয়েছিল, তখন তার দর বেঁধে দিতে বললে ওপেন মার্কেট ইকোনমির দোহাই দিয়েছিল? এই দপ্তরই আবার তেলের দাম সিধে করতে পারে না, পেয়াজ নিয়ে কান্না বন্ধ করতে অপারগতা জানায়। সরল বিশ্বাসের বিশ্বাসী হয়ে বসে থাকে। (ওহ, সেবার ভড়ং লেবেল জালিয়াতি করেছিল বলে একটা রব উঠেছিল। আমি আর মাথা ঘামাইনি। এমনিতেই জাগ্রত জনতার চাপে চ্যাপ্টা।)

সত্যি কথার ভাত যদিও নেই, তবু বলি, দেশোদ্ধার আর বিপ্লব আসল লক্ষ্য নয়। ইস্যুপাগল জাতির আর বিপ্লব প্রিয় জাতির আসলে দরকার একটা ভাইরাল ইস্যু। সেটা যেমনই হোক। কিন্তু, আমার কথা হল, এরকম একটি কষাই দোকানে এই এত এত মর্দে মুমিনরা না গিয়ে বয়কট করলেই তো তারা সিধা হয়ে যেত। কিন্তু তা তো দেখি না। ভড়ংয়ে বরং ভীড়ের বর্ননা দেব যেভাবে, তা হল, যেকোনো সময়ে আড়ঙে যান, কেবলমাত্র পশ্চাৎনিশ্বাসই পাবেন ১০০০ ফ্লেভারের।

তবে একটা জিনিস দেখেছেন কিনা? ভড়ংয়ের বিচার নিয়ে পোস্ট আমি শুধু পুরুষদেরই দিতে দেখি। কোনো মহিলাকে দেখলাম না কখনো দুটো কথা বলতে। তাহলে কি ধরে নেয়া যায়, এই হো হো উলুধ্বনি কেবল ভড়ংয়ে মানিব্যাগধর্ষিত পুরুষদের ফ্রাস্ট্রেটেড দীর্ঘশ্বাসজনিত বহিঃপ্রকাশ? ঘরের মহিলাকেই যেখানে কনভিন্স করতে পারেননি ভড়ংয়ের বজ্জাতি নিয়ে, তখন দেশকে কী করে.....?

আফসোস! যেই জাতির শপিং মল বা ৫ তারার ভিজিটররাও এখনো ভাল করে জানে না বা মানে না, যে, ইংলিশ কমোড কী; পিশু করতে চাইলে সেখানে হুড তুলে রাখতে, আর টাট্টি করতে হুড নামাতে হয় (করে উল্টোটা), তারা কাপড়ের দোকানে ন্যয্যতা ও বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে।

ভড়ংয়ে শপিং করতে না পারা অক্ষম আমার প্রশ্ন জাগে, যান কেন আপনারা? এই কুষিদজীবি দোকানে? বাংলাদেশের ১ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম বলুন, যেটি পণ্যের সঠিক মান ও ন্যায্য দাম রাখে? আর ধুর, ওপেন মার্কেট ইকোনমিতে ন্যায্য দাম বলে কিছু থাকে নাকি?

(এই আখ্যানের ত্যানা কমেন্ট: "ভাই কি ভড়ংয়ের দালাল?")

আখ্যান-১২:

সারা পৃথিবীতেই প্রতিরোধ বিপ্লবের সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হল গণবর্জন।

কোনো আইন, আদালত, পুলিশ, আর্মি, সরকার, আমলা, লাঠি, লাথি-কোনো কিছুই লাগে না।

কোনো কিছুকে প্রতিরোধের আর যদি কোনো রাস্তা না থাকে, তাহলে গণহারে বর্জন করুন তাকে। দেখুন ঠাকুর সিধা হয় কিনা। (বলবেন, যে, এগুলো সব ভিকটিম ব্লেম)

আমাদেরকে গরুতে মারতে চেয়েছিল কেউ। ফলাফল তো দেখলেনই। কোনো মারামারি লাগেনি। নিরবে একটা বিপ্লব ঘটে গেল। সেটাই হল পাবলিক এ্যাকশন। জনপ্রতিরোধে ভেসে গেছে সেই হাস্যকর ঘটনা। উল্টো পরেরবার এত এত উৎপাদন হয়েছে লাইভস্টকের, যে সেবার মোট আনুমানিক ১০ লক্ষ পশু অবিক্রিত রয়ে গেছে। মানে হল, ১০ লাখ উদ্বৃত্ত পশুর উৎপাদন হয়েছে ধরা যেতে পারে। হ্যা, যারা সামর্থবান, তারা যদি বাজারে গিয়ে সস্তায় জিতে আসার ধান্দাটা বন্ধ করেন, তাহলে ভাল হয়।

কুরবাণীতে মোট লেনদেন কত জানেন? ৪০ হাজার কোটি টাকা!!

পশুর চামড়া নিয়ে অনেক বিপ্লবী বাৎচিত তো হয়। রহস্যটা খুব জটিল না। চামড়া উৎপাদনকারী বাদে বাকি সবাই একটা ওপেন খেলা খেলছে। যেই দেশে চালের দাম বেঁধে দেয়া হয় না, সে দেশে চামড়ার দর বেঁধে দেয়া হয় কেন-জানি না। খুব সহজেই এই ঠাকুরদেরও পথে আনা সম্ভব। বুদ্ধিটা খুব সহজ।

শুধু শুধু মাটিতে পুঁতে একটি রিসোর্স নষ্ট করবেন কেন? কতিপয় বদমাশের জন্য?

লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করুন আর চামড়া দিয়ে জায়নামাজ বানান। না হয় চামড়া রেঁধে খেয়ে ফেলুন। তাও না পারলে, লবণ দিয়ে রোদে শুকিয়ে ঘরে রেখে দিন। আরো আরো পন্থা আছে। তা আর বললাম না।

এক বছর চামড়া বাজারে না ছাড়ুন। সিন্ডিকেট খুঁজে বের করে হয়রান হতে হবে না। সিন্ডিকেটই আপনার বাড়িতে এসে চামড়া নিয়ে যাবে। সালামও দেবে।

আখ্যান-১৩:

পুরোনো কাসুন্দী ছেড়ে একটু হাল জামানার বিপ্লবের মহান মঞ্চে নজর করি।

নানা কারনেই সামাজিক মাধ্যমে লেখা বা মেসেজ না বুঝেই লাফানো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। লাফাঙ্গাদের উৎপাতে কথা বলতেও ভয় পাই। কখন কোন ট্যাগ ও লেবেল গতরে লেগে যায়। তবু বলি।

পহেলা বৈশাখ, ফাল্গুন, চৈত্র সংক্রান্তী, নবান্ন’র মতো বাঙলা উৎসবগুলো আসলেই কিছু মানুষের ন্যায়বোধ, ইতিহাসবোধ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ঠিক যেমন কিছু মানুষ কোরবানী এলেই পশুপ্রেম ও সাম্যবাদ চাগিয়ে ওঠে। যাহোক, দুটোই কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত এ্যালার্জি।

বাঙালীর এই দেশ বাংলা, বঙ্গ, বঙ্গদেশ, বাঙালা কিংবা বাংলাদেশ।

হাজার লক্ষ বছর আগে হতেই এই দেশ বাঙাল ও বাংলার মানুষের দেশ। পূব বা পশ্চিম হতে আসা লাল চুলো বা সাদা জোব্বা কিংবা হলুদ কোব্বা-কারোর দেশ এটা ছিলও না, নেইও। তাই এখানে কী হবে না হবে, এখানে কী করার কথা আর কথা না, এখানকার জীবনাচরন কেমন হবে, কেমন হবে না, এখানে কোনটা উৎসব আর কোনটা চাপিয়ে দেয়া ফেসটিভ্যাল/কার্নিভাল-সেটা বাঙাল বা বাঙালীরাই ঠিক করবে, করেও এসেছে।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে, পৌষ পার্বন, নবান্ন, চৈত্র সংক্রান্তির মতো বাঙালী উৎসব নিয়ে যারা বাঁকা চোখে তাকান, অপচয়ের ধুয়া তোলেন, তারা দেশের গরীব মানুষের চিন্তা যদি সত্যিই করতেন, তবে ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে গরুর গোসতের দোকানে নির্লজ্জের মতো দাড়াতেন না। (না, আমি বলি না, একটি অপরাধ আরেকটি অপরাধকে লেজিটিমেট করে।)

দেশের ইতিহাস/ঐতিহ্যের সত্যি নিয়ে যদি ভাবতেন, তাহলে তারাই আবার অফিসের নিউ ইয়ার পার্টিতে হলুদ তরলের গেলাস গিলতেন না। ধুতি লুঙ্গি বাদ দিয়ে সাহেবদের প্যান্ট, টাই পরতেন না। তাই দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি গেল গেল বলে রবে যারা আর্তনাদ করছেন-তারাও যে কতটা আন্তরিক সেটা নিয়েও জাতি কনফিউজড।

আবার, সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও ঢেলে সাজানোর নামে যারা রাতারাতি ভূখন্ডের যাবতীয় প্রথা, সংস্কৃতি, বিধানকে উল্টে দিয়ে বা বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ব্যাচেলরস KNIGHT বিপ্লবী হতে চান-তাদের উদ্দেশ্যও পরিস্কার নয়।

পরিবর্তন ও বিবর্তন ভাষা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাকে অস্বীকার করলে নিজেরই ক্ষতি হবে। তবে আমাদেরও বুঝতে হবে, পরিবর্তন ও বিবর্তনের সাথে অরাজকতা ও আরোপিত রুপান্তরের তফাৎটা কোথায়।

আমি লিবারেলিজমে বিশ্বাসী। ফ্লেক্সিবিলিটিতে। হ্যা কিন্তু, তার মানে এইও নয়, সেটা এক্সট্রিমিজমে রুপ নেবে। বা, আমরা এক দিনেই দেশ, কাল, পাত্র ভুলে আকাশে উঠে যাব।

আখ্যান-১৪:

আমার এক সুহৃদ আছেন, প্রায়শই বলেন, দ্বিতীয় একটা মুক্তিযুদ্ধ আবশ্যক। বিপ্লব নিয়ে আমার হাউশ না থাকলেও এই দেশে বিপ্লব নিয়ে আগ্রহীর সংখ্যাতো কমে যাবে না। কিন্তু, একটা নিরব ও গোপন উল্টো প্রতিবিপ্লব এই দেশে ঘটে চলেছে। সেটা নিয়ে একটা মানসিক পীড়ন তো নিশ্চয়ই আছে। ফেসবুকের জাগ্রত বিপ্লবী মোমেনদের ভয়ে সেই পীড়ন নিয়েও বেশি বলি না। আর যাই হোক, দশের মনোঃরঞ্জন করেই দুটো ভাত জোগাড় করতে আমি বাধ্য।

তবু সাহস করে বলেই ফেলি, কী বলেন?

করোনায় হয়তো আর মউত কপালে নেই (কারন করোনা আছে ও নেইয়ের মাঝে ঝুলে গেছে; মাঝে মাঝে মাথা তুলে উঁকি মারে, আবার তাকে যাদু বলে হীমঘরে পাঠানো হয়।), কিন্তু দেশের রাস্তায় বের হলে ছাদ হতে ইট পড়ে, ম্যানহোলের গর্তে পড়ে, কনট্রাক্ট কিলারর ভুল টার্গেটের শিকার হয়ে কিংবা শিশু গ্যাংয়ের হাতে বেঘোরে না মরে যদি বেঁচে যাই, তাহলেও কত দিন? আর ২০ বছর? বড়জোর ৩০?

তারপর যখন মরব, তখন দুটো দুর্ভাগ্যজনক প্রতিবিপ্লবের গজব দেখে যাবার ভয় ইদানীং খুব হচ্ছে।

আপনাদের কাছে খুব হাস্যকর ও গাঁজাখুরি মনে হতে পারে। আমার ভাবনা আমার একান্তই নিজস্ব। আর আমাকে কোনোরকম ট্যাগে লেবেলড করারও দরকার নেই। আমি না ঘরকা, না ঘাটকা।

এক;

আমি দুঃস্বপ্ন দেখি,

২০৫০ সালে, যখন আমি হয়তো মরনাপন্ন বৃদ্ধ,
তখন দেখব, বাংলাদেশকে পাকিস্তান হতে ষড়যন্ত্র ও গাদ্দারি করে আলাদা করার দায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মরনোত্তর ট্রায়াল হচ্ছে;

আর শাহবাগে মুক্তিযোদ্ধাদের 'জাতীয় গাদ্দার' ঘোষনার দাবীতে মাসব্যাপী গণজমায়েত ও অবরোধ চলছে।
তখনও জীবিত থাকা একজনমাত্র মুক্তিযোদ্ধা লজ্জায়, ঘৃনায় আত্মহত্যা করার অধিকার চেয়ে কোর্টে রিট করেছেন।

দুই;

আমি দুঃস্বপ্ন দেখি,

২০৬০ সালে, যখন আমি না মরে বেঁচে আছি,
তখন একদিন ভোরে ঘুম ভেঙে দেখব,

কিংবা রাতে ঘুমাতে যাব এই খবর শুনে,

“সকাল দশটায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন আয়াতুল্লা নাগর(ই)। তিনি আগেই এই সুসংবাদ ঘোষনা দিয়ে রেখেছেন,

ক্ষমতায় যাবার পর তিনি সংবিধানে ব্লাসফেমী ও মুরতাদ হত্যা জায়েজের আইন সুপ্রোথিত করবেন।"

আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করি, এত হায়াত দরকার নেই। এই দুঃস্বপ্ন বাস্তব হবার আগেই ইমানের সাথে তুলে নিন।

যেই দেশে ফজরের ওয়াক্তে মসজিদে হওয়া মুসল্লীর সংখ্যার চেয়ে ফেসবুকে জুম্মা মোবারকের সংখ্যা বেশি, মসজিদে আসরের ওয়াক্তে নামাজির চেয়ে সেই সময়ে মসজিদের বাইরে পেটোয়া ধর্মরক্ষা বীরদের আনাগোনা বেশি,
সেই দেশে গণ-জনের খেলাফত নাজিলের গণআবেগের জোয়ার আর ’নগ্ন-টাখনু বিপ্লব’ কোনো সুখকর আলামত হতে পারে না। (অতিশায়ন ভাবনেন না। বাংলাদেশে এটা এখন খুব ভ্যালিড একটা প্রশ্ন, যে, ২০৫০ সালের বাংলাদেশ কি আফগানিস্তান/ইরান হবে? নাকি থাইল্যান্ড/লাসভেগাস হবে?)

আখ্যান-১৫:

এমনিতে গোটা দেশের বিপ্লবী আর প্রতিবিপ্লবীরা শাপলা চত্বর আর প্রজন্ম চত্বরে ভাগ হয়ে গেছে, আস্তেক-নাস্তেকে, শীষ-নৌকা-কাস্তেতে, এঁন্দু-মোচলমানে ভাগ হয়েছে, বিরানীর প্যকেট আর হুর-গেলমানে ভাগ হয়ে গেছে। সুরুয়া আর শুরার কাছে বহু আগেই বিক্রী হয়ে বসে আছে। বিপ্লব সেই কবে হতে ডিল, বিল আর চিল-এর পায়ে নৈবেদ্য দিয়ে বসে গেছে। আম্লীগ আর বিম্পিতে ভাগ হয়ে আছে তো আগে হতেই।

সেই ভাগাভাগির গরম আর মরম, বিপ্লব আর প্রতিবিপ্লব, একাত্তর ভারসাস পচাত্তর-আমাদেরকে দিনকে দিন পশ্চাৎদেশের মতো চিরবিভক্ত করে চলেছে। বিপ্লব আর প্রতিবিপ্লবের মহড়া তো আমরা ‘৭৫ হতেই দেখছি। নিজ জাতির জনককে নৃশংসভাবে সপরিবারে খুন করে কীসের বিপ্লব-সেটাই মাথায় আসে না। তারপর হতে কত জন এলেন আর বিপ্লবী জোসে জাতিকে গরম-ঠান্ডা করলেন। বিপ্লব তাই আর ’ফচ’ করে না। (ইয়ে, ফচ করে না’র গপ্পটা কি আপনি পড়েছিলেন? অনেক আগে লেখা আমার।)

বিপ্লব ও বিদ্রোহ কেন বাঙালকে দিয়ে হয় না? কেন হবেও না? কেন বলশেভিক বা ফরাসী বিপ্লবের ভাত নেই এই দেশে-তার সলুক সন্ধান করতে গেলে যেতে হবে বাঙাল কেনা-বেঁচার ইতিহাসের বহুদূর গভীরে। এই তত্ব ও চানক্য বুদ্ধি কে বা কাদের মাথা হতে বেরিয়ে বঙ্গল্যান্ডের তাবৎ রাজা-বাহাদুরদের মন মগজে গেঁথে গেছে জানি না।

তবে আমাদের রাজন্য ও সুলতানবৃন্দ (রাবার টুকরার সুলতান নয়, আছলি সুলতান) এই তত্ব ও ম্যাজিককে আঁতুড় হতেই লুফে নিয়ে নিজেদের হিরন্ময় হাতিয়ারে রুপান্তর করেছেন।

কী সেই তত্ব?

মূলা ও চুলা তত্ব।

এই দুই তত্বের যাদু দিয়েই রাজা, বাদশাহ, সুলতান, স্যারক্যার, পিরসিডিন, ঘনতন্ত্র, ভুট, রাশটো, রাজ্য, রাজ্যাধিকারিক, মুন্তী, সুচিব, কর্পুরেট, মাড়োয়ারী ও জানেমান-সবাই মিলে গড়ে তুলেছে এক সুনির্মিত ও সুসংগঠিত এলডোরাডো।

এই তত্ব ও তাত্বিকবৃন্দ জানেমানবৃন্দের মুখে নানা মূলা দিয়ে, আঁখি পল্লবে ঊণ-নয়ন ও ঘনতন্ত্র মলম দিয়ে এক এলডোরাডোর স্বপ্নে বিভোর রাখে। যার লোভ তাদের আরামপ্রিয় ও আয়েসী করে মোহাবিষ্ট রাখে।

তত্বের আরেক দিক হল চুলা।

ওই দিকটা জানেমানবৃন্দকে সদাসর্বদা রক্তচক্ষু, পেয়াদার কঞ্চির গুতা, কোটালের কৃপাণ আর কালাপানির আন্ধার বাস এর ভীতিতে বুঁদ রাখে। সন্ত্রস্ত রাখে।

মূলা আর চুলা- দুয়ে মিলে জানেমানবৃন্দ নিরবে এলডোরাডোর সুখের স্বর্গে অবগাহন করে। হোক সেটা আফিমের নেশাসুখ।

তত্ব আমাদের দুর্বল করে, অকর্মণ্য করে, আয়েসী করে, ভীরু করে, সুবিধাবাদী করে, আপোষকামী করে, উদাসীন করে।
আর তাই শনির বলয় হতে বৃহস্পতির দিগন্তে, কন্যা কুমারী হতে মাউন্ট ফুজির পাদদেশ-সব রাজ্য ও সালতানাতে আমরা কাপুরুষ বনে যাই। আমরা আপোষে নিজেদের দেহ বর্গা দিই, নিজেদের জীবন বর্গা দিই। নিজেদের আত্মাকে বেঁচে দিই আফিম কেনার কড়ি জোগাতে।

”আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না।”
”অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল।”

এই দুই আপ্তবাক্য দিয়েই সেই বহু বছর আগে এই দেশের আমাশাগ্রস্থ আমজনতাকে খোজা করে দেয়া হয়েছে। তাই, আমাদেরকে গালি দিয়ে লাভ নেই।

আমাদেরকে দশকের পর শতক, খুব যত্ন করে উন্নয়নের ঘন সেরেল্যাক খাইয়ে, কপালে সুশীল বালক হবার কালো টিপ পরিয়ে নাদুস নুদুস এক সুবিধাবাদী, আরামপ্রিয় আর;

আরেক দিকে গরুর বদনে যেভাবে শিক দিয়ে পোড়া দেয়, তেমনি ভয়ের কাস্তে পুড়িয়ে আমাদের অস্থানে ছ্যাঁকা দিয়ে দিয়ে কাপুরুষ ও খোজা জনগোষ্ঠীতে কৃত্রিম বিবর্তন করা হয়েছে।

আমাদেরকে দু’দিন পরে প্রকাশ্য রাস্তায় পান্তালুন খুলে খোজা করা হলেও আমরা যন্ত্রনায় কাতরাতে ভয় পাব। বরং মুখটা হাসি হাসি করে জিজ্ঞেস করব, “স্যার, দেখবেন, যেন হাতে ব্যথা না পান। আর আপনার সাথে কি একটা সেলফী হবে স্যার?”

বিপ্লব এখানে তাই আজাজিল শয়তানের ওয়াসওয়াসা মাত্র। আমাদের কোনো দোষ নেই।
দোষ দিইও না। কেন দেব?

শেষ উপাখ্যান:

বঙ্গদ্যাশে কেন একটি সর্বাত্মক বিপ্লব হয় না তার কারন নিয়ে গবেষণালব্ধ কোনো মতামত আমি দিতে পারব না (যদিও আমার ধারনা, কারনগুলো হল আমাদের ভীরুতা, সুবিধাবাদিতা, ভন্ডামী, লোভ ও বিশ্বাসঘাতিনী চরিত্র।)

শেষ বিচারে বঙ্গদ্যাশের বিপ্লব ও সুবিধাবাদী বিপ্লবীদের করুণ অবস্থা নিয়ে পতিত বিপ্লবী মহামহিম দলিয়াও এর একটা চুড়ান্ত মূল্যায়ন আপনাদের দিয়ে শেষ করি।

তিনি একটা সত্য উচ্চারন করে গেছেন-

”বঙ্গদ্যাশের মানুষ সবাই খেলাফত চায়; কিন্তু নামাজ পড়তে ডাকলেই “ভাই, প্যান্টে সমস্যা আছে।”

[আখ্যানটি নতুন পুরোনো লেখা জোড়াতালি দিয়ে লেখা বলে ক্ষণে ক্ষণে ছন্দ্যবিচ্যুতির হোচট খেয়ে থাকতে পারেন। দুঃখিত সেজন্য। লেখার প্রয়োজনেই কিছু ভাষাগত অবনমন এবং বাংরেজি মিশ্রন আছে, সেজন্য কুঞ্চিত। প্রচুর বানান ভুল আছে-ধরিয়ে দিলে খুশি হব। ]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৪১

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:

আখ্যান ১২ টা ৭/১০দিনে পোস্ট দিলে ভালো হতো।

১৫ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৩১

বেচারা বলেছেন: হা হা। সেটা ফেসবুকে আছে। এখানে একসাথে রাখি।

২| ১২ ই জুন, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২১

রাজীব নুর বলেছেন: ত্রিশ টা পোষ্ট কি একসাথে দিয়ে দিয়েছেন?
সব সময় যদি আপনার এক পোষ্টেই দিয়ে দেই, তাহলে অন্য পোষ্ট পড়বো কখন?

১৫ ই জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৩১

বেচারা বলেছেন: সব সময় আমাকে কেন দেবেন? সবাইকে দেন। আমাকে অল্প দেন। হয়ে গেল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.