নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৃতজ্ঞতা-অকৃতজ্ঞতা-কৃতঘ্নতা-প্রত্যুপকার

১৮ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:০৫

Taken for granted-সম্ভবত বাঙালীদের কথা ভেবেই এই কথাটার উৎপত্তি হয়েছে।

এই জাতটা সবকিছুকে নিজের অধিকার-হক্ক মনে করে। কারো উপকার, কারো সৌজন্য, কারো বদান্যতা, কারো মানবিকতা-এ সব কিছুকেই মনে করে তার নিয়মিত পাওনা। বাড়তি কিছু না।

কেউ কেউতো আরেক কাঠি সরেস। তারা এক কদম আগে বেড়ে এমনই approach নেয়, যেন, তাকে উপকার করে দিতে পেরে ওই বেটাই বরং ধন্য হয়েছে। ঠিক যেমন বাঘের গলার কাঁটা বের করে সারস ধন্য হয়েছিল।

আমার মনে পড়ছে, সেই পিচ্চিকালে একবার পৌষ মাসের ২৬ তারিখ, আমার দাদার মৃত্যুবার্ষিকী। আবার বাবা সেই উপলক্ষ্যে কাঙাল ভোজ (আসলে কয়েকজন গরীব কে একবেলা ডাল-ভাত খাওয়ানো) করাতেন।

তো, সেবার, দুপুর বেলা, বাজারে নিয়মিত ভিক্ষা করেন, এমন একজন গাড়িওয়ালা (বেয়ারিং গাড়িধারী) পঙ্গু ভিক্ষুক দুপুরের কাঙাল ভোজে এসেছেন রিক্সা করে।

এসেই নেমে তিনি আমাকে ডেকে বললেন, “মনু, এই খাওন কি তোমাগো বাসায়?”

সেটা নিশ্চিত হয়ে তিনি বললেন,

“যাও মনু, তোমার আব্বারে কও রিক্সাভাড়াডা দিয়া দেতে।”

আমি ভীড়ের মধ্যে কাজের বাসায় আব্বার নিকট হতে তাকে রিক্সাভাড়া দেয়াবার ব্যবস্থা করার সাহস পেলাম না। তাই মাকে গিয়ে বলে ম্যানেজ করলাম। টুইস্ট সেখানে নয়।

খাওয়া শেষ হলে তিনি আমাকে বললেন, মনু, যাও, তোমার আম্মারে যাইয়া কও, একটা পান দেতে। সুরভী জর্দা দিয়া। তাকে পান দিলাম।

অতঃপর তিনি যাবার উদ্যোগ করে আমাকে বললেন, “মনু, যাওনের রিক্সাভাড়াডা তোমার আব্বারে দিয়া যাইতে কও।”
কসম বলছি, এই ঘটনা আমি আজও মনে রেখেছি, এই চিন্তা করে, যে, ওই ভদ্রলোক সেদিন কাঙাল ভোজ খেতে এসে আমাদের ধন্য করেছিলেন, এবং আমার প্রয়াত দাদাকে তার পোলার পূণ্যে স্বর্গে পাঠাবার জন্য সদয় সম্মতি ও সদাশয় পদার্পন করে আমাদের কার্যত বাধিতই করেছিলেন।

প্রত্যুপকারী বলে একটা শব্দ বাংলা অভিধানে আছে ঠিকই, তবে সেটা ব্যবহার হয়নি কোনোকালেই। তাই উপকার ফেরতের আশা তো দিল্লী কা বাৎ।

কৃতজ্ঞতা যে একটা প্রকাশ করার জিনিস, স্বীকার করার জিনিস-এই বিদ্যাই বাঙালদের কেউ দেয়নি কোনোকালে। কেউ আপনাকে উপকার করেছে, কেউ আপনার প্রতি সদয় হয়েছে, কেউ একটা উপহার দিল, কেউ আপনাকে নিজের বন্ধুত্বে নিল, কেউ আপনার প্রতি মানবিকতা দেখালো, কেউ আপনার সাথে ভাল কিছু করল-সেটার প্রতিদান না হোক, অন্তত তাকে সেজন্য ধন্যবাদ দেয়া, তার প্রতি কৃতজ্ঞ বোধ করা, তার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধটাকে মুখে প্রকাশ করার কাজটাও বাঙালী করাকে গুনাহ মনে করে।

আরেহ বঙাল দেশের বাঙাল ভাই, উপকারীকে বলা হয়েছে উপকার গোপন করতে আর উপকৃতকে বলা হয়েছে সেটা ফলাও করে প্রচার করতে। এদেশে হয়েছে উল্টা। আমাদের শেখানো হয়েছে taken for granted.

নেটে একটি গল্প কয়েকদিন ধরে চোখে পড়ছে--আমার আব্বা বহুদিন আগে একটি গরিব পরিবারকে আমাদের একটি জমিতে বিনামূল্যে ঘর তুলে থাকতে দিয়েছিলেন........

বাঙালদের taken for granted চরিত্র এই গল্পে এত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে-যে বলার না।

আজকাল সন্তানাদিও বিশ্বাস করে, এবং রীতিমতো বাপ-মা'কে বলতেও শুরু করে দিয়েছে-"তোমরা যা করছ, তা তো নিজেদের স্বার্থেই করছ। আর যা করছ, তা তো তোমাদের দায়ীত্ব।"

সুতরাং, উপকার করুন, মানবিকতা দেখান, বদান্যতা প্রদর্শন করুন আর বেশি বেশি ধন্য হোন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: দেশে যত মানবিক মানুষ থাকবে সেই দেশ তত এগিয়ে যাবে।

২১ শে জুলাই, ২০২২ বিকাল ৪:৪০

বেচারা বলেছেন: সত্য বটে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.