নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ নই, আমি আমার নই, আমি তোমার নই, আমি তুমিও নই

বেচারা

Walid

বেচারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুভূতিহীন জাতের অনুভূতি যখন আহত হয়

১৮ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:১১

আমি ১০০ শতাংশ নিশ্চিত, বঙ্গদেশের জাতীয় কবিও যদি আজ জন্ম নিতেন আর "বিদ্রোহী" কবিতায় লিখতেন,

"খোদার আসন ’আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি......"

কিংবা,

“ভগবান বুকে এঁকে দেব পদ-চিহ্ন।”

ওনার নামে.... নুভূতির মামলা এবং জাগ্রত জনতার তিন দফা হামলা হয়ে যেত।

যেই... নুভূতি রক্ষার অভিযানে জাগ্রত জনতা আবার তার ঘরের একমাত্র জাঙিয়াটাও গনিমত আখ্যা দিয়ে লুট করত। ভাতের মাড় গালবার তেপায়াটাও বাদ পড়ত না।

এই ভন্ড জাগ্রত জনতার .....নুভূতি প্রবণতা এবং ধর্মপ্রাণতার নমুনা অনেকটা এমন-

বড় ছেলে ঘরে আসার পরে মা তার বড় ছেলের কাছে নালিশ করলেন,
“তোর ছোট ভাই আমাকে .....ত্তার বাচ্চা বলে গালি দিয়েছে।”

ছোট ভাই ঘরে ফেরার পরে বড় ভাই তাকে মায়ের ......নুভূতি রক্ষায় শাসন করে ধমকে উঠল,
“......য়োরের বাচ্চা, তুই মা’রে .......ত্তোর বাচ্চা বলেছিস?”

দেশে বেশ একটা .....নুভূতি ....নুভূতি খেলা বেশ জমে উঠেছে।

কাউকে সাইজ করতে চান, কারো ওপর শোধ নিতে চান, কারো ওপর পুরোনো শত্রুতার জের টানতে চান, কাউকে কুপ্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হবার শোধ তুলতে চান, কারো ভাল জমিটা কেড়ে নিতে চান, কাউকে বাঁশ দিতে চান, কারো কিছু লুটে নিতে চান, কাউকে দেখিয়ে দিতে চান-কিচ্ছু করতে হবে না।

রাস্তায় বা সমাজে তাকে যাস্ট ....নুভূতি আহত করার একটা এলজাম (অপবাদ) দিয়ে দিন। ব্যাস, বাকি কাজ আপনার হয়ে জাগ্রত জনতাই করে দেবে। ঘটনা ভাইরাল হয়ে ফেসবুকে এলেও ক্ষতি নেই। আপনার পক্ষে বলবার মতোও ৫০% লোক পাবেন। ওটা ৮০% হতে পারে। বিশেষত আপনি যদি অন্যায়কারী হন।

যুগ যুগ ধরেই এই ....নুভূতির খেলা চলছে। এই খেলা নতুন না। যেই দলই ক্ষমতায় থাকুক, .....নুভূতির খেলা নতুন নতুন প্যাটার্নে দেখা দেয়। গত কিছুদিন ধরে .......নুভূতির যে জোয়ার চলছে-তার কিছু ট্রেন্ড দেখাই-

এক-

এই ....নুভূতির তীব্র প্রকাশের প্রধানতম ধান্দা স্রেফ লুট। দুর্বলের সম্পদ লুটের বাঙালীর চিরকালের দুর্দমনীয় কামনা, বাসনার বাস্তবায়ন। আগে ‘কুলটা’, ‘ব্যভিচার’, ‘একঘরে’ এসব .....নুভূতি দিয়ে সাইজ করে কাজটা সারা হত।
এখন .........নুভূতির ডিজিটাল ভারসন দিয়ে সাইজ করা হয়। এটা সব যুগেই ছিল। এখনও সারাবছরই চলে। নানা ছুরতে। গোপনে-প্রকাশ্যে। মনে রাখতে হবে, এখানে জিনিসটা সাম্প্রদায়িকতা না। জিনিসটা একেবারেই দুর্বলের ওপর সবলের গ্রাস। ধর্ম ও অনুভূতি দিয়ে সাইজ করাটা এখন ও সবসময়ই সহজ-তাই যাস্ট অস্ত্রটার ধরন হল সাম্প্রদায়িক।

এগুলো যুগ যুগ ধরে বাঙালদের ন্যাচার। এখানে লুন্ঠন ও প্রতিশোধই সব। বাদবাকি যেসব ধুয়ো তোলা হয়, ....নুভূতি, অবমাননার যেসব ছাঁইপাশ নিয়ে আবহ তৈরী হয়, সবই আসলে ফিলার ও কিলার। এখানে ধর্মের ছিটেফোটাও কারো মনে নেই। কে না জানে, এদেশে সবাই খেলাফত চায়, কিন্তু নামাজ পড়তে ডাকলেই, "ভাই, প্যান্টে সমস্যা।" বাঙালরা কোনো কালেই ধর্মপ্রাণ ছিল না। যেটা ছিল সেটাকে ধর্মমুগ্ধ কিংবা ধর্মভীরু বলা চলে। এই লুন্ঠকরা উপাসনার ওয়াক্তে লুটের ভাগ নিতে হামলা করে। উপাসনা পরেও করা যাবে। খোদা অপেক্ষা করবেন। কিন্তু, লুটের ভাগ তো পরে পাওয়া যাবে না।

একেকটা ঘটনা ঘটলেই বড় বড় শান্তিবাদীরা আর সব কথার মধ্যে একটা কথা কমোনভাবে বলবেনই,
”আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। সে যদি কোনো অন্যায় করেই থাকে, তার বিচার হবে।” কিন্তু, শান্তিবাদী খুব ভাল করেই জানেন, ওই কথিত অপরাধীর চৌদ্দপুরুষও কোনোদিন টু শব্দ করার সাহস ভুলেও করার কারন নেই। কিন্তু, সুশীল হবার এটাই জ্বালা। তাকে সবদিক ‘মেইনটেইন’ করতে হয়।

দুই-

ইলিকশন। ইলিকশোনের আগে দিয়ে এই ....নুভূতির শিৎকার বেড়ে যায়।

যারা প্রকাশ্যেই ব্রাত্য ও মৌলবাদী-তারা করে,
যারা প্রকাশ্যে প্রগতিবাদী ও গোপনে কামাক্ষা ও নারায়নবাদী-তারাও করে,
যারা সুশীল-তারাও সুযোগ পেলে করে। নানা ধান্দাতেই।

সবার টারগেট একটাই-ইলিকশান। ইলিকশন চলে গেলে আবার স্রোতটা স্বাভাবিক ধারা ও মাত্রায় ফেরত আসবে।
নতুন করে যেসব.. নুভূতির তীব্র শীতকার দেখছেন, সেটা কিছুটা সংখ্যালঘুর সম্পত্তি দখলের পুরোনো রোগ নতুন টেকনিক আর, ভোটকে মাথায় রেখে সব দলের সংখ্যালঘু ট্রাম্পকার্ডের আগাম ব্যবহার। দ্বিতীয়টা ভোট শেষে থেমে যাবে।

তিন-

সারাবছর ধরে এই লুট ও ছদ্মবেশী হামলাগুলো হলেও পত্রিকা ও ফেসবুকে ভাইরাল হয় না। বিশেষত বড় আকারের মাত্রা ছাড়া ঘটনা না হলে। ইদানীং কয়েকটা ঘটনা ভাইরাল করা হয়েছে। আবারও বলছি, ’ভাইরাল করা হয়েছে’। হামলাগুলোর হোতা ও থোতা-উভয়ই হয়তো ভাইরাল করেছে। যার যার স্বার্থে। এখানেও টারগেট ইলেকশান।

চার-

সবশেষ ভাইরাল হামলাগুলোর প্রতিটির ভিকটিম ধর্মীয় সংখ্যালঘু কেউ বা কারা। সংখ্যাগুরুর কাউকে ভিকটিম হতে হয়নি। যদিও সংখ্যাগুরুর ধর্মগুরু ও ভক্তদের একাংশ অহরহই অন্য বিশ্বাসের লোকদের অনুভূতিতে হামলা করে। প্রকাশ্যে। কোনো প্রতিবাদ, কোনো অপরাধারোপ, কোনোকিছু কোথাও আহত নিহত হয়না। আবার, এই ভিকটিমদের সবাই (১০০%)ই একটি একক ধর্মীয় সংখ্যালঘু। অন্য দুটো মেজর সংখ্যালঘুর কেউ না। অবাক লাগে। স(ও হ্যা, বান্দরবানে অবশ্য ১টা হামলা হয়েছিল।)। খেয়াল করুন, হামলা ও লুটের জন্য এই ভিকটিমরা কিন্তু সবসময়ই টারগেট ও পপুলার শিকার।

পাঁচ-

সবগুলো ঘটনাই ঢাকার বাইরে। অনুভূতির হামলা ঢাকাতে হতে দেখি না, আর, ....নুভূতির আঘাতের প্রতিবাদ (আসলে লুট ও জিঘাংসা)ও ঢাকাতে নেই। একটিও নেই। তাহলে কি ধরে নিতে হবে, ঢাকার সব মানুষ বিশুদ্ধতম সাম্যবাদী, শান্তিবাদী ও অসাম্প্রদায়িক? প্রশ্ন করলেও এটা আসলে উত্তর।

ছয়-

প্রতিটি ঘটনাই ঘটেছে ফেসবুক স্টাটাসকে পেঁচিয়ে। বাস্তবের মাঠের কোনো ঘটনা বা বক্তব্যকে ঘিরে না। (হ্যা, একটা ঘটেছে উপাসনালয়ে ধর্মগ্রন্থ অপবিত্র করার চক্রান্ত করে)। তাহলে কি ....নুভূতি আহত করার জন্য দুর্বৃত্তরা ফেসবুককেই অবলম্বন করল? আর জাগ্রত জনতাও আবার শুধু ফেসবুকেই নজরদারী করে এহেন দস্যুবৃত্তি হতে .....নুভূতিকে বাঁচানোর দায় নিল?

সাত-

একদম ১০০% ....নুভূতি রক্ষার প্রতিটি ঘটনায় লুট করা হয়েছে। তার মানে লুটটা অন্যতম ট্রেন্ড। (অথবা....আসল লক্ষ্য।)
যারা বাঙালীর লাখ টাকার ব্যাগ কুড়িয়ে পেয়ে ফেরত দেবার স্টাটাস শেয়ার করেন, তারা ভোলায় পায়রা বন্দর নির্মানের নির্মান সামগ্রীবাহি বার্জ সাগরে ভেসে আসার পরে ভোলার চর নিজামুদ্দিনের ‘সাধারন মানুষ’ কর্তৃক সেটাকে লুটে করার ভিডিওটাও ‘শিয়ার’ দিয়েন। আমাদের মধ্যে লুটেরা মনোঃবৃত্তি পুরোনো।

#religon #religiousfanatism #ধর্মান্ধতা #politicalstant #loot #hooligans #secularism #criminalization ]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.