নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ- ই থাকতে চাই - বিদ্যুৎ; কবি, লেখক, কলামিস্ট আর ব্লগিং তো করিই সব সময়।

বিদ্যুৎ

আমি মানুষ-ই থাকতে চাই - বিদ্যুৎ

বিদ্যুৎ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেড়ে ওঠা স্বপ্নগুলো -০১

২৮ শে জুন, ২০১৫ রাত ৮:৩৫

ছবি সংগৃহীত
জন্ম থেকে আমৃত্যু প্রতিটি মানুষ বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। বয়স, স্থান, কাল, পরিবেশ, সুখ দুঃখ, হাসি,আনন্দ,অভাব,অভিযোগ ও বিলাসিতা ইত্যাদির কারণে মানুষের স্বপ্ন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।তবে ছোটবেলার স্বপ্নগুলোতে খুব বেশি আনন্দ থাকে। ছোট্ট আনু সেও অনেক স্বপ্ন দেখে, সে যে স্বপ্ন দেখে তা হয়ত একজন শহুরে ধনীর দুলাল-দুলালীদের কাছে নিছক ব্যাপার হলেও আনুর কাছে সে এক বিরাট বড় স্বপ্ন। শহুরে ধনীর দুলাল-দুলালীদের স্বপ্ন হয় বাবা অথবা মা কালকে অফিস থেকে ফেরার সময় শপিং করে আনবে সঙ্গে আনবে তার সেই স্বপ্ন দেখা রিমোট কন্ট্রোল চালিত বাজারের সবচেয়ে সুন্দর আর দামী খেলনা গাড়িটি যেটি সে সকালে ঘুম থেকে জেগে তার আব্বু-আম্মুকে বায়না ধরেছিল, গত রাতে সে একটি কার্টুন ছবিতে দেখেছিল সেই লাল টুকটুকে গাড়িটি। তাকে যে সেই স্বপ্ন দেখা রিমোট কন্ট্রোল চালিত বাজারের সবচেয়ে সুন্দর আর দামী খেলনা গাড়িটি না দিলে স্কুলে যাবে না। বাবা-মা তাঁরাও কম যাবেন না কারণ তাঁদের আদুরের বেবি যে ঢাকার নাম করা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে নার্সারিতে পড়ে, সেখানে যে যার বাচ্চাদের যত আধুনিক ও দামী খেলনা, জামা কাপড় ইত্যাদি কিনে দিতে পারবে তাঁদের নিজেদের জন্যও যে সুনাম বয়ে আনবে, শুধু মেড ইন বাংলাদেশ লেখা জামা কাপড় তো আর বাচ্চাদের পরানো যাবে না এতে সম্মান যে ধূলাই মিশে যাবে। এই মেড ইন বাংলাদেশ যদি আমেরিকা গিয়ে শুধু ওয়াল মার্ট হয় আর আমরা বেশি দামে কিনি এতেই যেন আমাদের স্ট্যাটাস হাই হয়ে যায়। সবার কাছে গর্ব করে বলতে পারবেন। কিন্তু আনু’র! হ্যাঁ শৈশবেই আনু পিতাকে হারিয়েছে। চার নাবালক ছেলেমেয়ে নিয়ে আনুর মা দারিদ্র্যের মহাসমুদ্রে সাঁতার দিয়েছে দিক-নিশানা বিহীন অজানা গন্তব্যে। আনুরা গরীব বলে তো আর তাঁদের স্বপ্ন দেখা মানা নেই। ছোট্ট আনুও ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে গাড়ি নিয়ে পাড়ার বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করছে। তবে আনু’র গাড়ি রিমোট কন্ট্রোল চালিত বাজারের সবচেয়ে সুন্দর আর দামী খেলনা গাড়িটি নয়। বয়স, স্থান, কাল, পরিবেশ, সুখ দুঃখ, হাসি,আনন্দ,অভাব,অভিযোগ ও বিলাসিতা ইত্যাদির কারণে যে মানুষের স্বপ্ন ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে আনু’র ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তবে সেটি অভাব,অভিযোগ আর দারিদ্র্যের কারণে। আনু সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে সোজা পাশে মণ্ডল বাড়ির সুউচ্চু সুপারি গাছের নিচে গিয়ে হাজির। কিন্তু নাহ! তার স্বপ্ন যে সফল হওয়ার অনেক সময় বাকি কারণ তখনও যে সুপারি গাছের ঢঙ্গা/ঠোঙ্গা সদৃশ ডালটি মাটিতে পড়েনি। আনু’র মনটা শুধু আনচান করছে কোন ভাবেই নিজেকে ওই সুপারির ডালের মায়া জালের স্বপ্ন থেকে বের করতে পাড়ছে না। এ যেন কারেন্ট জালে কৈ মাছ আটকা পড়ার মত যতই ছাড়তে চাই ততই বেশি শক্ত ভাবে জালে পেঁচিয়ে যায়। এদিকে আনুর মা রাতে না খেয়ে ভাতে পানি দিয়ে রেখেছিল সকালে বাচ্চাদের পান্তা মুখে দেওয়ার জন্য। আনু বাড়িতে গিয়ে মায়ের দেওয়া পান্তা ভাত এক চুমুকে সাবাড় করে আবারো ভোঁ দৌড় সেই সুপারি গাছের দিকে। এদিকে হয়ত শহুরে আদরে ধনীর দুলাল নাস্তার টেবিলে দুধ,কলা,ডিম,হরেক রকম ফল ফলাদি আর শক্তি,মেধা,শরীর গঠন দ্রুত বেড়ে ওঠার জন্য বিচিত্র সব বিদেশী জুস-শরবত খাওয়ানোর জন্য এক মহাকান্ড আয়োজন করা হচ্ছে।
আনু প্রচণ্ড রোদ আর গরমে সুপারি গাছের পাতার ফাঁক গোলে মিষ্টি আলো আর সুদূর থেকে ভেসে আসা ছায়া সুশীতল বাতাসে গা এলিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। দুপুরব্দি সেই সুপারি গাছের ঢঙ্গা/ঠোঙ্গা সদৃশ ডালটি দুপুরের কড়া রোদে শুকিয়ে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়া মাত্র কুঁড়িয়ে নিয়ে আনু তার বন্ধুদের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে আবার ভোঁ দৌড়। আনু আর তার কয়েক বন্ধু মিলে পালাক্রমে ধুলা মাটিতে তার স্বপ্ন খেলা খেলে যাচ্ছে। একজন সুপারির ঠোঙ্গায় বসে আর বাকিরা মিলে সামনে টানে, সে যে কি আনন্দ আর উল্লাস তা বলে বোঝানো অসম্ভব ব্যাপার। এদিকে হয়ত শহুরে দুলাল বন্দি ঘরে এক ব্যয়বহুল নিরানান্দ ও বন্ধুহীন সময় কাটাচ্ছে।
চলবে----

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৫ রাত ৩:১৫

হানিফঢাকা বলেছেন: The picture makes me nostalgic.

২৯ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৪

বিদ্যুৎ বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.