নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময় অনেক কম, কাজ অনেক বেশি। সংবাদ মাধ্যমের চেয়ে উৎকৃষ্ট এই সিটিজেন জার্নালে অন্তত চটি লেখক মার্কা লোক নেই-আমি এতেই সুখ অনুভব করছি। লিখতে শুরু করেছি-লিখতে লিখতেই হয়তো একদিন ফুড়িয়ে যাবো। তারপরেও সকল মানুষের কল্যান কামনা করেই যাবো

বিভক্ত আত্মা

সাংবাদিক

বিভক্ত আত্মা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাংবাদিকতা-০২ : একদিকে কপি পেষ্ট সাংবাদিকতা, অন্যদিকে সগোত্রীয় আক্রোশ

১১ ই মে, ২০১৭ রাত ১:০৪


তখন আমি উপজেলার সাংবাদিক। দেশের প্রথম সারীর পত্রিকায় প্রায় প্রতি মাসেই কমপক্ষে দুটি সংবাদ প্রথম পাতায় স্থান পাওয়া আর প্রায় সংবাদের সম্পাদকীয় হওয়ার কারণে নিজ গোত্রের রোষানলে পতিত হই আমি। জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংবাদিক মহোদয়ের অনেক অনুযোগ ছিল। তার নির্দেশ ছিল যে, যে কোন সংবাদ আগে তার সাথে শেয়ার করে তারপর পত্রিকা অফিসে পাঠাতে হবে। আমি সেই নির্দেশ উপেক্ষা করাতে পত্রিকা অফিসে তার আপনজনদের কাছে আমার নামে নালিশের অভাব ছিলনা। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, পত্রিকা অফিসে কর্মরতরা তো সবার জন্যই সমান। না, এ কথাটি মোটেই সঠিক নয়। সেখানেও আছে আঞ্চলিকতা, আত্মীয় পরিজন, বিশেষ ক্ষেত্রে আপনজন অথবা ম্যানেজ। এর কোনটির মধ্যেই আপনি আপনাকে সম্পৃক্ত না করলে হয়তো চাকরি হারাবেন, অথবা কারণ-অকারণে বকাঝকা তো শুনতেই হবে। সম্পর্কটা হয়ে উঠবে প্রভূ আর ভৃত্যের। আমার সাংবাদিকতা জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা আমি বলছি।
সাংবাদিকতা এখন অনেক আধুনিক বলে আমরা জানি। ভেতরের রহস্যটা কিন্তু ভিন্ন। সংবাদ নিয়ে এখন আগের চেয়ে অনেক সরগোল হয় বটে, তবে এই সরগোলের অধিকাংশই এজেন্ডা সাংবাদিকতা। অর্থাৎ কোন লিখিত নয়, তবে নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা দলের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতা করার স্বাধীনতা সাংবাদিকদের নাই। (তবে সবক্ষেত্রে নয়, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কি করা হয়, তা লিখে জানাবো)
জেলা সাংবাদিকের প্রচন্ড চাপের পরেও আমি নত স্বীকার না করাতে অফিসেরই কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারা অহরহ অপমান, অপদস্থ হয়েছি। তবে, সংবাদের বিচিত্রতার কারণে, আমি অফিসের অধিকাংশ জনের কাছে আস্থাভাজন হতে পেরেছিলাম।
জেলা সাংবাদিককে সংবাদ দেখানোর পরে আমাকে অফিসে সংবাদ পাঠাতে হবে, বিষয়টা আমার মনে অনেক সন্দেহের সৃষ্টি করে। ঘটনা বুঝতে খুব বেশি দেরি লাগেনি। ওই জেলা প্রতিনিধি নিজেও সরকারি চাকরি করতেন, অপরদিকে তার স্বামীও সরকারি চাকরি করতেন এবং অন্য একটি প্রভাবশালী পত্রিকায় সাংবাদিকতা করতেন। আমি কথা না শোনার ফলে, জেলা প্রতিনিধির সাথে দুরত্ব বেড়ে যায়। একদিন ওই জেলা প্রতিনিধির স্বামী ফোনটা তার স্ত্রীর ফোনে সংযোগ দিয়ে কথা বলায়। সেদিনের কথা সারাজীবন মনে থাকবে। আমি সরাসরি সংবাদ পাঠাবো কেন, এ নিয়ে উম্মাদের মত চিৎকার চেচামেচি করলেন খানিকক্ষন। আমি ফোন কেটে দেওয়ার পরে আবারও ফোনে কথা বলাতে বাধ্য করলেন। এরকম উম্মাদের মত আচরনের উদ্দেশ্যটা ছিল ভিন্ন। সে সময়টাতে সংবাদ পাঠানোর জন্য হয় জেলায় গিয়ে ফ্যাক্স করতে হতো, অথবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংবাদ পাঠাতে হতো। আমি যে জেলার কথা বলছি, সে জেলাতে তখনকার সময় ২ থেকে ৩ জন সাংবাদিক হয়তো হাতে লিখতেন নয়তো কম্পিউটার অপারেটরের দ্বারা সংবাদ লিখাতেন। আর যেখান থেকে ফ্যাক্স করতে হতো, সেই ফ্যাক্সের দোকানদারের কাছে অধিকাংশ সাংবাদিকের স্বাক্ষর করা একটা করে ছোট কাগজ রক্ষিত থাকতো। অর্থাৎ সেই ফ্যাক্স ওয়ালা নির্দিষ্ট ২ বা তিন জনের সংবাদ ফ্যাক্স করার পরে অধিকাংশদের কর্মরত পত্রিকায় উক্ত সংবাদ ফ্যাক্স করে দিতেন। এ কারণে অবশ্য নিচের অংশে নাম আর স্বাক্ষরের স্থানে শুধু সংশ্লিষ্টজনের স্বাক্ষর করা চিরকুটটি আঠা দিয়ে লাগিয়ে নির্দিষ্ট নম্বরে ফ্যাক্স করে দিতেন।
তখন আমি উপজেলার সাংবাদিক। কদর একটু কম থাকলেও আমার সংবাদের কারণে অধিকাংশ জনকেই নিজ নিজ অফিসে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হতো ও জওয়াবদিহীতা করতে হতো। এক সময় অনেকের কাছে বেশ কদরের ব্যক্তি হলাম। তারপরেও আমি আমার লেখা সংবাদ কোন অবস্থাতেই কারো সাথে শেয়ার না করবার কারণে অধিকাংশ জনই মনক্ষুন্ন হতেন, গালাগালি করতেন। এ যেন একটা বড় জোটের বিরুদ্ধে আমার মহাযুদ্ধ। তারপরেও যন্ত্রনাকাতর আমি, সহাস্যে সকল গালিগালাজ উপেক্ষা করেছি।
অনেক মানসিক অত্যাচারের পরে একদিন বিষয়টি আমি সাহস করে অফিসকে জানালাম যে, “সংশ্লিষ্ট জেলা প্রতিনিধি আমার লেখা সংবাদ আগে তিনি দেখতে চান ও তিনিও ক্রেডিট চান। তারপরে সে সংবাদ অফিসে পাঠানোর জন্য বারবার চাপ প্রয়োগ করছেন। আমি মনে করছি যে, জেলা প্রতিনিধির স্বামী অর্থাৎ অন্য একটি প্রভাবশালী পত্রিকার সাংবাদিক তিনিও যাতে সংশ্লিষ্ট সংবাদের বিষয়বস্তু জানতে পারেন এবং ক্রেডিট নিতে পারেন, সে কারনেই আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।‍”
অফিস থেকে আমাকে জানানো হলো, আমি যেন কোন সংবাদই জেলা প্রতিনিধির সাথে শেয়ার না করি। এতে দ্বন্দ আরও চরমে উঠলো। কর্মদক্ষতার কারণে, অফিস থেকে আশপাশের জেলা উপজেলার সংবাদের প্রতি দৃষ্টি দেবার জন্য প্রতিনিয়ত: নির্দেশনা পেতে থাকলাম।
এরই মধ্যে একদিন পার্শ্ববর্তী উপজেলার বিএসএফ'র হাতে বাংলাদেশী নিহত হবার সংবাদটি সকাল বেলা পাবার পর পরই সংবাদটির গুরুত্ব বুঝে তাৎক্ষনিকভাবে অফিসে পাঠিয়ে দিলাম।
জেলা প্রতিনিধির স্বামী অফিস থেকে বাড়ি যাবেন, অত:পর সংবাদ লিখবেন ও পাঠাবেন, তাতে আসলে অনেক দেরি হয়ে যায়। অফিসে তখন এমনও অভিযোগ ছিল যে, মনের ভুলে ওই জেলা প্রতিনিধির স্বামী তার নিজ স্বাক্ষর করা সংবাদটিই অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ সংবাদটির নিচে তার সাংবাদিক স্ত্রীর স্বাক্ষর বসাতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাই অফিস এটাই জানতো যে, আসলে সংবাদ লিখেন অপর আর একটি পত্রিকার সাংবাদিক, সংশ্লিষ্ট পত্রিকার জেলা প্রতিনিধির স্বামী।
আমি কেন পার্শ্ববর্তী উপজেলার সংবাদ পাঠালাম, এতে সন্ধার দিকে ফোন করলেন পত্রিকা অফিসের প্রভাবশালী শাহেদ মোহাম্মদ আলী সাহেব। পরে শুনেছি, তিনি এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রতিনিধির আদী নিবাস একই জেলায়। শাহেদ সাহেব যাচ্ছে তাই বললেন। তবে, অস্ফুট স্বরের কথাটি আমি আজও ভুলিনি। অন্য কথাগুলোর তুলনায় কিছুটা আস্তে করেই বললেন, তোমার চাকরী আমি কবে খেয়ে ফেলতাম, খালি....। বাক্যটি তিনি অসম্পূর্ণ রেখেই ফোন কাটলেন। অবশ্য পরের দিন আমার ক্রেডিটেই সংবাদটি প্রকাশিত হয়। এ ঘটনায় বুঝলাম, আমি আসলে গ্রুপিংয়ের শিকার হয়েছি। -অনেক পরে জেনেছি, সেই জেলা প্রতিনিধির প্রতি সমর্থন জানাতেই তিনিও আমার প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়েছিলেন ও অপছন্দ করতেন।
জঙ্গী নিয়ে বিশেষ গবেষনার কারণে, আমাকে অফিস থেকে এসাইনমেন্ট দিয়ে নওগা, বাঘমারা, আত্রাই, রানীনগর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, ঝিনাইদহ সহ জঙ্গী কানেক্টেড অনেকগুলো জেলাতে কাজ করতে হয়েছে। সে এক বিশাল অভিজ্ঞা। পরে লিখবো। তখনও আমি উপজেলা প্রতিনিধি হিসাবেই কাজ করতাম।
আমার উপজেলাটি ছিল জঙ্গীপ্রবণ এলাকা। তবে, এটা জঙ্গীদের শেলটার হোম হবার কারণে, এখানে কোন নাশকতার ঘটনা ঘটায়নি ইসলামী জঙ্গীরা। দীর্ঘ গবেষনায় জঙ্গী মদদদাতাদের মধ্যে প্রভাবশালী নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের নামও উঠে আসে। ১৭ আগষ্টের পরে অধিকাংশ জঙ্গী সম্পৃক্তরা আশ্রয় নেয় বিএনপিতে। ঠাকুরগাও জেলা ছিল আওয়ামীলীগ সমৃদ্ধ এলাকা। এতে করে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা আর না থাকার কোন বিষয় ছিলনা। সমঝোতার ভিত্তিতে টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজি সহ সকল অপকর্ম চলতো।
সংবাদ লেখার নেশা আমাকে দুরন্তপনার দিকে ঠেলে দিলো এক সময়। সরকারি কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আমার শশুড়ের বিষয়েও একবার প্রথম পাতায় একটি সংবাদ করে লিখে ফেলেছিলাম। বিষয়টি আলোচনায় পরিনত হবার পরে, আর কারও কাছে আপন জন হিসেবে থাকতে পারলাম না। সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, প্রশাসন, আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত সবাই আমার ওপর ক্ষীপ্ত। কিন্তু আমাকে দমানো যেতে পারে এমন কোন পথ কেউ খুজে পাচ্ছেন না। আমি বিষয়গুলো টের পাই। আমি তথ্য সংগ্রহের জন্য কোথাও গেলে অনেক আপত্তি সত্ত্বেও হয়তো তথ্য প্রদান করেন, এমনকি খাতির করে বসতেও বলেন, লোকজনের সামনে অনেক সুনামও করেন। তবে, আমি উঠে আসার পরে তারা যে কি পরিমান গালাগালি করেন, তা নিজ কানে না শুনলেও অপরের মুখে শুনেছি এবং সবই বুঝতে পারতাম।
(চলমান-আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০১৭ রাত ১:২৫

শরদিন্দু রূপক বলেছেন: আপনি সৎ & সাহসী বলেই হয়তো সগোত্রীয়দের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন,আবার এখানেও লিখতে পেরেছেন।অসাধারণ ব্যক্তিগুলোর নাম উল্লেখ করে মুখোশ উন্মোচন করে দিতে পারলে আরো ভালো হতো,যদিও তাতে আপনার প্রাণনাশের ঝুঁকি বাড়ে।জগতে ভালো,সৎ,সাহসী মানুষেরা এজন্যই চিরদিন থাকেন না।সত্যের যতই জয় হোক,এসব দ্বিমুখী অবিচারক নিপীড়ক কিছু দুর্নীতিবাজের মিথ্যাচার অপকর্মকাণ্ডে বিদায় নিতে হয় ভালো মানুষগুলোকে।এদের জন্যই আজ সাংবাদিকতার মতো এমন মুক্ত স্বআধীন একটা পেশার,এ অবস্থা।মাঝেমাঝে আক্ষেপ হয় এমন দূষিত পৃথিবীতে জন্ম নেয়ার জন্য।
আমি স্বার্থপর,তাই বলতেছি,আপনি চালিয়ে যান আপনার কাজ & আপডেট দিয়েন দয়া করে।আমি শুধু দোয়াই করতে পারি।আমার ক্ষমতা খুবই সামান্য।ভালো থাকুন।

১২ ই মে, ২০১৭ সকাল ৭:৪০

বিভক্ত আত্মা বলেছেন: আপনাদের দোয়া, ভালোবাসা চিরদিন আমার পাথেয় হয়ে থেকেছে, আজো আছে। আমি জানি, আমার পরিনতি কি হতে যাচ্ছে। বায়োগ্রাফী কথাটা লিখতেই উন্নত এই প্রযুক্তির সময়টাতেই অনেক হুমকি পেয়ে গেছি, আর পাচ্ছিও। কারণ, ওরা জানে আমি সেদিক দিয়েও ধেয়ে যাবো। আপনাদের ভালোবাসার শক্তি নিয়ে বলছি......এই ভালোবাসা আর দোয়ার এতই শক্তি যে, আমি স্বয়ং ঈশ্বরকেও প্রশ্নবিদ্ধ করার মত সাহস রাখি।
আর হ্যা, আমার দীর্ঘ লেখার মধ্যে সব কালপ্রিটের নাম, ঠিকানা, ঘটনা, প্রমাণ সব থাকবে। বিশ্বাস রাখবেন।

২| ১১ ই মে, ২০১৭ সকাল ৮:৩৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আছি সাথে, বাকীটাও লিখে ফেলুন, পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।

১২ ই মে, ২০১৭ সকাল ৭:৪১

বিভক্ত আত্মা বলেছেন: সাথে থাকার জন্য কৃতজ্ঞ।

৩| ১২ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: বাংলাদেশে সৎ সাংবাদিকা খুবই কঠিন। আপনার প্রতি সহমর্মিতা।

১৫ ই মে, ২০১৭ সকাল ৭:৪৯

বিভক্ত আত্মা বলেছেন: সহমর্মিতার জন্য কৃতজ্ঞ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.