নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সহেনা যাতনা দিবস রজনী

বদিউজ্জামান মিলন

আমি একজন খেটে খাওয়া শ্রমিক। রবীন্দ্রনাথ আমার গুরু। উনার কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস, গান আমার দারুণ প্রিয়। আমি প্রথম আলো পত্রিকায় সাংবাদিকতা করছি। বেড়ানো আমার শখ, শখটা এখন ঘুমানোতে ডাইভার্ট হয়ে গেছে। খেলা দেখার নেশাটা ছাড়তে পারি নি এখনও......

বদিউজ্জামান মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেপাল ভ্রমণ: পর্ব-৪

২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৩৫

পোখারা শহরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ড্রাইভার বলল, আমরা এসে গেছি। লাগেজ পত্র নিয়ে কড়া রোদের মধ্যে নামলাম। স্থানীয় সময় বেলা আড়াইটা। ভেবেছিলাম পোখারায় শীত থাকবে। কোথায় কী? রীতিমতো ঘামছি সবাই।

নামতেই একদল গাইড ও হোটেল রিসিপশনিস্ট ছুটে এল। ঠিক যেন গাবতলীর বাস কাউন্টারের কর্মচারী! কোথায় যাবো, হোটেল ঠিক করা আছে কি না, এসব প্রশ্নে আমাদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে লাগল।

আমি বললাম হোটেল ঠিক হয় নি। একজন বলল আমাদের হোটেলে উঠুন, গরম পানি, ঠান্ডা পানি, বাথ টাব, ওয়াইফাই ইন্টারনেট কানেকশন সহ নানা প্রলোভন দেখাচ্ছিল। আরো বলল, তাদের হোটেল থেকে নাকি পাহাড় আর লেক খুবই সুন্দর ভাবে দেখা যায়। ভাড়াও সস্তা। মাত্র ৮০০ রুপি। আমি কিছুটা কনফিউজড। কাঠমান্ডুতে আমার শ্যালকের বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বললাম। ওরাও হোটেলের ওই কর্মচারীর সঙ্গে নেপালি ভাষায় বাতচিত করল ক্ষানিকক্ষণ। এরপর ট্যাক্সি ডেকে উঠে পড়লাম। গন্তব্য হোটেল।

শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে হোটেল। আসলে আমরা যেখানে উঠলাম সেটা পুরোটাই হোটেল পাড়া। থ্রি স্টার মানের সব হোটেল। আছে গেস্ট হাউজ জাতীয় হোটেলও। কিছুটা কক্সবাজারের মতো। আমাদের হোটেলের সামনে ফুলের বাগান। একটা আলসেসিয়ান কুকুর গেটে। চমৎকার বাড়ি। তিন তলায় এক রুমে উঠলাম। জানালা খুলতেই দেখলাম ফেওয়া লেকঘেষা পাহাড়। অপূর্ব দৃশ্য।

এবার ফ্রেশ হয়ে, গোসল সেরে, খানিক গোছগাছ করে দুপুরের খাবারের জন্য বের হলাম। আগেই বলেছিলাম, নেপালে বেলা একটার মধ্যে লাঞ্চ শেষ হয়ে যায়। আমাদের হোটেল খাবার অর্ডার দিয়েছিলাম। ওরা বলল এক ঘন্টা দেরি হবে। ঠিক করলাম বাইরের কোনো রেস্তরায় খেয়ে নেব। একফাকে হোটেলের গাইড এসে লম্বা একটা ফর্দ ধরিয়ে দিল।দর্শনীয় স্থানগুলা দেখতে কত খরচ পড়বে তারও একটা ধারণা দিল। প্রায় সাড়ে দশ হাজার রুপির কথা বললেন উনি। আমি বললাম, এখনই আমি কিছু বলতে চাইছি না। আগে খেয়ে আসি। কিন্ত হোটেলের মালিকের ভাই আমাদের পেছন ছাড়ল না। আমাদের বলল, চলুন খাইয়ে নিয়ে আসি। পাশেই বড় রাস্তার ধারে এক পাঞ্জাবি রেস্তরায় ঢুকলাম। ভাত তো আর পাব না। তাই পাঞ্জাবি খানার অর্ডার দিলাম। বাটার নান আর চিলি নান। সঙ্গে আলু মাসালা আর পাঞ্জাবি ডাল। একটু ঝাল বেশি। কিন্ত অনেক মজা ছিল খাবারটা। খাওয়ার পর আমরা লেকের ধারে হাটতে বের হলাম। দেখি সেখানে বাঙালি গিজ গিজ করছে। অনেকে নৌকাতে চড়ছে। আমার মেয়েও নৌকাতে ওঠার বায়না করতে শুরু করল।

আমরা একটু হাটাহাটি করলাম লেকের ধারের রাস্তায়। অসংখ্য বিদেশি পর্যটক ছবি তুলছে। একজন আবার চক দিয়ে রাস্তায় কি সব লিখছিল। মনে হয় কোনো বিজ্ঞাপন দিচ্ছিল। একটু পর আমরা আরেকটা ঘাটের সামনে এসে দাঁড়ালাম। দুই নৌকা দিয়ে ঘর বানানো এক প্রকার নৌকায় উঠলাম আমরা। তখন সন্ধ্যা নামছে। গোধুলীর ছায়া পানির ওপর পড়ছে।দুপাশে পাহাড় মাঝে লেক। সূর্য ডুবে যাচ্ছে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। দৃশ্যগুলো ধরে রাখতে হাতের ক্যামেরায় সাটার পড়তে লাগল দ্রুত।

লেকের মাঝখানে আছে একটা মন্দির। অনেকে সেখানে গিয়ে মন্দিরে ঢুকছেন।আমরা মন্দিরে ঢুকলাম না। বাইরে দাড়িয়ে বেশ কটা ছবি তুললাম। সন্ধ্যা হয়ে আসছে বলে মাঝি আমাদের তাড়া দিতে লাগল। আবার ফিরে এলাম নৌকায়।

লেকের পাশেই বিশাল বাঁশঝাড়। হাজার হাজার বক কিচিরমিচির করছে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য। লেক পাড়ে অসংখ্য রেস্তরা। বার। গল্প গুজব চলছে। চলছে মদ, বিয়ার খাওয়া। এসব নিয়ে কারো কোনো বিকার নেই। এমনকি কেউ মাতলামো করছে না।

আমরা ফুটপাত ধরে মার্কেটের ভেতরে এগুতে লাগলাম। একসময় সঙ্গে থাকা লোককে বিদায় করে নিজেরা স্বাধীনভাবে ঘুরতে লাগলাম। কিছু কেনাকাটা করলাম। এরপর এক গাইড ঠিক করলাম। তরুণ এক ট্যাক্সি ড্রাইভার। বললাম পোখারার সব দর্শনীয় স্থান ঘোরাতে হবে। বলল ৩৫০০ রুপি লাগবে। আমি ২৫০০ বললাম। রাজি হলো না। পরে ২৮০০ তে দফারফা হলো। নেপালে এসেই এনসেলের সিম নিয়েছিলাম। ড্রাইভারের নম্বর নিলাম। গাইড ওই ড্রাইভারের নাম রোশান। ও বলল, আগামীকাল ভোর রাত ৪টায় উঠতে হবে। সান রাইজিং দেখার জন্য। অন্নপূর্ণা পাহাড়ে সূর্যোদয় দেখব। ভাবতেই এক্সাইটেড ফিল করছিলাম। গাইডের সঙ্গে কথা বলার পর একটু ঘুরাঘুরি করে একটি বড় বটগাছের নিচে বসলাম। সান বাধানো ওই জায়গাটার নাম সেন্টার পয়েন্ট। দেখি আমাদের পাশে এসে বসেছে এক তরুণ দম্পতি। বাঙালি। ভদ্রলোক ঢাকায় সনি র্র্যাঙ্গসে চাকরি করেন। আলাপ করলাম। বলল ঢাকা থেকে এসেছেন। কিন্ত টু্র প্যাকেজে এসেছে। অন্তত ২০০ জনকে এক সঙ্গে এনেছে ওরা। মাত্র দুটি জায়গায় ঘুরিয়ে বলেছে ঘোরা শেষ। খুবই আক্ষেপ করছিল। বলল ভুল করেছি। আমাদের কেমন খরচাপাতি হচ্ছে সেটা জানল। শোনার পর বলল এভাবে নিজেরা আসাই ঠিক।

হঠাৎ বৃষ্টি নামল ঝুপ করে। ওরা বিদায় নিল। আমরাও উঠে পড়লাম। হাটতে হাটতে একটা রেস্তরায় ঢুকলাম। সেখানে নেপালি খাবারের অর্ডার দিলাম। প্লেন রাইস, মাছ, শাক, ডাল, নেপালি সবজি তরকারি..এসব দিয়ে খেলাম। মন্দ না। আমাদের পাশের টেবিলে ইতালিয়ান, মেক্সিকান খাবারের ছড়াছড়ি। কেউ ড্রিংকস করছে। ইউরোপিয়ান একটা কান্ট্রির মতো মনে হচ্ছিল শহরটাকে। সামনেই অনেক ড্যান্স বার। ধুম ধুম আওয়াজে গান বাজছে। জোনাকি বাতি জ্বলছে। দেখে মনে হচ্ছিল যেন বিয়ে বাড়ি।

খাওয়া শেষ করে আমরা ছাতা মাথায় দিয়ে হোটেলের পথ ধরলাম।

রাতে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলাম। আবার যে উঠতে হবে ভোর ৪টায়। মোবাইলে এলার্ম দিয়ে ঘুমুতে চলে গেলাম। কাল যে অনেক জায়গায় ঘুরতে হবে!

আগামীকাল পড়ুন বাকি পর্ব।

আগের পর্বগুলা পড়তে এখানে ক্লিক করুন:



Click This Link



Click This Link



Click This Link

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৪২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

কিছু ছবি দিলে পোস্ট আরও সুন্দর হত।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১০:৫৫

নদ বলেছেন: আপনার লেখাগুলো প্রথম থেকেই পড়ছিলাম । কিন্তু কোন হোটেলেরই নাম ঠিকানা আপনি দেন নাই । কিছু ছবিও তো দিতে পারতেন । আশাকরি পড়ে দিয়ে দিবেন । ধন্যবাদ।

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০২

আমিনুর রহমান বলেছেন:



ভালো লাগলো। কিছু ছবি দিলে আরো বেশী ভালো হতো।

৪| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:০৫

বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: কান্ডারী অথর্ব ভাই, ছবি আপলোড করতে সমস্যা হচ্ছে। কি করি বলুন তো?

৫| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:১১

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

নেট স্পীড স্লো থাকলে হতে পারে আর নতুবা ফাইল সাইজ ছোট করে নিয়ে দেখতে পারেন।

৬| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৩৯

বদিউজ্জামান মিলন বলেছেন: নদ ভাই, আমরা উঠেছিলাম পোখারায় ডায়মন্ড লেক ভিউ হোটেলে। আর ছবি নিয়েই একটা পোস্ট দেব ভাবছি।

৭| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ সকাল ১১:৩৯

শাহীদুল বলেছেন: নেপাল ভ্রমন নিয়ে আপনার সবগুলো লেখাই পড়লাম। ভাল লাগলো। ধন্যবাদ। সামনের ঈদে আমিও চলে যেতে পারি। বলা যাচ্ছেনা।

৮| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:০৯

নতুন বলেছেন: ++

নিরিবিলি শান্ত শহর... পোখারা খুবই চমতকার যায়গা... খরচও বেশি না..

৯| ২১ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:১৪

পাখা বলেছেন: নেপাল ভ্রমনের সব পোস্ট পড়লাম ভাল লাগলো।
পোখরাতে কোন গেস্ট হাউসে উঠেছিলেন থাকা খরচ কেমন???

১০| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৪১

হাসান মাহমুদ তানভির বলেছেন: ভালো লাগলো। আমি মাত্র কিছুদিন আগে ঘুরে এলাম নেপাল। এখানে দেখুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.