নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৃস্টির সকল কিছুই জানার ইচ্ছা করে স্রস্টা যেটুকু জানার অধিকার দিয়েছেন।

চক্‌চাপড়ী

চক্‌চাপড়ী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিনবিঘা করিডোরে এক দিন

০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৫৫

তিন বিঘা করিডোর,ছোট্র একটু ভূমি। কিন্তু আলোচনা তার বিশ্বব্যাপি।হবেই বা না কেন ? অদ্ভুদ রহস্য মাখা সেই সাথে রোমাঞ্চকর একটি ভুখন্ড।যার সুতার টানে কেবল ভারত-বাংলাদেশ কেন বহু দেশের রাজনৈতিক প্রশাসনিক নের্তৃস্থানীয় অনেক কর্তাব্যক্তিদের এখানে আসতে হয়েছে এবং এখনও আসতে হচ্ছে।এমন বিখ্যাত হয়ে যাওয়া ভূমিটা দেখার ইচ্ছা ছিল অনেক দিন থেকে।হয়েও গেল। সে গল্পেই আসছি।



মঙ্গার দেশে বাণিজ্যের ছোঁয়া



গত (জুন) মাসের ১০ তারিখে অফিসের কাজে নীলফামারী গিয়েছিলাম। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের SR Plus এর এসি গাড়ীটি নীলফামারী পৌছল রাত সাড়ে নয়টায়। সকালবেলা হোটেল থেকে প্রাতঃ ভ্রমণে বেরুতেই যা দেখলাম তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না। ইষৎ কোলাহলে শ্রমিক শ্রেণীর একটি বিশাল মিছিল কেউ সাইকেলে বা কেউ পদব্রজে সারি বেধেঁ ছুটছে পশ্চিমে।ঠিক যেন ঢাকা শহরের সকালবেলার দৃশ্য। পাশেই Standard Bank । Security Guard কে কারণ জিজ্ঞাসা করতেই জানা গেল শহর থেকে সামান্য দূরে Uttara EPZ । রাতের বাসে খেয়াল করিনি। EPZ ও EPZ কেন্দ্রিক গার্মেন্টস, সিরামিক্সসহ দেশী বিদেশী বিনিয়োগে গড়ে উঠা কোম্পানীগুলোতে কাজে ছুটছে এই জনতার খেটে খাওয়া মিছিলটি।



ছবিঃ-উত্তরা EPZ(নীলফামারী) গেট।মঙ্গার দেশে বাণিজ্যের ছোঁয়া



শহরটা ঘুরে নিজেও গেলাম Uttara EPZ দেখতে।যা দেখলাম তাতে মনে “হ’ল ছোট্র শহর কিন্তু উজ্জ্বল ভবিষ্যৎটা দূরে নয়,কাছেই।”

Google Map এ দেখেছিলাম কাছেই নীলফামারীর ডিমলা ও পঞ্চগড় জেলার বোদা থানায় ভারতীয় কিছু ছিটমহল আছে। যাওয়ার খুব ইচ্ছা হ’ল।রাতে হোটেল ম্যানেজারকে ওখানে যাবার উপায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে মনে হ’ল উনি এ ব্যাপারে পুরোটাই অজ্ঞ।কিন্তু waiting sofa তেই দেখলাম আমার মত আরেক উৎসুক বসে আছেন।অনেকক্ষণ আমার কথা শুনছিলেন। কাছে ডেকে তিন বিঘা করিডোর দেখার বাসনা জানালেন। আমার মত ভদ্রলোকও অফিসের কাজে কুমিল্লা থেকে এসেছেন। বুঝলাম সাথে কাউকে পেলে এই যাত্রায়ই তিন বিঘা করিডোর দেখার সাধটা মেটাতেন।



গন্তব্য তিন বিঘা করিডোর



দিনটি শুক্রবার ১৩ই জুন।বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দু’জন মিলে একটা মাইক্রো ঠিক করে রেখেছিলাম।সকাল



ছবিঃ-জলঢাকা-ডালিয়া সড়ক



সকাল সেটাতেই চেপে বসলাম।শহর থেকে বেরুলাম জলঢাকার উদ্দেশ্যে।গন্তব্য ডালিয়া হয়ে লালমণিরহাটের পাটগ্রাম।তারপর তিন বিঘা করিডোর।নীলফামারী থেকে তিন বিঘা করিডোরে যাবার এখনকার এটাই ভদ্রস্থ রাস্তা।জলঢাকা পর্যন্ত রাস্তাটা অপেক্ষাকৃত সরু সাথে এবড়ো থেবড়ো।কিন্তু জলঢাকা পেরুলে ডালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত রাস্তাটি মহাসড়কের মত। যা রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়ক থেকে নেমে এসে জলঢাকা-ডালিয়া হয়ে লালমণিরহাট-পাটগ্রাম রোডের সাথে মিশে বুড়িঙ্গামাড়ী স্থল বন্দরে চলে



এক নদীর উপর সামান্য ব্যবধানে দুইটা ব্যারেজ। উপরে ভারতের তিস্তা ব্যারেজ,নীচে বাংলাদেশের।



গেছে।সকাল নয়টার ঘড়ির কাটায় ডালিয়া পৌছে গেলাম। এই সেই ডালিয়া পয়েন্ট যেখানে তিস্তাকে গেঁথে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের তিস্তা ব্যারেজ(১৯৭৯)। বাংলাদেশের বললাম কারণ উজানে শিলিগুড়ির গজলডোবা পয়েন্টে রয়েছে এর থেকেও মজবুত ভারতের তিস্তা ব্যারেজ(১৯৭৭)। তিস্তার পানিকে আটকিয়ে শিংহ ভাগটা ভারত নিয়ে জলপাইগুড়ি,দার্জেলিং,কোচবিহার,উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদার কৃষিকে সুজলা সুফলা করে রেখেছে।অবশিষ্ট যেটুকুন সীমান্ত চুইয়ে আসে বাংলাদেশ তা থেকে কিছুটা ডালিয়া ক্যানেল দিয়ে ঢুকিয়ে বাকীটায় নদীটিকে জীবিত রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করে যাচ্ছে।



তিস্তা ব্যারেজ-বাংলাদেশ



সকালবেলার তিস্তা ব্যারেজ অপেক্ষাকৃত ফাঁকা।পাশ দিয়েই বুড়িঙ্গামাড়ী থেকে আগত বা বুড়িঙ্গামাড়ী মুখি ট্রাকগুলি শাঁশাঁ করে ব্যারেজ পার হয়ে যাচ্ছে।ওপাড়ে লালমণিরহাটের হাতিবান্ধা আর এপাড়ে ডালিয়া।দুই তীরকে যুক্ত করেছে তিস্তা ব্যারেজ।এক পাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ক্যামেরা হাতে নেমে পড়লাম ব্যারেজের



ডালিয়ার গেট মুখে গার্ড রুমের পাশেই বিশাল ক্যামেরা



মুখেই।ব্রীজে উঠতেই ব্যারেজের নিজস্ব একটা বিশাল সিসি ক্যামেরা আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানাল। ডানপাশের গার্ড রুমের ওয়ালে লেখা আছে -“ছবি ভিডিও করা নিষেধ।”লেখাটা পড়ে মনের মধ্যে ছ্যাৎ



ডালিয়ার দিক থেকে তিস্তা ব্যারেজ



করে উঠল।এত টাকা খরচ করে গড়ে উঠা দেশের হাই সিকিউরড ব্যারেজ উত্তরবঙ্গের কৃষির প্রাণ। এমন ব্যবস্থা থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছবি তুললাম,কেবল দেখা ছাড়া কেউ কিছু বলল না। পুরো ব্যারেজটা হেঁটেই পার হলাম।ডালিয়া অংশ পার হয়ে মূল ব্যারেজের সামনে আসতেই অন্যরকম অনূভূতি।অসম্ভব



হাতিবান্দার দিক থেকে তিস্তা ব্যারেজ



সুন্দর ব্যারেজের পরিবেশটা। প্রকৃতির সাথে মানুষের হাত মিলিয়ে ব্যারেজটিকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলা হয়েছে। শুনলাম ছুটির দিনগুলোতে থাকে দর্শণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।



তিস্তার মোহ থেকে যখন মুক্ত হলাম তখন ঘড়ির কাটা সকাল দশটার ঘরে।সকাল দশটা অথচ দানা পানি কিছুই পেটে পড়েনি।ব্যারেজের এপাশ ওপাশ কোন পাশেই ধারে কাছে কোন দোকানপাঠ নেই। ড্রাইভার বলল সামনের বড়খাতা বাজারে মোটামুটি মানের হোটেল পাওয়া যাবে,পেলামও তাই।



ব্যারেজ থেকে বের হয়ে আসা রোডটি বড়খাতায় লালমণিরহাট-বুড়িঙ্গামারী রোডের সাথে মিশে গেছে।বাম পাশে আঁকাবাঁকা ভারতের সীমান্ত।গাড়ী ছুটে চলল সোজা উত্তরে পাটগ্রামের উদ্দেশ্যে।রোডের দু’পাশে কেবল থোকায় থোকায় বাঁশবন আর ক্ষণে ক্ষণে ভূট্রা ক্ষেত।সেই নীলফামারী থেকে দেখছি একই দৃশ্য।মনে হ’ল এলাকার মানুষের কাছে একটি জাতীয় বৃক্ষ,অন্যটি জাতীয় ফসল।নীলফামারী EPZ এ দেখেছিলাম বাঁশ থেকে মৃতের কফিন তৈরী হচ্ছে।অপেক্ষাকৃত ব্যয়বহুল ও সৌখিন এই কফিনগুলি তৈরী হচ্ছে এদেশের বাজারের জন্য নয়।সরাসরি চলে যাচ্ছে ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে।তাছাড়া তিস্তা যমুনা বেয়ে উত্তরবঙ্গের বাঁশের ভেলা যাচ্ছে ঢাকার বাজারে এটা অনেকটা পরিচিত দৃশ্য।



গাড়ী চলে এল পাটগ্রামে।এখানে রোডের একমুখ সোজা চলে গেছে পাটগ্রাম শহরে।অন্য মুখটি বাইপাস হয়ে চলে গেছে বুড়িঙ্গামারীর দিকে।পাটগ্রাম শহরে ঢুকে দেখলাম শহরটি জেলা শহরের মত ব্যস্ত।



পাটগ্রাম এক ব্যস্ততম শহর



শহর ঘেঁষে বয়ে যাচ্ছে ধরলা নদী।শুনতেই গিয়ে দেখলাম নদীর উপর একটা বেইলী ব্রীজ শহরকে ওপাড়ের সাথে সংযোগ করিয়েছে। ব্রীজে উঠে নীচে তাকিয়ে দেখলাম শুকনো নদীর তলাটা উপর থেকেই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।



ধরলা নদীর উপর বেইলী ব্রীজ।পাটগ্রাম শহরের মতই ব্যস্ত



ধরলার বেইলী ব্রীজ থেকে নেমেই রোডটি সোজা চলে গেছে পশ্চিমে ফেলে আসা বাইপাস মুখি। এটাই দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা রোড,তিন বিঘা করিডোর।এবার সে উদ্দেশ্যেই যাত্রার পালা।কিছুদূর এগুতেই ডানপাশে তাকিয়ে দেখলাম একটি আবাসিক হোটেল।নাম হোটেল রাজ। ভবিষ্যতে কাজে লাগবে মনে হতেই নেমে পড়লাম। হোটেলের একটি ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে ফিরতেই জানলাম ফেলে আসা রাস্তায় প্যারাডাইজ নামে একটি মোটেলও আছে।ভিজিটিং কার্ড থেকে রাজ হোটেলের লোকেশনটা এখানে শেয়ার করলাম-



হোটেল রাজ(আবাসিক),রাজ প্লাজা,উপজেলা মোড়,পাটগ্রাম,লালমণিরহাট।

ফোনঃ-০৫৯২৫৫৬০৫৫,মোবাইলঃ-০১৭১৬৩১৯০৫০।



একটা কথা বলা হয়নি।বড়খাতা থেকে বেরুতেই একটা রেল লাইন আমাদের পিছু নিয়েছিল।দহগ্রাম বাইপাস মোড় পাবার আগেই রেল লাইনটিকে আমরা চতুর্থবারের মত ক্রস করলাম।

দহগ্রাম বাইপাস মোড় পাড় হয়ে গাড়ী ছুটল তিনবিঘা করিডোরের দিকে। আগে পিছে ব্যাটারী চালিত বেশ কয়েকটা গাড়ী।যাত্রীরা সবাই দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার বাসিন্দা। পুরো একটা ইউনিয়নের লোকজনের হাটবাজার এই পাটগ্রামের উপর নির্ভরশীল। রাস্তাটি সাপের মত পেঁচালো।বেশ কয়েকটি বাঁক ঘুরে গাড়ী একটি বেইলী ব্রীজের মুখে গতি কমিয়ে দিল।একটি নালার মত নদীর উপর সেতুটি।নদীটি ভারত থেকে নেমে এসে বাংলাদেশ পার হয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করেছে। এরপর ভারতের ভূমি পার হয়ে আবার স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

ব্রীজ পার হয়ে দূর থেকে “পানবাড়ী সীমান্ত ফাঁড়ি” লেখা নামফলক দেখে গাড়ী থামিয়ে দিলাম। ড্রাইভারকে বলে রেখেছিলাম আমরা তিনবিঘা করিডোর হেঁটে দেখব।ড্রাইভারের উৎসাহটাও কম নয়। দ্বিতীয়বারের মত সে এখানে এসেছে। প্রতিটি বাড়ীর আঙ্গিনাই ভূট্রাতে ভরা।তাদেরই একটির এককোণে গাড়িটি দাঁড় করিয়ে ড্রাইভারও আমাদের সঙ্গী হ’ল।



ফাঁড়ির কাছাকাছি পৌছতেই দেখলাম আমরা অনেক আগেই বিজিবির নজরে চলে এসেছি। কয়েকখানা সতর্ক চোখ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সন্দেহ দূর করতে গার্ডরুমে গিয়ে পরিচয় দিলাম। কিন্তু ছবি তুলব শুনে অফিস রুম দেখিয়ে দিলেন।অফিসার গোছের লোকটি এদিকেই আসছিলেন। অনুমতি চাচ্ছি শুনে অফিসার খুশি হলেন। বললেন এই কাজটিই অনেকে করতে চান না।

[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/CHACKCHAPRI/07-2014/CHACKCHAPRI_168887878353bd7ce075fc17.62846679_tiny.jpg

পানবাড়ী সীমান্ত ফাঁড়ি



বাঁক ঘুরতেই ডানপাশে দেখলাম সীমান্ত ঘেঁষে ভারতের আকাশ ছোঁয়া কাটাতারের বেড়া।ব্যবস্থা এমন যেন বাংলাদেশের একটা পাখিও সীমান্ত গলিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে না পারে।



গাছেরও উঁচুতে ভারতের কাঁটাতারের বেড়া।যেন বাংলাদেশের একটা পাখিও সীমান্ত গলিয়ে ভারতে যেতে না পারে।





তিন বিঘা করিডোর থেকে ১০০ মিটার দূরে



তিন বিঘা করিডোর থেকে ১০০ মিটার দূরে নামফলকে লেখা পড়ে মনে আনন্দের একটা শিহরণ বয়ে গেল।খানিকটা এগুতেই দেখলাম বামপাশে করিডোরের বাইরে বিজিবির তিনবিঘা করিডোর চেকপোষ্ট।



নামফলকের ঠিক বিপরীতে বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে তিনবিঘা করিডোরে ঢুকতে বিজিবির করিডোর চোকপোষ্ট।



ছবি তুলতেই একজন বিজিবি সদস্য অনুরোধ করলেন তাদের অবস্থান যেন ক্যামেরায় না আসে।নীচের ছবির নামফলকটি উপরের ছবিতে দূরে দেখা যাচ্ছে।



বাংলাদেশের মূল ভূ-খন্ড থেকে তিনবিঘা করিডোর গেট



বামপাশে বিজিবির করিডোর চেকপোষ্ট রেখে একটু সামনে এগুতেই সেই আরাধ্য তিনবিঘা করিডোর।

করিডোরে ঢুকে কয়েক পা এগুতেই সামনে চারমাথা। উত্তর দিক থেকে ভারতীয় মোটর সাইকেল, প্রাইভেটকার দূরন্ত বেগে দক্ষিণমুখে ছুটে চলেছে।



ভারতীয় দম্পতি যাচ্ছে কুচলিবাড়ীর দিকে



সুন্দর পরিপাটি করে সাজানো করিডোরের ভেতরের দিকটা। পরিচর্যার লোকগুলিও অনবরত এটা ওটা করছে। হয়তবা দুই একদিন পরে গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তির পদধূলি পড়বে তাই এ কসরত। দেখতে দেখতেই ১৭৮মিটার দৈর্ঘ্যের করিডোরটা পার হয়ে এলাম। পুরো করিডোরের চারপাশটা লোহার বেড়া দিয়ে ঘেঁরা, নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা।



করিডোরের ভেতর চারমাথা পার হচ্ছে পাটগ্রাম মুখী দহগ্রামের ব্যাটারি চালিত গাড়ী





তিনবিঘা করিডোরের বাংলাদেশের রাস্তায় একটি মোটর সাইকেল



দহগ্রামের দিকে বিজিবির করিডোর চেকপোস্ট ঘেঁষে একটা দোকান। বসার সুন্দর আয়োজন দেখে ক্ষণিক বসে গরমে তিনজনে তিনটা ঠান্ডা ঢক্ঢক্ করে খেয়ে নিলাম। এবার করিডোর পার হওয়া লোকগুলোর বসতি দহগ্রাম দেখার পালা । ওপাড়ে গাড়ি রেখে এসেছি। পাটগ্রাম থেকে আসা ব্যাটারী গাড়িগুলিতেও একসাথে তিনটা সিট ফাঁকা পাচ্ছিলাম না। অগত্যা হেঁটেই চললাম। কিছুদূর যাবার পর ডান পাশে দেখলাম বিজিবির আরেকটা সীমান্ত ফাঁড়ী। এর পরেই একে একে বাড়ী ঘর। বাম পাশে একটা বয়স্ক বটগাছের ধার ঘেঁষে পূজা আর্চনার উপকরণ দেখে মনে হ’ল হিন্দু বাড়ী। আসলেও তাই। কিন্তু কেন? মুসলমান বসতি বলে যার হিন্দু প্রধান ভারতের অংশ হয়ে থাকা হয়নি। সেখানে হিন্দু কেন? নাহ! ওরা হিন্দু নয়,মানুষ। এ ভূমির সন্তান। একে অপরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাস করছে। আর কিছুদূর যাবার পর রাস্তা ঘেঁষে ঘন ঘন কয়েকটা টিনের ঘর। এটাই বাজার। এখানেই কয়েকটা খালি রিক্সার জটলা দেখে তার একটায় যাওয়া-আসার চুক্তির রিজার্ভ করে উঠে পড়লাম। ডানে-বামে বাঁক খেয়ে বেশ খানিকক্ষণ পরে রিক্সাটি একটা পরিপাটি একতলা ভবনের সামনে দাঁড়াল। উপরে তাকিয়ে দেখি লেখা “দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা হাসপাতাল”। কিন্তু কেচিগেটে বড় দুইটা তালা ঝুলার কারণ জানতেই জানা গেল “ হাসপাতাল আছে, ডাক্টার-নার্স কেউ নেই,কখনও আসেনও না”। তাইতো তালা দিয়ে নেই এর উত্তর জানানো হচ্ছে।



দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা হাসপাতাল। আমাদের বহনকারী সেই মহান আত্বীয় রিক্‌সা ড্রাইভার



হাসপাতালের আঙ্গিনা থেকেই দেখা যাচ্ছিল পিছনে সুন্দর কয়েকটা অট্রালিকা।ঘুরে গিয়ে দেখলাম এর একটি দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়।অন্যটি দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ভবন। উভয়ের সামনেই একত্রে সুবিশাল মাঠ।





দহগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্ম পরিচয়





দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ভবন।মাঠ ভরা ভুট্রাতে



ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে অনেকের সাথেই কথা বললাম। বুঝলাম বাংলাদেশী হওয়ার আবেগটা ওদের মনে দেশের অন্য অংশের কারও চেয়ে কম নয়। ক্ষুধায় পেটে টান পড়েছে অনেক আগেই। রিক্সা ড্রাইভারের আমন্ত্রণে তা ভালভাবেই সারা গেল। চেনা নেই, জানা নেই। কেবল বাঙ্গালী বলে আত্বার টানে তিস্তার পাড়ের ঝুপড়ি ঘরেও আত্বীয় খুঁজে পেতে বেগ পেতে হলো না।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:১২

রিফাত হোসেন বলেছেন: +

১০ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬

চক্‌চাপড়ী বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৬

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: কি যে অনবদ্য একটা চমৎকার ভ্রমণ বর্ননা। বাহ। কিপ ইট আপ।

১০ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৮

চক্‌চাপড়ী বলেছেন: আপনার ভাললাগার স্বীকৃতিতে আই অলসো কিপট ইউ ইন মাই মাইন্ড । ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৩৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: চক্‌চাপড়ী ,




তিন বিঘা করিডোরে একদিন আমার ও পায়ের ছাপ পড়েছিলো ।
খুব প্রাঞ্জল বর্ণনা আপনার ।

লিখেছেন - মুসলমান বসতি বলে যার হিন্দু প্রধান ভারতের অংশ হয়ে থাকা হয়নি। সেখানে হিন্দু কেন? নাহ! ওরা হিন্দু নয়,মানুষ। এ ভূমির সন্তান। একে অপরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাস করছে।

হ্যা ওরাও মানুষ কিন্তু আমরা মানুষেরাই আবার তা ভুলে থাকি । সেদিন দহগ্রাম - আঙ্গরপোতার মানুষের চোখেও বাংলাদেশী হওয়ার আবেগ দেখেছি । কতোদিন .... আর কতোদিন ওরা চোখেই মেখে রাখবে সেই আবেগ !!!!!

আর একটি মজার এবং কষ্টের ব্যাপার না লিখেই পারছিনে । সেদিনও কিন্তু হাসপাতালটি তালা মারাই ছিলো । উত্তর ওই একই । রাত বিরেতে লোকজন অসুস্থ্য হয়ে পড়লে করিডোরের গেটের ওপাশে বসে ভোরের অপেক্ষা করে , কখোন করিডোরের গেট খুলবে আর রোগী পাটগ্রাম যেতে পারবে ।


শুভেচ্ছান্তে ।

১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪২

চক্‌চাপড়ী বলেছেন: আপনার সাথে সহমত পোষণ করলাম।ধন্যবাদ।

৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০৫

ভারসাম্য বলেছেন: পরের পর্ব চাই।

+++

১০ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৫

চক্‌চাপড়ী বলেছেন: খুব শিঘ্রই পরের পর্ব দিচ্ছি ।ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ১১ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১৯

নাসিম আহমেদ সুমন বলেছেন: অসাধারন লিখেছেন,অনেক ভাল লেগেছে ।

৬| ১২ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:১৯

মুহাই বলেছেন: অসাধারণ। যারা এখনো যাননি তারা তাড়াতাড়ি ঘুরে আসেন। ডালিয়া +করিডোর আসলেই অসাধারণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.