নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূরে আদম

রুয়েটিয়ান,ভাল সবকিছুর সাথে থাকতে চাই সবসময়।

নূরে আদম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পান

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০১

হঠাত ঘুম ভেঙ্গে লতিফ সাহেব আবিস্কার করলেন বিছানাতে তিনি একা। তার স্ত্রী হেনা বেগম পাশে নেই। হয়তো বাথরুমে গেছেন বা পান খেতে গেছেন এই ভেবে লতিফ সাহেব আবার পরক্ষণে চিন্তামুক্ত হলেন। হেনা বেগমের পানের অভ্যাস, রাত বেরাতে উঠে পান খান। একবার এমন হয়েছে- হেনা বেগম রাতে পান খেতে যেয়ে দেখেন পান ফুরিয়ে গেছে, তিনি সেই রাতে স্বামীকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে পান আনতে পাঠালেন! লতিফ সাহেব ঘুম জড়ানো চোখে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন- এই রাতে পান কোথায় পাব? কোনো দোকানদার কি এই রাতদুপুরে তোমার জন্য পানের পসরা সাজিয়ে বসে আছে বলে তোমার ধারণা? হেনা বেগম কাদো কাদো গলায় বললেন- আমি কিচ্ছু জানিনা, যেভাবেই হোক তুমি আমাকে পান এনে দাও, নাহলে আমি বাঁচবোনা, তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালবেসে থাকো তবে পান তোমাকে আনতেই হবে! লতিফ সাহেব সেই রাত্রে ভালবাসার পরীক্ষা দিতে রওনা হলেন,কোথাও পান না পেয়ে তিনি যখন ফিরে আসবেন ভাবছেন, ঠিক তখনই তিনি খেয়াল করলেন রাস্তার ধারে এক ভিখারী ঘুমিয়ে আছে, লতিফ সাহেব চিন্তা করলেন আচ্ছা এসব ভিখারীরা তো পান খায়, এর কাছে পাওয়া যেতে পারে! তিনি ভিখারীকে ডেকে তুললেন।



সে রাতে লতিফ সাহেব ভালবাসার পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন। লতিফ সাহেবের মনে পড়ে যায়- তিনি যখন প্রথম হেনা বেগমকে বিয়ের জন্য দেখতে গিয়েছিলেন সেদিনের কথা, কচি কলাপাতা রং এর শাড়ি পরে হালকা পাতলা গরনের হেনা বেগম সামনে এলেন, তখনকার সময়ে পাত্র পাত্রী এখনকার মতো আলাদা কথা বলার সুজোগ ছিলোনা, কিন্তু লতিফ সাহেবের শশুর বাড়ির খানদান বেশ আধুনিক হওয়াতে তারা দুজনে মিনিট পাচেক আলাদা কথা বলার সুজোগ পেয়েছিলেন। অবশ্য কথা তেমন হয়নি, লতিফ সাহেব খুব কষ্ট করে তোতলাতে তোতলাতে কোনো রকমে বলতে পেরেছিলেন আমাকে তোমার পছন্দ হয়েছে? হেনা বেগম মাথা ঝাকিয়ে হ্যা সুচক জবাব দিলেন। লতিফ সাহেব বললেন- দেখো আমি খুব সামান্য চাকরি করি, সম্পদ বলতে আমার তেমন কিছুই নেই, আমার সাথে বিয়ে হলে তোমাকে হয়তো অভাব নিয়েই জীবন কাটাতে হবে, তুমি বড় পরিবারের মেয়ে, সামলে থাকতে পারবে কিনা ভেবে সিদ্ধান্ত নিও। হেনা বেগম চোখ মাটির দিকে রেখে বললেন- আমার পরিবার আপনাকে সৎ মানুষ হিসেবেই জানে এবং সে কারণেই তারা আপনার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে, আমারও একই কারণে এই বিয়েতে আপত্তি নেই, ধন সম্পদ না হোক, একজন সৎ মানুষতো পাবো। লতিফ সাহেবের চোখ জ্বালা করে উঠলো, তিনি আবেগ সামলাতে পারলেন না, তিনি বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কেদে দিলেন! হেনা বেগম অবাক হয়ে দেখলেন পচিশ বছরের এক যুবকের চোখে জল! শিশুর মতো লাগছে কি তাকে? হেনা বেগম বললেন প্লিজ আপনি কাদবেন না, কারো কান্না দেখলে আমারও কান্না চলে আসে, লতিফ সাহেব ভাঙ্গা গলায় বললেন- ছোটবেলাতেই বাবা মা হারিয়েছি, লোকের বাড়িতে লজিং থেকে পড়ালেখা করেছি, অভাবে অনটনে মানুষের কালোমুখে বড় হয়েছি, এভাবে কোনদিন কারো মমতা পাইনি, হঠাত মায়ের কথা খুব মনে পড়ে গেল, তাই কান্না চেপে রাখতে পারিনি আর। অনেক সংগ্রাম করে আমাকে এ পর্যন্ত আসতে হয়েছে, সে কারণে অন্য যুবকদের যে সব যোগ্যতা থাকে তার কিছুই আমার মধ্য নেই, আমি কবিতা লিখতে পারিনা, গান জানিনা, মানুষের সাথে সেভাবে মিশতে পারিনা, এমনকি আমি কথাও বলি আঞ্চলিক ভাষাতে, এমন একজনকে কেউ যে পছন্দ করবে তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। হেনা বেগম বললেন- কে বলেছে আপনার কোনো যোগ্যতা নেই? আপনার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা কি সেটা কি আমি বলবো? লতিফ সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে বললেন- কি যোগ্যতা? হেনা বেগম বললেন আমার ধারনা আপনি যথেষ্ট ভালবাসতে পারবেন, আর এটিই আপনার সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। লতিফ সাহেব আবারও কেদে দিলেন! হেনা বেগমের বাড়ির লোকজন রুমে ঢুকে অবাক বিস্ময়ে দেখলেন দুই প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ শিশুর মতো করে কাদছে!



লতিফ সাহেবের সব মনে আছে, তিনি কিছুই ভোলেননি, প্রথম সন্তানের জন্মের আগে হেনা বেগম লতিফ সাহেবের হাত ধরে বলেছিল- যদি আমি বাচ্চা হওয়াতে যেয়ে মারা যাই তবে তুমি আবার বিয়ে করো, নিজেকে আর আমাদের সন্তানকে কষ্ট দিওনা.....লতিফ সাহেব ধমক দিয়ে বললেন কি পাগলের মতো বকছো এসব? তোমার মাথা ঠিক আছেতো? এস আমরা আমাদের বাচ্চার নাম ঠিক করি....



না লতিফ সাহেব কখনও হেনা বেগমকে কষ্ট দেননি, অভাব ভুলিয়েছেন ভালবাসা দিয়ে, হেনা বেগমও কখনও কোনো অন্যায় আবদার করেনি। বড় পরিবারের মেয়ে হয়েও দিব্যি মানিয়ে নিয়েছিলেন। লতিফ সাহেব তার সবচেয়ে বড় যোগ্যতার জায়গাটা নষ্ট হতে দেননি, ভালবেসেছেন তার সবটুকু আত্মা দিয়ে।



লতিফ সাহেবের সব মনে আছে, তিনি কিচ্ছু ভোলেননি, ষাট বছর বয়সেও তার মস্তিষ্ক নিখুত কাজ করে, তেমন কোনো অসুখ বিসুখও নেই। কিন্তু একি হেনা বেগম এখনও আসছেনা কেনো? রাত চারটে বাজে মানুষটা এখনও আসছে না কেন?



লতিফ সাহেবের সব মনে আছে, তিনি কিচ্ছু ভোলেননি, শুধু ভুলে গেছে হেনা বেগম নামের মানুষটি আর কখনও ফিরবেনা, লতিফ সাহেব ভুলে বসে আছেন আজ থেকে তিরিশ বছর আগে প্রথম সন্তানের জন্ম দিতে যেয়ে হেনা বেগম না ফেরার দেশে চলে গেছেন।



লতিফ সাহেব হেনা বেগমের সব কথা রেখেছিলেন, শুধু দ্বিতীয় বিবাহের কথাটা রাখতে পারেননি। তিরিশ বছর একা কাটিয়েছেন, সন্তানকে বড় করেছেন, মানুষ করেছেন, সন্তানকে কষ্ট দেওয়া নিষেধ ছিল যে হেনা বেগমের, তিনি সে কথা রেখেছেন।



না লতিফ সাহেব কিচ্ছু ভোলেননি, তার সব মনে আছে, লতিফ সাহেবের এখনও মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গে, লতিফ সাহেব বিছানাতে অপেক্ষা করেন, তার বিশ্বাস হেনা বেগম ফিরবে, কোথায় আর যাবে, হয়তো পান খেতে গেছে, আহা মানুষটার যে বড় পানের অভ্যাস!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:১০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা কি গভীর ভালবাসা :)


++

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৭

সুজাহায়দার বলেছেন: খুব ভাল হয়েছে,
আজ কাল এমন ভালবাসার কথা রুপকথার মত লাগে, অথছ কিছুদিন আগেও এমন ভালবাসা ছিল।

৩| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৯

হেডস্যার বলেছেন:
এক্সেলেন্ট হইছে...

৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৭

নূরে আদম বলেছেন: ধন্যবাদ হেডস্যার।লেখার চেষ্টাটা মোটামুটি সফল মনে হচ্ছে।

৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪৯

নূরে আদম বলেছেন: ভালবাসাগুলো তার গাঢ়ত্ব নিয়ে বেঁচে থাক চিরকাল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.