নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“Peace comes from within. Do not seek it without.” ― Gautama Buddha

আলোর_পথিক

এখন সময় এসেছে না বলা কথা গুলো বলে বধীর মানুষের বধীরতা ঘোঁচানো, এখন সময় এসেছে আলোর বাঁধ ভাঙ্গার। যে আলোয় অন্ধকারগামী মানুষ চলতে শিখবে। আমি ভীতু, আমার গলার স্বরও নরম। আমি বলতে সাহস করবনা বললেও কেউ শুনতে পাবেনা। যাদের সাহস আছে, যাদের গলা উঁচু আছে তাদেরকে সমবেত স্বরে বলতে হবে। আলোর বাঁধ ভেঙ্গে দাও! অন্ধকারকে হটাও!

আলোর_পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষা

১৬ ই মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৩

(এক)
অপা শহরের ছাদে জন্মগ্রহণ করা টিপিক্যাল বাঙ্গালী এক মেয়ে। অনিন্দ্য সুন্দরী বললে ঈশ্বর বোধহয় তোষামদ করার দায়ে আমাকে বাড়তি কোন পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন না। তবে পক্ষপাতের দায়ে ঈশ্বরকে এই কারণে দায়ী করা যেতে পারে যে অপার চোখ দুটো ঈশ্বর নিজ দায়িত্বে কোন শিল্পি দিয়ে আঁকিয়ে তা তৈরী করেছেন। অর্ণবের কাছে মনে হয়েছে ঈশ্বরের এই পক্ষাপাতিত্ব নিরপেক্ষ ভাবেই সমর্থনযোগ্য! ঈশ্বরের এই হারানো নিরেপেক্ষতার কারণেই অর্ণবের সর্বনাশের সূচনা অধ্যায় শুরু।

অপা ও অর্ণবের পরিচয়টাও ঐ ঈশ্বরের ভূমিকার কারণেই। কোন এক অপরাহ্নে অফিস শেষে অর্ণব ধানমন্ডি লেকের ধারে বৃষ্টিতে ভেজার বিলাসিতা নিয়েই প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে হাঁটা-হাঁটি করছিল! অর্ণব কাছ থেকে ১০ মিটার দূরেই তাকিয়ে দেখে একটি একটি মেয়ে নারিকেল গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টিতে ভিজছে। চিরায়ত পুরুষপ্রাণীয় আগ্রহের ফলেই অর্ণব পথের গতিপথ ও গতি পরিবর্তন করে মেয়েটির দিকে হেঁটে গেলো।

‘অর্ণব : এক্সকিউজ মি’
‘অপা : ইয়েস প্লিজ ‘ অপা কোন প্রকার শব্দ না করে বিরক্তি নিয়ে অর্ণবের দিকে তাকালেন।
‘অর্ণব : আপনাকে আজ আমাদের অফিসে দেখলাম, না?’
‘অপা: কোন অফিস আপনার?’
‘ঐ যে ১৫ নং রাস্তার পূর্ব দক্ষিণ কোণে’
‘জ্বি দেখেছেন’ অপা স্বলজ্জ ভাবে উত্তর দিল!
‘কিছুক্ষণ আগে আপনাকের আমাদের অফিসে আবির্ভূত হতে দেখে আমার কাছে মনে হয়েছিল আপনি বোধ হয় আমাদের অফিসে আধুনিক দাসত্ব চর্চায় আমাদের সহসঙ্গী হতে যাচ্ছেন’
‘মানে?’
‘মানে টানে কিছু নেই, বৃষ্টিতে কেন ভিজছেন? বলুন, ‘
‘বলতে পারেন এটা একটা বিলাসিতা’
‘ওয়াও, আচ্ছা বলুনতো ঈশ্বরের সাথে কি আপনার কি কোন আত্মিয়তার সম্পর্ক আছে?’
‘মানে?’
‘আপনি বার মানে মানে কেন বলছেন আমি তার মানে বুঝছি না’
‘আধুনিক দাসত্ব, ঈশ্বরের সাথে আত্মিয়তা, এই সব বাক্য শুনলে, যে কেউ মানে মানে বলবে, সেটা কি স্বাভাবিক নয় ‘
‘এই স্বাভাবিক শব্দটা না সব সময়ই আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়’
“মানে?’
‘আবার মানে, হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ’
‘কোথায় যাবেন বলুন’
‘মোহাম্মদপুর যাব’
‘আমিও তো ঐদিকে যাব, আপনি যাবেন আমার সাথে?’
‘আমি সদ্য গ্রাম থেকে উঠে আসা একটা ছেলে, যে এই ঢাকা শহরের কোলাহল, ধুলোবালি, নির্মমতা, চাপাবাজ ইত্যাদির সাথে তাল মিলিয়ে চলার নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, এর মধ্যে আবার আপনার মত সর্বজন স্বীকৃত একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে হাঁটা শিখতে হবে সেটা আমার জন্য অধিক্রমণ হয়ে যাবে না?’
‘কেন? আপনি কি কখন কোন মেয়ের সাথে রাস্তায় হাঁটেননি?’
‘অবশ্যই হেঁটেছি, তবে তারা হয়তো বা মেয়ের মা অথবা যে সব মেয়েরা সদ্য মেয়ের মা হয়েছেন সেই সব মায়েদের মেয়ে. .হ্যাঁ.হ্যাঁ’
‘নিজের কথা নিজে শুনেই মজা পেয়েছেন মনে হচ্ছে?’ প্রশ্নটি করে অপাও হাসতে লাগল।
‘তা পেয়েছি বৈকি, চলুন যাই, মোহাম্মদপুর যাবেন বলছিলেন’
‘না, আমি একা যেতে চাই, আপনার সাথে যাব না’
‘কেন যাবেন না, এই প্রশ্নটা কি উদ্ধ্যত হয়ে যায়?’
‘যাবনা এই কারণে যে, আমার কাছে মনে হয়েছে আপনি আমাকে ইমপ্রেস করার জন্য পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলছেন’
‘আপনার কি মনে হয়? আপনার বয়ফ্রেন্ড এখন এইদিকে আসবে? তবে এই কথাটা কিন্তু খুব সত্যি আমি আপনাকে ইমপ্রেস করার জন্যই এইভাবে কথা বলে আসছি’
‘মানে? ইমপ্রেস করার স্বীকার উক্তিটাওকি ইমপ্রেস করার জন্য?’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আমারতো মনে হয়, আপনাকে ইমপ্রেস করার জন্য শেষের স্বীকারোক্তীমূলক বাক্যটি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী’

বৃষ্টি থেমে গেছে, অপা দ্রুত হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলো। অর্ণব বেশ দুরুত্ব বজায় রেখে অপার পিঁছে পিঁছে হাঁটতে শুরু করলো। অর্ণব প্রত্যাশা করছিল অপা পেঁছন ফিরে তাকিয়ে তাকে একসাথে হাঁটার প্রস্তাব দিক। কিন্তু অর্ণবের যতদূর মনে পড়ে এইরকম অতি প্রত্যাশিত বিষয় কখনও ভাবনার সাথে মেলেনা এবং এটা যে মিলবে সে ব্যাপারে অর্ণব নিশ্চিত। অর্ণব সাধারণত সিগারেট টানে না কিন্তু অর্ণবের কেন জানি মনে হচ্ছে সে একটা সিগারেট ধরাবে এবং সিগারেট টানতে টানতে দ্রুত হেঁটে মেয়েটিকে অতিক্রম করবে।

‘এই একটা সিগারেট দাওতো’ অর্ণব সিগারেটটি হাতে নেওয়ার আগেই কেউ একজন তাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য পেছন থেকে বলে উঠলেন
‘এক্সকিউজ মি’
‘আরে আপনি?’ অর্ণব বড্ড বেশিই আশ্চর্য হয়ে গেলো।
‘আপনি সিগারে টানেন নাকি?’
‘না না ‘
‘তাহলে কিনছেন যে’
‘সিগারেট টানি না, আজকে আপনাকে দেখানোর জন্যই সিগারেট টানতে চাইছিলাম’
‘মানে?’
‘আবার মানে?, হ্যাঁ হ্যাঁ’
‘চলুন দুইজন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে যাই’
অপার এই প্রস্তাবে অর্ণব খুশি হয়ে সিগারেট টা ফেলে দিয়ে হাঁটতে শুরু করল
‘আচ্ছা আপনি কি কাজ করেন?’
‘আমার একমাত্র কাজ হচ্ছে আমি কোন কাজ করি না, হ্যাঁ, হ্যাঁ’
‘মানে’ এই মানে শব্দটি বলে নিজেই হেসে উঠলো।
‘তবে এইবার আপনার মানের জবাব দেব, প্লেটোর একটা কথা আছে, সেটা হলো ‘একজন জ্ঞানী মানুষকে শ্রম থেকে অব্যাহতি দিতে হয়, তাকে অন্যের উপার্জিত খাবার খেয়ে থাকতে হবে, আর জানেন তো সেই কারণে দেখবেন দরিদ্র দেশে জ্ঞানী মানুষের অভাব দেখা দেয়’
‘তার মানে আমাদের দেশ ধনি হয়ে যাচ্ছে?’
‘সরকার তো তাই বলে’
‘হু বুঝছি’
এইবার দুইজন একসাথে হাসতে শুরু করলো ।


(দুই)
‘বিবাহ বিষয়টি সমাজ মানুষের প্রয়োজনে একটি সময় এটিকে একটি সামাজিক প্রথা হিসেবে প্রচলন করে; কিন্তু বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের ফলে এটি প্রয়োজন আছে কিনা সে বিষয়ে আমাকে আরও ভাবতে হবে বা পড়াশোনা করতে হবে; অতঃপর মন্তব্য করতে হবে। তবে এই বিষয়ে বাট্রান্ড রাসেলের বইতে যতটুকু পড়েছি তাতে মনে হয়েছে, একটা সময় অবাধ যৌনতার কারণে যৌনবাহিত রোগ মহামারি আকার ধারণ করেছিল এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধিহার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল যা নিয়ে সমাজপতিগণ চিন্তিত ছিলেন। সুতরাং তাদের কাছে মনে হয়েছিল যৌনতা বিষয়ক মহামারি রোগ এবং জনসংখ্যার নিয়ন্ত্রণহীন বৃদ্ধি ঠেকানোর জন্যই বিবাহ নামক প্রথা চালু করা দরকার। যেহেতু এখন আর এই সমস্যা দু’টি নেই সুতরাং ‘
‘সুতরাং থামাবেন আপনার এই লম্বা বক্তব্য, আপনার এই লম্বা বক্তব্যের মতলব আমি খুব ভালমত বুঝেছি।’
‘এটাকে মতলব বলছো কেন? বল, কুমতলব!’
‘আচ্ছা আপনার এই কুমতলবী কথা বলতে লজ্জা লাগেনা’
‘না লাগে না, কারণ আমি আমার সমস্ত লজ্জা আমার পোষাক দিয়ে ঢেকে রাখি।’
‘ওগুলো পোষাক দিয়ে ঢেকে রাখার কি দরকার? পোষাক গুলো খুলে রাখলেই তো পারেন।’
‘দেখো, আমার তাতে কোন সমস্যা হবে না, যা সমস্যা তোমার হবে।’
‘উফফ, আপনি এত বেশি আজায়রা কথা বলতে পারেন’
‘ঠিক আছে, আমি চুপ থাকছি, আর কথা বলবো না’
‘এত রাতে ফোনে কেউ এই সব কথা বলে?’
‘আমার তো মনে হয় এই রাতে ফোনে কথা বলার জন্য এর চেয়ে ভালো টপিকস আর হতে পারে না’
‘আপনি থামবেন? এত বাজে কথা শোনার অভ্যাস বা সময় কোনটাই আমার নেই’
‘ওকে, আজ তাহলে রাখি’
‘রাখি মানে? আমি রাত জেগে কথা বলছি, আর আপনি রাখবেন’
‘তুমিই তো বল্লে কথা শোনার সময় নেই’
‘আমার শোনার সময় থাকুক বা না থাকুক আপনার তো বলার সময় আছে, বলে যান, আমি চুপ করে থাকি’
‘একটা কবিতা শুনবে? কবিতা’
‘না কবিতা শুনতে আমার ভালো লাগেনা, পারলে গান গেয়ে শোনান’
‘না গান আমি শুধু পৃথিবীতে একজনকেই শোনাতে পারি, আর কাউকে শোনাতে পারিনা’
‘কাকে শোনাতে পারেন?’
‘ সেটা আপাতত বলতে চাইছি না, পরে বলব’
‘ওকে বলার দরকার নাই’
‘আচ্ছা আমার কথা বাদ দাও, তোমার কথা শুনি, তোমার ঐ ভেড়া বয়ফ্রেন্ডের কথা বল?’
‘আপনার সাহস তো কম নয়, আপনি আমার সাথে আমার বয় ফ্রেন্ডকে ভেড়া বলছেন’
‘এটা সাহস নয়, সত্যি, আর তাছাড়া আমি নিশ্চিত যে, তুমি তোমার বয় ফ্রেন্ডকে এখন আর খুব একটা পছন্দ করনা, কারণ, তোমার বয়ফ্রেন্ড সব সময় তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করে, এই নিয়ন্ত্রণ তুমি তোমার বয়ফ্রেন্ডের ভালবাসার বহি:প্রকাশ হিসেবে দেখো কিন্তু তুমি আনমনে এটাকে অপছন্দও কর, প্রকৃতপক্ষে এটাকে তুমি অপছন্দই কর কিন্তু তার এই নিয়ন্ত্রণের ন্যায্যতে দিতেই তুমি মনে মনে ধরে নিয়েছো বয় ফ্রেন্ড-গার্ল ফ্রেন্ড ভালোবাসার বহি:প্রকাশ ঘটাতেই তারা পারস্পারিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তুমি নিশ্চয় জানো, দূর্বল ব্যক্তিরা যেমন হিংস্র হয় তেমনি ভাবে দূর্বল ও নিজের প্রতি আস্থাহীন হয়ে থাকে; তেমনি ভাবে দূর্বল মননের প্রেমিক প্রেমিকারা অন্যের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেই নিয়ন্ত্রণ আবার পুরোটাই নিয়ন্ত্রণহীন’
‘আপনি নিজেকে খুব জাহির করতে চান, না? আপনি মনে করেন আপনি খুব জ্ঞানি, তাই না?’
‘তোমার এই প্রশংসগুলো কিন্তু সত্যি ‘
‘কে বল্ল আমি আপনাকে প্রশংসা করলাম?’
‘তুমি’
‘উফফ’
‘শোন একজন অপরাধী পুরুষ হিসেবে আমি কিছু দোষ স্বীকার করছি, আমি তোমার অনেক ক্ষতি করে ফেলেছি’
‘সেটা কেমন?’
‘ সেটা পরে বলব, আজ তাহলে রাখি’
‘ওকে ঠিক আছে রাখি’


(তিন)
বিবাহ নামক তিন অক্ষরের এই শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে অনেকগুলো শব্দ, যেখানে আবার প্রতিটি শব্দের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রিকতা। বিবাহ শব্দের সাথে দায়িত্ব, প্রতিশ্রুতি, বিশ্বস্ততা এইসব ব্যুতপত্তিগত শব্দের ভার বহনে সিদ্ধহস্ত পুরুষগণ আজ ভারাক্রান্ত। দায়িত্বের অবহেলা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা এবং বিশ্বাস ভঙ্গের মত ঘটনা এখন সর্বজ্ঞাত এক গোপন ঘটনা। অবশ্যই এক্ষেত্রে ধর্মীয় সংস্কৃতির বলয়ে গড়ে উঠা অনুভূতিহীন নারীদের সহানুভূতির কারণেই পুরুষ সমাজ একক ভাবে তাদের গ্রাসী অভিজান অব্যাহত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।

অর্ণব বিবাহত্তোর এইসব আরোপিত চর্চাগত বিষয়গুলো এইকালে কতটা প্রযোজ্য সেটা নিয়ে অনেক ভেবেছে কিন্তু প্রবাহমান সমাজ ব্যবস্থায় আক্রান্তু নারীগণ যথাযোগ্য সম্মান বা মর্যাদা বা অর্থনৈতিক নিশ্চয়তাসহ বাঁচার প্রশ্নে আটকে গেছে। আবেগিক বিষয়গুলি অবশ্যই সামাজিকীকরণ বলেই তিনি মনে করেন।

বিবাহত্তোর বগুগামিতা নিয়ে অর্ণব দ্বিধাবিভক্ত। বৈচিত্রময় প্রকৃতিগত জৈবিক চাহিদা তার কাছে গ্রহণযোগ্য বলেই মনে হয়। তবে সামাজিকীকরণের দীর্ঘ প্রবাহমান ধারা যা সামান্য বিতর্কসহ হাজার বছর ধরে টিকে আছে তা যদি অগ্রহণযোগ্যই হবে তাহলে তা এতদিন টিকে থাকবে কেন। যদিও সমাজে অনেক ধোয়াসাময় সত্য বা দিনের আলোর মত অসত্য হাজার বছর ধরে টিকে আছে।

এহেন নিষ্ফলা চিন্তাগুলোই অর্ণবের নি:সঙ্গ সময়ের নিত্য সঙ্গী।

এমন সময় অর্ণবের ফোনে রিং বেজে উঠলো
‘তুমি কোথায়?’ কল রিসিভ করে অর্ণব অপাকে জিজ্ঞেস করলো।
‘আমি শাম্পানের পাশে দাঁড়িয়ে আছি’
‘সামনের দিকে তাকিয়ে দেখো তুমি আমাকে দেখতে পাবে’
‘হ্যাঁ আমি দেখতে পেয়েছি, আপনি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকেন’
ফোনটি পার্সে রেখে অপা অর্ণবের কাছে পৌঁছে গেলো। অপার অর্ণবের হাত ধরে হাটতে খুব ইচ্ছা করছে। কিন্তু সম্ভবত: তাদের সম্পর্ক বিষয়ে তথাকথিত সামাজিক আড়চোখা দৃষ্টির ভয়েই অপা তা করছে না।
‘আমার হাত ধরে হাঁটতে তোমার খুব ইচ্ছে করছে তাই না?’
‘কেন, আপনার এইরকম কথা মনে হলো কেন?’
‘আমি যখন গ্রামে থাকতাম এই রকম আবহাওয়ায় বুক সমান পাটগুলো বাতাসে দোল খেতো, দেখে মনে হতো সুন্দরী অপ্সরারা বাতাসের বিপরীতের তাদের চুলগুলো মেলে ধরেছে, আর আমি সেই পাটগাছগুলোকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরতাম; পাটগাছগুলো বুকে জড়িয়ে ধরার পর আমি প্রচন্ড আনন্দ পেতাম। কিন্তু আমার সেই মনে হওয়ায় অপ্সরাদের আমি কখনও দেখবো বা দেখতে পাবো সেই সাহস কখনও পেতাম না। এখন মনে হয়.... ‘
‘এখন কি মনে হয়?’
‘এখন মনে হয়, তুমিই সেই অপ্সরা’
‘আপনার কাছে নিশ্চয় একটা পাটগাছকেই একটা অপ্সরা মনে হতো?’
‘হুম, তা বলতে পারো’
‘তা না হলে তো আপনার চরিত্রের সাথে মিলবে না’
‘আমার বুকে একশো’টা তুমি আসলে, সেই এক’শো তুমিকেই আমি আঁকড়ে ধরবো, তাতে যদি তুমি আমাকে চরিত্রহীন বলে থাকো তাহলে সেই চরিত্রহীন শব্দটি আমার জন্য বিশেষায়িত আশির্বাদ শব্দ বলেই ধরে নেব’
‘উফ, আবার ফ্লাটারি?’
‘হুম, আর এই ফ্লাটারির কারণেই তুমি আমার হাত ধরে হাঁটতে চাইবে’
‘আচ্ছা আপনার কি মনে হয় আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড?’
‘আচ্ছা সেটা না হয় লোক চক্ষুর আড়ালের গিয়েই বলবো, তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড, কিন্তু এই লৌকিক সমাজে তুমি, আমাদের সম্পর্কের কি নাম দিবে?’
‘আপনি দেখছেন? আকাশে কি সুন্দর মেঘ করেছে?’
‘তানাহলে এতক্ষণ তোমার সাথে পাট ক্ষেতের গল্প কেন করবো? চল তোমার প্রশ্রয়ে কোথাও আশ্রয় নেই, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বৃষ্টি নামতে পারে’
‘আমি বৃষ্টিতে ভিজবো’
‘বৃষ্টিতে ভিজবে মানে?’
‘তোমার আমার যে সম্পর্ক তাতে কি বৃষ্টিতে ভেজা যায়?’
‘আপনার কাছে কেন মনে হলো আমি আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো’
‘ঠিক আছে, তুমি ভিজতে থাকো, আমি ঐ শপিং মলটাতে গেলাম’
‘কোথাও যাবেন না, আপনি আমার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজবেন, যতক্ষণ বৃষ্টি হয় ততক্ষণ ভিজবেন’
‘তুমি দেখছো প্রচন্ড বজ্রপাত হচ্ছে?’
‘বজ্রপাত হচ্ছে তাতে কি হয়েছে? মরলে এক সাথে মরবো’
‘সে না হয় মরা গেলো, কিন্তু তাতে সমস্যা হলো, মৃত্যু বরণ করে প্রেমের প্রমাণ দিলে না হয় প্রেমের ঐতিহাসিক গল্প তৈরী হবে; কিন্তু মৃত্যবরণ গ্রহণের মাধ্যমে যদি প্রমাণ হয় যে আমি অপরাধ করেছি’
‘আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে যদি বজ্রপাতে দুইজন একসাথে মৃত্যুবরণ করি তাহলে প্রমাণ হবে, প্রেমিকযুগল শুধু প্রেমের অপরাধে নয় অপরাধের প্রেমেও মৃত্যু বরণ করতে পারে’
‘দারুন বলেছো তো’
‘বাদ দেন তো, বৃষ্টির এ সময়টা আমি অন্য কিছু ভাবতে চাইনা ‘
অপা অর্ণবের হাত ধরে দৌঁড়াতে লাগলো, প্রচন্ড রকমের বৃষ্টি হচ্ছে। সাতাশ নং এর এই রাস্তাটি বৃষ্টির পানিতে পুরোপুরি ডুবে গেছে। বৃষ্টির সাথে তীব্র ঝড় ও বজ্রপাত শুরু হয়েছে, বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডায় কাঁপতে শুরু করেছে কিন্তু অজানা এক কারণে অপা মোটেও কাঁপছেনা এমনকি তার এতটুকু শীত লাগছে বলে মনে হয় না। হঠাৎ করে অর্ণবের মনে হলো তার ব্যাগে ল্যাপট রয়েছে কিন্তু সে ভাবনাকে পাত্তা না দিয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো। বৃষ্টির পানিতে অপা ও অর্ণবের শরীরে তাদের পোষাকগুলো সেটে গেছে। অর্ণব হঠাৎ করে লক্ষ্য করলো কয়েকজন যুবক দূর থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করছে।
‘একটু দাঁড়াও’ অর্ণব অপাকে বল্ল
‘কেন?’
‘তোমার কাপড়গুলো একটু সামলে নাও’
‘অপা তার পোষাকগুলো ঠিক করতে লাগলো’
হঠাৎ করে বৃষ্টি থেকে গেলো। অর্ণব ঠান্ডায় কাঁপতে লাগলো
‘আপনি খুব ভয় পাচ্ছেন না?’
‘হুম পাচ্ছি’
‘কিসের ভয়?’
‘দায়িত্বের ভয়, যে প্রতিশ্রুতি কখনও দেইনি, সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ভয়’
‘আপনি ভয় পেতে থাকেন, আমি শুধু এইটুকুই বলবো, যে সময়টুকু আপনি আমাকে দিলেন, তা আমার জীবনের একমাত্র সেরা সময় কিনা জানিনা তবে অন্যতমা সেরা সময়তো বটেই’
‘আমি তোমাকে বলতে পারি, এটা আমার জীবনের সেরা সময়’
আমার মুক্তি আলোয় আলোয়, এই আকাশে
আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায়...
ডেডিকেটেড রিংটোনটি অর্ণবের ফোনে বেজে উঠলো।
‘কে ফোন করলো?’
‘আমি যার কাছে বন্দি’


(চার)
কিছু বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গৃহীত অবস্থান অর্ণবের কাছে ভুল অবস্থান বলে মনে হয় বরং সেই সকল বিষয়ে দ্বিধান্বীত অবস্থানই সঠিক অবস্থান বলে মনে হয়। যেমন বিয়ে নামক যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান তিলে তিলে সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছে তা যে ভুল তাও তার কাছে মনে হয়না; আবার সেটা যে সঠিক তাও তার কাছে মনে হয়না। বিশেষত: উপমহাদেশের সংস্কৃতিতে স্ত্রীকে ভাল না বেসে স্বামী সারা জীবন ঘর করছে সেটা কতজনের ক্ষেত্রে কতটুকু সত্য জানা না থাকলেও এটা জানা যে, হাজার হাজার স্ত্রী তার স্বামীকে ভাল না বেসেও যুগের পর যুগ ঘরসংসার করে যাচ্ছে। সেটা এই কারণে যে, এই উপমহাদেশের স্ত্রী পদমর্যাদায় বা পদঅমর্যাদায় যে সকল নারী অধিষ্ঠিত রয়েছে তাদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড একদম নেই বল্লেই চলে। তার মানে যদি এই উপমহাদেশের নারীরা অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ বা শক্তিশালী হতো তাহলে কি সংসার নামক প্রতিষ্ঠান স্থায়ী কোন রূপ পরিগ্রহ করতো না? সেটা যদি না হতো তাহলে কি কোন সমস্যা হতো? নিজের সাথে নিজেই এই তর্ক করতে করতে অর্ণব সংসদ ভবন রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে ফুটপথ দিয়ে হাটতে হাটতে আসাদ গেট অব্দি পৌঁছালো। ডান পকেটে রাখা ফোনে রিংটোন বেজে উঠলো।
‘অপা তুমি কোথায়?’
‘আপনি আপনার ডান দিকে তাকান’
‘তুমি এখানে কতক্ষণ পৌঁছালে?’
‘এইতো এই মাত্র’
‘আজকে কোথায় যাবে?’
‘চলুন নতুন কোন পথ আবিস্কার করি’
‘আমরাতো নতুন পথেই আছি’
‘মানে?’
‘আবার মানে?’
‘অপা তুমি কি গান ছেড়ে দিলে?’
‘আমার বয়ফ্রেন্ড চায়না, তাই ছেড়ে দিয়েছি’
‘সেটা কি তার প্রতি ভালবাসা থেকে, নাকি তাকে করুনা করে?’
‘আমি ঠিক ওকে এখন আর বুঝিনা। আপনি জানেন ঐ মানুষটাকে ভুলে থাকার জন্য আমাকে আমার পরিবার কানাডায় পাঠিয়ে দেয়, সেখানে আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য আমার বড় বোন ভাল পাত্রও ঠিক করে রাখে কিন্তু আমি কাউকেই বিয়ে করতে পারিনি। আমিও ভেবে ছিলাম ছয়মাস ওকে ছেড়ে থাকলে ভুলে যেতে পারব, তারপর একজনকে বিয়ে করে ঘর সংসার করবো; কিন্তু ওকে কিছুতেই ভুলতে পারলাম না। কানাডা থেকে আবার দেশে ফিরে আসলাম, আবার ওর সাথে যোগাযোগ করলাম’
‘তারপর?’
‘এখন ওর সাথে সরাসরি দেখা হয় খুব কম। কথা যা হয় মোবাইল ফোনে, কিন্তু কথা বলতে যা হয়, সব সময় ঝগড়ায় হয়। ও কেন জানি আগের মত আমাকে আর বোঝেনা। এখন মনে হয় সে সময় কাউকে বিয়ে করে নিলেই ভালো হতো ‘
‘ওনি কেন তোমাকে বোঝেন না?’
‘সেটা তো ঐ বলতে পারবে’
‘ওনি তোমাকে বোঝেন না, আমার কিন্তু তা মনে হয়না’
‘আমার তো মনে হয় তুমিই এখন তোমাকে ঠিকমত বোঝনা’
‘বুঝলাম না’
‘ওকে বুঝিয়ে বলছি, তোমার মনে আছে? আমি তোমার সাথে প্রথম বার যেদিন লেকের মধ্যে হাঁটতে বেরুতে যায় সেদিন তুমি আমার সাথে ওর গল্প করতে করতে কেঁদে ফেলেছিলে?’
‘হুম, সেদিন আপনি ওর বিষয়ে খুব উল্টাপাল্টা কথা বলছিলেন, আপনার মুখে ওর বিষয়ে সেই কথাগুলো শুনে এক ধরনর আশ্চর্য রকম বিরক্ত হচ্ছিলাম, আসলে ওটাকে বিরক্ত বলা বোধ হয় ঠিক হবেনা।’
‘হুম, ওটা আসলে বিরক্ত ছিলনা বরং নিজের ও তোমার বয় ফ্রেন্ডের বিষয়ে তোমার ত্রিশ বছরের জীবনের ঐরকম সব সত্যি কথা শুনে তুমি একদিকে যেমন আশ্চর্য হচ্ছিলে অন্যদিকে আমার কথা শোনার প্রেক্ষিতে তোমার জীবনের নতুন উপলব্ধি তোমাকে কষ্টও দিচ্ছিল’
‘হুম আপনি ঐ দিনও এই কথাগুলো বলছিলেন’
‘বিশেষত আমাদের দেশের নারীরা প্রেম ও বিয়ের ক্ষেত্রে একধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন যে, বিয়ের পরে বা কিছু ক্ষেত্রে প্রেমের পরে তার জামাই বা বয়ফ্রেন্ডের অধিনস্ত হয়ে চলবে অন্যভাবে বলতে গেলে তারা দাসত্ব চর্চার মাধ্যমে সময় অতিবাহনই সুখি সময় পার করার সবচেয়ে ভালো কৌশল বলে মনে করে। এবং এটা তুমি একটা সময় ভালো ভাবে রপ্তও করেছিলে তারপর কপালক্রমে নগরীর অরবিটে তোমার আমার দেখা হলো, সেখানে আমি এক নতুন পৃথিবী তোমার কাছে পেলাম, তুমি এক নতুন পৃথিবী আমার কাছে পেলে, সেখানে কার লাভ হলো বা কার ক্ষতি হলো সেটা জানিনা, তবে দু’জনায় দুই ধরনের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হলাম, তবে সেই সমৃদ্ধি সুখকর কিনা জানিনা, তবে তার মুল্য ভালমত দিতে হচ্ছে, মনে হয় আরও কিছুদিন তা দিতে হবে।’
‘আপনি কি বলতে পারেন আমাদের পরের গল্প কি হবে?’
‘তুমি যদি তোমার আমার এই সম্পর্কের গল্প জিজ্ঞেস কর, তাহলে এই গল্প যদি কোন পরণতি পায় তাহলে সেটা হবে ভয়াবহ, আর যদি পরিণতি না পায় তাহলে হবে অপরিণত’
‘আচ্ছা আপনি কি কোন কথা সহজ করে বলতে পারেন না? সব সময় ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলেন’
‘উত্তরটা সহজ হলেই তো উত্তর দেব, উত্তরটা কঠিন বলেই ঘুরিয়ে পেচিয়ে সঠিক উত্তরটা উপেক্ষা করি বা এড়িয়ে চলার কৌশল অবলম্বন করি, বলতে পারো এক্ষেত্রে আমি পলেটিসিয়ান’

(পাঁচ)
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, নানান বিষয়ে স্ববিরোধী অবস্থানই অর্ণব সঠিক অবস্থান বলে মনে করে। উদহারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, একজন মানুষ যদি তার একাধিক সন্তানকে ভালবাসতে পারে এবং এক্ষেত্রে সেই লোকটি কখনও তার একজন সন্তানকে ভালোবাসার জন্য দ্বিতীয় সন্তানকে বালবাসেনা বা কম ভালবাসে তা হয়না। তাহলে একজন নারী বা পুরুষ একাধিক নারী বা পুরুষ ভালবাসলে অপর পুরুষ বা নারী কেন তা মানতে পারেন না। এটাকি ঐ মানুষটার পরম্পরায় পাওয়া হাজার বছরের সামাজিকীকরণ মন নাকি প্রকৃতি প্রদত্ত প্রাকৃতিক কোন ফেনোমেনা।

‘হ্যালো অপা তুমি কোথায়?’
‘মানিক মিয়া এ্যাভিনিউয়ের দক্ষিণের রাস্তায়’
‘দেখো আমি তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি’
অর্ণব এব অপা প্রায় প্রতিদিনই অফিস ছাড়ার পূর্বে এসএমএস করে কোথায় তারা সাক্ষাৎ করবে তা জানিয়ে দিত।
‘কি ভাবছেন?’
‘একটা ব্যাপার লক্ষ্য করে দেখেছো অপা, একসাথে একজন মানুষকে ঘৃণা করা অপরাধ বা অন্যায় এবং একসাথে একাধিক মানুষকে ঘৃণা করা আরও অপরাধ বা অন্যায়, কিন্তু একসাথে একনজ মানুষকে ভালবাসা ন্যয় কিন্তু একসাথে একাধিক মানুষকে ভালবাসা অন্যায়’
‘আপনার মাথায় শুধু উল্টোপাল্টা চিন্তা’
‘সময় কিন্তু এই সব উল্টোপাল্টা চিন্তা করতে বাধ্য করছে’
‘সেটা কিভাবে?’
‘দেখো এই মুহূর্তে তুমি কিন্তু একধরনের অপরাধবোধে ভুগছো’
‘কেন আপনি ভুগছেন না? আপনি তো আমার চেয়ে বেশি অপরাধ করছেন?’
‘না আমার কাছে এক সেকেন্ডের জন্যও মনে হয়নি যে আমি অপরাধ করছি’
‘কেন?’
‘একজন নারীর প্রেমে পড়ার জন্য তার বাহ্যিক সৌন্দর্যকে আমি যদি গৌণ বিষয় হিসেবে ধরে নেই তাহলে তোমার প্রেমে পড়ার অনেকগুলো মৌলিক বিষয় আছে বলে আমি মনে করি।’
‘যেমন?’
‘যেমন তোমার মধ্যে মানুষকে ভালবাসার, মানুষকে শ্রদ্ধা করার অসামান্য গুন আমি লক্ষ্য করেছি, তুমি কিন্তু দারুন গান গাইতে পার সাথে নাচতেও পার, তোমার বাচন ভঙ্গি অসাধারণ এবং তোমার সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য্য তোমার ছেলেমানুষী, এইরকম একজন মানুষকে ভালবাসব তাতে আমার অপরাধ কেন হবে? তুমি কি কখনও দেখেছো একটা গোলাপকে পছন্দ করার পর অন্য গোলাপকে পছন্দ করার কারনে অপরাধবোধে ভুগছো ?’
‘কিসের সাথে আপনি কি মেলাচ্ছেন?’
‘মেলাচ্ছিনা, তথাকথিত সমাজের চোখের আমার অবৈধ প্রেমের বৈধতা দেওয়া চেষ্টা করছি মাত্র, হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমাকে খুব ভালবাসি, তুমি অনুমতি দিলে আমি গলা চিৎকার করে বলতে পারি আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমাকে ভালবাসা কেন আমার অপরাধ হবে? আমি তো কাউকে কথা দেইনি যে, আমি অন্য কারওর প্রেমে পড়তে পারব না’
‘পুরুষ মানুষ হিসেবে আপনি সহজেই কোথাও লুকাতে পারেন, কিন্তু আপনি ভেবে দেখেছেন, এসব কথা শুনে আমার কি হবে? আমি কি করব? আপনি হয়তো সহজেই সব কিছুই ম্যানেজ করে চলতে পারবেন, আমি, আমি কি পারব? আপনি চলে যান, আমি বাসায় যাব’
‘আমি তোমাকে তোমার বাসার কাছা-কাছি পৌঁছে দেই?’
‘আমি জানিনা আপনি কি করবেন? আমি বাসায় চলে যাব’
‘একটু হাঁটি চল’
‘একদম না, আমি এখনই বাসায় যাব, আপনার মাথাটাতো গেছেই, আর কিছুক্ষণ থাকলে আমার মাথাটাও যাবে’ কথা শেষ করে অপা তার বাসার দিকে দ্রুত হাঁটতে শুরু করল। অর্ণবও অপার পেঁছনে পেঁছনে ছুটতে লাগল।

অপা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে অর্ণবকে জিজ্ঞেস করল-
‘আমি একটা কথা আপনাকে জিজ্ঞেস করব, সরাসরি উত্তর দেবেন, কোন প্রকার পেচিয়ে উত্তর দেবেন না’
‘যদি সরাসরি উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা আমার না থাকে?’
‘তবুও আপনাকে সরাসরি উত্তর দিতে হবে’
‘আচ্ছা তোমার প্রশ্ন কর’
‘আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?’
অর্ণব চুপ করে থাকল, অর্ণবের কাছে এটি এমন এক প্রশ্ন, যার উত্তর হিসেবে এই মূহুর্তে হ্যাঁ বা না কোনটি ব্যবহার করার ক্ষমতা অর্ণবের নেই।

(ছয়)
একান্নতম বারের মত অর্ণব অপার ফোন নাম্বারে ডায়াল করল, ফোন বাজতে লাগল..
বায়ান্নতম....তিপান্নতম...চুয়ান্নতম... করতে করতে যখন ডায়াল সংখ্যা নব্বইতমবার হলো তখন অর্ণব চিন্তা করল আর মাত্র দশবার অপার নাম্বারে ডায়াল করবে। এইবার শততম বার ডায়াল কল করল। তবুও অপা অর্ণবের ফোন রিসিভ করল না। অর্ণব পূর্ববর্তী প্রেমের ক্ষেত্রেও নানান ঘটনাকে কেন্দ্রকরে কোন এক মেয়ে সর্বোচ্চ দশবার ডায়ালর করেছিল, সেক্ষেত্রে প্রথম দুইবার স্বাভাবিক ডায়াল ছিল বাকি আটবার ছিল ইগো থেকে কিন্তু আজ তিনি এক থেকে একশততম বার প্রত্যেকবারই ডায়াল করেছে ভালবাসার ইনটেনসিটি থেকে। অপা যতবার অর্ণবের ফোন কল রিসিভ করা থেকে বিরত থেকেছে ততগুণন অর্ণবকে মনের যন্ত্রণায় পুড়তে হয়েছে। অর্ণব প্রচণ্ড মন-যন্ত্রণায় ক্ষত বিক্ষত ও সম্পূর্নরূপে বিদ্ধস্ত। পারিবারিক পরজীবি হিসেবে এখন তার একমাত্র দায়িত্ব হলো সমস্ত যন্ত্রণাকে জলে দিয়ে অফিস শেষ করে সংসগারফেরতগামী একজন সমাজ স্বীকৃত দায়িত্বশীল পুরুষ। এই অভিনয়টা বিগত ছয় মাস যাবৎ অর্ণব ঠিকমত করে চলেছে। আজও তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটবে বলে অর্ণব তা মনে করেনা।

বাসাভাড়া বাবদ খরচ সাশ্রয়ের জন্যই অর্ণব লিফ্ট বিহিন এক সাত তলা বিল্ডিংএর পঞ্চম তলায় ভাড়া নিয়ে থাকেন। বাসার দরজায় দাঁড়িয়ে অর্ণব কলিংবেল চাপতে লাগলো।
‘ কে?’ দরজার ওপাশ থেকে অর্ণবের ছেলে জিজ্ঞেস করল।
‘বাবা আমি’
‘অফিস থেকে ফিরতে তোমার এত দেরী হল কেন বাবা?’
‘ভাল আছো বাবা?’ অর্ণব পাঁচ বছরের সন্তানকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন।
‘তনিমা এইদিকে আস, ব্যাগটা ধর, দেখো বাবা কোল থেকে নামতে চাইছে না’
‘ওকে তুমি আমার কাছে দাও, সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরেছো, যাও ওয়াশ রূমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও, জুস বানানো আছে খেয়ে বস, তারপর বাবাকে আদর কর’
‘আমি তোমাকে আমার ব্যাগটা ধরতে বলছি ব্যাগ ধর, ওকে ধরতে হবেনা’
‘কি ব্যাপার এত সহজে বিরক্ত হচ্ছো কেন?’
‘ও সরি’
‘তোমাকে রীতিমত বিদ্ধস্ত লাগছে, আজকে নিশ্চয় অফিসে অনেক পরিশ্রম করেছো?’
‘অফিসে বেশি পরিশ্রম করলে আমাকে কখনও পরিশ্রান্ত লাগে সেইরকমতো কখনও হয়না।’
এই বলে ব্যাগ ও ফোনটি তনিমার হাতে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লেন। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ো আসা মাত্রই অর্ণব তনিমার দিকে তাকিয়ে দেখলেন, তনিমা কাঁদছে। হঠাৎ করে অর্ণবের মনে হলো তিনি আজ কি তাহলে ডায়াল লিস্ট থেকে অপার ডায়াল হিস্টিরি ডিলিট করেননি। অর্ণব প্রচন্ড বিব্রতবোধ করতে লাগলেন। তিনি বুঝতে পারছেন না যে, এই অবস্থায় তনিমাকে জিজ্ঞেস করা উচিৎ হবে কিনা যে, সে কেন কাঁদছে।
‘তনিমা তুমি কাঁদছো কেন?’ বুকে সাহস নিয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন।
‘মা অসুস্থ্য’ অর্ণব জোরে বড় করে স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে বল্লেন
‘তাহলে কাল যাও, দেখে আস’
‘না আমি একা যাবনা, পুরুষ মানুষের বিশ্বাস নেই, বাসায় একা রেখে যাওয়া যাবেনা’
‘এইটা তুমি একদম ঠিক বলেছো, পুরুষ মানুষকে একদম একা ফেলে যাওয়া উচিৎ নয়, আবার তার উপর যদি হয় তোমার জামাইয়ের মত স্মার্ট জামাই’ বলেই অর্ণব হাসতে লাগলেন
‘কি তনিমা তুমি আমার কথা শুনে হাসলেনা যে’
‘তোমার কথাটা যেহেতু সত্য তাই জোকস মনে করে হাসতে পারছিনা’
‘এইবার তুমি কিন্তু সত্যিই জোকস করলে তনিমা’ কথা শেষ করেই অর্ণব হাসতে লাগলেন।


‘কি ব্যাপার তনিমা তুমি ঘুমাচ্ছ না যে? ‘
‘তুমি কালকে আমাকে আর বাবুকে সকালের ট্রেনে তুলে দেবে, আমরা চলে যাব’
‘চলে যাব মানে? মাকে দেখতে যাবে?’
‘না, একদম চলে যাব, আর কখনও ফিরে আসব না তোমার কাছে’ বলে তনিমা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো
‘মানে?’
‘মানে তোমার মত বুদ্ধিমান মানুষের বুঝতে তো সমস্যা হবার কথা নয়’
‘বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে নয়, অঘটনঘটনপটিয়সী হিসেবে বিষয়টি বুঝতে সমস্যা হচ্ছেনা তবে খুব কষ্ট হচ্ছে, কিভাবে বুঝলে?’
‘আজ দশ বছর যাবৎ যে বুকের মধ্যে নিজের মুখটাকে লুকিয়ে নিজেকে সমর্পণ করে সম্পুর্ণ নিরাপদে, সম্পূর্ণ নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আসছি সেই বুক যবে থেকে আমার নিরাপত্তা দিতে অসহায় বোধ করেছো তখন থেকেই বুঝতে পেরেছি’
‘মানে কত দিন থেকে বুঝতে পারছো?’
‘আজ পাঁচ মাস যাবৎ কোন রাতই আমি ঠিক মত ঘুমায়নি, সেটা তুমি জেগে থেকে বা ঘুমিয়ে থেকে কোন অবস্থাতেই বুঝতে পারনি’
‘কিন্তু তোমার কি কখনও মনে হয়েছে? আমি বিন্দুমাত্র কম ভালবেসেছি?’
‘সেটা হয়তো বহি:প্রকাশে আমার কাছে কখনও মনে হয়নি, কিন্তু ঘটনাটি বোঝার পর থেকে তোমার প্রতিটি স্পর্শই আমার কাছে এক প্রাতররেক স্পর্শ মনে হয়েছে’
‘কিন্তু আমিতো তোমার সাথে কখনই প্রতারণা করিনি’
‘এত কিছুর পরও তুমি বলবে তুমি প্রতারণা করনি?’
‘হ্যাঁ হয়তো এটাকে তুমি প্রতারণাই বলবে, এই প্রতারণা শব্দটা আমি যদি এখন অস্বীকার করি তাহলে সেটা হবে আরও বিপত্তিকর, কিন্তু জান তনিমা এটা কোন ভাবেই প্রতারণা নয়। আমি এক নিমিষের জন্যও তোমার সাথে প্রতারণা করতে চাইনি, আমি কখনও তোমার প্রতি দায়িত্বে অবহেলাও করিনি বা তোমার ভালবাসাকে উপেক্ষা করব তাও মনে হয়নি’
‘তুমি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছো, তুমি আমার স্বামী হয়েও আর একজন ভালবেসেছো, এটা অবশ্যই আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, আমি যদি তোমার মত করে আরএকজন পুরুষকে ভালবাসি তাহলে তুমি হয় আমাকে বাড়ী থেকে বের করে দেবে না হয় তুমি বাড়ী থেকে বেরিয়ে যাবে’
‘তুমি যদি বিশ্বাসঘাতকা বল তাহলে সেটা প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় অবশ্যই ঠিক, দ্বিতীয় কথা যেটা বল্লে তুমি যদি আর একজন পুরুষকে ভালবাস আমি হয়তোবা বাড়ী ছেড়ে চলে যাব সেটাও হয়তো ঠিক যদিও সেটা Experienced না করা পর্যন্ত বলা মুশকিল, আর যদি সেটা আমি করেও থাকি তাহলে সেটা আমার আমি নই, তোমাদের আমি, তোমরা মানে তোমাদের এই সমাজ আমাকে যে ভাবে গড়ে-পিটে যে ছাচে মানুষ করেছে আমি সেই ছাচের একজন মানুষ’
‘তোমার বকবক শোনার কোন ইচ্ছে আমার নেই, ব্যাস আমার শেষ কথা কালকে তুমি আমাকে ট্রেনে তুলে দেবে ‘

(সাত)
‘অপা, আমি প্রেমে পড়ার সময় নিছক তোমার সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ হয়ে এক আদিম খেলার দূর্বিসন্ধিমুলক আকাঙ্খা থেকেই প্রেমে পড়েছিলাম বা প্রেমে পড়তে চেয়েছিলাম সেটা অস্বীকার করব না। যে কারণে তোমারা পুরুষ মানুষদেরকে চরিত্রহীন তকমা বুকে সেটে দাও আমি ঠিক সেই কারণেই তোমার প্রেমে পড়েছিলাম। কিন্তু তোমার আমার পরিচয়ের সময় যত বেশি অতিবাহন হয়েছে তত বেশি তোমার সারল্য জটিল ভাবে আমার কাছে আবিষ্কৃত হয়েছে । অপা, কিছু বলছনা যে?’
‘আপনি বলে যান আপনার কথা শুনতে ভাল লাগছে’
‘শত সাধারণের সমন্বয়ে এক অসাধারণ তুমি, আমার ব্যাপারে তোমার সাধারণ চিন্তাগুলোর মাধ্যমে আমি এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা পেয়েছি। এক কাপ কফি চুমক দিয়ে ভাগ করে পান করা, বা একটাই আইসক্রিম কিনে একসাথে চুষে চুষে খাওয়া, বৃষ্টিতে হাটা এটা সত্যিই অসাধারণ; এগুলোর জন্য অনেকগুলো স্বর্গ উপেক্ষা করা যায়। আমার এই সংক্ষিপ্ত জীবনে অসাধারণ এই পাওয়া সাধারণত: খুব বেশি মানুষ পায়না, যারা পায় তারা হাজার স্বর্গ উপেক্ষা করতে পারে, অপা কিছু বলছ না যে’
‘ঐরকমতো সব প্রেমিকদেরই মনে হয়, আপনি বলে যান, কথাগুলো শুনতে আমার খুব ভাল লাগছে’
‘অপা কয়েকদিন পরই তোমার বিয়ে, মহাকালে যা ঘটে থাকে তার প্রতিটি মূহুর্তই হয়তো কোন কোন সময়ের তৈরী করা ছক পূরণ করার জন্যই করা হয়ে থাকে এগুলো হয়তো সব কিছুই অবধারিত, তুমি যখন আমার সাথে কোন কারণে কথা বন্ধ করে দিতে তখন আমার কাছে প্রতিটি সময় তীব্র যন্ত্রনার, বিভিষীকাময় মনে হতো, আমি কোন কিছুর বিনিময়েই চাইব না যে, আমার জীবনে ঐ সময়গুলো আবার ফিরে আসুক, অথচ দেখো ঘটা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি যে আমরা পরস্পর কেউ কারও সাথে কথা বলব না। যদি সেটা বলব না বলার চেয়ে বলতে পারবনা শব্দটিই বেশি মানানসই, এগুলোতো প্রকৃতির পূর্বাঙ্কিত কোন ছক পূরণ বই কিছু নয়। অপা কাঁদছো?’
‘জানি না’
‘অপা, কতটা একটা মজার ব্যাপার লক্ষ্য করেছো, আমি তোমাকে ভালবাসি, তুমি আমাকে ভালবাস, আমারও একজন জীবনসঙ্গী আছে আমি তাকেও ভালবাসা, তুমিও আরএকজন ভালবাস, ভালবাসার এই সমীকরণ নাকি অশ্লিল, সমাজ বিরুদ্ধ, এটা নাকি অনৈতিক, তাহলে কি ভালবাসাই ভালবাসার প্রতিবন্ধক? ভালবাসাইকি ভালবাসতে দেয় না?’
‘আমি এতসব বুঝিনা, শুধু এইটুকু বলব, আমার একটা ঈশ্বর ছিল যে ঈশ্বরকে আমি নি:সঙ্গ করে দিলাম, আমি নি:সঙ্গ হলাম, হ্যাঁ জানি সেটা হয়ত কিছুদিন পর কেটে যাবে, তবে এই নি:সঙ্গটা সারা জীবন আমার সঙ্গ হিসেবেই থাকবে’।


(আট)
অপার আগামীকাল বিয়ে, আজকে গায়ে হলুদ, তড়িঘড়ি করে বিয়ের সমস্ত আয়োজন। তড়িঘড়ির কারনেই বিবাহ সংক্রান্ত বেশকিছু প্রথা ঠিকঠাক ভাবে না মেনেই বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হচ্ছে। অর্ণব তার সমস্ত কাজ স্বাভাবিক গতিতে করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। হঠাৎ করে অর্নবের ফোনে ইনকামিং রিং হচ্ছে, অর্নব ফোনটা হাতে নিয়েই বিস্মিত হলেন, বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে অপা এই সময় ফোন দিতে পারে।
‘হ্যাঁলো, অপা তুমি কেমন আছ?’
‘আপনি একটু বেঙ্গল বইয়ের পাশে আসতে পারবেন?’
‘তিন মিনিটের মধ্যেই চলে আসছি’ অফিস থেকে দৌঁড়ে অর্ণব অপার কাছে দুই মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলেন
‘কি ব্যাপার তুমি এই সময় বাইরে?’
‘গাঁয়ে হলুদ দেওয়ার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে কিন্তু আপনাকে দেখতে খুব ইচেছ করল, তাই ছোট্ট একটা কাজের অজুহাতে আপনার কাছে ছুটে আসলাম, আর একটা কথা বলার জন্যও আসলাম’
‘কি কথা বল’
‘আজ সন্ধ্যায় আমি আপনি একসাথে তিন ঘন্টা হাত ধরে হাঁটব, এই তিন ঘন্টায় যত দূরেই যায়না কেন আপনার সাথে রিক্সায় করে আবার ফিরে আসব’
‘কালকে তোমার বিয়ে’
‘তাতে কি?’
‘তাহলে তোমার যদি অসুবিধা হয়?’
‘আমি তো চাইছিয় অসুবিধা হোক’
‘হুম, আমার জন্য তোমার বিয়ে ভেঙে যাক আর আমি বিপদে পড়ি না? অবশ্যই, তোমার নিয়ে বিপদে পড়তে আমার বেশ ভালই লাগবে’
এখন সন্ধ্যা সাতটা বাজে অর্ণব অপার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটার চেষ্টা করছে মাত্র। কারণ ঢাকার রাস্তা ফুটপথগুলোতে দুইজন পাশাপাশি হাঁটা প্রায় অসম্ভব যদি সেই রাস্তাটা ক্যান্টনমেন্ট বা প্রধান মন্ত্রীর অফিস বা বাস ভবনের পাশের ফুটপথ না হয়ে থাকে। অর্ণব ও অপা হাঁটতে হাঁটতে ক্যান্টোনমেন্টের মধ্যকার ফুটপথে গিয়ে পৌঁছালো।
‘আশে পাশে প্রায় কেউ নেই, আমার হাত ধরে হাঁটতে তোমার ভয় করছে না? অথবা সেটা যদি ভয়ের নাও হয়ে থাকে, তুমি অন্য কিছু প্রত্যাশা করছ না?’ অর্ণব অপাকে জিজ্ঞেস করল।
‘আজকে রাতের আর ঘন্টা দুইয়েক সময় আপনার হাতে আছে এই সময়টা আপনি আপনার মত করে কাজে লাগাতে পারেন, তবে আমি খুব ভাল করেই জানি আপনি এমন কিছু করবেন না বা করতে পারবেন না যা করলে আমি কষ্ট পাব; নারী-পুরুষের যৌথ সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক আপনার কাছে পবিত্র কাজ কিন্তু স্ত্রী’র অস্মতিতে বা সম্মতি না নিয়ে স্ত্রীর সাথেই যৌন সম্পর্ককে যে মানুষ পাপ মনে করে তাকে নিয়ে আমার কোন ভয় নেই, তবে আমার নিয়ে আমার ভয় আছে কি না সেটাই ভাবছি’
‘অপা তোমার প্রেমে পড়ে জীবনের কয়েকটা বিষয়ে আমার বিস্ময়কর উপলব্ধি হয়েছে, সুতরাং তোমার কোন ভয় নেই’
‘কি কি উপলব্ধি হয়েছে আপনার?’
‘উলব্ধি নাম্বার (এক) নারী-পুরষের ভালবাসা সৃষ্টির নৈপথ্যে হয়তো যৌনতায় মুল কারণ, তবে সত্যিকার অর্থেই কেউ যদি কারও প্রেমে পড়ে সেই যৌণতায় তখন তার কাছে গৌণ হয়ে যায়, উপলব্ধি নাম্বার (দুই) দীর্ঘদিনের লালিত বিশ্বাস তার পেঁছনে যদি কোন প্রকার যুক্তি নাও থাকে তবুও সেই বিশ্বাসটাই এক সময় সত্যি হয়ে যায়। উপলব্ধি নাম্বার (তিন) ভালবাসা এমন একটি অনুভূতি যা যে কোন সাধারন মানুষকেও ঈশ্বরের আসনে বসিয়ে দিতে পারে, উপলব্ধি নাম্বার (চার) ঘৃণার প্রতিরোধে যখন ঘৃণা আনা হয় তখন সেটা হয় সংঘাত আর ভালবাসার প্রতিরোধে যখন ভালবাসা আনা হয় তখন সেটা হয় সাংসারিক দায়িত্ব, শেষটা বলব ভালবাসায় সব। বাদ দাও এসব আলোচনা করতে আর ভাল লাগছে না’ বলে অর্নব ও অপা দুইজনই চুপি চুপি কাঁদতে লাগল। অর্ণব একটি রিক্সা ডাকল, অর্ণব ও অপা এই মুহূর্তে দুইজনই পাশাপশি রিক্সায় বসে অপার বাড়ীর দিকে ফিরতে শুরু করছে, কেউ কারও সাথে কথা বলছেনা, এই ভাবে একটা সময় তাদের পথ শেষ হয়ে গেলো, অপা রিক্সা থেকে অর্ণবকে কি যেন বলতে গেলো কিন্তু কোন কথাই বলতে পারল না, অপা রিক্সা থেকে নেমে দ্রুত তার বাড়ীতে ঢুকে পড়ল, অর্ণব তার বাসায় ফিরে আসল।

পনের দিন পর:
অপা অফিসে এসে জানতে পারল অর্ণব চাকুরী ছেড়ে অন্যত্র চাকুরী নিয়ে চলে গেছে; অপার খুব ইচ্ছে করলো অর্ণবকে ফোন দেবে কিন্তু অপার পুরোনো বিশ্বাস অনুসারে অর্ণবের ফোনের আশায় নিজে ফোন না করে অর্ণবের ফোনের আশায় অপেক্ষা করতে লাগলো....

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: একেবারে আধুনক গল্প।

১৬ ই মে, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৬

আলোর_পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া

২| ১৬ ই মে, ২০১৯ রাত ৯:৪৮

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: এত ছোট গল্প কেন? :P হাজিরা দিয়ে গেলাম, একটু পর পড়ব।

১৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ৯:২৯

আলোর_পথিক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া

৩| ১৭ ই মে, ২০১৯ রাত ৩:১১

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আমরা প্রতিনিয়ত কোন কিছু দেখার কিংবা জানার কিংবা কোন মানুষের অপেক্ষায় জীবন অতিবাহিত করছি।আর এই অপেক্ষার প্রহর যেন কোন দিনও শেষ হয় না।

১৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ৯:৩১

আলোর_পথিক বলেছেন: আমরা সবাই অপেক্ষার জন্য অপেক্ষা করি

৪| ১৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ৭:৩৮

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সম্পর্কগুলো জটিল হয়ে যাচ্ছে। সমাজের নৈতিকতার ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ফলাফল বহুগামিতা।

গল্পে ভালোলাগা তবে দীর্ঘসূত্রতা ভালো লাগে নি। বড্ড বড়ো।

আইসক্রিম খাওয়ার ব্যাপারটা লোভনীয় বটে :`>

১৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ৯:২৯

আলোর_পথিক বলেছেন: বড় লেখার কারণে আমি লেখা পড়িনা, পড়িনা তাই মন্তব্য করিনা।

১৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ৯:৩৪

আলোর_পথিক বলেছেন: নৈতিকতার ঘাটতি শব্দ ব্যবহার খুব অনৈতিক হয়ে, না পড়ে মন্তব্য করে ঠিক করেন।

৫| ১৭ ই মে, ২০১৯ সকাল ১০:০০

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: আপনার কথাটা বুঝলাম না। না পড়ে আমি মন্তব্য করি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.