নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হব সকাল বেলার পাখি

দিব্যেন্দু দ্বীপ

সংশয়ে সংকল্প সদা টলে

দিব্যেন্দু দ্বীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গচ্ছিত সম্পদ, সৃষ্টিহীনতা এবং সন্ত্রাসবাদ

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৫০



বর্ণবাদ প্রথার মাধ্যমে ব্রাহ্মণ ও কায়স্থরা ভারতীয় উপমহাদেশে নিঃসন্দেহে দীর্ঘদিন বেশি সুবিধা ভোগ করেছে, ফলে তাদের কাছে উদ্বৃত্ত সম্পদ ছিল। গচ্ছিত সম্পদ থাকায় তারা অবসরের সুযোগ পায়, অবসরের সুযোগটা তারা কাজে লাগিয়েছে।

ভোগবাদ-হতাশাবাদের সাথে অবসরের সম্পর্ক রয়েছে, আবার সৃষ্টিশীলতার জন্যও অবসর লাগে। সম্পদ এবং অবসর কাজি লাগিয়ে তারা শিল্পকলায় অবদান রেখেছে, জ্ঞান-বিজ্ঞান-রাজনীতির চর্চা করেছে, অবশ্যই তাতে কিছু মানুষ নিস্পেষিতও হয়েছে। তবে তাদের সৃষ্টিশীলতার দিকটি অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

শ্রমিকের অবসর নেই, তাই যতই মেধা তার থাক সৃষ্টির সুযোগ তার নেই। শ্রমিক বলতে শুধু কায়িক পরিশ্রম নয়, বাধ্যতামূলকভাবে কোনো কাজে জড়িত থাকা মানেই অবসর নেই। মস্তিষ্কের ভেতরের “আনাগোনা” নিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই, চিন্তার সুযোগ নেই।

এখন ভারতীয় উপমহাদেশে দৃশ্যত বর্ণপ্রথা নেই, রাজা-উজিরও নেই, কিন্তু বিভিন্ন ফর্মে অাবার আছে সবই। অর্থনৈতিক বিভাজন সমাজে ঠিকই জারি আছে। কিছু মানুষ খেটে মরছে, সারাদিন কাজ করেও জীবিকার সংস্থান হচ্ছে না, আবার কিছু মানুষের অফুরন্ত অবসর। দুটোই সমাজে এখনও খুব বেশি মাত্রায় আছে, আগে যেমনটি ছিল।

ভারতীয় উপমহাদেশে শুধু বেদান্ত (হিন্দু যুগের অনেক আগের কথা) যুগটা, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে ভারসাম্যপূর্ণ এবং সমাজে ন্যায়-নীতি ছিল বলে জানা যায়। এরপর হিন্দু যুগ, বৌদ্ধ যুগ, আবার হিন্দু যুগ, মুসলিম যুগ, সব যুগেই অসভ্যতা-অন্ধত্ব-শোষণ ক্রমান্বয়ে বেড়েছে।

সমাজে সে ধারা এখনো বহমান, শুধু সমাজের বিভিন্ন ক্লানের নাম চেঞ্জ হয়েছে মাত্র। তবে এখন অবসর থেকে সৃষ্টি আর হয় না। ভারতীয় অংশ সম্ভবত শিকড়ের একটা এডভান্টেজ পাচ্ছে। কিন্তু আমরা তো শিকড় উপড়ানো, আমাদের এখানকার অবস্থা খুবই ভয়ঙ্কর। আমদানী করা সংস্কৃতির ভয়বহতা পাকিস্তান অবশ্য দেখে ফেলেছে অনেক আগে। আমরা ভয়াবহতার চূড়ান্ত রূপ দেখার অপেক্ষায়, এবং কেবল দেখতে শুরু করেছি।

আসলে বাংলাদেশ অংশের বিশ্লেষণ খুব কঠিন নয়। এ অংশে টাকা এখন মূলত ‘৭১ পরবর্তী হঠাৎ ধনী হওয়া কিছু মানুষের হাতে। যাদের মূলত কোনো মানবিক এবং তাত্ত্বিক শিক্ষা-দীক্ষা নেই, শুধু কিছু টেকনিক্যাল এবং ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া। তাছাড়া ‘৭১ এর বিরোধী পক্ষের হাতেই প্রকৃতপক্ষে পয়শা বা সম্পদ গচ্ছিত হয়েছে। যাদের পারিবারিক কালচারটা অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-বিরোধী এবং সাম্প্রদায়ীক।

স্বাধীনতার পক্ষের হোক আর বিরোধী হোক (খুব একটা পার্থক্য থাকেনি, কারণ, অনেক স্বাধীনতাপন্থী লোকও পরে পূর্বের অবস্থান থেকে সরে এসেছে) ’৭১ প্রজন্মেরও হয়ত ব্যস্ততা ছিল, তাদের বিভিন্ন মারপঁ্যাচের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সম্পদ হাতিয়ে নিতে হয়েছে, অথবা উপার্জন করতে হয়েছে, সেগুলো হেফাজত করতে হয়েছে। কিন্তু তাদের উত্তর প্রজন্মের সে ব্যস্ততা নেই। তারা গচ্ছিত অর্থ হাতে পাচ্ছে।

অবসর এবং গচ্ছিত অর্থের সাথে সৃষ্টিশীলতা অথবা সুকর্মের সম্পর্ক, অথবা কুকর্ম। কেউ একটি গবেষণাগার করবে, কেউ পর্বতারোহী হবে, কেউ বড় এথলেট হবে, কেউ একটি উদ্যান করবে, কেউ একটি দাতব্য চিকিৎসালয় করবে, কেউ একটি গানের স্কুল করবে, অফুরন্ত অবসর এবং গচ্ছিত অর্থ কাজে লাগিয়ে এরকম অনেক কিছু এদের করার কথা। কিন্তু তা হচ্ছে না, না হওয়ার কারণও স্পষ্ট। তাদের পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এসবের অনুকূলে নয়।

প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাটা ওদের মারাত্মক লেজেগুবুরে, সেখানে টেকনিক্যাল শিক্ষা আছে কিছু, ধর্মীয় উন্মাদনা আছে, কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের কোনো শিক্ষা নেই, বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্ববোধের কোনো শিক্ষা, একত্রিত বিশ্বের ধারণা সেখানে অনুপস্থিত।

তাদের পারিবারিক শিক্ষাটা মারাত্মক ভোগবাদমূলক এবং ধর্মীয়। ভোগবাদের পাট চুকিয়েই মূলত “অবসর এবং সম্পদ” সৃষ্টিশীলতায় প্রবেশ করে। কিন্তু যেহেতু বাংলাদেশের এই প্রজন্মের কাছে পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সে প্রণোদনা নেই, তাই তাদের কাছে ‘বিশেষ কিছু’ ‘বড় কিছু’ করা মানে ধর্মীয় অনুপ্রেরণা থেকে যা কিছু করার কথা বলা হয়েছে তাই।

সেক্ষেত্রে জঙ্গীবাদ বা জেহাদ তাদের অনেকের কাছে একটি লোভনীয় অপশন। নিজের ‘অবসর-অর্থ’ বিনিয়োগ করে তারাও ‘সৃষ্টিশীল’ হচ্ছে, তারাও ‘বড় কিছু’ করছে। এবং তারই ফলাফল হচ্ছে গুলশানের হোলি আর্টিসান রেঁস্তরায় হামলা।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:১৫

আব্দুল্লাহ্ আল আসিফ বলেছেন: চমৎকার রিদম লেখায়।।।

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:২০

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: লিখায় নিজস্ব ভাবনার সুন্দর সন্নিবেশ ঘটেছে ।

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৫৫

মহসিন ৩১ বলেছেন: বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্ববোধের কোনো শিক্ষা, একত্রিত বিশ্বের ধারণা সেখানে অনুপস্থিত

বুঝতে পারলাম না । ...... এটা কিকরে সম্ভব......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.