নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি হব সকাল বেলার পাখি

দিব্যেন্দু দ্বীপ

সংশয়ে সংকল্প সদা টলে

দিব্যেন্দু দ্বীপ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিজিৎ রায়কে হত্যার স্থানটির নাম ‘টিএসসির মোড়’ পরিবর্তন করে ‘হুমায়ুন আজাদ-অভিজিৎ চত্বর’ রাখা হোক

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৪১



২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ হত্যা করা হয়েছে যুক্তিবাদী লেখক ও ‘মুক্তমনা’ ওয়েব সাইটের পরিচালক অভিজিৎ রায়কে। পেশায় তিনি একজন প্রকৌশলী ছিলেন। ব্লগ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখি করতনে। তিনি ১০টি বই প্রকাশ করেন। বিজ্ঞান, নাস্তিকতাবাদ, বাস্তববাদ, সন্দেহবাদ ও যৌক্তিকতার ওপর ভিত্তি করে বিতর্ক নির্ভর (সমাজ পরিবর্তনের নিয়ামক) রচনাতেই তার বিশেষ আগ্রহ ছিল। অভিজিতের লেখা অবিশ্বাসের দর্শন এবং বিশ্বাসের ভাইরাস বই দুটি পাঠক মহলে নানামুখী আলোচনা সমালোচনার জন্ম দেয়। অভিজিৎ রায় নিজে লিখেছেন এবং লিখেয়েছেন মানুষের যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক মনন তৈরি করার জন্য। প্রসঙ্গক্রমেই তার লেখায় ধর্ম এসেছে। উপর্যুক্ত বই দুটির মতো অভিজিতের লেখা বইগুলোর ওপর একবার চোখ বুলিয়ে নিলে ধারণা পাওয়া যাবে তিনি কেন মৌলবাদীদের টার্গেট হয়েছিলেন। তার লেখা বইগুলি-
• আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫)
• মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে (২০০৭)
• স্বতন্ত্র ভাবনা: মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি (২০০৮)
• সমকামিতা: একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান (২০১০)
• অবিশ্বাসের দর্শন (২০১১)
• বিশ্বাস ও বিজ্ঞান (২০১২)
• ভালবাসা কারে কয় (২০১২)
• শূন্য থেকে মহাবিশ্ব (২০১৪)
• বিশ্বাসের ভাইরাস (২০১৪)
• ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে (২০১৫)
অর্থাৎ শুধু লেখক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করার জন্য তিনি লেখেননি, লিখেছেন সমাজ পরিবর্তনের গভীর মানস এবং লক্ষ্য সামনে রেখে। মুক্তমনা ওয়েবসাইটটি ছিল তার নিজের এবং অন্যান্যদের বিজ্ঞান বিষয়ে লেখার অন্যতম প্লাটফরম। বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতা তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রসারের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ ২০০৭ সালের ‘জাহানারা ইমাম স্মৃতিপদক’ প্রদান করেছে ‘মুক্তমনা’ ওয়েব সাইটকে। মুক্তমনা বিভিন্ন মহলে প্রশংসীত এবং আলোচিত সমালোচিত ব্লগ সাইট।
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কম্পিউটর প্রকৌশলী ড. অভিজিৎ রায় সবসময়ই মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আক্রমণের প্রধান টার্গেট ছিলেন। উগ্র মৌলবাদী ধর্মব্যবসায়ীরা ধরে নিয়েছিল যে অভিজিৎ রায় আলোকবর্তিকা হাতে তাদের ধর্মব্যবসা এবং ধর্মলিপ্সায় আগুন লাগাচ্ছে, তাই তারা খুব কঠোরভাবে অভিজিৎ রায়কে টার্গেট করেছিল। জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন ওয়েব সাইটে ধারাবাহিকভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে অবশেষে অভিজিৎকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অভিজিৎকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন তাঁর সহধর্মিনী বন্যা আহমেদ।
১৯৭১ সাল থেকেই মৌলবাদী এ শক্তি তাদের প্রতিপক্ষ চিহ্নিত করে হত্যা করে আসছে। ধর্ম রক্ষার নামে তারা এ হত্যাকাণ্ড চালায় যাতে সাধারণ জনগণ তাদের দায়মুক্তি দেয়। তারা নাস্তিক, মুরতাদ, কাফের আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনকে ফতোয়া দিয়ে থাকে, হত্যার হুমকি দেয়, লাগাতার তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করে। প্রতিবাদী লেখক হুমায়ুন আজাদকে জীবন দিতে হয়েছে, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রাক্তন সভাপতি বরেণ্য কবি শামসুর রাহমানের ওপর জঙ্গীদের হামলার খবরটি হয়ত অনেকের জানা নাই। বিভিন্ন সময়ে বরেণ্য ব্যক্তিদের তো তারা হত্যা করেছেই, হালে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপটে তরুণ ব্লগারদের হত্যার লিস্টটি অনেক লম্বা।
এসব জঙ্গী সন্ত্রাসীদের কখনো কখনো গ্রেফতার করা হয়, কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকর গলিয়ে তারা বীরদর্পে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানাবার চক্রান্তে আবার শামিল হয়। ২০১৫ সালের ১২ মার্চ এক বক্তৃতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জনাব এইচ টি ইমাম বলেছিলেন, হুমায়ুন আজাদের হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তি হলে অভিজিৎকে হয়তো এভাবে জীবন দিতে হত না।
অভিজিৎ হত্যা নাগরিক সমাজকে কতটা ক্ষুব্ধ ও অসহায় করেছে প্রতিদিন খবরের কাগজে তার বিবরণ আমরা পড়েছি। বিবিসিতে অভিজিতের আহত সহধর্মিনী বন্যা আহমেদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আমরা দেখেছি। অভিজিতের পিতা, মানবমুক্তি আন্দোলনের অন্যতম নেতা, মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত অধ্যাপক অজয় রায়ের ক্ষোভও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জনাব এইচ টি ইমাম। পুলিশ সহ অনেক মানুষ ঘটনাস্থলে সেদিন ছিলেন, তেমন কেউই সেদিন অভিজিৎকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি, জীবন আহমেদ নামের একজন তরুণ সাংবাদিক সেদিন আক্রান্ত অভিজিৎ ও তার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন।
অভিজিৎকে হত্যার পর জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে এবং হেফাজতে ইসলামের বিবৃতিতে অভিজিৎ এবং তার ‘মুক্তমনা’ব্লগ সহ তার বিভিন্ন বই থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিষোদগার অব্যাহত রাখে, যাতে তাদের এ হত্যাকাণ্ড সাধারণ মানুষের কাছে বৈধতা পায়। জামায়াত-হেফাজতের প্রতি সরকার ও প্রশাসনের নমনীয় নীতি স্বাভাবিকভাবেই জঙ্গী মৌলবাদী সন্ত্রাসকে যেমন উৎসাহিত করে একইভাবে বিক্ষুব্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নাগরিক সমাজকে। আমরা বার বার বলি, জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ না হলে ৩০ লক্ষ শহীদের জীবনের মূল্যে কেনা বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন এবং শহীদদের স্বপ্নপূরণ সম্ভব হবে না। জামায়াত এবং সমমনাদের শুধু দল হিসেবে নিষিদ্ধ করলে চলবে না, তাদের দর্শন মওদুদিবাদ-ওহাবিবাদ, তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থান, যাবতীয় প্রকাশনা —সব কিছু নিষিদ্ধ করতে হবে।
নিহত লেখক অভিজিৎ রায় ও অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবার সর্বোত্তম পথ হচ্ছে তাদের আদর্শের প্রসার এবং ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, (১) যেখানে অভিজিৎ রায় ও হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করা হয়েছে সে স্থানটি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানাবার জন্য সংরক্ষণ এবং একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হোক, (২) স্থানটির নাম ‘টিএসসির মোড়’ পরিবর্তন করে ‘হুমায়ুন আজাদ-অভিজিৎ চত্বর’ রাখা হোক এবং (৩) শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ হোক ‘হুমায়ুন আজাদ-অভিজিৎ সড়ক’। এ দাবী শুধু আমার নয়, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ২০১৬ সালে এ দাবী জানিয়েছিল।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০৭

পদ্মপুকুর বলেছেন: পিজি-শাহবাগ, পিজি-শাহবাগ ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনো বাসের হেল্পাররে বিএসএমএমইউ-শাহবাগ বলতে শুনেছেন? ওরা দূরে থাক, সাধারণ মানুষই বলে পিজিতে যাচ্ছি.... 'টিএসসির মোড়' নামটা কারো দেওয়া না, অটোমেটিক্যালি হয়ে গেছে। সেখানে একটা আরোপিত নাম দেওয়াটা ওই পিজির মতই হবে। তাছাড়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিঙ্গেল শিক্ষার্থীও এটা মানবে বলে মনে হয় না।

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৩৬

খাঁজা বাবা বলেছেন: মুক্তমনার একটা সংগা থাকা উচিত।
আর একটা মাপকাঠি, আসলে মনেকে কতটুকু মুক্ত করা যায়। মনকে কতটুকু মুক্ত করলে তা অন্যের সীমানায় ঢুকে পরবে না তা নিয়ে ভাবা উচিত।

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: আজ বাঙালির রাতকাণাকে চিরস্থায়ী অন্ধত্বে রূপ দেয়ার ৫ বছর। আজ বাঙালির আজীবন অভিশপ্ত হবার ৫ বছর৷
৫ বছর আগে আজকের এই দিনে বাঙালি চুড়ান্ত অন্ধকারকে বরণ করে নিয়েছিলো। আজকের এই দিনে বাঙালির আজীবন আরিফ আজাদের বই পড়ার, আজাহারীর ওয়াজ শোনার, আর তারেক মনোয়ারের ক্লাস করে জীবন পার করার ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছিলো। আজকের এই দিনে বাঙালি অন্ধকার গুহায় কুসংস্কার, ভন্ডামী, ধর্মীয় গোড়ালি, সাম্প্রদায়িকতা আর ধর্মব্যবসার সঙ্গে আজীবন সহমত হয়ে মুর্দার মতো বেঁচে থাকার জন্য অভিশপ্ত হয়েছিলো। আজকের এই দিনে বাঙালি নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছিলো। আজকের এই দিনে বাঙালি অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছিলো।

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: মতাদর্শ আজও নবীনতর হয়ে জেগে থাকুক মুক্তমনাদের প্রাণে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.