নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাত তিনটা। এটা হল সেই সময় যখন আমার মনে হয়, “ঠিক আছে। এখন শুতে যাবার সময়।” শুতে যাবার আগে হাতমুখ ধুয়ে আসলাম। পানি খাবার ইচ্ছে হল। পানির জগ-গ্লাস সবসময় সামনের রুমে টী-টেবিলের উপর থাকে। অভ্যাসমত আমার রুম থেকে বেরিয়ে সেখানে যাচ্ছিলাম।আমার রুমের দরজা ভেজানো ছিল। দরজা পুরোটা খুলার আগেই মনে পড়ল আরে পানি তো আমার টেবিলেই রাখা আছে। ঠিক একই সময় চোখ গিয়ে পড়ল সোফার উপর। সোফার উপর আদুরে বাচ্চার মত চার পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে একটা সাদা বিড়াল।
আমাদের ফ্ল্যাটটা দালানের নীচতলায়। মূল সীমানার ভীতরে, দালানের একপাশে অনেকটা খালি উঠানের মত আছে। ঐ খালি উঠানের সাথে লাগোয়া একটা বারান্দাও আছে আমাদের বাসায়। তাই যখন তখন বিড়াল ঢুকে পড়ে আমাদের ঘরের মধ্যে। বিড়ালের সাথে সহাবস্থানের অভ্যাস বাসার তিনটি প্রাণীর কারোরই নাই। তার উপর এসব বিড়াল লাওয়ারিশ। নোংরায় নোংরায় ঘোরে, থাকে, খায়। জীবাণুর ব্যাপা-স্যাপার আছে। সুতরাং যতই আদুরে হোকনা কেন, এরা আহুত নয় আমাদের কাছে- দেখিবামাত্র উহাকে তাড়াইতে বাধ্য.....
কিন্তু এ বিড়ালটাকে এ মুহূর্তে আমি তাড়ালামনা। তার ঘুমও ভাঙালাম না। এত আদর লাগছে বিড়ালটার শুয়ে থাকাটা.......! এত আদর......! ইচ্ছে করছিল কোলে করে নিয়ে আসি! গৃহপালিত পশুপাখি, যারা মানুষের কাছাকাছি থাকে, তাদেরকেও হাত দিয়ে ছুঁতে আমি ভয় পাই। আমার বেড়ে ওঠাটা আসলে ওভাবে হয়নি.....নতুবা হয়তো সত্যিই নিয়ে আসতাম। এমন মায়াময় ভঙ্গিতে মাথাটা রেখে ঘুমোচ্ছে, যেন কতযুগ পর সে একটু মাথাটা কোথাও রাখতে পেরেছে...একটু ঘুমোতে পেয়েছে.... থাক। শুয়ে থাক। ঘুমোক।
মশারী টাঙিয়ে শুতে এসে আমি ভাবলাম, যদি আমার টেবিলে পানির ব্যাবস্থা না থাকত, নিশ্চই আমাকে টী-টেবিল অব্দি গিয়ে পানি খেয়ে আসতে হত। এবং তখন অতি অবশ্যি বিড়ালটার ঘুম ভাঙত এবং সে না পালালেও আমি ভয়ে আগেই তাকে তাড়িয়ে দিতাম! পানির ব্যাবস্থা আমার রুমে আছে বলেই রক্ষা...
কি স্বার্থপর আমি! কি ক্ষুদ্র আমার ভালোবাসা! আমি এমন স্বার্থপর ভাবেই ভালোবাসি!
আচ্ছ, এমনধারা না হলে সে বুঝি আরও কিছুদিন থাকত সাথে.........?
বাট নট ফর এটারনিটি...! সে যেতই। চলে যাবে ভেবেই এসেছিল! আরও কিছুদিন থেকে গেলে বরং ওর সাজানো ক্রুশে আমি আরও বিদ্ধ হতাম। এমনিতেই ওর মিথ্যা আর নাটকের অনেকগুলো পেরেক বিঁধেছে শরীরে।
কী খেয়ালে যেন আমি নিঃস্ব হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম..! ডিএনএ থেকে বেহুলার জীন তাড়াতে পারিনাই; তাই হয়তোবা... আমার ভয় ছিলনা কেন জানি!
সত্যিই, ভালোবেসে নিঃস্ব হবার যে কী আনন্দ!!!!!
অতঃপর ঐ হাতে গজাল-পেরেক দেখতে পেলাম......যীশুর যন্ত্রণা অনুভব করলাম......
ব্যার্থ হল বেহুলা...........
আমার স্বার্থপরতার জন্যই হয়তো পুরোপুরি বিদ্ধ হবার আগেই ছুটে পালিয়ে আসতে পেরেছিলাম রক্তাক্ত, ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায়ও.....!
যীশু স্বার্থপর হতে পারেননি- তাই শুধু বিদ্ধই হননি- প্রাণটাও শেষ করেছেন! জীবিত যীশুর সহমর্মীতা না জুটলেও ক্রুশবিদ্ধ যীশুর আজ পুজো জুটে, ভক্তি জুটে অঢেল! কিন্তু ক্রুশুবদ্ধ আমাকে সভ্যতা ডাস্টবীনের নীচে পুঁতে রাখত..................!
সভ্যতার দায় বড় দায়!
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০৩
আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: অসংখ্য কৃতজ্ঞতা ভাই
ভালো থাকবেন।
২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪২
কলমের কালি শেষ বলেছেন: ছোট লেখার ভেতর সাংঘর্ষিকতাগুলো ভালো লাগলো ।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০৫
আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: এভাবেই আছি বেঁচে-বর্তে....
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন
৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৩
জেন রসি বলেছেন: পরাবাস্তব অনুভুতি।
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০৬
আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: জেন, এটি মোটেও পরাবাস্তব কোন কথা নয়, কোথাও কি ভুল হচ্ছে.. ?
এটি অতি বাস্তব একটি কাহিনী ও অনুভুতি
৪| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: অপূর্ব ------ অপূর্ব -----সুন্দর আর সাবলীল
০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৭
আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ লাইলী আরজুমান
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৫
আমিনুর রহমান বলেছেন:
গতকাল থেকে ৪ বার পড়েছি বুঝার জন্য। ভালোবাসা'র বিচ্ছেদ সম্পর্কে চমৎকার উপস্থাপন করেছেন।