নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি খুঁজিনি কখনো আকাশের মানে...

আফসানা যাহিন চৌধুরী

আমার পথচলা আমার পথে

আফসানা যাহিন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরও একটি হত্যার গল্প

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫০

**দৃশ্যপট ০১





বেশ বড় একটা মিছিল চলছে। মেয়েটা মিছিলের পেছনের দিকে। হাতে পতাকা ধরা। মিছিলটা এগিয়ে চলছে। স্লোগান মুখর। সতেজ, প্রাণোচ্ছ্বল কন্ঠগুলোতে ছলকে উঠছে তেজ। মেয়েটাও কন্ঠ মিলিয়ে সবার পেছনে হেঁটে যাচ্ছে। নির্বিকার। ভাবলেশহীন। আসলেই কী?

দেরী হয়ে গিয়েছিল তার। সময়মত আসতে পারেনি। অনেক দূরে জ্যামে আটকে থাকা বাস থেকে সে উঁচিয়ে ধরা প্ল্যাকার্ড আর পতাকা গুলো দেখতে পেয়েছিল; যেগুলো মৃদুমন্দ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে! ঝট করে নেমে পড়েছিল বাস থেকে। অসম্ভব দ্রুত পায়ে হেঁটে, জ্যাম টপকে এবং আরও অনেকটুকু হেঁটে শেষ পর্যন্ত মিছিলটা ধরতে পেরেছিল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সামনের দিককার ভীড়ে মেয়েটি দেখতে পেল ছেলেটিকে। গায়ে শীতল স্রোত বয়ে গেল মেয়েটির। বুকে একটা পুরাতন যন্ত্রণা। আজ সমুদ্র-নীল পাঞ্জাবী পরেছে ছেলেটা। চুল কাটলে তাকে কখনোই ভাল লাগেনা, তবু কেটেছে। পেছন থেকে তার ভারী শরীরটা দেখল মেয়েটা- কই, কোন পরিবর্তন নেই তো....! ঐ তো কানের লতি, ডানহাত- মুষ্টিবদ্ধ, শূণ্যে ঝাঁকিয়ে উঠছে...!

কেমন আছে সে?







**দৃশ্যপট ০২





একটা সমাবেশ। খোলা আকাশের নীচে। বক্তব্য চলছে। মেয়েটা বসেছে রাস্তায়- সমাবেশে। ছেলেটা একটা নীচু বেদীতে। বেদীটাই মঞ্চ। ছেলেটি সঞ্চালক। সঞ্চালনার বাকী সময়টায় বেদীতে উপবিষ্ট হয়ে থাকে সে। তারা দুইজন- মেয়েটা আর ছেলেটা বসেছে এক সরলরেখায়- মুখোমুখি!

সন্ধ্যার অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে মেয়েটা কেবল তাকাচ্ছিল ছেলেটার দিকে। তবে বিকেলের মরা আলোতেও যে সাহস দেখায়নি, তা নয়। ছেলেটাও তাকিয়েছিল মেয়েটার দিকে। কয়েকবার। বেশ কয়েকবারই!

মাঝখানে মেয়েটা একবার তার ঘাড়টা আনুভুমিক করে তাকিয়েছিল উপরে। আকাশের দিকে। দৃষ্টি থমকে গিয়েছিল মেয়েটির। অনেক উঁচুতে উড়ে যাচ্ছিল শুধু দুইটি কাক। দৃষ্টিসীমার আকাশের অর্ধেকটা ইউক্যালিপটাস গাছের দখলে। মাথার ঠিক ওপরেই আকাশের গায়ে কালো রঙের চারটা বিদ্যুতের তার। এক কোণে হালকা কমলা স্বর্ণাভ মেঘ। মেয়েটা কি বহুদিন পরে আকাশ দেখতে পেল? নাকী গোধুলী? আচ্ছা, কেমন আছে সে?







**দৃশ্যপট ০৩





একটা লোকাল বাসের ভেতর। প্রচন্ড ঠাসাঠাসি! “মেয়েদের সিটে” ঐ মেয়েটাও বসা। পেছনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে বাইরে। কিছু দেখছে না সে। তাহলে? কিছু ভাবছে কি? মাথাটা পুরো ১২০ডিগ্রী কোণে ঘুরানো ভেতরের ভীড় থেকে। ভাদ্রমাসের সন্ধ্যা রাতের বাতাস মেয়েটার ঘর্মাক্ত মুখে এসে লাগছে। চোখের আইবল অনবরত নাড়াচাড়া করছে চারপাশে, উপরে নীচে- কিন্তু সে কিছু দেখছে না! কপাল অল্প করে কুঁচকানো। হঠাৎ দেখা গেলো তার কপাল আরও কুঁচকে গেছে। মেয়েটা কামড়ে ধরেছে তার ঠোঁট। কিছু একটা গলার কাছে দলা পাকিয়ে ঠেলে উপরে উঠে এল। খানিকবাদে সে ওড়না টেনে চোখ মুছল অতি দ্রুত। বাসভর্তী মানুষ যেন টের না পায়। কিন্তু.........

কেমন আছে সে?







**তারপর





মধ্যরাত।

বাসায় কেউ জেগে নেই। আমার ঘরে বাতি জ্বলছে। আমি বসে আছি বিছানায়। হাতে ফোন। কিছু অক্ষর লেখা হল সেখানে। লেখা হল-

“একটা প্রশ্ন করতে খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ঐ সময়- প্রায়ই করে- কেমন আছ তুমি?”

অক্ষরগুলো অনেক্ষণ দেখলাম। পড়লাম। তারপর মুছে দিলাম। তাদেরকে বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গে ভাসিয়ে দেবার অসহ্য ইচ্ছে থাকলেও পাঠালাম না তোমাকে। কী দরকার? থাক। যখন সামনাসামনি ছিলাম, তখনও যদি পাঠাতাম একটা অর্থ হত; এখন এর কোন কার্যকারিতা নেই। আকুলতা? হাহাহাহাহাহাহা...... এমন কত রাত কাঁথা মুখে ঠেসে ধরেই পার করে দিলাম! এ আর এমন কী! তাছাড়া এক সরলরেখায় বসেও যদি নিজেকে সংবরণ করতে পারি, তো এখন ব্যাপারটা রীতিমত ডালভাত!!

তার চেয়ে বরং ঐ ছবিটা মগজের ভেতর থেকে বারবার চোখের সামনে আনি- ঐসময় তুমি অনেক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে ছিলে! তোমার নতুন উইন্ডোজ ফোন। মুখে উদাস বুদ্ধিজীবি ভাব ধরে অনেক নাড়াচাড়া করছিলে ফোনটা। হয়ত বোঝাতে চাচ্ছিলে, “এখন টেক্সট করতে পারবে। ফোন ফ্রী আছে। আমিও ফ্রী..........! টেক্সট কর।” সেই যে গত জন্মে যেমন বোঝাতে...... “সস্তা” হঠাৎ আবেগকে প্রশ্রয় না দিয়ে, নতুন করে কোন হাঙ্গামায় না গিয়ে অথবা স্বেচ্ছায় আবার কোনপ্রকার অপমানিত না হয়ে আমি বরং হাইপোথেটিকালি সুখী হই, আহ্লাদতি হই!

যে তৃষ্ণা চোখে, বুকে, হাতের আঙুলে- সে আর কখনো মিটবার নয়.....কিন্তু তাকে আমি আর অপমানিতও করতে দেবনা। তোমার জন্য আমার আর কেবল এটুকুই আছে। এই তৃষ্ণাটুকু........................................

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:০৩

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: কী দরকার? থাক>>??

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৩

আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: থাক........




ধন্যবাদ ভাই :)

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১২

আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
দারুণ।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪১

আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: পাঠে ও মন্তব্যে ধন্যবাদ আলাউদ্দিন ভাই :)

৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৮

ডি মুন বলেছেন: বেশ ভাল হয়েছে।
আরো ভালো লিখে চলুন।

শুভকামনা রইলো

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ডি মুন :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.