নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রষ্টা আর তার সৃষ্টীকে ভালবাসি। অপ্রয়োজনের চেয়ে প্রয়োজনে থাকতেই স্বাছ্যন্দ্য বোধ করি। অন্যায় এবং অন্যায় কারী কে ঘৃনা করি। প্রকৃতিকে ভালবাসি আর কৃত্রিমত্তা কে অপছন্দ করি। যা আছে তাতেই সুখ খোজার চেষ্টা করি।

ডা: মেহেদী হাসান

ডা: মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ গ্রেট জার্নি টু সেন্টমার্টিন

১৫ ই মার্চ, ২০২১ রাত ৯:৫৯

২৫ জানুয়ারি ২০১৯ সকালের সূর্য টা উদয় হয়েছিল কিছু মানুষের অনেক দিনের লালিত একটা স্বপ্নকে সত্যি হিসেবে রুপ দেবার জন্য।
বলছিলাম "এ গ্রেট জার্নি টু সেন্টমার্টিন " এর কথা

সতর্কীকরণঃ লম্বা ভ্রমন কাহিনী জেনে শুনে পড়তে নামবেন।

যা বলছিলাম, ঢাকা থেকে (বিভিন্ন জেলার), ১০ জন, টেকনাফ থেকে (পৃথক পৃথক জেলার) ৩ জন এই মোট ১৩ জন। জন হিসেবে ১৩ হলেও উদ্দেশ্য ছিল একটাই, " নীল জলের পথে ফ্রেন্ডলী ট্রাভেল গ্রুপের সাথে"

যাইহোক, কেয়ারি ঘাটে যথাসময়ে উপস্থিত, টিকেট পাস নিয়ে জাহাজে উঠে পরলাম, উঠে তো পুরো থ হয়ে গেলাম, এত্ত এত্ত মানুষ যে পা ফেলবার জায়গাটুকুও নেই বসার চিন্তা সেতো বিরাট বিলাসিতা। যাই হোক অনেক কষ্ট করে জাহাজের একেবারে ফ্রন্ট ডেস্ক এ জায়গা নিলাম সবাই, আমি চলে গেলাম জাহাজের একদম সামনের জায়গাটায় যেখান টায় টাইটানিকের জ্যাক আর রোজ দাড়িয়েছিল, জায়গাটা ঠিকি পেয়েছিলাম তবে সেখানে শুধু জ্যাক ই ছিল, ছিলনা কোন রোজ।

এনি ওয়ে, যথা সময়ে জাহাজ ছাড়ল, শুরু হল সৃষ্টিকর্তার অসীম জ্ঞানের স্বাক্ষর দর্শন আর মুগ্ধ হবার পালা। এক পাশে ঘন সবুজ উচু উচু পাহাড়ে ঘেরা মিয়ানমার বর্ডার, অপর পাশে টেকনাফের নয়ানভিরাম শ্যামল পাহাড় আর মাঝে নাফ নদীর বুক চিরে বেয়ে চলছি একটা বিশাল আকৃতির জাহাজের এক্কেবারে ফ্রন্টে, এক মুহুর্তের জন্য ভাবতে খুব ইচ্ছেই হচ্ছিল যে, এই মুহুর্তে পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ টা আমি, মুগ্ধতার পালা শুধু ভারীই হতে লাগল। আমি এর আগেও সেন্ট মার্টিন গিয়েছিলাম, তবে সেটা ৭-৮ বছর আগে স্মৃতি গুলো আবছা আবছা মনে আছে, টেকনাফ জেটি, শাহপরীর দ্বীপ জেটি ক্রস করার পর মাইকে ক্যাপ্টেন সাহেবের ঘোষনা এল আমরা অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই সাগরে প্রবেশ করব। তার কিছুক্ষন পরেই সাগরের নীল জল দেখে ভীষন অবাক হচ্ছিলাম, প্রখর সূর্যের আলো সরাসরি পড়ছে সমুদ্রের নীল জলে আর জাহাজের অবাধ ছুটে চলার পথে মনে হচ্ছিল যেন হিরে আর মুক্তোর দানা পড়ে আছে সমুদ্রের গভীর জলে। সেই সাথে সানী ভাই এর সহ সবাই গলা ছেড়ে গান ধরলাম " ওরে নীল দরিয়া, আমায় দে রে দে ছাড়িয়া...." আহা!! সে যে কি প্রশান্তি তা একমাত্র আমরা কজনই টের পেয়েছিলাম। তার পর একে একে , বকুল ফুল, নিথুয়া পাথারে, পাগল মন, মিলন হবে কত দিনে... আরও কত কত গান এর স্মৃতি চারন। সমুদ্রের বুক বেয়ে ভেসে চলছি ধীরে ধীরে বাংলাদেশের স্থল সীমা চোখের আড়ালে চলে গেল। তার মানে বাংলাদেশের ভূ - সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি, এক পাশে সেই আগেরি মত রয়ে গেল মিয়ানমারের সেই উচু উচু পাহাড়, মাঝে মাঝে তাদের কিছু স্থাপনাও চোখে পড়ছিল, কিছু মন্দির, বাড়ি ঘড়, একটা ব্যাপার খুব অবাকই হলাম যে এত গভীর সমুদ্রের মাঝেও তারা তাদের ভূ-খন্ডের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছিল বেশ সজাগ! কাটা তারের বর্ডার ছিল শত শত মাইল জুড়েই।


সমুদ্রে আসার পর বড় বড় কিছু ঢেউয়ের মাত্রা অনভব করতে শুরু করলাম, এত বড় জাহাজ হওয়া সত্বেও তা মাঝে মাঝে দুলতে শুরু করল। সেই মজা পাচ্ছিলাম আমি, প্রায় ২ঃ৪৫ মিনিট নদী সমুদ্র পাড়ি দেবার পর সেন্টমার্টিন এর কিছু অংশ দেখতে পাচ্ছিলাম, সে কি দৃশ্য!! আহা!! আহহহায়া!!
জাহাজ ঘাটে ভিড়ল, ধীরে ধীরে নামলাম, নেমেই একটা সেল্ফি নিয়েই হাটা ধরলাম আমাদের বুকড করা রিসোর্ট " বেলাভূমি " র উদ্দেশ্যে। রুমে গিয়ে জামা কাপড় জাস্ট চেঞ্জ করে জুম্মার সালাত আদায় কর সবাই চলে গেলাম লাঞ্চ করতে, আলুভর্তা, সবজি, মাছের ভর্তা, আর টুনা মাছ দিয়ে মেরে দিলাম একটা শর্ট। সেই খাওয়া হইছে, সবাই ছিলাম ডগ হাংরি, যাই খেয়েছি অমৃতের মত লেগেছে।
খাওয়া শেষ, যেখানটায় বসেছিলাম খেতে সেখান থেকে সমুদ্র স্পষ্টই চোখে পড়ছিল, কখন নামব তর সইছিলনা, খেয়েই নেমে গেলাম বিচে, কিছুক্ষন গ্রুপ ফটোশেসান শেষে নেমে গেলাম নীল জলে, সেন্টমার্টিনে প্রায় সব দিকেই প্রবাল পাথরে ভরা, প্রবাল পাথরের গায়ে এক ধরনের ধারালো শামুক টাইপের কিছু একটা থাকে যা আপনার হাত পা কাটার জন্য যথেষ্ট, ইতিমধ্যে আমাদের বেশ কয়েকজনের হাত কেটেও গেছে, উত্তর পূর্ব দিকটায় প্রবাল পাথর কিছুটা কম সেখানে সবাই মন ভরে সাগরের নীল জলে স্নান করে নেয়। আমরা সবাই ইচ্ছা মত দাপটালাম পানিতে, প্রায় ২ ঘন্টারও বেশী সময় গোসল করার পর, প্ল্যান ছিল বিকেলে সাইকেলে করে পুরো সেন্টমার্টিন দ্বীপ টা দেখব, প্ল্যান থাকলেও তা আর করা হয় নি সেদিন, কারন এত পরিমান পর্যটক ছিল যে কোন সাইকেল পাওয়া যাচ্ছিল না।

কি আর করার হেটে হেটেই সূর্যাস্ত উপভোগ করলাম, তারপর হেটে হেটে প্রায় এ তৃতীয়াংশ ঘুরলাম আমরা চারজন, আমি জয়ন্ত, সাইফুল, আর আশীক ভাই, পথি মধ্যেই সানি ভাইএর ফোন, বারবি কিউ অর্ডারড, ৮ টার দিকে শুরু হবে, রুমে গিয়ে কিছুক্ষন যে যার মত রেস্ট নিলাম, আশিক ভাই তো সে রকম এক ঘুম মেরে দিল, বার বি কিউ- পার্টি টাও মিস করল, ৩ কেজি ওজনের ইয়া বড় একটা কোরাল মাছ কাটা হল। পরোটা আর কোরাল মাছের বার বি কিউ দিয়ে মুটা মুটি ভালই একটা ডিনার হয়ে গেল। এবার যথারিতী নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু গ্রুপ ট্যুর সো, এখানে বেশীর ভাগই থাকে অচেনা মুখ, সবার সাথে পরিচয় পর্ব + সাথে পাবে একটি করে প্রশ্ন করার সুযোগ। রাতে জোয়ার শুরু হয়েছে, বীচ এ চেয়ার নিয়ে বসে সবাই পরিচয় পর্ব শেষে প্রস্তাব এল কিছু একটা খেলার আয়োজন করার, প্রস্তাব পাশ হল বালিশ খেলা, যেহেতু বালিশ নেই তাই চিপস কে বালিশ হিসেবে ট্রিট করে খেলা শুরু, পুরস্কার ছিল যে জিতবে এই চিপস এর প্যাকেট টা তারই থাকবে। যেহেতু মেয়েরা ভাল পারে ফলাফল তাই হল, তারপর শুরু হল গানের কলির শেষ অক্ষর দিয়ে গান খেলা। দু দলে ভাগ হয়ে গিয়ে খেললাম,১২ টা পর্যন্ত নানান রকমের গান খন্ড খন্ড খেলার পর চা খেয়ে চলে গেলাম রুমে, অন্নেক টায়ার্ড এবার ঘুম হবে, ভোরে আবার সাইকেল নিয়ে সুর্যোদয় সাথে পুরো সেন্টমার্টিন চক্কর হব।

ঘুম থেকে উঠে ফজর এর সালাত জামাতের সাথে আদায় করে, সাইকেল নিয়ে চলে গেলাম জেটিতে সেখানে গিয়ে পুর্ণ সূর্যোদয় উপভোগ করলাম, অসাধারন ছিল দৃশ্য টা, সুবহানাল্লাহ!!

তারপর আমরা চার জন মিলে যতটুকু সম্ভব বিচে সাইক্লিং করলাম, ডঃ হুমায়ন আহমেদ এর সমুদ্র বিলাস দর্শন শেষে, সাইক্লিং করে অনেক টায়ার্ড, ডাব খাবো..!

চার জন মিলে ডাব খেলাম, ৭ঃ৩৫ বাজে নাস্তা সেরে রওনা দিতে হবে ট্রলার যোগে ছেড়া দ্বীপ যাব সবাই।
নাস্তা খেয়ে ট্রলার ভাড়া করলাম ছেড়া দ্বীপের জন্য, সেন্টমার্টিন থেকে ৩০-৪০ মিনিট এর মত লাগে পৌছতে। সমুদ্র থেকে পুরো সেন্টমার্টিন কে দেখতে দেখতে ছেড়া দ্বীপে গিয়ে পৌছলাম, ছেড়া দ্বীপের ৪-৫ মিনিট আগেই ট্রলার থেকে নেমে ⛵ নৌকায় করে যেতে হয়, সেটা ছিল অন্যরকম লেভেলের এডভেঞ্চারাস। নৌকা একবার এদিকে কাত হয় তো ঐ দিকে, মনে হচ্ছিল যেন এই বুঝি ডুবে গেল। যাক, ছেড়া দ্বীপে এসে পানির স্বচ্ছতা দেখে খুশিতে মন লাফিয়ে উঠল প্রায় ৫ ফিট গভীরের প্রবাল, মাছ সহ সব কিছু পরিস্কার দেখা যাচ্ছিল..! ছেড়া দ্বীপে কিছুক্ষন ফটোসেশান করে, খুব ঝাপাতে ইচ্ছে হল স্বচ্ছ নীল জলে। সঙ্গী বেশ কয়েকজনকে অফার করলেও সম্মতি দিলনা, আশিক ভাই সহ নেমে গেলাম, বেশ কিছুক্ষন ঝাপাঝাপি, হাত পা ছেড়ে ভেসে থাকা, আর ঢেউয়ের সাথে দোল খাওয়া, আহা!! আহ হা হা!! কি যে ফিলিংস!!

১১ঃ৪৫ এবার ব্যাক করার পালা ছেড়া দ্বীপ থেকে, ফেরার পথে ট্রলার এ অনাকাঙখিত ঝামেলা, সবাইকে অন্যরকম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলল। যাই হোক আবারো ট্রলার এ ভাসতে ভাসতে সেন্টমার্টিনে চলে এলাম। ইচ্ছা ছিল জাহাজে উঠার আগে আরও কিছুক্ষন সেন্টমার্টিনের স্বচ্ছ জলে ঝাপিয়ে নিব, তার সুযোগ আর পাইনি, লাঞ্চ, ব্যাগ সব গোছাতে গোছাতে তিনটে বেজে গেল, চলে যেতে হবে, অস্থির ভাবে কেটে ছিল দুটো দিন, সবাই চেক আউট করে সব কিছু নিয়ে জাহাজে উঠে পড়ি, সাদা গাংচিলের সাথে মজা করতে করতে এসে পড়ি জাহাজ ঘাট টেকনাফ এ, টেকনাফ যাবো গন্তব্য "নিউ গার্ডেন আবাসিক" এ আমরা ১২ জন, জয়ন্ত জাহাজ ঘাট থেকে লিভ নিয়েছে তার গিয়ে নাইট শিফট ডিউটী, এক সাথে ১২ জনের জন্য লেগুনা পাওয়া মুশকিল এই পিক টাইমে, ভাগ্য গুনে একটা পেয়েও গেলাম, সবাই খুশিতে দুলতে দুলতে উঠে পরলাম, কিলো খানেক যাওয়ার পরই, ইঞ্জিন ডাউন, এই নির্জন জায়গায় মানুষের আনাগোনা তেমন নেই বললেও চলে গাড়িও সেই যত সামান্য, এখন কি উপায় হবে, মাঝপথে কি আস্তো একটা খালি গাড়ি পাওয়া যাবে?? কেউ কেউ মজা করতে শুরু করল, ভূত এফ এম এর কাহিনী, ব্লা ব্লা ব্লা..

অবশেষে আরেকটা লেগুনা ম্যানেজ করে হোটেলে চেক ইন নিল সবাই, আমি হোটেলে উঠেই সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আর বাকি সবাই পরদিন মেরিন ড্রাইভ হয়ে কক্সবাজার ঘুরে দেন ঢাকা ব্যাক।

সব কিছু মিলিয়ে দু একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বেশ মজাই হয়েছে। সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির অপার সৌন্দর্য অবলোকন করে মনের অজান্তেই বলে উঠি

সুবহানাল্লাহ..!!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টের সাথে কিছু ছবি দিয়ে দেন। পোষ্ট হিট হবে।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:১৪

ডা: মেহেদী হাসান বলেছেন: সময়ের অভাবে দেওয়া হয় নি। ধন্যবাদ পরামর্শের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.