নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রষ্টা আর তার সৃষ্টীকে ভালবাসি। অপ্রয়োজনের চেয়ে প্রয়োজনে থাকতেই স্বাছ্যন্দ্য বোধ করি। অন্যায় এবং অন্যায় কারী কে ঘৃনা করি। প্রকৃতিকে ভালবাসি আর কৃত্রিমত্তা কে অপছন্দ করি। যা আছে তাতেই সুখ খোজার চেষ্টা করি।

ডা: মেহেদী হাসান

ডা: মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিউম্যানেটেরিয়ান ক্রাইসিস ও আমার সন্ধি!

২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৫০

সিয়েরা লিওন পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ যা প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর । দেশটি ১৯৬১ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায়। ১৯৯১ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধ চলে, যাতে প্রায় ৫০,০০০ বেশী মানুষ প্রান হারায়। অন্যান্য যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের মতই সেখানে হিউম্যানেটেরিয়ান ক্রাইসিস দেখা দেয়।

২০০১ সাল, আব্বু বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অংশ হয়ে জাতীসংঘ শান্তী রক্ষী বাহিনীতে যোগ দিতে সিয়েরা লিওনে যান। গৃহ যুদ্ধ থেকে মুক্তির আগে বাংলাদেশ থেকে সেটাই ছিল সিয়েরা লিওনে জাতীসংঘ শান্তী রক্ষী বাহিনীতে অংশ নেয়া শেষ মিশন কারন তার ঠিক এক বছর পর ২০০২ সালে অফিশিয়ালি সিয়েরা লিওনকে গৃহ যুদ্ধ মুক্ত ঘোষনা করা হয়। আব্বুর ভাষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তী রক্ষী বাহিনী সম্পূর্ন ভাবে যুক্ত ছিল সিয়েরা লিওনে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে।

২০০২ সালে আব্বু মিশন শেষে দেশে ফিরে আসেন, আব্বুর মুখ থেকে প্রায়ই সে দেশের বিভিন্ন গল্প শুনতাম তাতে যেমন থাকত সে দেশের মানুষের দুর্দশার কথা ঠিক তেমনি থাকত সেখানকার অতি প্রাকৃতিক ধন সম্পদের কথা।

হিউম্যানেটেরিয়ান শব্দ টার মানে তখন বলতে গেলে বুঝতামই না, তারপর যখন থেকে বুঝতে শিখি, শব্দ টা বেশ আকর্ষন করত আমায়। ছোট বেলা থেকেই আব্বুর সৈনকীয় লাইফ স্টাইল আমার মনে ধরে খুব। কোয়ার্টার এ থাকা অবস্থায় তাদের টাইমলি গোছালো জীবন যাপন দেখে সব সময় বড় হয়ে সৈনিক হতে চাইতাম। যদিও আমার এই এসোর্টেড লাইফের পুরোটার পিছনেই আব্বুর প্রভাব সবচেয়ে বেশী।

যাক সে কথা, ২০১৫ সাল প্রফেশনাল লাইফে ইন করি, বেশ ভাল অবস্থান বছর খানেক এর মাথায় প্রমোশান, স্থায়ী করন, যাবতীয় সুযোগ সুবিধা নিয়ে বেশ ভালোই করছিলাম বলা চলে। কিন্ত মনের কোথায় যেন ঠিক একটা শান্তি খুজে পাচ্ছিলাম না, কিছু একটার যেন অভাব বোধ করতাম। সব কিছু থাকার পরও কেমন যেন নিরঙ্কুশ হয়ে পড়ছিলাম।

২০১৭ সাল মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর জাতীগত নিধন শুরু হল, সে বারের রোহিঙ্গা ইনফ্লাক্সে, লাখে লাখে রোহিঙ্গা রিফিউজি বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করল, কক্সবাজারের টেকনাফ ছোট একটি জেলা তার উপর এই লাখ লাখ মানুষের জায়গা, বাসস্থান, খাবার, চিকিৎসা এবং অন্যান্য জরুরী সেবা দেয়া, রীতিমত ডিসেস্টার এ পরিনত হল।

শুরু হল “হিউম্যানেটেরিয়ান ক্রাইসিস”, টিভির পর্দায় তাদের এসব দুঃখ কষ্ট দেখে খুব অসহায় বোধ করতাম, মনে মনে ভাবতাম কিছু একটা যদি করতে পারতাম তাদের জন্য, তাদের এই দুরঅবস্থায় যদি পাশে দাড়াতে পারতাম! ঠিক সে সময় টাতে “সেভ দ্যা চিল্ড্রেন” (প্রানের অর্গানাইজেশান) প্রানের বললাম কারন আমার পেশাগত জীবনের হোয়াইট এলিফ্যান্ট বলি আমি, সুযোগ করে দেয়।

কোন রকম না ভেবেই সব কিছু ছেড়ে চলে আসি এই রোহিঙ্গা রেস্পন্সে হিউম্যানেটেরিয়ান ক্রাইসিসে যোগ দিতে। ২০১৮ এর শুরুর দিকটাতে প্রচুর কষ্ট হত, নিজেকে অত সব প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে, কিন্তু দিন শেষে সেই পরিতৃপ্তি নিয়ে বাসায় যেতাম, যেটা আমি মনে মনে খুজে ফিরতাম।

একটা সময় পর মনে হল দিস ইজ মাই প্লেস,যেটা আমি বিলং করি। হিউম্যানেটেরিয়ান ক্রাইসিসে টিকে থাকার যত প্রশিক্ষন আর কৌশল আছে তা রপ্ত করার চেষ্টা করি। তারপর ভাবতে থাকি নিজেকে আরও কোন ভাবে মেলে ধরা যায় কিনা, হিউম্যানেটেরিয়ান ফিল্ডে আর কোন জায়ান্ট আছে কিনা যেখানেো নিজেকে আরও বেশী ডেডিকেট করতে পারব। ঠিক এমন সময়ে পাশে দাড়ায় মাই রেস্পেক্টেড অর্গানাইজেশান “মেডেসিন্স সেন্স ফ্রন্টিয়ার্স” হিউম্যানেটেরিয়ান শব্দ টাকে নতুন ভাবে বুঝতে শিখায় এমএসএফ। গভীর ভাবে বুঝার ট্রাই করি আসলে হিউম্যানেটেরিয়ান রেস্পন্স কি, হোয়াট সুড বি দ্যা পারপাস!

আমি চির কৃতজ্ঞ এমএসএফ এর কাছে, আমাকে নতুন ভাবে চক্ষুদান করার জন্য, নিজেকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, হিউম্যানেটেরিয়ান প্র্যাক্টিস সম্পর্কে জানার জন্য যে সুযোগ আমাকে করে দিয়েছে তার জন্য আমি চির ঋণী। আলহামদুলিল্লাহ দেখতে দেখতে জোড়া বছর হয়ে গেছে আমাদের সম্পর্ক।

ভালবাসার আর শ্রদ্ধার অর্গানাইজেশান কে কিছু দিতে চাই, সে জন্য অনেক কিছু জানতে হবে, থিওরেটেক্যালি, প্রাক্টিক্যলি এবং স্ট্রেটেজিক্যালি অনেক কিছু রপ্ত করতে হবে। তাই ভাবলাম একটা বিরতি নেই, আবার ফিরে আসব এমএসএফ এর সেই অবারিত আকাশে যেখানে ত্যাগেই প্রকৃত সুখ, যেখানে কষ্টের অনুভূতি শুন্য আর সুখের অনুভূতি প্রখর।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৫১

আখেনাটেন বলেছেন: মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য...........একটু সহানুভুতি কি.............সঠিক জায়গাতেই আছেন। মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থকতা তো ওখানেই।

আপনার জন্য শুভকামনা।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:০০

ডা: মেহেদী হাসান বলেছেন: অসংখ্যা ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্য এবং শুভকামনার জন্য।

২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:০০

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: Doctors without Borders... দারুণ উদ্যোগ।
শুভকামনা ডা. মেহেদী হাসান।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:০২

ডা: মেহেদী হাসান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৪১

আল ইফরান বলেছেন: আল্লাহ মানবসেবার আরো অবারিত সুযোগ আপনার জন্য উন্মুক্ত করে দিক।
শুভকামনা রইলো আপনার পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের উৎকর্ষের জন্য।

২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:০৩

ডা: মেহেদী হাসান বলেছেন: আপনার মন্তব্য সত্যিই অনুপ্রেরনা যুগিয়েছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:১১

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: আফ্রিকার দেশগুলো ঠিক কেন বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় এতটা পিছিয়ে আছে সেটা নিয়ে সবার কাজ করা উচিত। কিছুদিন আগেই ফ্লাইং আই হসপিটাল নিয়ে ইউটিউবে দেখে ভীষণ ভালো লেগেছে। আপনার পথচলা আরো সুন্দর আর শুভ হোক।

৫| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ২:২১

ডা: মেহেদী হাসান বলেছেন: বিষয়টা অনেক টা ফার্ষ্ট ক্লাস কান্ট্রি গুলোর দাবার গুটি বলতে পারেন, তারা সব সময়ই এমন কাউকে আফ্রিকান দেশ গুলোর প্রধান করে রাখে যাকে দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে, করাপ্টেড না হলে আফ্রিকান দেশ গুলো নিঃসন্দেহে ধনীদের ও ধনী থাকত অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার শুভকামনার জন্য।

৬| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ২:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.