নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রষ্টা আর তার সৃষ্টীকে ভালবাসি। অপ্রয়োজনের চেয়ে প্রয়োজনে থাকতেই স্বাছ্যন্দ্য বোধ করি। অন্যায় এবং অন্যায় কারী কে ঘৃনা করি। প্রকৃতিকে ভালবাসি আর কৃত্রিমত্তা কে অপছন্দ করি। যা আছে তাতেই সুখ খোজার চেষ্টা করি।

ডা: মেহেদী হাসান

ডা: মেহেদী হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতে করোনা ঝড় ও নতুন ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট !

২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:৫৫

ভারত বর্তমানে কোভিড ঝড়ের চরম প্রতিকূল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এপ্রিলের ২৫ তারিখ (রবিবার) পর্যন্ত ভারতে সব মিলিয়ে ১ কোটি ৭০ লাখেরও বেশী কোভিড রোগী শনাক্ত করা হয়েছে যা কোভিডে আক্রান্ত রোগীর দিক থেকে সর্বোচ্চ থাকা দেশ ব্রাজিলকেও অতিক্রম করেছে। শুধু গত চার দিনেই এই উপমহাদেশে ১ কোটিরও বেশী কেস শনাক্ত করা হয়েছে। শনিবার ২৪ এপ্রিল ৩,৪৬,৭৮৬ টি কোভীড রোগী শনাক্ত হয়েছিল, এবং তার পর দিন রবিবার ২৫ এপ্রিল শনাক্ত হয়েছিল ৩,৪৯,৬৯১ টি সে সাথে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ২৭৬৭ জন। হাসপাতাল গুলোতে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিয়েছে, এবং চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষারত থাকা অবস্থায় বহু রোগী মারা যাচ্ছে।

অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে ভারত সারা বিশ্বে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফী’র বর্ননায় ভারতে চলমান নতুন ওয়েভ মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এ যাবত পর্যন্ত সবচেয়ে মারাত্নক। দিল্লী সহ ভারতের অনেক মেগাসিটিগুলোতে চলছে লকডাউন। ভারতের সাথে বিশ্বের অনেক দেশ এখন আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে।

করোনা ভাইরাসের যে ভ্যারিয়েন্টস গুলো সবচেয়ে বেশী ছড়িয়ে পড়ে বা বেশী মানুষকে আক্রান্ত করে তার মধ্যে যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল এবং দক্ষিন আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্ট গুলো অন্যতম। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের যে ভ্যরিয়েন্ট টি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং সবচয়ে বেশী উদ্বেগ দেখা দিয়েছে তা হলো “ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট”

চলুন তাহলে ইন্ডিয়ান ভ্যরিয়েন্ট সম্পর্কে এখন পর্যন্ত আমরা কি কি তথ্য জানতে পেরেছি সে বিষয়ে এক নজর দেখে নেইঃ

প্রঃ ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট নামে ডাকা হয় কেন?
বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্ট টি সর্ব প্রথম ভারতে শনাক্ত করা হয় ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর। প্রফেসর শ্যারন পিকক (পাবলিক হেলথ এন্ড মাইক্রোবায়োলোজি, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যাম্ব্রিজ) এর বর্ননায় ১৯ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত আরো প্রায় ২১ টি দেশে এই জিনোমটি শনাক্ত করা গিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক পাওয়া গিয়েছে ভারতে এবং তার পরের অবস্থান গুলোতেই আছে যুক্ত রাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র, যে কারনে এই ভ্যারিয়েন্ট কে ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট নামে বলা হয়ে থাকে।

প্রঃ এই ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়ান্ট অর্থাৎ বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্ট এর কতগুলো মিউটেশন রয়েছে?
বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্ট এর কমপক্ষে ১৩ টির মত (কারো কারো মতে ১৫ টি) মিউটেশান রয়েছে যেখানে স্পাইক প্রোটিনের সাথেই দুটি সুনির্দিষ্ট মিউটেশন রয়েছে। স্পাইক প্রোটিনের সাথে মিউটেশন দুটি হল E484Q এবং L452R। স্পাইক প্রোটিনের এই মিউটেশন গুলো এই ভ্যারিয়েন্ট এ পাওয়া নতুন কিছু নয়, তবে দুটো মিউটেশন একসাথে একই ভ্যারিয়েন্ট এ পাওয়া উদ্বেগজনক। তৃতীয় আরেক টি মিউটেশন লক্ষ্য করা গেছে যাকে বলা হচ্ছে P681R. প্রফেসর উইলিয়াম এ হ্যসেলটিন (হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল) এর মতে এই ধরনের সম্মিলিত মিউটেশন গুলো এই ভ্যারিয়েন্টকে অধিকতর ঝুকিপূর্ণ করে তুলেছে।

প্রঃ এই ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট কে নিয়ে এত উদ্বেগ এর পিছনে কি জড়িত?
যে কোন ভ্যারিয়েন্টকে “ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন” বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে মূলত তিনিটি জিনিসের উপর ভিত্তি করে। প্রথমত আক্রান্ত করার/ ছড়িয়ে পরার ক্ষমতা, দ্বিতীয়ত ভিরুলেন্স অর্থাৎ তাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রবণতা, তৃতীয়ত ইতিপূর্বে কোভিডে আক্রান্ত ব্যাক্তি অথবা কোভিড ইমিউনড অর্থাৎ যারা টিকা নিয়েছেন তাদের কে পুনরায় আক্রান্ত করার বা টিকার কার্যকরিতা নষ্ট করার ক্ষমতা।
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল খবর যে, এমন কোন ভ্যারিয়েন্টই আবিষ্কৃত হয়নি যাতে উপরেউল্লেখিত তিনটি বৈশিষ্ট্যই রয়েছে। এ যাবত পর্যন্ত সবচেয়ে উদ্বেগপূর্ন যে ভ্যারিয়েন্ট তা হলো যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট কারন এটি ছড়িয়ে পড়ে খুব দ্রুত যা ৫০% এরও বেশী এবং এতে আক্রান্ত হয়ে মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির প্রবনতাও বেশী।

প্রঃ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত টিকা এ ধরনের ভ্যারিয়েন্ট এর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর?
সকল ভ্যাকসিন, বিশেষ করে এমআরএনএ (Pfizer and Moderna) ভ্যাকসিন এ সকল নতুন ভ্যারিয়েন্ট এর বিরুদ্ধে কার্যকর। প্রায় সকল ভ্যাকসিনই কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঝুকি কমায়। কোন ভ্যাকসিন টি সবচেয়ে ভাল এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডক্টর কামিল বলেন, সবচেয়ে ভাল ভ্যাকসিন হল সেটাই যা আপনি হাতের কাছে সবার আগে পাবেন কারন টিকার কার্যকরিতা পুরোপুরি শরীরে শুরু হতে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। যত তাড়াতাড়ি টিকা নেয়া যাবে ততই ভাল।

প্রঃ শুরু হওয়া এই নতুন ওয়েভ এর শেষ কোথায় / কতদিন পর্যন্ত থাকবে?
এটা কোনভাবেই আগে থেকে অনুমান করার সুযোগ নেই , তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশী স্পষ্ট তা হচ্ছে, বর্তমান সংখ্যা থেকে বুঝা যাচ্ছে, ভাইরাসটি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিনিয়ত ভাইরাসটি বিভিন্ন ভাবে পরিবির্তিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সকল বিজ্ঞানীরা একমত যে, খুব সহসায় ভাইরাসটি থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব না, অনেক টা অন্যান্য সাধারন ইনফ্লুয়েঞ্জা ফ্লু’র মত।

তবে খুশির বিষয় এই যে, বিজ্ঞানীদের অতিদ্রুত এইসব নতুন নতু ভ্যারিয়েন্ট গুলোকে শনাক্ত করার সক্ষমতা এবং পাবলিক পলিসি বাস্তবায়নে সাহায্য করা যুগান্তকারী বিপ্লব এনেছে। এখন মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যে কোন মূল্যে এ সকল ভ্যারিয়েন্ট গুলোকে চিহ্নিত করা এবং ভ্যাকসিন গুলোকে এর বিপক্ষে কার্যকরী তোলা। ভ্যাকসিন উৎপাদনে অপ্রতুলতা, ভ্যাকসিন উৎপাদনে কাঁচামালের অনিশ্চয়তার সাথে সাথে একটা বিষয় পরিষ্কার করেই বলা যাচ্ছে যে, ভাইরাসটি অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে খুব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে।

মেহেদী হাসান
সেন্টার ফর রিসার্চ ইনোভেশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট একশ্যান

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৩৪

শেরজা তপন বলেছেন: বেশ গবেষণালব্ধ বয়ান। ভাল লাগল।
* তবে যে সেদিন টিভি নিউজে আমি শুনলাম এটা ' বেঙ্গল ভ্যারিয়েন্ট'- ঠিক নয়?

২| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: করোনা কবে বিদায় নেবে? এটা কেন কোনো বিজ্ঞানী বলতে পারছে না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.