নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পর্কে কিছু জানার আগে পৃথিবী সম্পর্কে জানুন,আমাকে জেনে নিতে পারবেন। আমি এ পৃথিবীরই ক্ষুদ্র উপাদান!

ইগোযুক্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ়

অতি সাধারণ অথচ ভীষণ রকমের আত্মহংকারী।।

ইগোযুক্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ় › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফুটবল যুদ্ধে প্রাণ পাওয়া ‘প্রেমিকযুগল আর আপামর বাঙালীর গল্প’

০২ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৫

টুকটুকের সাথে জিশানের সম্পর্ক গত কয়েক মাস ধরে খুব খারাপ যাচ্ছে। একজন আরেকজনের কথা সহ্য করতে না পারার মতো অবস্থা। ক্ষুদ্র বিষয়ে শুরু হয়ে যেতো তুমুল ঝগড়া, চেঁচামেচি- চিৎকার! তবুও ঘন্টার পর ঘন্টা তারা চালিয়ে যেতো কথা বলা। জিশান ভুলে ফোন না দিলে টুকটুক রাগে ফেঁপে থাকতো! তবে হ্যাঁ, অনেকটা বিরক্তি চলে এসেছিলো তাদের একজনের প্রতি আরেকজনের। তাই বলে কথা হবে না? না, এ হতে পারেনা। কথা হতে হবে, ঝগড়া হতে হবে, চিৎকার হতে হবে, চলতে থাকবে বিশ্বাস- অবিশ্বাসের খেলা সাথে সন্দেহের তেঁতো গল্প! ফোনে কথা না বললে একজন আরেকজনকে যে ‘প্রায়োরিটি’ দিচ্ছে তা কিভাবে বুঝা যাবে, হুহ?

আচমকা চলে আসলো বিশ্বকাপ ফুটবল। জিশান ছোটবেলা থেকেই আর্জেন্টিনার অন্ধভক্ত, আর টুকটুক ব্রাজিলের। অবশ্য প্রেম শুরুর আগে জিশান জানতোনা টুকটুক ব্রাজিল সাপোর্ট করে। তবে বিশ্বকাপ আসতেই যখন জিশান জানায় সে আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করে তখনই টুকটুক সাফ জানিয়ে দেয় সে ব্রাজিলের ভক্ত! জিশানের কিছুটা সন্দেহ হলো, আদৌ টুকটুক ব্রাজিল ভক্ত কি না! জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা টুকটুক, ব্রাজিলের কয়েকটি খেলোয়াড়ের নাম বল তো দেখি?’ কয়েক সেকেন্ড থ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো টুকটুক! কিছুক্ষণের মধ্যে আমতা আমতা করে বলে ওঠলো, ‘নে…ইমার, উম! উম! মেসি’! শুনতেই অট্টহাসি দিয়ে ওঠলো অপর পাশ থেকে জিশান। তার আর বোঝার বাকি থাকলো না যে, বরাবরের মতো এবারও আর্জেন্টিনা শুনে টুকটুক ইচ্ছাকৃতভাবে বিপরীত দল হিসেবে ব্রাজিলের নাম বলেছে! ব্যাস দু’জনের মধে শুরু হয়ে গেলো ফুটবল নিয়ে যুদ্ধ।

নিয়ম করে তারা প্রতিদিন যে ঝগড়া করতো তা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে তবে এবার ইস্যুটা ভিন্ন। ফুটবল নিয়ে এখন বিশদ ঝগড়া চলে তাদের মধ্যে। জিশানের ফুটবল জ্ঞান উন্নত থাকলেও টুকটুক ছেড়ে দেয়ার মতো মেয়ে নয়। আটঘাট বেঁধেই সে যুদ্ধে নেমেছে। গুগল করে ইতিমধ্যে ব্রাজিলের প্লেয়ারদের নাম পরিচয় সে জেনে ফেলেছে। ইউটিউবে আগের খেলা দেখে ফুটবল সম্পর্কেও মোটামুটি আইডিয়া পেয়ে গেছে সে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের পছন্দের দলের জার্সি পড়ে ছবি দু’জনই দিয়েছে। কমেন্ট বক্সে একজন আরেকজনকে ট্রল করে মন্তব্য করছে, সাথে কাছের বন্ধুরাও ভারী করছে যার যার দল। একজন আরেকজনের পোস্টে হাসির রিএক্ট তো দিচ্ছেই, সাথে চলছে মন্তব্য বিনিময়। দেখা গেলো যখন তারা ফোনে সময় অতিবাহিত করতো সেই মধ্য রাতেই খেলা দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো তারা। প্রথম দু’দিন জিশান ভয়ে ফোন দিয়ে দিয়েছিলো টুকটুককে। কিন্তু অবাক হয়ে গেলো টুকটুকের কথায়। যে মেয়ে ফোন না দিলে ঘন্টা দু’য়েক ঝগড়া বাঁধিয়ে দিতো সে মেয়েই কিনা বলে, ‘জিশান,তোমাকে কে সাহস দিলো খেলার টাইমে ফোন দেয়ার? তুমি জানোনা ব্রাজিলের খেলা চলে? কিছু জরুরী থাকলে বলো নয়তো রাখছি!’ যাহোক, দু’জনই খেয়াল করলো বিশ্বকাপের ঝড়ে তাদের ‘বিরক্তি’ উড়ে গেলো, লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো ‘বিস্বাদ চেঁচামেচি আর যুক্তিহীন তর্কযুদ্ধ’। এখন বেশ চলছে এভাবেই!

ছদ্মনামের এই চরিত্র দু’টির সম্পর্কের এই রসায়ন মোটেই ‘নকল’ কিছু নয়। আমাদের আশেপাশে এরকম সহস্র কাপল অন্তত এই বিশ্বকাপকে উপলক্ষ করে পেয়েছে নতুনভাবে চলার পথ। শুধু কাপল কেন? চোখ মেলে দেখুন চারিদিকে এই এক মাসে কি যেন এক বিরাট পরিবর্তন। সম্পর্কের টানাপোড়নে থাকা দম্পতি একসাথে বসে খেলা দেখছে। একজনের আনন্দে আরেকজন আনন্দ পাওয়ার উৎসাহ পাচ্ছে। এদিকে বাচ্চারা মা বাবাকে দেখে পছন্দ করে নিচ্ছে তাদের প্রিয় দল। প্রাইভেট টিউটর ইদানীং অল্পতে বিরক্ত না হয়ে মেতে ওঠেন প্রিয় দলের গল্পে। যে শিক্ষক সকালে ক্লাসে গিয়ে ঝিমানো শুরু করতেন তিনি ক্লাস শুরুর আগেই শুরু করেন গত রাতের ম্যাচের বিশ্লেষণ। যে কলেজ পড়ুয়া বন্ধুরা নিজেদের অজান্তে শুরু করে দিতো নীল দুনিয়ার কুৎসিত গল্প, তারাই কিনা মেসি- রোনালদো যুদ্ধে খুঁজে পায় আনন্দ। ফুটপাত থেকে কেনা আর্জেন্টিনার নীল সাদা জার্সি ঘেমে ভিজে একাকার রিকশা চালক তাঁর প্যাসেঞ্জারের সাথে শুরু করে ফুটবল তর্ক। যে লেগুনার ড্রাইভার আগে ২ টাকার জন্য শুরু করে দিতো ঝগড়া, সে-ই কিনা একই দলের সমর্থক বলে ছেড়ে দিচ্ছে ২ টাকার লোভ। ভারতীয় সিরিয়াল দেখা মধ্য বয়সী মহিলা খেলা শুরুর আগেই চলে যান খেলার চ্যানেলে। কাজের বুয়া খেলা না বুঝেই বসে থাকে খেলা দেখার উৎসাহ নিয়ে! রাস্তার ধারে টিভি শোরুমের টিভি দেখতে থাকা মানুষের ভিড় দেখে আগে যে ম্যানেজার বিরক্তবোধ করে বন্ধ করে দিতো, সে’ই কিনা সবচেয়ে বড় স্ক্রিনের টিভি হাসিমুখে ছেড়ে দেয় মানুষের দেখার সুবিধার্থে! যে কবি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিচ্ছেদের কবিতা লিখে বিষাদ ছড়াচ্ছিলেন তিনিই কিনা ফুটবল নিয়ে এখন কাব্য লিখেন। যে ‘ইন্টোভার্ট’ মেয়েটা তার পছন্দের মানুষটিকে মনের কথা বলতে পারছিলোনা সে তার পছন্দের মানুষের প্রিয় দলের সাথে নিজের প্রিয়ত্ব মিলেছে দেখে সাহস করে বলে ফেললো, ‘আমিও আর্জেন্টিনা পছন্দ করি, তোমার সাথে মিলে গেলো।’ সারা বছর রনভীর কাপুর, ভারুন ধাওয়ান নিয়ে ক্রাস পোস্ট দেয়া মেয়েটি এখন পুরোদস্তুর ‘ফুটবল বিশারদ’ সোশ্যাল মিডিয়ায়! আর সেলিব্রেটিরা লেখালেখি ও পোস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে রাখছেন পরিমিতিবোধ; না জানি ভক্ত কমে যায় এই ভয়ে!

আমাদের দেশের ফুটবল ইতিহাস কখনও বিশ্বকাপ পর্যন্ত স্পর্শ করেনি। তবে একসময় তুখোড় কিছু খেলোয়াড় এসেছিলেন এদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। গল্প শুনেছি দেশের ক্লাব ফুটবল আগে বেশ জৌলুসপূর্ণ ছিলো। দেশি বিদেশি নাম করা ফুটবলাররা ঢাকার মাঠে খেলতেন। আবাহনী- মোহামেডান যুদ্ধ ব্রাজিল- আর্জেন্টিনা যুদ্ধ থেকে কম ছিলোনা কোন অংশেই। সেই পুরনো দিন আর নেই। তবে মনে পড়ে গেলো আরেকটি পুরনো দিনের কথা। বলছি উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের কথা। ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৮ সাল মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের স্বর্ণযুগ চলছিলো। সেসময় টানা পাঁচবার কলকাতা লিগ জেতার নজির গড়েছিল এ ক্লাবটি। প্রথম ভারতীয় ক্লাব হিসেবে ব্রিটিশ ফুটবল টিমের একচেটিয়া রাজত্ব ভেঙে দিয়েছিল মোহামেডান। তাদের সাফল্যের প্রেক্ষিতে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন একটি কবিতা। কবিতাটির নাম বিদ্রোহী কবি দিয়েছিলেন ‘মোবারকবাদ’। নিচের পঙক্তিগুলো সেই কবিতারই অংশ।

'যে চরণ দিয়ে ফুটবল নিয়ে জাগাইলে বিস্ময়,

সেই চরণের শক্তি জাগুক আঁধার ভারতময়।

এমনি চরণ-আঘাতে মোদের বন্ধন ভয়-ডর

লাথি মেরে মোরা দূর করি যেন, আল্লাহু-আকবর।'

বাঙালীর ফুটবল আবেগ কবির এই কবিতাতেও লক্ষণীয়। আবেগের সাথে জাতীয় কবি ব্রিটিশদের শোষণ বিরোধী বক্তব্যও যে দিয়েছেন তা স্পষ্ট। সুতরাং বলাই যায় যে , বাঙালীর ফুটবল আবেগ রক্তে মিশে আছে অনেক আগে থেকেই।

ফুটবল শুধু খেলা নয়; আর ফুটবল বিশ্বকাপ শুধু ফুটবল যুদ্ধ নয়। খেলা ছাড়িয়ে এখন এটি আত্মায় মিশে গেছে এদেশের কোটি মানুষের। ফুটবলে খেলার দিক দিয়ে আমরা ‘আনকোরা’ হতে পারি তবে ‘ফুটবল সমর্থক’ হিসেবে পরীক্ষা নিলে আমরা লেটার মার্ক পাবো এতে সন্দেহ নেই। অন্তত আত্মার সাথে আত্মার মিলনে সেতুবন্ধন হয়ে যাচ্ছে এই ফুটবল বিশ্বকাপ। আমাদের জন্য এই ফুটবল বিশ্বকাপ খুব দরকার ছিলো। অন্তত আমাদের হাঁপিয়ে ওঠা জীবনে একটু প্রাণ দিতে হলেও এই বিশ্বকাপ দরকার ছিলো। হাজার কোটি দরকারের মাঝে কিছু নেতিবাচকতা যে নেই তা কিন্তু নয়। তবে সেসব নেতিবাচকতা ততক্ষণ সীমা ছাড়াবে না, যতক্ষণ আমরা আমাদের ফুটবল আত্মার সাথে প্রতারণা না করছি। এভাবেই ফুটবলের উপলক্ষ খুঁজে সারাজীবন বেঁচে থাকার তাগিদ বাড়ুক পৃথিবীর প্রতি বিরক্ত সকল মানুষের। ফুটবল বাঁচুক আজীবন, জিইয়ে রাখুক আমাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন।

প্রকাশঃ ৩০ জুন । মাধ্যমঃ এগিয়ে চলো ডট কম

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: ছোটবেলা আমি আবহানী মোহামেডান খেলা দেখতাম খুব উত্তেজনা নিয়ে।
বিশ্বকাপ খেলাও অনেক উররেজনা নিয়ে দেখি।
ফুটবল নিয়ে আমাদের দেশের উন্মাদনা দেখতে ভালো লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.