নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পর্কে কিছু জানার আগে পৃথিবী সম্পর্কে জানুন,আমাকে জেনে নিতে পারবেন। আমি এ পৃথিবীরই ক্ষুদ্র উপাদান!

ইগোযুক্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ়

অতি সাধারণ অথচ ভীষণ রকমের আত্মহংকারী।।

ইগোযুক্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ় › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেলাম, এগিয়ে গেলাম!

১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:১৯

শুক্রবার শেষ বিকেল।

পুরো দিনটি যখন বিছানায় বিসর্জন দেয়ার উপক্রম তখন খানিক বিরক্তি আসলো। জীবনে এরকম দিন নেহায়াত কম কাটিয়েছি তা বলবোনা। তবে গত হয়ে যাওয়া রাতের প্রেক্ষিতে এতো বাজে দিন খুব কাটিয়েছি তা বলতেই হয়। বিছানা ছেড়ে যখন আধো অন্ধকারে হুটহাট কাপড় বদল করে রুম ছাড়ছি তখনও রুমের অপর সঙ্গী শরীরের সামনের অংশ উপোত করে উলটো হয়ে ঘুমাচ্ছিলো মনে হচ্ছে। হাসিটা মনেই ছিলো, মুখ অবধি আসেনি। মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেলাম, এগিয়ে গেলাম!

গেইট ছেড়ে যখন আমার অবচেতন পা মাটিতে ভর রেখেছে ভাবছিলো ঠিক তখনই ট্রাউজারের নিচের অংশে কাদামাখা পানি লাফ দিয়ে ওঠলো মনে হলো। হয়তো চিৎকার করে তারা বলছিলো 'আজ দিনব্যাপি বর্ষা হয়েছে বাছা, তুমি খবর নেওনি হয়তো'। কিঞ্চিৎ লজ্জ্বা পেলাম, হ্যাঁ, আজকের দিনের খবর নেইনি বৈকি। কত জনের খবর নিতে নিতে দিন চলে গেছে, আবার দিনের খবর! মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেলাম, এগিয়ে গেলাম!

রুম ছাড়ার প্রাক্কালে 'চির আলস্য' নিয়ে গত ২৩/২৪ বছর ধরে সফলভাবে বেঁচে থাকা আমার কাছের বন্ধুকে বার বার মুঠোফোনে ডাক দিচ্ছিলাম বেরুবো প্রস্তাব দিয়ে। কে শুনে কার কথা! বেচারা খুব করে ব্যস্ত ঘুমের মাঝে, হয়তো তখন কোনও ঘুম কুমারীতে ডুব দিয়েছে। কয়েকজনকে কফির দাওয়াতও যে দেইনি তা কিন্তু নয়। তবে কেনো জানি সবাই আজ রুমে থাকতে চায়! তাদের 'না' সূচক বার্তা পড়তে পড়তে কেউ একজনের সাথে গত রাতে হওয়া কথার যুদ্ধ চোখে পড়লো। মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেলাম, এগিয়ে গেলাম!

যাহোক, লাফ দেয়া কাদাপানি যখন ট্রাউজার থেকে হাত দিয়ে সরাচ্ছিলাম তখন পাশের মসজিদ থেকে ভেসে আসছিলো ইমামের কন্ঠে মধুর সুরে সূরা হুমাযাহের পরিচিত আয়াত। 'ইয়াহছাবুআন্না মা-লাহূআখলাদাহ। কাল্লা-লাইউমবাযান্না ফিল হুতামাহ। ওয়ামাআদরা-কা মাল হুতামাহ। না-রুল্লা-হিল মূকাদাহ আল্লাতী তাত্তালি‘উ আলাল আফইদাহ...' অপরাধবোধ আচমকা এলার্ম দিয়ে বললো ' বাছা, অনেকবারের মতো মাগরিবের নামাজ এবারও তোমার মিস যাচ্ছে!' মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেলাম, এগিয়ে গেলাম!

এগুনোর কাদামাখা পথের ধারে দোকানপাঠে সবাই ব্যস্ত। তরকারী বিক্রেতার সাথে ৫ টাকা কম দেয়ার জন্য যুদ্ধ করছিলেন এক ভদ্র মহিলা। নিশ্চিত ঠকার হাত থেকে তার বাঁচার যুদ্ধে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। হাতের বাম দিকে চোখ গেলো, শেষ বিকেলের অল্প আলোতে কামারের হাতে ঝলসে যাওয়া লোহা দেখতে বেশ আকর্ষনীয় লাগছিলো। আকর্ষণ বেশি সময় টিকলোনা যখন বেচারার হাতে লোহার কুন্ডলি পড়ায় চিৎকার করে ওঠতে দেখলাম। রিকশা চালকের সাথে চিরাচরিত উপায়ে একজন মানুষের কথা কাটাকাটি হচ্ছিলো। চোখ পড়লো তবু কান দিলাম না। মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেলাম, এগিয়ে গেলাম!

চা খাচ্ছিলাম বসে, সাথে রুটি। আর হ্যাঁ, সাথে ১৫ টাকা দামের একটি পানির বোতলও ছিলো যেটা আমি চাইনি। না করেছিলাম যে এটা দিওনা। তবু দিলো, তাদের যুক্তি, ' স্যার ওপর তলায় আমরা নরমাল পানি সার্ভ করিনা। নিচ তলায় গেলে আপনার বোতল নেয়া লাগবে না।' অলস মানুষ, জায়গা বদল করতে যে ইচ্ছে দরকার তা খুঁজে পেলাম না। চোখ পড়লো পাশের টেবিলে বসা দম্পতির দিকে। তাদের ছোট্য বাবুটা উচুস্বরে জিজ্ঞেস করছিলো, 'বাবা, মুরগীটা পোড়া কেনো? কালো কেনো? এটা কি খাবো?' শুক্রবারের ব্যস্ততাবিহীন সুখী দম্পতিদের চোখ চারদিকে ঘুরছিলো! লজ্জ্বা পাচ্ছিলেন বোধহয়। মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেলাম, এগিয়ে গেলাম!

ফিরতে ফিরতে ঘটনা চক্রে আবার কাদাপানি লাগলো পায়ে। এবার ট্রাউজারের কাদাপানি এড়িয়ে সরাসরি রুমে পৌঁছুলাম। রুম যথারীতি অন্ধকার, রুমের সঙ্গী ঠিক একইভাবে অর্থাৎ শরীরের সামনের অংশ উপোত করে উলটো হয়ে ঘুমাচ্ছিলো! বাতি জ্বালাতে জ্বালাতে দিনব্যাপি তার ঘুমের এই 'কালজয়ী' টেস্ট ইনিংসে হালকা বিরতি নেয়ার প্রস্তাব দিলাম। প্রস্তাব গ্রাহ্য করে সে বসে পড়লো মনে হলো। বসে পড়লাম আমিও, কাপড় বদল করে কি-বোর্ড সামনে নিয়ে। শামসউজজোহার কন্ঠে মহাদেব সাহার কবিতা 'এক কোটি বছর তোমায় দেখিনা' আবৃত্তি চলছে ল্যাপটপে! মহাদেব সাহা'র কবিতাটি একটু বদলে দেয়ার খায়েশ আসলো। কিঞ্চিৎ বদলে দিয়ে লিখলাম,

'এক কোটি বছর হয় তোমাকে দেখি না
একবার তোমাকে দেখতে পাবো
এই নিশ্চয়তাটুকু পেলে-
বিদ্যাসাগরের মতো আমিও সাঁতরে পার হবো ভরা দামোদর
কয়েক হাজার বার পাড়ি দেবো ইংলিশ চ্যানেল;
তোমাকে একটিবার দেখতে পাবো এটুকু ভরসা পেলে
অনায়াসে ডিঙাবো এই কারার প্রাচীর,
ছুটে যবো নাগরাজ্যে পাতালপুরীতে
কিংবা বোমারু বিমান ওড়া
শঙ্কিত শহরে।
তারপর তোমায় এড়িয়ে যাবো, এগিয়ে যাবো!'

লিখতে লিখতে আমার মাথা নিচু হয়ে গেলো। খেয়াল করলাম, আমার রুমের সঙ্গী মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেলো, এগিয়ে গেলো!

- রুহেল বিন ছায়েদ।
অক্টোবর ১২, শুক্রবার, সন্ধ্যা ৮ঃ১৫ মিনিট









মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:০৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: ভাল লেগেছে।

২| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:১৬

সুমন কর বলেছেন: পড়লাম, ভালো লাগল।

৩| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: এর পর মাথা উচু রাখবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.