নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে আলো খুঁজে ফিরে বাংলাদেশ

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২০







যে আলো খুঁজে ফিরে বাংলাদেশ

ফকির ইলিয়াস

_____________________________________



চারদিকে অনেক আঁধার। ইসলামি জঙ্গিদের নজর এখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামি স্টেটের সশস্ত্র মহড়া। রক্ত ঝরছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশও ভালো নেই। কী হতে যাচ্ছে, কী হতে পারে- এমন অনেক শঙ্কা।

শঙ্কিত রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নিজেই। বললেন, রাজনীতিকদের ক্রয় করা যায়। নিজ দলের নেতাদের নিয়ে আস্থাহীনতার প্রকাশ ঘটালেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গেলো রোববার সংসদ অধিবেশন শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সব নেতা বিক্রি হয় এবং তাদেরকে কেনা যায়।’ এরা কারা? বাংলাদেশে বিক্রি হয়েছেন- এমন রাজনীতিক কি আমরা চিনি না? নাকি চেনেন না প্রধানমন্ত্রী! হাঁ তিনিও চেনেন।

প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় মাঝে মাঝে সামাজিক গণমাধ্যমে লেখেন।

তার সাম্প্রতিক একটি লেখার কিছু অনুবাদ এখানে তুলে ধরতে চাই। তিনি লিখেছেন- “১৯৭৫ সাল থেকে মূলত জেনারেল জিয়াউর রহমানের প্রদর্শিত পথে যতো সামরিক স্বৈরশাসকরা সংবিধানের ওপর অবৈধ অসাংবিধানিক কাটাছেঁড়া চালিয়েছে, তার সবকিছুই এ সংশোধনীতে বাতিল হবে। সংবিধানের ওপর সামরিক শাসকদের এ কাটাছেঁড়াকে আমাদের উচ্চ আদালতই অসাংবিধানিক ও অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন।”

তিনি লিখেছেন, ‘যে জাতি নিজের শেকড়কে ভুলে যায়, সেটি পথ হারানো জাতি। আমাদের অবশ্যই আমাদের শেকড়ের কাছে ফিরে গিয়ে একটি নতুন সূচনা করতে হবে।’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিরোধিতাকারীদের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, কিছু লোক এই বিল নিয়ে ‘বিতর্কের ধূম্রজাল’ সৃষ্টি করতে চাইছে।

তিনি লিখেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান তাদের আইনসভাকে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক, এমনকি রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসনের ক্ষমতা দিয়েছে। আমাদের সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল নিয়ে কতিপয় লোক বিতর্কের ধূম্রজাল সৃষ্টি করতে চাইছে। আমার জানা মতে পৃথিবীর বেশিরভাগ গণতন্ত্রেই উচ্চ আদালতের বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা আইনসভার ওপর ন্যস্ত রয়েছে।’

তার বক্তব্য হচ্ছেÑ ‘অভিশংসনের জন্য সংসদে দুই-তৃতীয়াংশের ভোট প্রয়োজন, যেমনটি প্রয়োজন সংবিধান সংশোধনের জন্য। যদি সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সংবিধানে পরিবর্তন আসতে পারে, তাহলে সংসদে একই সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট কেন বিচারকদের অভিশংসন করতে পারবে না?’

তিনি লিখেছেন, ‘কেন কিছু মানুষ এর বিরোধিতা করছে? সম্ভবত এখানে তাদের নিজেদের কিছু স্বার্থ রয়েছে। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, এই ষোড়শ সংশোধনী বিল আমাদের ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানকে প্রায় সর্বাংশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করবে।’

এ বিষয়ে জয় লিখেছেন, ‘আমার কাছে খুবই কৌতুকপ্রদ মনে হচ্ছে একটি বিষয়। বিখ্যাত কয়েকজন ব্যক্তি, যারা এই বিলের বিরোধিতা করছেন, তারা নিজেরাই ১৯৭২ সালের সংবিধানের খসড়া করার কাজে যুক্ত ছিলেন। আমি আমাদের মূল সংবিধানে ফিরে যেতে চাই। স্বৈরশাসক ও ক্ষমতা জবর-দখলকারীরা আমাদের জাতির যে ক্ষতিসাধন করেছে, তা আমাদের সারিয়ে তুলতে হবেই।’

অন্যদিকে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা মওদুদ আহমদের একটি বই নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে দেশে-বিদেশে। মওদুদ আহমদকে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য ব্যাপক চাপ থাকলেও এ মুহূর্তে চরম কোনো সিদ্ধান্ত নিতে চান না খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে তার আপাতত পরিকল্পনা হচ্ছে, দলীয় কোনো কর্মকা-ে মওদুদকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না। দলীয় কোনো সভায়ও তাকে ডাকা হবে না।

সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের লেখা ‘বাংলাদেশ : ইমারজেন্সি এন্ড দি আফটারম্যাথ : ২০০৭-২০০৮’ বই নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারক এই নেতা তার বইয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের কারণ হিসেবে সেই সময়কার সরকারের অপশাসন, দলীয় নেতাদের ব্যাপক দুর্নীতি, বিএনপি সরকারের কিছু সংখ্যক মন্ত্রীর সম্পৃক্ততায় জঙ্গিবাদের উত্থান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের নামে হাওয়া ভবনের ক্ষমতা, প্রভাব ও দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিশ্লেষণ তুলে ধরেছেন।

মওদুদ আহমদ তার বইয়ে লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়ার কাছে ওই সময় তার দুই সন্তান তারেক ও কোকোর ভাগ্যই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’ নেতাকর্মীদের মন্তব্য, সবচেয়ে সর্বনাশ করেছে এই লাইনটি। তিন দশকের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আপোসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়ার আপোস করার বিষয়টি দালিলিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো অবস্থাতেই মানতে পারছেন না।

বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ করা হয়েছে বইটিতে। এ বিষয়ে নেতাকর্মীদের বক্তব্য, দুর্নীতি সব সময়ই কমবেশি হয়। কিন্তু দেশের বর্তমান সংকটময় সময়ে পুরোনো দুর্নীতির বিষয়টি মনে করিয়ে দিতে মওদুদ তার বইয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে তা উপস্থাপন করেছেন, যাতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারবিরোধী আন্দোলন যখন জোরদার করার চেষ্টা চলছে, এই সময় পুরোনো দুর্নীতির বিষয়টি সামনে এনে আন্দোলন প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামাতের সঙ্গে মিত্রতার বিষয়েও লেখা এসেছে বইটিতে। আমাদের জানা আছে এই মওদুদ আহমদ অতীতে কী করেছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই নানা রকম বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়েছেন মওদুদ আহমদ। বিএনপি সরকারের সময় ১৯৮০ সালে জিয়াউর রহমানের কর্মসূচির বিরোধিতা করায় তাকে উপ-প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। খালেদা জিয়ার সঙ্গে ১৯৮৫ সালে কুমিল্লা সফর থেকে ফেরার সময় গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হন। ঢাকায় ফিরেই তিনি বলেন, ‘এটা দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত ঘটনা। খালেদা জিয়া ও আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন স্বৈরাচার এরশাদ।’ এরপর হাসপাতালেও ভর্তি হন মওদুদ। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনদিন পরই সেখান থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে গিয়ে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি। এরশাদের পতনের পর আবারো বিএনপিতে ফিরে যান। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আইনমন্ত্রীও হন। সেই সময় বিচারপতিদের চাকরির বয়সসীমা বাড়িয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার আইডিয়াটি তার মাথা থেকেই আসে। এর মাধ্যমে তিনি আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের মাঠে ঠেলে দেন। সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের মামলা চলাকালেও বিতর্কিত হন মওদুদ। চেয়ারপারসনের সেই দুঃসময়ে তিনি ছিলেন বিদেশে।

এই হলো বাংলাদেশের রাজনীতিকদের একটি উদাহরণ। এমন উদাহরণ আওয়ামী লীগেও আছে।

রাষ্ট্রের উন্নয়নে দলবাজির হীনমন্যতা সব সময়ই বড় অন্তরায়। যারা রাষ্ট্রের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকেন তাদের উচিত মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের স্বার্থরক্ষা করা। বাংলাদেশে একদল ক্ষমতায় এলে অন্য দলের কর্মচারীদের শায়েস্তা করে। এটা নতুন ঘটনা নয়। আমলা কিংবা শ্রমিক সংগঠনগুলোর নির্লজ্জ দলীয় সমর্থন বাংলাদেশে একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে কালে কালে। বাংলাদেশে যেন একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চলছে। তা নতুন করে বলার কিছু নেই। বাংলাদেশে ভালো রাজনীতির চর্চার খুবই অভাব। তারপর আবার যদি রাজনীতিকরাই প্রকাশ্যে দুর্নীতিবাজদের সাফাই গাইতে থাকেন, তাহলে জনগণ দাঁড়াবে কোথায়? প্রতিহিংসার রাজনীতি সমাজকে শুধু ধ্বংসই করে না, সমাজের ভিত্তিও ক্রমশ নিঃশেষ করে দেয়। মিডিয়ায় দেখলাম, ড. ফখরুদ্দীন আহমদ, জে. (অব.) মইন উ আহমেদ নাকি এখন আমেরিকার নাগরিক! তা তারা হতেই পারেন। কিন্তু ৯/১১-এর সময় তারা এতো বড় বড় কথা বলেছিলেন কেন?

বাংলাদেশের মজলুম মানুষের কোনো স্বপ্নচূড়া নেই। তাদের রয়েছে বেঁচে থেকে হেঁটে যাওয়ার ছোট্ট সড়ক। তারা সেই সড়কের দুধারেই স্বপ্নের বাগান নির্মাণ করে যান। ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা যদি সেই বাগানটির সামান্য পরিচর্যা করতেন, তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্নরকম হতো।

সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমান সরকার সব দাবি পূরণ করতে পারছে না। এটা তাদের অপারগতা, ব্যর্থতা। আর বিরোধী দল আগুনে ঘি ঢালছে। তাদের মূল লক্ষ্য ক্ষমতা। জনসেবা নয়। অনেক রাজনীতিকও স্বীকার করেনÑ বাংলাদেশ দুর্বৃত্তদের টাকা বানানোর জন্য বিশ্বের প্রধানতম দেশ! এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে। গণমানুষের হাঁটার সড়ক নির্মাণে মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিকদের ভন্ডত্বের লেবাস খুলতে হবে প্রজন্মকেই।

-----------------------------------------------------

দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ : ১৮/সেপ্টেম্বর/২০১৪ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২৪

মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: গণমানুষের হাঁটার সড়ক নির্মাণে মানুষকেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। রাজনীতিকদের ভন্ডত্বের লেবাস খুলতে হবে প্রজন্মকেই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.