নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ট্রাম্পের রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫১



ট্রাম্পের রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ
ফকির ইলিয়াস
=========================================
বিশ্বজুড়ে একটিই আলোচনা। ট্রাম্পের শাসনকাল। ট্রাম্পের রাজনীতি। ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ। আমার কাছে একটি বিষয় খুবই জটিল লাগছে। তা হলো প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কলমের খোঁচায় অনেক কিছুই বাদ দিচ্ছেন কিন্তু তিনি এর যৌক্তিক কোনো রিপলেসমেন্ট দিচ্ছেন না। ধরা যাক আমেরিকানদের মেডিকেল ইনসুরেন্স ‘ওবামাকেয়ার’-এর কথা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ওবামাকেয়ারের বিভিন্ন নিয়ম আইনগতভাবে বাতিলে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। আইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করে নির্বাচনী প্রচারণায় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা রক্ষা করেছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, আইনপ্রণেতারা ওবামাকেয়ার বাতিল করার আগ পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগের সব শাখাকে এ আইনের অর্থনৈতিক বোঝা যতটা সম্ভব লাঘবে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তার মানে এটাই নতুন করে মডিফাই করার কথা বলা হচ্ছে। তাহলে এত ঢামাঢোল কেন? প্রশ্ন করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ওবামাকেয়ার বাতিল করে দিতে চাইলেও এখন পর্যন্ত কংগ্রেসে দু’দলের কেউই এর কোনো উপযুক্ত বিকল্প বের করতে পারেননি। তা হলে হচ্ছেটা কী?
ট্রাম্প তার নিজেকে যতটা মহামানব ভাবছেন- আসলে কি তাই? দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিন অফিসে বসেই গণমাধ্যমকে বিষোদগার করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, তার শপথ দেখতে আসা জনসমাগমের আকার নিয়ে মিথ্যাচার করছে গণমাধ্যম। সাংবাদিকদের পৃথিবীর সবচেয়ে অসৎ মানুষ বলেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। শপথ নেওয়ার পরদিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি’ (সিআইএ)-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন। গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সভার দিকে অতিরিক্ত নজর ছিল সব মহলের। নির্বাচনী প্রচারণায়, এমনকি শপথ নেওয়ার আগেও গোয়েন্দাদের নিয়ে সমালোচনামুখর ছিলেন ট্রাম্প। সভায় উপস্থিত হয়ে শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কী বলবেন, কেমন করে এ সংস্থার সাথে তার সম্পর্ক বৃদ্ধি করবেন এ নিয়ে বক্তব্য আশা করছিলেন সবাই। গোয়েন্দাদের কতটা ভালোবাসেন- এ কথা বলেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তব্য সাংবাদিকদের দিকে ঘুরিয়ে দেন। হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন, সংবাদপত্রের সাথে তার সম্পর্ক বৈরিতার। সাংবাদিকেরা সিআইএ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। ট্রাম্পের অভিযোগ, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শপথ নেওয়ার দিনের চেয়ে লোকসমাবেশ কম হয়েছে বলে প্রায় সব মার্কিন সংবাদমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, সাংবাদিকেরা ছবি উঠিয়েছেন কায়দা করে। এমনভাবে ছবি উঠিয়েছেন, যাতে লোকসংখ্যা কম দেখা যায়। নিজের অভিষেকের দিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লোকের সমাবেশ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। অসততার জন্য সাংবাদিকদের মূল্য দিতে হবে বলেও তিনি বলেন।
বিশ্বের খ্যাতিমান দৈনিক ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ তাদের অনলাইন সংস্করণে দেয়া তাৎক্ষণিক খবরে বলে দিয়েছে, কোনো সংবাদমাধ্যমের ছবিই প্রেসিডেন্ট বা তার প্রেস সচিবের বক্তব্য সমর্থন করে না। সব ধারণকৃত ছবি পর্যালোচনা করেই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে প্রেসিডেন্ট ওবামার অভিষেকের চেয়ে লোকসমাবেশ এবারে কম হয়েছিল। উপস্থিতি কম হোক আর বেশি হোক, ট্রাম্প সাংবাদিক ও মিডিয়াকে যে হুমকি দিয়েছেন, তা তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। তিনি এমন কোনো বিশেষ ব্যক্তিত্ব নন- যে রাজনীতি থেকে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছেন। সাংবাদিকরা এ সূত্রটিকে আগামীতেও কাজে লাগাতে পারেন। শপথ গ্রহণের পরেই একসঙ্গে আশিজন রাষ্ট্রদূতকে বরখাস্ত করেছেন ট্রাম্প, যারা বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সবচেয়ে বেশি আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়েছেন ট্রাম্প, ইরাক নিয়ে। তিনি সিআইএ-কে বলেছেন, ইরাক থেকে তেল নেওয়ার ঘটনায় তিনি মোটেও অনুতপ্ত নন। তার মতে, তেল তাদের কাছেই রাখা উচিত। তিনি বলেন, ‘এ থেকে আমরা হয়তো আরো কোনো সুযোগ পেতে পারি।’ কানাডার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। মেক্সিকো এবং কানাডার শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নতুন করে আলোচনার ভিত্তিতে ‘নাফটা’ নিয়ে কাজ শুরু করতে চান তিনি। এদিকে গোটা যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে, ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
শপথ নেওয়ার পরদিনই দেশটির একাধিক শহরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন লাখ লাখ মানুষ। নারীদের বিষয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিবাদে প্রথমে ওয়াশিংটনে ওই বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও, পরে দেশটির আরো অনেক শহরে তা ছড়িয়ে পড়ে। মেক্সিকো সিটি, প্যারিস, বার্লিন, লন্ডন আর সিডনিতেও বিক্ষোভ হয়েছে। নারী অধিকার কর্মীদের আশংকা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে তাদের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশ্বজুড়ে অন্তত ছয় শতাধিক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে। সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে ওয়াশিংটনে। সেখানে পাঁচ লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছেন। সমাবেশে মার্কিন সংগীতশিল্পী ম্যাডোনা বলেছেন, ‘এ দিন আমাদের জীবন শুরু করার দিন। বিপ্লব এখান থেকেই শুরু হচ্ছে। এটা আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের পরিচয়, আমাদের সম অধিকারের লড়াই। এ অন্ধকারের বিরুদ্ধে চলুন সবাই একসঙ্গে লড়াই করে জানিয়ে দিই যে আমরা ভীত নই, আমরা একা নই এবং আমরা পেছনে ফিরবো না।’
প্রশ্ন উঠছে, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে কি তাহলে গভীর বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে? ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড কি ভীতির কারণ হবে সাধারণ মানুষের জন্য? তার রাষ্ট্রীয় নীতি, তার বিশ্ব-রাজনীতি কার পক্ষে যাচ্ছে? কার বিপক্ষে যাচ্ছে?
আর এর জবাবে এক টুইটার বার্তায় ট্রাম্প লিখেছেন, এ সব মানুষ ভোটের সময় কোথায় ছিল!
নির্বাহী আদেশে আরেকটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছেন প্রেসিডেন্ট। ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। এ-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের মাধ্যমে তা করেছেন ট্রাম্প। ১২ দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য চুক্তি ছিল টিপিপি। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এশিয়া-নীতির ভিত্তিতে এ চুক্তি করা হয়েছিল। চুক্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষরের পর ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা যা করলাম, তা আমেরিকান কর্মজীবীদের জন্য বিশাল ব্যাপার।’
অবশ্য টিপিপি চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্বাহী আদেশে ট্রাম্পের স্বাক্ষর করা প্রতীকী বিষয়। কারণ চুক্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে অনুমোদিত হয়নি। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে জোরালো অবস্থান থাকলেও ওবামার আমলে তা কংগ্রেসে পাশ হয়নি।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ‘এ চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্ভাব্য বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে ধ্বংস করবে। চুক্তি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় ট্রাম্প বাম ও ডানপন্থীদের একটি অংশের বাহবা পেয়েছিলেন।
টিপিপি ছিল একটি বাণিজ্য চুক্তি। বিশ্বের ৪০ শতাংশ অর্থনৈতিক অঞ্চল এর আওতাভুক্ত। ২০১৫ সালে চুক্তির বিষয়ে সদস্য ১২ দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়। দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, চিলি, পেরু, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকো। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করা ও প্রবৃদ্ধি বাড়ানো ছিল এই চুক্তির লক্ষ্য। শুল্ক কমিয়ে বাণিজ্য বাড়ানোও তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে।
শ্রম ও পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন, কপিরাইট সংরক্ষণ, প্যাটেন্ট ও অন্যান্য আইনি বিষয়ে সুরক্ষা দেওয়া এ চুক্তির উদ্দেশ্য। চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী স্বার্থের সমর্থন ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্ক রেখে এর মতো আরেকটি একক বাজার সৃষ্টির প্রয়াস ছিল এ চুক্তিতে। সমালোচকরা আগেই বলেছিলেন, এটা এমন কোনো দরকারি বিষয় নয়, যা দিয়ে চীনকে ঘায়েল করা সম্ভব হবে। অবশ্য এ চুক্তিতে চীন অংশ নেয়নি। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের পর, বদলে যাচ্ছে টিপিপির দৃশ্যপট। ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলেও অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এ বিষয়ে বেশ আশাবাদী। বিশাল বাণিজ্যের এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরিয়ে নিয়ে গেলেও চীন ও এশিয়ার অন্যান্য দেশকে টিপিপিতে নতুন করে যুক্ত করতে উৎসাহিত করবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল বলেছেন, কীভাবে এ চুক্তিকে বাঁচিয়ে রাখা যায়; সে বিষয়ে তার সরকার জাপান, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য সদস্য দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে টিপিপির। এছাড়া টিপিপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চীনের। ট্রাম্পের এ ঘোষণায়, টিপিপি অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো শঙ্কিত হলেও লাভবান হয়েছে বাংলাদেশ। টিপিপি চুক্তি হওয়াতে আমেরিকায় পোশাক বাজার হারানোর একটি শঙ্কা ছিল বাংলাদেশের। এমনকি ওয়াশিংটনে টিকফা বৈঠকে এ ব্যাপারে শঙ্কার কথাও জানিয়েছিল বাংলাদেশ।
টিপিপি চুক্তি অনুযায়ী ভিয়েতনাম আমেরিকার বাজারে কোনো শুল্ক ছাড়াই পোশাক রপ্তানি করতে পারবে। কারণ, ভিয়েতনাম টিপিপি চুক্তির অন্তর্ভুক্ত দেশ। সেই জায়গায় বাংলাদেশকে রপ্তানির জন্য প্রায় ১৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। কিন্তু এখন চুক্তি বাতিল হওয়ায় আমেরিকার কাছে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশই আবার প্রথম পছন্দ হবে। এমনটাই ধারণা করছে বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা। ট্রাম্প যে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর কথা বলছেন, তা কতটুকু তিনি বাস্তবায়িত করতে পারবেন? বার্কলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এক হিসাব অনুযায়ী, গত আট বছরে ১ শতাংশ পরিবার এই সময়ে অর্জিত সব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ৫২ শতাংশের সুফল করায়ত্ত করেছে। ২০০৮-এর মন্দার কারণে বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, এত দিনে তার দুই-তৃতীয়াংশের কম তা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন। সে মন্দার ঝড়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় এক কোটি মানুষ বসতবাড়ির মালিকানা হারান। এমনকি ২০১৫ সালেও ১১ লাখ পরিবারের ঋণের কারণে বসতবাড়ি নিলামের মুখে ছিল।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক পরিচালক এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ মনে করেন, যদি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, ট্রাম্প জিতেও যেতে পারেন! কারণ, রপ্তানির জন্য চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর যতটা নির্ভরশীল, অন্য কারো ওপর ততটা নয়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কিন্তু বাণিজ্যযুদ্ধে একজন যতটা জেতে, আরেকজন ততটা হারে না। এতে যুক্তরাষ্ট্রেরও হারানোর আশঙ্কা আছে। চীন হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে রাজনৈতিক আঘাত করার প্রতিশোধমূলক নীতিতে অধিক কার্যকর হবে। মনে রাখতে হবে, আমরা প্রতিদিনই দেখছি- চীনে তৈরি দ্রব্য সামগ্রীর নতুন নতুন আইটেম এসে দখল করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার অর্থমন্ত্রী হিসেবে স্টিভেন মিউচিন-এর স্পষ্ট অগ্রাধিকারগুলোর একটি হচ্ছে- যে সব প্রতিষ্ঠানের বিদেশে বিনিয়োগ রয়েছে তাদের ওপর থেকে ট্যাক্স কমিয়ে আনা। উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর ফলে যেন তারা নিজেদের মুনাফা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে পারে। দৃশ্যত, এর মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টিতে সেখানে বিনিয়োগের জন্য ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু কর্পোরেশনগুলো ইতোমধ্যে তাদের বিনিয়োগকারীদের বলেছে, নিজেদের অভাবনীয় মুনাফাকে তারা লভ্যাংশ বাড়ানোর উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। আরও মার্কিন নাগরিকদের চাকরি দিতে তারা আগ্রহী নয়।
কোন দিকে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? কী হতে পারে আগামী দিনগুলোর অর্থনীতি ও বাণিজ্যনীতি? এ প্রসঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ বলছেন, ‘ট্রাম্প উন্নত মানের অবকাঠামো নির্মাণ, প্রতিরক্ষা খাতে উচ্চ শুল্কছাড় এবং উচ্চমাত্রায় বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাকে জাদুবিদ্যার অর্থনীতিই বলতে হবে।’ স্টিগলিৎজের মতে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট রিগ্যান আমলের পশ্চাৎপদ অর্থনীতিকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরছেন। তবে ট্রাম্প তার অর্থনীতিতে আরো দুটি মারাত্মক অস্ত্র যুক্ত করেছেন- চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং লাখো মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ছিনিয়ে নেওয়া। স্টিগলিৎজের দাবি- ট্রাম্প যে ক্ষুব্ধ মার্কিনিদের ভোটে জয়ী হয়েছেন, তারাও তার ওই আগ্রাসী অর্থনীতির শিকার হবেন।
না- ট্রাম্প পপুলার ভোটে জিততে পারেননি। কিন্তু তাতে কী! তিনি যদি ইমপিচমেন্টের শিকার না হন- তাহলে চার বছরই ক্ষমতায় থাকছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ রক্ষার নামে তিনি অন্তত অস্ত্রযুদ্ধে জড়াবেন না, তার পক্ষের মানুষরাও সেটাই চাইছেন।
-------------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ সোমবার

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ স্বার্থ রক্ষার নামে তিনি অন্তত অস্ত্রযুদ্ধে জড়াবেন না, তার পক্ষের মানুষরাও সেটাই চাইছেন।


মনে হয় এই চাওয়া পূরণ হবে না। ট্রাম্পের আমলে ভয়াবহ রকমের কিছু যুদ্ধ বিগ্রহ সংঘটিত হবে বলে আমার আশংকা আছে। তা' ছাড়া আমেরিকার বিপুল অস্ত্র ব্যবসার স্বার্থে যুদ্ধ অনিবার্য। ট্রাম্প রাজনীতিবিদ নন, তিনি একজন ব্যবসায়ী। অস্ত্র ব্যবসা না করলেও এ থেকে তিনি ফায়দা লুটার চেষ্টা করবেন বলে মনে হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.