নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংস্কৃতির শক্তি, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:২৪



সংস্কৃতির শক্তি, রাষ্ট্রের স্বীকৃতি
ফকির ইলিয়াস
===============================
সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। কলেজ শেষ করে শহরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে আড্ডা দিই। সিলেটের ‘লালকুঠি’ সিনেমা হলের দোতলায় ‘তৃষ্ণা রেস্টুরেন্ট’ আমাদের আড্ডাস্থল। বিশিষ্ট শিল্পী বিদিত লাল দাস এর অন্যতম কর্ণধার। সেখানেই আড্ডা দিয়ে কথা শুনি মহাজনদের। শাহ আব্দুল করিম, গীতিকার সিদ্দিকুর রহমান, গীতিকার ও শিল্পী সৈয়দ মোফাজ্জিল আলীসহ অনেকেই আসেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই আসেন গীতিকার গিয়াস উদ্দিন আহমদ। আমি তখন দু’চারটে বাউল গান লিখতে শুরু করেছি। একদিন সাহস করে গিয়াস ভাইকে বলেই ফেলি- গিয়াস ভাই আমিও তো কয়েকটি গান লিখলাম। কিন্তু কেউ আমার গানগুলো তো গায় না। গাইতে চায় না। হেসে ওঠেন গিয়াস ভাই। বলেন, ‘আরে ধুর, আমি গান লিখি ২৫ বছর যাবৎ আমাকেই কেউ পাত্তা দেয় না।’

কথা শুরু করেন বিদিত লাল দাস। বলেন- ‘লেগে থাকো হে! এই মাঠে লেগে থাকতে হয়!’ আমাদের মনে আছে, ‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’- এই প্রখ্যাত গানটির গীতিকার গিয়াস উদ্দিন আহমদকে লাইম লাইটে নিয়ে এসেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। না- গিয়াস উদ্দিন আহমদ তার জীবদ্দশায় তেমন কোনো স্বীকৃতি পাননি। তিনি অনেকটা হতাশা নিয়েই ছেড়ে গেছেন আমাদের। এখন ফেব্রুয়ারি মাস। মহান ভাষা আন্দোলনের মাস। ঢাকায় ইতোমধ্যে বইমেলা শুরু হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বইমেলা উদ্বোধন করেছেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদানের যে লড়াই-সংগ্রাম তার পথ ধরে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। একুশ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে।

এবারের বইমেলা উদ্বোধন করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের শহীদ দিবসই নয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দুজন প্রবাসী বাংলাদেশি এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় ১৯৯৯ সালে ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান লাভ করে। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে খুনি জাতির পরিচিতি লাভ করেছিল। আজ আবারো আমরা আমাদের ভাবমূর্তি বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে পেরেছি। বিশ্বে বাংলাদেশ আজ অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি বলেন, সাহিত্য চর্চা পারে যুবসমাজকে সঠিক পথে ধরে রাখতে। বই পারে আমাদের চিন্তা-চেতনা বিকশিত করতে। আজ আমরা অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছি। আর কখনো বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বই এবং বইমেলার প্রতি ভালোবাসা ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল পদে থাকায় ইচ্ছে থাকলেও মেলায় আসতে পারেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। এর পাশাপাশি, শিশুদের মাঝেও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলা একাডেমি ১৯৮৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর প্রসার বেড়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এখন নিয়মিত বইমেলা আয়োজন হচ্ছে। বইমেলা ঘিরে লেখকদের উত্তেজনা ও বই প্রকাশ অব্যাহত আছে। প্রকাশনা ও লেখকদের সংখ্যা বাড়ছে। যুক্ত হচ্ছে নানা সমস্যা। এর মাঝে নিরাপত্তা বিষয়টিই এখন প্রধান। আমরা দেখছি, এই একুশের মাসেই বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে। রাষ্ট্র তার যোগ্য সন্তানদের এই সম্মাননা দেয়। এ বছর অন্যদের সঙ্গে এমন একজনকে পুরস্কার দেয়া হয়েছে- যিনি একজন বিতর্কিত লেখিকা ও অধ্যাপক। তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু রিপোর্ট ছাপা হয়েছে বিভিন্ন মিডিয়ায়। তার নাম নিয়াজ জামান। অনুবাদে বিশেষ অবদান রেখে এ বছরের বাংলা একাডেমি পুরস্কার জেতা অধ্যাপক নিয়াজ জামান তার এক লেখায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বর্ণনা করেছিলেন ‘স্বভাবসুলভ স্বৈরাচার’ হিসেবে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের কড়া সমালোচক হিসেবে ভূমিকা রাখা সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় ১৯৯৪ সালের ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই লেখায় নিয়াজ জামান লিখেছিলেন- ‘ডযবহ ঃযব ঝযবরশয পধসব ঃড় ঢ়ড়বিৎ, যব বসবৎমবফ ধং ধ হধঃঁৎধষ ফরপঃধঃড়ৎ যিড় পড়ঁষফ হড়ঃ ধপপবঢ়ঃ ধ ভৎবব ফরংপঁংংরড়হ ড়হ ধহু ড়ভ যরং নবফৎড়ড়স ফবপরংরড়হং.’ অর্থাৎ ‘ক্ষমতায় আসার পর ‘শেখ’ একজন স্বভাবসুলভ স্বৈরাচারীর রূপ নিলেন। তিনি তার শয়নকক্ষে নেয়া কোনো সিদ্ধান্ত সম্পর্কেই কোনো খোলামেলা আলোচনা গ্রহণ করতে পারতেন না’।

ঢাকাটাইমস২৪ডটকম তাদের রিপোর্টে জানাচ্ছে- ‘পাঞ্জাবি বংশোদ্ভূত নিয়াজ জামান মাগুরার নির্বাচনে বিতর্কিত মেজর জেনারেল মাজেদুল হকের আত্মীয়। রাজধানীর কয়েকটি আর্কাইভে ৯০ দশকে হলিডে পত্রিকার একাধিক সংখ্যা পড়ে দেখা গেছে, নিয়াজ জামানের অধিকাংশ নিবন্ধ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অখণ্ডতা রক্ষায় পাকিস্তানি মুসলমান আর বাঙালি মুসলমানদের ব্যর্থতাকে উপজীব্য করে লেখা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক প্রবীণ শিক্ষক নাম না প্রকাশ করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, হলিডে পত্রিকায় প্রকাশিত নিয়াজ জামান তার এক লেখায় বঙ্গবন্ধুকে ‘ংবৎঢ়বহঃ’ বা দানবীয় সাপ বলে অভিহিত করেছিলেন। দীর্ঘদিন পত্রিকার কপিটি তার কাছে ছিল, কিন্তু ইদানীং আর খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে সরকারের উচ্চমহল থেকে পুরনো হলিডে পড়ে দেখলেই এ লেখা পাওয়া যাবে। এই অধ্যাপক বলেন, ‘সাপ্তাহিক হলিডে পত্রিকায় যিনি নিয়মিত লিখতেন, যিনি বঙ্গবন্ধুকে কোনোদিন সম্মান করে কথা বলেননি, তিনি কীভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বাংলা একাডেমি পুরস্কার জেতেন আমরা ভেবে পাই না। তবে কি চেতনার, বিশ্বাসের কোনো মূল্যায়ন নেই?’ বাংলা একাডেমি পুরস্কার-২০১৬ জেতা অধ্যাপক নিয়াজ জামান, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। জানা গেছে, নিয়াজ জামানকে অনুষ্ঠানে আসতে বারণ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সংবাদপত্র ঢাকাটাইমস২৪কম-এ নিয়াজ জামানের বঙ্গবন্ধুবিরোধী লেখা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এর একটি কপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনা হয়। পরে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে যোগাযোগ করে অধ্যাপক নিয়াজ জামানকে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসতে বারণ করতে বলা হয় বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়।

তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক রামেন্দু মজুমদার পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা ও অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার নিতে অনুরোধ করার সময় বলেন, শারীরিক অসুস্থতার জন্য নিয়াজ জামান অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি। বাংলা একাডেমি এবার একাধিক ভুল করেছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ বিভাগে এমন একজনকে পুরস্কার দেয়ার কথা বলা হয়েছিল, যে মুহাম্মদ ইব্রাহীম আগেই এই একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। কথা হচ্ছে, এসব বিষয় বাংলা একাডেমি আগে যাচাই-বাছাই করে দেখে না কেন? বিশ্ব বদলাচ্ছে। পরিবর্তিত বিশ্বে অনেক কিছুই ঘটে যাচ্ছে আমাদের চোখের সামনে। গীতিকবি বব ডিলান নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তার গীতিকবিতার জন্য। তাকে খ্যাতি দেয়া হয়েছে- ‘গানের কবি’। সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, ‘আমেরিকার সঙ্গীত ঐতিহ্যে নতুন কাব্যিক মূর্ছনা সৃষ্টির’ জন্য ৭৫ বছর বয়সী রক, ফোক, ফোক-রক, আরবান ফোকের এই কিংবদন্তিকে নোবেল পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে তারা। ডিলান তথাকথিত সাহিত্যিক নন। তবে এখন তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে টমাস মান, রুডইয়ার্ড কিপলিং, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, বার্ট্রান্ড রাসেলদের সঙ্গে। নোবেলের ১১২ বছরের ইতিহাসে এ পুরস্কারজয়ী প্রথম সঙ্গীতশিল্পী ও গীতিকার তিনি। গার্ডিয়ান লিখেছে, এর আগে বহুবার নোবেলের মনোনয়নের তালিকায় নাম এলেও সাহিত্যের সবচেয়ে সম্মানজনক এ পুরস্কারের ঘোষণায় ডিলানের নাম যে বিস্ময় হয়েই এসেছে। পুরস্কার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমির স্থায়ী সচিব সারা দানিউস বলেছেন, তাদের এবারের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হবে না বলেই তিনি আশা করছেন। ডিলানকে তিনি বর্ণনা করেন ইংরেজি বাচন রীতির ‘এক মহান কবি’ হিসেবে, নোবেল পুরস্কার যার ‘প্রাপ্য’। তিনি বলেন, ‘৫৪ বছর ধরে চলছে তার এই অভিযাত্রা, প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে চলেছেন, সৃষ্টি করছেন নতুন পরিচয়।’

ডিলানের ‘দ্য টাইমস দে আর আ-চেইঞ্জিং’ গানটিকে দানিউস তুলনা করেছেন গ্রিক কবি হোমার আর শ্যাফোর সঙ্গে। আমরা যদি ৫ হাজার বছর পেছনে ফিরে যাই, আমরা হোমার আর শ্যাফোকে পাব। তাদের গীতিকবিতা লেখাই হত গেয়ে শোনানোর জন্য। বব ডিলান একই কাজ করেছেন।’ না- বাংলাদেশে গীতিকবি বিভাগে কোনো ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কার’ নেই। অথচ বাংলা একাডেমি একটি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশের লোকসাহিত্যকে কোনো সময়ই ‘পুরস্কারের যোগ্য’ মনে করেননি কিংবা করছেন না।

বাংলাদেশে অনেক বড় বড় লোককবি, গীতিকবি আছেন। সম্প্রতি প্রয়াত কুটি মনসুরের নাম উল্লেখ করা যায়। কুটি মনসুরের মূল নাম মো. মনসুর আলী খান হলেও তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হওয়ায় আদর করে মায়ের ডাকা নাম ‘কুটি মনসুর’ নামেই তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। ১৯২৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলার লোহারটেক গ্রামে জন্ম নেয় কুটি মনসুর। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পরিদপ্তরের অধীনে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে উদ্বুদ্ধকরণের নিমিত্তে তার রচিত ৩০০ গান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাউল শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কণ্ঠশিল্পী অডিশন বোর্ডের সম্মানিত বিচারক হিসেবে দীর্ঘদিন তিনি দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমিতে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মাননীয় অধ্যক্ষ হিসেবে এবং আনসার ভিডিপিতে ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সঙ্গীত প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৫২-’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬’র ছয় দফা, ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭১’র মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও দেশভিত্তিক প্রচুর গান ও কবিতা রচনার পাশাপাশি তিনি প্রায় ৫০টি বিষয়ে এ পর্যন্ত ৮ হাজার গান রচনা ও ৪ হাজার ৫০০ গানের সুরারোপ করেছেন। তার রচিত ও সুরারোপিত আড়াইশ গান ঢাকা রেকর্ড ও ইপসা রেকর্ড নামের দুটি গ্রামোফোন কোম্পনি থেকে লং প্লে ডিস্ক রেকর্ডে প্রকাশ হয়েছে। এসব গানের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে- ‘ন্যায্য কথা বলতে গিয়া শেখ মুজিবুর জেলে যায়, বাঙালিরা দোষী কোন জায়গায়, শিয়াল কয় খাটাশ ভাইরে, যৌবন জোয়ার একবার আসে রে।’ তিনি তার মৃত্যুর আগে কি বলে গেছেন তা শুনবেন প্রিয় পাঠক?

গভীর কষ্ট ও ক্ষোভ থেকে তিনি বলেছেন, ‘বেঁচে থাকতে যেহেতু কোনো মূল্যায়ন হলো না, তাই আমি মারা যাওয়ার পর কোনো মরণোত্তর পুরস্কার দেয়া হলে তোমরা তা গ্রহণ করো না’ এই হলো বাংলাদেশ! এই হলো বাংলাদেশের সংস্কৃতি! আচ্ছা জানতে চাই- সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কি জানে না দেশের কোন গুণীকে কদর করতে হবে?

বইমেলা আয়োজনের দায়িত্ব বাংলা একাডেমির অতিরিক্ত দায়িত্ব। দেশে পরিশুদ্ধ সাহিত্যের চর্চাকে এগিয়ে নেয়া একাডেমির মূল কাজ। খবরদারি করা, সেন্সর করা, অপছন্দের লেখক-প্রকাশককে হয়রানি করা একাডেমির কাজ নয়। কিন্তু হালে আমরা কী দেখছি? কেন দেখছি? সংস্কৃতির একটা নিজস্ব শক্তি আছে। কি সেই শক্তি তা আমরা ১৯৫২, ৬৯, ৭০-৭১ এ দেখেছি। দেখেছি ১৯৯০ এ-ও। তাহলে আমরা আমাদের অতীত ভুলে যাচ্ছি কেন। সময় এসেছে বদলাবার। বাংলা একাডেমির পুরস্কার ক্যাটাগরিতে ‘গীতিকবি’-কে সম্মান দেয়ার ব্যবস্থা যোগ করতে হবে। রাষ্ট্রকেই পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসতে হবে অকৃপণভাবে। কথায় নয়, তা কাজে প্রমাণ করতে হবে।
--------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.