নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতির রাজপুত্রের প্রতি

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:২৯




রাজনীতির রাজপুত্রের প্রতি
ফকির ইলিয়াস
===============================
তিনি চলে গেলেন। সংসদীয় রাজনীতির রাজপুত্র ছিলেন তিনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। আমাদের খুব প্রিয় সেন দা। মানুষের কাছাকাছি ছিল তাঁর রাজনীতি। জমিনের আইলে বসে পড়তেন তিনি। বলতেন, ‘চাচা এক দম তামুক খাইতে আইছি’। এতই মাটিবর্তী ছিলেন তিনি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রাজনীতি ছিল সমাজবাদের পক্ষে। সাম্যবাদ ছিল তাঁর ধ্যান-ধারণা। আমার মনে পড়ছে, তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা ১৯৭৮ সালে। সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় অংশ নেন মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি মুহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেই নির্বাচনে ওসমানীর পক্ষে প্রচারণা করতে আমাদের এলাকায় আসেন। আজকের সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কামালবাজারে বিশাল জনসভায় বক্তৃতা করেন সেনগুপ্ত। আমি তখন কিশোর। সদ্য কলেজ ছাত্র। তন্ময় হয়ে তাঁর বক্তব্য শুনি। সেনগুপ্ত তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু হত্যার পুরো ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি জানান, কীভাবে সেই খুনি সৈনিকরা জাতির জনককে হত্যা করেছে। তিনি জানিয়ে দেন এই দেশে সামরিক শাসনের ভবিষ্যৎ কী!

আমার কাছে তাঁকে রাজনীতির বরপুত্র মনে হয়। অপলক তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। কথায়, সাহসে, তেজে তাঁকে আমার মনে হয় ইনিই এই দেশের গণমানুষের সূর্যের প্রতীক। প্রত্যন্ত জনপদ থেকে উঠে আসা এক শক্তিমান পুরুষ।

ছাত্রজীবনেই তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। হাওরাঞ্চলের ‘জাল যার জলা তার’ আন্দোলনে দীর্ঘদিন তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি সুনামগঞ্জ-২ আসন থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মোট সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে সত্তরের নির্বাচনেও তিনি প্রদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ভিপি প্রার্থী হয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) পিকিং ও মস্কো ধারায় দুই টুকরা হলে মওলানা ভাসানীকে ত্যাগ করে সুরঞ্জিত অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন অংশে যোগ দেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাইরে ন্যাপ থেকে জয়ী হয়ে দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। পরে ন্যাপের ভাঙনের পর গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ ও ১৯৯১-এর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে জয়ী হন। পঞ্চম সংসদের সদস্য থাকাকালেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রথমে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে সুরঞ্জিত ভোটে হেরে গেলেও পরে হবিগঞ্জের একটি আসনে উপনির্বাচন করে তিনি বিজয়ী হন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা নিযুক্ত হন তিনি। ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত হন। দলীয় মনোনয়নে এমপি হলেও ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অন্য চারজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে সুরঞ্জিতও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর পদটি হারান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটের নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর সুরঞ্জিতকে আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ২০১১ সালের ২৮ নভেম্বর রেলমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুরঞ্জিত।

মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর তার একজন এপিএসের অর্থ কেলেঙ্কারিতে তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির আঙুল ওঠে। তিনি স্বেচ্ছায় ব্যক্তিগত সহকারীর দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে পরের বছর ২০১২-এর ১৬ এপ্রিল মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে দপ্তরবিহীনমন্ত্রী হিসেবে তাঁর মন্ত্রিসভায় রেখে দেন। এ সময় নির্দোষ প্রমাণিত না হলে সক্রিয় রাজনীতি করবেন না বলে সুরঞ্জিত ঘোষণা দেন। এপিএসের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্ত করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুরঞ্জিত সেনকে নির্দোষ ঘোষণা করলে আবারো রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলন তিনি পুনরায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হন।

তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হলে তিনি আবারো আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে সেনগুপ্ত ছিলেন একজন সাদাসিধে মানুষ। ১৯৩৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের আনোয়ারপুর গ্রামে জন্ম সুরঞ্জিতের। তার বাবা চিকিৎসক দেবেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও মা সুমতি বালা সেনগুপ্ত। তিনি দিরাই উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সিলেট এমসি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কিন্তু তাঁর জীবনের শুরুটা ছিল খুবই প্রতিক‚ল। ছোটবেলায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বাবা-মা মারা যান। তখন থেকে অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েন তিনি। অভিভাবকবিহীন মুক্তচিন্তায় সবার সঙ্গে গল্প-আড্ডায় ঘুরে বেড়াতেন। ছাত্ররাজনীতিতে ছিলেন সক্রীয়, বক্তৃতায় ছিলেন পটু। পড়াশোনায় তেমন মনোযোগী ছিলেন না তিনি। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নাটক, যাত্রাপালা করে দাপিয়ে বেড়াতেন। তিন তিনবারে ম্যাট্রিক পাস করেন, গার্ডিয়ান ছাড়া যা হয় তেমনটাই হয়েছে। কলেজে যাওয়ার পর তাঁর প্রতিভা বিকশিত হয়। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তাঁর বেশ সুনাম ছিল। এরপর ধীরে ধীরে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন তিনি।

হাওরের কাদাজল মেখে হাওর জনপদে যাত্রা-নাটক মঞ্চে দাপিয়ে বেড়ানো দুখু সেন থেকে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বর্ণিল রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী হয়ে ওঠেন। ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে জয়লাভ করার মধ্য দিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের রাজনৈতিক উত্থান হয়। এই নির্বাচনে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ন্যাপের একমাত্র প্রার্থী হয়ে ‘কুঁড়েঘর’ প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অক্ষয় কুমার দাসকে (অক্ষয় মিনিস্টার) হারিয়ে জয়লাভ করেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। ১৯৭০-এর প্রাদেশিক নির্বাচনে ন্যাপ থেকে এমএলএ প্রার্থী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সেন্ট্রালে গুলজার আহমদ চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগ থেকে এমএলএ প্রার্থী ছিলেন অক্ষয় কুমার দাস ও সেন্ট্রালে আবদুস সামাদ আজাদ। উপজেলার হাতিয়া গ্রামের কেন্দ্রীয় ন্যাপ নেতা গুলজার আহমেদ চৌধুরী, কমরেড বরুণ রায় ও দিরাই পৌর সদরের দোওজ গ্রামের ক্ষিতিশ নাগের হাত ধরে বাম রাজনীতিতে অভিষেক হয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের। তাদের হাত ধরেই তুখোড় পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে সুরঞ্জিত সেনের রাজনীতির শুরু বামপন্থী সংগঠনে। সাম্যবাদী দর্শনে দীক্ষা নিয়ে ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক জীবন শুরু করা এই নেতা তাঁর রাজনীতির দীর্ঘ ৫৯ বছর দাপটের সঙ্গেই চলেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের সক্রিয় যোদ্ধা ছিলেন সুরঞ্জিত। তিনি ৫ নম্বর সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। আইয়ুব-মোনায়েমবিরোধী উত্তাল আন্দোলনে ছিলেন সামনের সারিতে। ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয় তার। এগারো দফা, ছয় দফা আন্দোলন, সত্তরে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য, সাবসেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন তিনি। ছাত্র ইউনিয়ন থেকে ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটি, এরপর একতা পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি হয়ে পরে নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগ। আপাদমস্তক রাজনীতিক হিসেবে সেক্যুলার কিংবা অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা ধারণ করেছেন সবসময়ই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তিনি দেখেছেন খুব কাছে থেকে। তাঁর রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণাকে লালন করেছেন আজীবন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানীর রাজনৈতিক প্রভাব ছিল তার মধ্যে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সবসময় বলতেন, ‘পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ধারণাই করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু কী ছিলেন, আর কী করতে পারেন। ১৯৬৬-এর ছয়দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাই তার প্রমাণ।’ জাতীয় সংসদে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন বাংলার আপামর মানুষের কণ্ঠস্বর। তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব।

আরেকটু পেছনে ফিরে যাই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি ছিল একটি গৌরবময় অধ্যায়। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী স্পিকার। আবদুস সামাদ আজাদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা। একই সময়ে এই তিনজন কৃতী মানুষকে নিয়ে সিলেট বিভাগবাসীর ছিল গর্ব। আজ তিনিও চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুর পর জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে সঙ্গে নিয়ে আমরা অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। তিনি আজীবন প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে আজ একটা পর্যায়ে আমরা আনতে পেরেছি। জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করেছি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরতে গিয়ে সংসদ নেতা বলেন, রাজনৈতিক জীবনে অনেক জেলজুলুম সহ্য করতে হয়েছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়েই আমাদের চলতে হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ বর্তমানে এখানে থাকা অনেক মন্ত্রী-নেতাও আহত হন। কিন্তু হামলার পর সংসদে আমাদের একটি কথাও বলতে দেয়া হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রী হয়ে সংসদে খালেদা জিয়া যখন বলেন আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে গ্রেনেড নিয়ে হামলা করেছি, তখন বিএনপির নেতারা হাততালিও দিয়েছেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ পরবর্তী ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরাচাররা বারবার সঙ্গিনের খোঁচায় পবিত্র সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি-আদর্শ বাদ দেয়া হয়েছিল। আমরা পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জাগ্রত করেছি। সেই সংগ্রাম ও কর্মকাণ্ডেও আমাদের অন্যতম সাথী ছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

২০০৪ সালের ২১ জুন দিরাইয়ের একটি জনসভায় তাকে লক্ষ করে গ্রেনেড হামলা করে উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার স্পিøন্টার শরীরে নিয়েই তার জীবনাবসান হয়।

আমি তাঁকে ডাকতাম সেন দা। দেশে এবং বিদেশে অনেকবার তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গ আড্ডা দেয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। তিনি আমাদের কাছে ছিলেন স্বপ্নের রাজনীতিক। মনে পড়ছে- নিউইয়র্কে ইফতার মাহফিলে আমাদের সঙ্গে শরিক হয়ে বলেছেন, ‘কিতা বা ইতা ছিলটি মিঠাই নি’। না জাত-পাত তার কাছে কোনো বিষয় ছিল না। তিনি ছিলেন মানবতার বন্ধু। শেষ জীবন পর্যন্ত সেই ঝাণ্ডা সমুন্নত রেখে গেছেন।

জাতীয় সংসদে জীবনের শেষ বক্তৃতায় অভিজ্ঞ এই পার্লামেন্টারিয়ান বলেছেন, ‘সাংবিধানিক পথ ছাড়া অন্যভাবে এই জাতিকে বিব্রত করা ঠিক হবে না। এ ক্ষেত্রে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এখন যেটি অবশিষ্ট আছে। সুযোগ এখনো যায় নাই। রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটি করে দিয়েছেন। বিএনপির যদি কোনো কথা থাকে, তারা অনুসন্ধান কমিটিতে বলতে পারেন। তারা বলতে পারেন, এই লোক না নিয়ে ওই লোক নিন। এটা সংবিধান প্রণিধানযোগ্য হতে পারে। অন্য কোনো উপায় নেই। তিনি আরো বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এসেছে বলে দাবি করছে। তাহলে তাদের সংবিধান সম্পর্কে আরো ওয়াকিবহাল ও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’ হ্যাঁ, আজীবন রাষ্ট্রের সংবিধানের পক্ষে কাজ করেছেন এই সংবিধান প্রণেতা। তিনি ছিলেন রাজনীতির রাজপুত্র। এই বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তাঁর নাম চির অম্লান থাকবে তত দিন। থাকবে তাঁর চেতনা। আপনাকে আমার পরম শ্রদ্ধা, প্রিয় নেতা, প্রিয় রাজনীতিক।
------------------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:


ক্রীতদাস প্রভু ব্যতিত বাঁচতে পারে না; প্রভুর গুণগানের শেষ নেই।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৫৯

ফকির ইলিয়াস বলেছেন: তোমার মতো ছাগল যে আমি নতুন দেখছি- তেমন তো না। তোমার টা তুমি করো, আমার কাজ আমাকে করতে দাও হে
নারদ কোথাকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.