নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিশুদ্ধ রাজনীতির আয়নার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৭:৫২




পরিশুদ্ধ রাজনীতির আয়নার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
ফকির ইলিয়াস
--------------------------------------------
অবশেষে বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক সচিব খান মুহাম্মদ নূরুল হুদা। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও কথাসাহিত্যিক মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কবিতা খানম ও অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। বলা হচ্ছে, কবিতা খানমের নাম আওয়ামী লীগ প্রস্তাব করেছিল। মাহবুব তালুকদারের নাম এসেছিল বিএনপির পক্ষ থেকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কে এম নূরুল হককে ওএসডি করে রেখেছিল জামায়াত-বিএনপি জোটের সরকার। পরে তিনি ২০০৬ সালে অবসরে যেতে বাধ্য হন। কী অপরাধ ছিল তার? কেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাডার সদস্যকে ওএসডি করেছিল রাজাকারলালিত একটি জোট সরকার? এ সব বিষয় আলোচনায় আসতেই পারে। রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশে সিইসি পদে নুরুল হুদার নামের সঙ্গে ছিল সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নামও। সার্চ কমিটির সুপারিশে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আরো যে চারটি নাম ছিল, তারা হলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক জারিনা রহমান খান ও অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন এ কমিটিতে সদস্য করা হয় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, পিএসসি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য শিরীণ আখতারকে। তারাই দশ সদস্যের শর্টলিস্ট তুলে দেন রাষ্ট্রপতির হাতে। একটি বিষয় স্পষ্ট, এ নির্বাচন কমিশনই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। ফলে, এ কমিশনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশের কাছে, জাতির কাছে। এ কমিশন সম্পর্কে বিএনপি ইতোমধ্যে নেতিবাচক কথাবার্তা বলা শুরু করেছে। তারা প্রথমেই বলছে, তাদের করা ওএসডি সচিবকে কেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হলো!
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না- বিএনপি এখন যে কাদার গর্তে পতিত হয়েছে তাতে তারা ক্ষমতায় না যাওয়া পর্যন্ত আর কোনো সত্যই মানবে না। কাউকেই বিশ্বাস করবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে হতাশা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে বিএনপি। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব কমিশনার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করে দলটি। এমনকি নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে. এম. নুরুল হুদা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে জনতার মঞ্চের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলেও দাবি করছে বিএনপি। তাদের প্রস্তাবিত তালিকা থেকে একজনকেও নতুন ইসিতে রাখা হয়নি বলে অভিযোগ করেছে দলটি। অথচ মাহবুব তালুকদার তাদের ঘরানার মানুষ বলেই চাউর রয়েছে।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান মিডিয়াকে বলেছেন, আমরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত লোকদেরই ইসিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কমিশন আমরা গ্রহণ করবো না। একইসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার জনতার মঞ্চের বিতর্কিত আমলা ছিলেন। কাজেই তার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আশা করা যায় না। বিএনপি তাদের নিজের তৈরি ভাঙা সাঁকোর উপর দিয়েই হাঁটছে। তারা এমন করে হেঁটে কতদূর যাবে তা-ই এখন দেখার বিষয়। অন্যদিকে দেশে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই একটি গোষ্ঠী সরকারি শক্তির ছত্রছায়ায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এরা এতই বেপরোয়া যে, তারা যত্রতত্র অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিতে আহত হন দৈনিক সমকালের সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুল। পর দিন দুপুরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল মেয়র হালিমুল হক মিরুর গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শাহজাদপুর সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল হাসানাত। তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে পুলিশ পৌর মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়ির সামনে পাহারায় ছিল। তার বাড়ির সামনে দুপুরে বিক্ষুব্ধরা মিছিল নিয়ে আসলে পুলিশের উপস্থিতিতে এবং পুলিশকে ডিঙ্গিয়ে তিনি নিজের শর্টগান দিয়ে বেশ ক’রাউন্ড গুলি ছোড়েন। যার একটি গুলিতে সাংবাদিক শিমুল গুলিবিদ্ধ হন।’ শিমুলের জানাজার পূর্বে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় এমন বক্তব্য দেন পুলিশের এ কর্মকর্তা। আবদুল হাকিম শিমুল হত্যা মামলায় গ্রেফতার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরুকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি তাকে রিমান্ড আবেদনের বিষয়ে শুনানি হবে বলে জানিয়েছেন আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও)।
আসলে কী হচ্ছে বাংলাদেশে? ক্ষমতাসীনদের কিছু পোষ্য কেন এতো সহিংস হয়ে উঠছে? কেন তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে? শিমুল হত্যাকাণ্ডে যেই জড়িত থাকুক তাকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডে যত বড় শক্তিশালী কিংবা প্রভাবশালী জড়িত থাকুক না কেন; অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সরকার সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে রাজনীতির নামে এখন আজব আজব কর্ম করছেন কিছু রাজনীতিক।
শিক্ষার্থীদের হাতে হাত রেখে বানানো হয়েছে ‘পদ্মা সেতু’। শোয়া আরেক ছাত্রের পিঠে চড়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন পাটোয়ারী। ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যাওয়া একটি ছবিতে দেখা যায়, দুই দল শিক্ষার্থী হাতে হাত রেখে ‘সেতু’ তৈরি করেছে এবং আরেক ছাত্র তার ওপর উপুড় হয়ে শুয়েছে। ওই অবস্থায় তার পিঠের উপর দিয়ে হেঁটে চলেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন। মানবসেতুতে হেঁটে সমালোচনার মুখে পড়া আওয়ামী লীগ নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অন্যায় করে কেউ পার পাবে না, সে আওয়ামী লীগের যত বড় নেতাই হোক। নূর হোসেনকে দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেছেন- ‘চাঁদপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন ছাত্রদের দিয়ে যে কাজটি করেছেন সেটি ঘৃণ্য। এ ধরনের ঘৃণ্য, জঘন্য কাজ যারা করে, তাদের প্রতিরোধ করতে হবে।’
বাংলাদেশে এ সময়ে জামায়াত-বিএনপি সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যানের সংখ্যা কত? তৃণমূল পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে আওয়ামী লীগ কী করছে কিংবা কী করতে পারছে? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর দরকার। দরকার মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সমর্থন ও শক্তির পথরেখা জরিপের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবন এবং সামাজিক জীবন দুটোই আজ এতটা বিপন্ন যে, একটাকে বাদ দিয়ে অন্যটি নিয়ে ভাবলে লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছানো যাবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর, ক্ষমতাসীন সরকার পক্ষের জবাবদিহিতা করার মতো প্লাটফর্ম অতীতে থাকতো তবে হয়তো দেশ এতোটা লুটেরা বিপর্যয়ের মুখোমুখি পতিত হতো না। একাত্তরের পরাজিত রাজাকারশক্তি, দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দলের নানাভাবে আনুক‚ল্য পেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠেছে। এ কথা আজ অনেকেই ভুলে যেতে বসেছেন। সংবিধান বলছে, ভূমি-মানুষ-সার্বভৌমত্ব-সমাজ রক্ষা এবং এর উন্নতি সাধন করাই একটি সরকারের প্রধান দায়িত্ব। এর প্রয়োজনে তাদের যতটা দরকার জবাবদিহি করতে কারোরই কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। শেষ পর্যন্ত দেশে যে সব দল টিকে থাকবে এবং যারা ক্ষমতায় যাবে, তাদের সবারই এ চিন্তাটি মাথা রাখতে হবে। এ সুযোগ উন্মুক্ত হলে পাল্টে যেতে বাধ্য দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি। প্রখ্যাত সাহিত্যিক ড. হুমায়ুন আজাদের একটি বিখ্যাত কবিতা আছে, ‘আমি বেঁচেছিলাম অন্যদের সময়ে’। হ্যাঁ, নিজ সত্তা নিয়ে অন্যদের সময়ে বেঁচে থাকা বড় দুঃখজনক এবং কঠিন কাজ। ১৯৭১ থেকে ২০১৭। একটি প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের জন্য কম সময় নয়। এর কম সময়ে বিশ্বের অনেক দেশ আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ পারেনি- সেটা বলছি না। কিন্তু এ দেশটি আরো শান্তিময় হয়ে উঠতে পারতো। আরো নিরাপদ থাকতে পারতো এ দেশের মানুষ।
একটি রাষ্ট্রে সৃজনশীল বিবর্তন সবসময়ই কাম্য হয়। কারণ নান্দনিক পরিবর্তন, ভাঙচুরের মাধ্যমেই এগিয়ে যায় মানবসমাজ। গেলো এক যুগে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ফিল্ডে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে বলা যায়। এর পাশাপাশি অবশ্য নানা শঙ্কা-সংকটও বেড়ে উঠেছে নানাভাবে। মনে পড়ছে প্রখ্যাত কথাশিল্পী শ্রদ্ধেয় শওকত ওসমান একটি সেমিনারে বলেছিলেন, সংস্কৃতির আবিষ্কার এবং আগ্রাসন দুটিই আছে। প্রজন্মকে ঠিক করতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কোনটা গ্রহণ করবে।
আজকের প্রজন্মকে পরিশুদ্ধ রাজনীতির আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে। দাঁড় করাতে হবে রাজনীতিকদেরও। মানুষ এ কাজটি করতে পারে সহজেই। নিজ স্বার্থের জন্য কোনো নেতা কিছু একটা বললেই তা মানতে হবে কেন? মানুষ যতক্ষণ বিবেকবান না হয়- ততক্ষণ একটি জাতি সামনে এগোতে পারে না।
=====================================================
দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সোমবার

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.