নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বহির্বিশ্বে বাংলা একাডেমির বইমেলা শুধু লন্ডনে কেন?

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৪




বহির্বিশ্বে বাংলা একাডেমির বইমেলা শুধু লন্ডনে কেন?
ফকির ইলিয়াস
======================================================
বাংলাদেশের বাইরে বাংলা একাডেমি আরো একটি বইমেলার আয়োজন করে দুদিনব্যাপী। এই মেলাটি ইংল্যান্ডের শহর লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১০ সাল থেকে এই বইমেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। ২০০৯ থেকে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক শামসুজ্জামান খান। মূলত তার উদ্যোগেই বিদেশে এই দুদিনের বইমেলাটির আয়োজন করা হচ্ছে। বহির্বিশ্বে এমন একটি নান্দনিক কর্মযজ্ঞ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের উদ্যোগে এবং ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক পরিষদ, যুক্তরাজ্য’-এর আয়োজনে ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনে মোট সাতটি ‘বাংলা একাডেমির বইমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই মেলাকে কেন্দ্র করেই ২০১১ সাল থেকে বাংলা একাডেমি প্রবর্তন করে ‘প্রবাসী লেখক পুরস্কার’। ২০১৪ সালে এটির নামকরণ করা হয়, ‘বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’। পরবর্তী সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ বইমেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব’। বাংলা একাডেমি ২০১১ সালে যে ‘প্রবাসী লেখক পুরস্কার’টি প্রবর্তন করে, তা প্রথমবারের মতো লাভ করেন ইংল্যান্ড অভিবাসী কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক কাদের মাহমুদ। এর পরের বছর কথাশিল্পী সালেহা চৌধুরী এবং ডা. মাসুদ আহমেদকে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি ‘প্রবাসী লেখক পুরস্কার-২০১২’ প্রদান করা হয়। তারা দুজনেই গ্রেট ব্রিটেন প্রবাসী।
২০১৩ সালে প্রবাসে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান যুক্তরাজ্যবাসী দুজন, লেখক ও সাংবাদিক ইসহাক কাজল ও লেখক-গবেষক ফারুক আহমদ এবং জার্মানবাসী লেখক ও বিজ্ঞান-গবেষক ড. মোহাম্মদ জাকারিয়া। ২০১৪ সালে ‘বাংলা একাডেমি প্রবাসী সাহিত্য পুরস্কার’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’ করা হয়। সেই বছর এই পুরস্কার পান কানাডা প্রবাসী দুই লেখক ইকবাল হাসান ও সৈয়দ ইকবাল এবং যুক্তরাজ্যের ব্রিটিশ লেখক-অনুবাদক-গবেষক উইলিয়াম রাদিচি।
২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত এই ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার’ পান যুক্তরাজ্য প্রবাসী লেখক মঞ্জু ইসলাম ও ফ্রান্স প্রবাসী ফ্রান্স ভট্টাচার্য। বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ‘সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’-এর জন্য মনোনীত হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী কবি শামীম আজাদ এবং জার্মানপ্রবাসী লেখক ও গবেষক নাজমুন নেসা পিয়ারি। ২০১৭-এর বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানে তারা এই পুরস্কার পাচ্ছেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের বাইরে এখন গড়ে উঠেছে একটি বড় অভিবাসী সমাজ।
১৯৯২-৯৫ সময়ে বেশ কয়েক দফা ইংল্যান্ডে দীর্ঘকালীন আমি অবস্থান করি। সেই সময়ে অনেক সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মাকাণ্ডে আমার অংশ নেয়ার সুযোগ হয়েছে। চলতি সময়ে এর প্রসার অনেক বেড়েছে। একই সঙ্গে ইউরোপ-আমেরিকার অন্যান্য দেশেও বেড়েছে এর ব্যাপক ব্যাপ্তি। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বড় আয়োজনের বইমেলা হচ্ছে বিগত ২৬ বছর থেকে। ‘বাঙালির চেতনা মঞ্চ ও মুক্তধারা’র আয়োজনে নিউইয়র্কে ১৯৯২ সালে প্রথম বইমেলাটির উদ্বোধক ছিলেন ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত।
মুক্তধারার উদ্যোগে ২০০৪ সালে দুটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। ওই বছর নিউইয়র্কের বইমেলা উদ্বোধন করেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও লস এঞ্জেলেসে রাবেয়া খাতুন। ২০০৫ সালের বইমেলার উদ্বোধক ছিলেন ড. আবদুন নূর। ২০০৬ সালে পঞ্চদশ বইমেলা উদ্বোধন করেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আঙ্গিকে বইমেলা শুরু হয়েছে ২০০৭ সাল থেকে। বইবিপণী ‘মুক্তধারা’র সহযোগী সংগঠন ‘মুক্তধারা ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে বইমেলা রূপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসবে। এই উৎসবের অংশ হিসেবে চারটি বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০০৭ সালে। নিউইয়র্কে ড. গোলাম মুরশিদ, ডালাসে ড. আনিসুজ্জামান, লস এঞ্জেলেসে সমরেশ মজুমদার এবং নিউজার্সিতে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এসব বইমেলা উদ্বোধন করেন।
২০০৮ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি রফিক আজাদ। ২০০৯ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন হাসান আজিজুল হক। ২০১০ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি সৈয়দ শামসুল হক। ২০১১ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন তপনরায় চৌধুরী। ২০১২ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন শামসুজ্জামান খান। ২০১৩ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। ২০১৪ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন কবি মহাদেব সাহা। ২০১৫ সালে বইমেলা উদ্বোধন করেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। ২০১৬-এর নিউইয়র্ক বইমেলা উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা (এবিসি সম্মেলন) সম্মেলনও আয়োজিত হয়েছে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। ২০০৯ সালের ১১, ১২ জুলাই নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয় এই আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা সম্মেলন। সেমিনারগুলোর আলোচনার বিভিন্ন পর্বে অংশ নেন অধ্যাপক আলী আনোয়ার, দিলারা হাশেম, সমরেশ মজুমদার ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১০ সালের দ্বিতীয় এবিসি সম্মেলনে নিউইয়র্কে ম্যারি লুইস একাডেমির সুবিশাল চত্বরে এ সম্মেলন ছিল অভিবাসী বাঙালির প্রাণের মেলা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য তো বটেই, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া থেকেও শিকড় সন্ধানী বাঙালি অভিবাসীরা ছুটে এসেছিলেন এই সম্মেলনে। এই সম্মেলনে কবি শহীদ কাদরীর হাতে ‘এবিসি সম্মেলন সম্মাননা পদক’ তুলে দেন সাবেক রাষ্ট্রদূত আরেকজন কৃতী বাংলাদেশের সন্তান ড. ওসমান সিদ্দিক। কবি শহীদ কাদরী গভীর আপ্লুত হয়ে বলেন, কবিতা লিখে এমন বিরল সম্মান পাব, তা কোনোদিন ভাবিনি। তিনি প্রজন্মকে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি চর্চায় গভীর অনুরাগী হওয়ার আহ্বান জানান।
২০১২ সালের জুন মাসের ২৩ ও ২৪ তারিখে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট বাঙালিরা অংশ নেন তৃতীয় এবিসি সম্মেলনে। নিউইয়র্কের বিশ্ববিখ্যাত ‘এস্টোরিয়া ওয়ার্ল্ড ম্যানর’ সেজেছিল বর্ণাঢ্য সাজে। ‘আমেরিকা-বাংলাদেশ-কানাডা’ কনভেনশনের আহ্বায়ক ছিলেন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক, সাপ্তাহিক ঠিকানার চিফ অপারেশন অফিসার (সিওও) সাঈদ-উর-রব। এই সম্মেলনে অতিথি ছিলেন শাহীদ কাদরী, সৈয়দ শামসুল হক ও ফরহাদ মজহার। মার্কিন মুলুকের বাঙালিদের অনেক বড় বড় সম্মেলন করার অভিজ্ঞতা ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর বিশ্বের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত নিউইয়র্কে অভিজাত পেনসিলভেনিয়া হোটেলের দি প্যান প্লাজা অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশ কনভেনশন। ‘এনএবিসি’খ্যাত এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. ওয়াকিল আহমেদ। অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান, কথাসাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সতিনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
কনভেনশনের শেষ সেমিনারটি ছিল ‘বাংলা সাহিত্যচর্চার গুণগত মান : অতীত ও বর্তমান’। এটি উপস্থাপনার দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। এতে মূল প্রবন্ধ পড়েন ড. সালাহউদ্দিন আইয়ুব। স্বপ্নময় চক্রবর্তী বলেন, লেখক তার মতো করেই লিখবেন। গুণগত মান নির্ণয় করবে মহাকাল। অতীতে কি ছিল আর ভবিষ্যতে কি হবে, তা বলা কঠিন। তারপরও আমাদের আশাবাদ সাহিত্য মানুষের জন্য পুষ্পবর্ষণ করে যাবে পথে পথে। এসব কথাগুলো এজন্য লিখলাম, যুক্তরাষ্ট্রে এখন গড়ে উঠেছে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি বড় কাফেলা। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলা একাডেমি কি সেই খবর রাখছে না। যদি রাখে, তাহলে এই বইমেলা যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত হচ্ছে না কেন? পরপর সাত বছর ইংল্যান্ডে তা আয়োজিত হয়েছে। একাডেমি কি কোনো লিখিত/অলিখিত বিধান করে নিয়েছে এই বইমেলা শুধু যুক্তরাজ্যেই হবে? তা জানতে চাইছেন যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসী লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সংগঠকরা।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট লেখক-সাহিত্যিক হাসান ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, ‘শুধু লন্ডন নয়, এই মেলা বিশ্বের অন্যান্য শহরে, যেখানে বড় সংখ্যায় বাংলা ভাষাভাষীদের বসবাস, সেখানেই এই মেলা বসুক, সেটাই আমরা চাই। যেমন, নিউইয়র্ক শহরে ও তার আশপাশে তিন লাখ বা তার চেয়ে বেশি বাঙালির বাস। বাংলা একাডেমি যদি এখানেও তাদের বইমেলা নিয়ে আসে, আমরা সবাই তাকে স্বাগত জানাব। হয়তো একাধিক শহরে প্রতি বছর এই মেলার আয়োজন বাংলা একাডেমির পক্ষে সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের প্রধান শহরগুলোতে এই মেলা আবর্তিত হতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এক বছর লন্ডন তো পরের বছর নিউইয়র্ক বা প্যারিস। বাংলা একাডেমি একা এই মেলা সফলভাবে আয়োজনে সক্ষম হবে না, এজন্য প্রয়োজন পড়বে স্থানীয় আয়োজকদের। এই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতেই লন্ডনের মেলাটি গত কয়েক বছর ধরে আয়োজিত হচ্ছে।
প্রশ্ন করেছিলাম বিশিষ্ট কবি ও টিভি অ্যাঙ্কর তমিজ উদদীন লোদীকে। তিনি বলেন, ‘বাংলা একাডেমির উদ্যোগে বহির্বিশ্বে প্রথম এবং একমাত্র যে বইমেলাটি শুরু হয় তা ২০১০ সালে ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে। শুরু থেকেই এটি প্রবাসীদের মধ্যে সাড়া জাগায়। প্রথমত, এটি লন্ডন প্রবাসীদের মধ্যে সীমিত থাকলেও খুব দ্রুত এটি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যেও আগ্রহের সঞ্চার করে। পরবর্তী সময় এটি আরো গুরুত্ব পায় যখন থেকে প্রবাসী সাহিত্য পুরস্কার সংযোজন করা হয়। যেটি ২০১৪ সাল থেকে নাম পরিবর্তন করে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার করা হয়েছে।
ইদানীংকালে যে প্রশ্নটি মূলত উত্তর আমেরিকার সাহিত্য সংস্কৃতি মহলে উচ্চারিত হচ্ছে তা হলো, এই বই মেলাটি কি শুধু লন্ডনে হবে বলেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, নাকি এটি ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং উত্তর আমেরিকায়ও করা যাবে? যদি যায় তবে কেন করা হচ্ছে না? অপরদিকে যদি এটি শুধু লন্ডনেই করার সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তাহলে কেন এই সিদ্ধান্ত? লন্ডনের পাশাপাশি এটি তো ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং উত্তর আমেরিকায়ও করা যেতে পারে।
কবি তমিজ উদদীন লোদী আরো বলেন, ‘আপনি নিশ্চয় জানেন, উত্তর আমেরিকা তথা এই নিউইয়র্ক শহরে প্রতি বছর মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে অত্যন্ত সফলভাবে বইমেলা আয়োজিত হয়ে আসছে। এখানকার বাংলা ভাষাভাষী সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীরা এটি সফলভাবেই সম্পন্ন করছেন এবং এতে দেশ-বিদেশের কবি-লেখক-প্রকাশকরা অংশগ্রহণ করছেন। সে জন্য নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলা একাডেমির উদ্যোগ ও অর্থায়নে যদি এখানে বইমেলার আয়োজন করা হয় তাহলে এটিও সফলভাবে আয়োজন করা সম্ভব। এটি আয়োজন করার শক্তি-সামর্থ্য কিংবা মেধা ও মনন নিউইয়র্কবাসী সাহিত্য সমাজের যথেষ্টভাবেই রয়েছে।’ একই বিষয়ে আমি মুখোমুখি হই সংগঠক-প্রাবন্ধিক আদনান সৈয়দের। তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষা এখন শুধু বাংলাদেশ কিংবা কলকাতা শহরের চার দেয়ালে বন্দি কোনো ভাষা নয়। এই ভাষা এখন গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এই ভাষায় পৃথিবীর নানান প্রান্তে শিল্প-সাহিত্য চর্চা হচ্ছে। বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বহির্বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে দুটো শহরে বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং সাহিত্য নিয়ে বিভিন্নরকম কাজ হচ্ছে তা হলো লন্ডন এবং নিউইয়র্ক। এই দুটো শহরেই বাঙালি সংখ্যার দিক থেকে তো বটেই মেধার দিক থেকেও যথেষ্ট উচ্চ একটি পর্যায়ে নিজেদের নিয়ে গেছে। দেখতে পাই, বাংলা একাডেমি বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতিকে গোটা পৃথিবীতে তুলে ধরার জন্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই কার্যক্রমগুলোর অন্যতম একটি হলো বাংলাদেশের বাইরে প্রতি বছর বইমেলা উদযাপন করা। ইতিমধ্যে বাংলা একাডেমির আয়োজনে লন্ডনে বেশ আয়োজন করেই বইমেলা উৎসব শুরু হয়েছে। বিষয়টি আমাদের ভাষা এবং সাহিত্যের জন্যে অবশ্যই এক বড় প্রাপ্তি। তবে বাংলা একাডেমির এই কার্যক্রম শুধু লন্ডন কেন্দ্রিক না হয়ে সেটি ধীরে ধীরে গোটা পৃথিবীর বিভিন্ন বাঙালি প্রধান অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়লে আমাদের ভাষা এবং সংস্কৃতি আরো অনেক বেশি লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নিউইয়র্ক শহরকে বলা হয় বাংলা শিল্প-সাহিত্যের অন্যতম একটি তিলোত্তমা নগর। প্রবাসী বাঙালিদের পদচারণায় এই নগর এখন বাংলা শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি শহরে পরিণত হয়েছে। এই শহরে বাংলা একাডেমি আয়োজনে একটি জমজমাট বইমেলা হবে- এটি একদিক থেকে যেমন সময়ের দাবি, পাশাপাশি খুব প্রাসঙ্গিকও।’ হ্যাঁ, এখন প্রশ্ন একটিই- বহির্বিশ্বে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা শুধু লন্ডনে কেন?
----------------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:০৭

মিজান মোহাম্মদ বলেছেন: দারুণ সারগর্ভ লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.