নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের মানুষ ও পদ্মাসেতু

০১ লা মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:৫৮




বাংলাদেশের মানুষ ও পদ্মাসেতু
ফকির ইলিয়াস
===============================================
পদ্মাসেতু হচ্ছে, কাজ এগিয়ে চলেছে। হ্যাঁ, সবকিছু ঠিক থাকলে এই প্রকল্প সময় মতোই শেষ হবে। কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, এ নিয়ে বাংলাদেশ কোনো দুর্নীতি করেনি। টরন্টোর এক আদালত বিষয়টি খোলাসা করেছে। কানাডার মন্ট্রিলভিত্তিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে নির্দোষ রায় দিয়ে খালাস দিয়েছেন ওই আদালত।
এই রায়ের ফলে জিতেছেন বাংলাদেশের মানুষ। জিতেছে বাংলাদেশ। পদ্মাসেতু প্রকল্পে যে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক, তা থেকে বাংলাদেশ রেহাই পেয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। কিন্তু দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ এনে ২০১২ সালে এ প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। অভিযোগ ছিল, কানাডীয় কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনকে কাজ পাইয়ে দিতে দুর্নীতির চেষ্টা হচ্ছে। এতে সরকারি, বেসরকারি কর্মকর্তা ও এসএনসি-লাভালিনের কর্মকর্তারা জড়িত। ওই সময় রয়্যাল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশকে (আরসিএমপি) এই খবর জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংকের ইন্টিগ্রিটি ভাইস প্রেসিডেন্সি (আইএনটি) বিভাগ। এ নিয়ে কানাডার আদালতে মামলা হয়। এই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন এসএনসি-লাভালিনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডীয় ব্যবসায়ী জুলফিকার আলী ভূঁইয়া।
এই ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি মিডিয়াকে বলেছেন, ‘কানাডার আদালতের এই রায় প্রমাণ করে, পদ্মাসেতু নিয়ে আমাকে জড়িয়ে বিশ্বব্যাংক যে অভিযোগ করেছে, তা সর্বৈব মিথ্যা।’
পদ্মাসেতু দুর্নীতির মামলায় সাবেক সেতুসচিব ও বর্তমান শিল্পসচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে সেই সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে তিনি জামিন পান। তিনি বলেছেন, ‘এখন অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছে, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে কিছু করবো কি না। আমি মনে করি সেটার আর প্রয়োজন হবে না। কারণ বিশ্বব্যাংকের শিক্ষা অনেক আগেই হয়ে গেছে। পদ্মাসেতু প্রকল্পে না থাকতে পারাটা তাদের জন্য বিরাট ক্ষতি, এটা তারা স্বীকারও করেছে। এ জন্য ওই সময়ে থাকা অনেকের চাকরিও গেছে।’
পুরো ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি বিশ্বব্যাংক, সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের কড়া সমালোচনা করেছেন। এই প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছিল বলে যেসব সমালোচনাকারী সরব হয়েছিলেন, তাদের ক্ষমা চাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন জয়। তিনি আরো লিখেছেন, ‘বিশ্বব্যাংক মনগড়া প্রমাণ হাজির করেছিল। আমি নিজে এসব প্রমাণপত্র দেখেছি। এগুলো একেবারে বানানো। কোনো কিছুরই বিশদ প্রমাণ নেই। একটা অজানা সূত্রের কথা বলা হয়েছিল। যার নাম কখনো প্রকাশ পায়নি। এমনকি কানাডার আদালতও তা খুঁজে পাননি।’
সজীব ওয়াজেদ জয় মোটেও বাড়িয়ে বলেননি। এই ঘটনার মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশের মানুষকে ছোট করা হয়েছিল। হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছিল। কারা করেছিল এটা? কী মতলব ছিল এর নেপথ্যে? দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদগুলো থেকে আমরা জানছি- কানাডার সুপেরিয়র কোর্ট জাস্টিস ইয়ান নর্ডেইমারের সামনে ফেডারেল ক্রাউন এটর্নি তানিত গিলিয়াম বলেন, তিনি আর কোনো তথ্যপ্রমাণ চাইবেন না। একই সঙ্গে তিনি বিচারকের কাছে এসএনসি লাভালিনের ওই তিন কর্মকর্তাকে খালাস দেওয়ার আবেদন করেন। তিনি আদালতে স্বীকার করেন, ‘ওয়্যাটেপ’ প্রমাণ ছাড়া তার কাছে আর কোনো প্রমাণ নেই, যার ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিদের যৌক্তিকভাবে অভিযুক্ত করা যায়। ইয়ান নর্ডেইমার এর আগে রায় দিয়েছিলেন, আরসিএমপির এক কর্মকর্তা অভিযুক্ত ওইসব ব্যক্তির ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা কথোপকথনে আড়ি পেতে পাওয়া যে তথ্য হাজির করেছেন তার যথার্থ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই ফোনে আড়ি পেতে পাওয়া তথ্যপ্রমাণ নাকচ করে দেন আদালত। একই সঙ্গে আরসিএমপির তদন্তের সমালোচনা করা হয়। বিচারক ইয়ান নর্ডেইমার তার দেওয়া রায়ে লিখেছেন, ‘ইনফরমেশন টু অবটেইন (আইটিও)তে পাওয়া যেসব তথ্য হাজির করা হয়েছে তা আন্দাজ (স্পেকুলেশন), পরচর্চা (গসিপ) ও গুজব (রিউমার) ছাড়া কিছু নয়। সরাসরি বাস্তবসম্মত প্রমাণ উপস্থানে কিছুই করা হয়নি, যা দিয়ে ওইসব রিউমার ও স্পেকুলেশনকে সমর্থন করা যায়।’
আমরা ভুলে যাইনি পদ্মাসেতুতে এই দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক তার অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল। বলা হয়েছিল ২৯০ কোটি ডলারের পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজ এসএনসি-লাভালিনকে পাইয়ে দিতে এ সংস্থার ওই তিন কর্মকর্তা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ অভিযোগে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে পিছিয়ে পড়ে। ওই প্রকল্পে বাংলাদেশ সরকার ৫ কোটি ডলারের নির্মাণ সুপারিভিশন কন্ট্রাক্ট করার জন্য কোম্পানি খুঁজছিল। পদ্মাসেতু প্রকল্পে প্রাথমিক ঋণদাতা হিসেবে এগিয়ে এসেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু সবই এলোমেলো হয়ে যায় ওই কথিত দুর্নীতির খবরে।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, যারা এই দানবীয় ষড়যন্ত্র করেছিল- তারা কি পেরেছে পদ্মাসেতু ঠেকাতে? না, পারেনি। প্রথম থেকেই বাংলাদেশ সরকার দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের সরে দাঁড়ানোর চূড়ান্ত ঘোষণার একদিন আগেই নিজস্ব অর্থায়নে এই পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সরকার। নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মাসেতু হচ্ছে। ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকার এ প্রকল্পে এই পর্যন্ত ৪০ শতাংশের মতো বাস্তবায়িত হয়েছে।
আমাদের মনে আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব স্পষ্ট করে বলেছিলেন- ভিক্ষা চেয়ে নয়, হাত পেতে নয়, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরি করছে। তিনি জোর দিয়েই বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশ পারবে। আমি বিশ্বাস করি। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। এখন এ স্বাধীন দেশের মানুষই পদ্মাসেতু নির্মাণ করবে। শত বাধার মুখেও বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, তারা পারে। অনেক ঝড়-ঝাপ্টা-চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। অনেক বাধার পর আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছি। এখন এ কাজ যেন নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারি সে জন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই।’
পদ্মাসেতু করার সাহস বাঙালি জাতিকে একটি আলাদা গরিমা দিয়েছে। মনে পড়ছে, ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে এ কথা বলেছিলেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন- ‘পদ্মাসেতু বাস্তবায়নে একদিকে আমরা যেমন বদ্ধপরিকর, তেমনি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরা কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করবো না। আমি দুদকের তদন্তকাজে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলের সম্পৃক্তিও চাই। বিশ্বব্যাংক আমাদের অনুরোধ রেখেছে এবং বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, এতে অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো প্রভাব পড়বে না এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কার্যক্রমে তারা সম্পৃক্ত থাকবে।’ তিনি এও বলেছিলেন- ‘আমি বলতে চাই, প্রথমত, পদ্মাসেতু প্রকল্পে এখন পর্যন্ত কোনো দুর্নীতি হয়নি। দ্বিতীয়ত, দুর্নীতির সম্ভাবনা নিয়ে যেসব কথা উঠছে, এর প্রতিটি বিষয়ই আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশন গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছে এবং করছে। আমাদের লক্ষ্য হলো, এই প্রকল্পে যেখানে আমাদের দেশের সব মানুষ আগ্রহান্বিত ও নিবেদিত, সেখানে কোনো ধরনের দুর্নীতি হতে আমরা দেবো না। পদ্মাসেতুতে উন্নয়ন-সহযোগীদের অর্থায়ন আর নেই। কিন্তু তারা যেসব দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের কথা বলছে, সেগুলো আমরা তদন্ত করছি এবং তদন্ত চূড়ান্ত করে তার প্রতিকার করবো।’ অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে এই মহান সংসদে ঘোষণা করছি, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতুর বাস্তবায়ন আমরা এই অর্থবছরেই শুরু করছি। আমরা সারা জাতিকে নিশ্চিত করতে চাই যে এই প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি চলবে না।’
বাংলাদেশের মানুষ চিঠি দিয়ে, সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন প্রয়োজনে তারাও এই প্রকল্পে যথাসাধ্য অর্থ দেবেন। দশ টাকা, বিশ টাকা দিয়ে হলেও এগিয়ে আসতে চেয়েছিলেন এই দেশের আপামর মানুষ। এই যে মানুষের শক্তি- সেটাই সম্ভব করেছে পদ্মাসেতুর অগ্রযাত্রা।
২০১৮ সালের মধ্যে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। এই সেতুর উপর দিয়ে ট্রেনও চলবে। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এই পদ্মা সেতু। প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এই সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ২১ জেলা। এ সেতু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ১.২ শতাংশ বাড়বে, প্রতিবছর ০.৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচন হবে বলে আশা করছে সরকার।
হ্যাঁ- বাংলাদেশ বীরের দেশ। শহীদের দেশ। ভাষা আন্দোলনের দেশ। এই দেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে জানে। তারা দাঁড়িয়েছেনও। পদ্মাসেতু প্রকল্প আমাদের পাঁজরকে শক্ত করেছে। আমরা এই শক্তিকে আরো পরিণত করতে পারবো।
-----------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ মঙ্গলবার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:৫২

দীপ্ত দেব অপু বলেছেন: ধন্যবাদ, অনেক তথ্য জানতে পারলাম।

২| ০১ লা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:



"এই রায়ের ফলে জিতেছেন বাংলাদেশের মানুষ। জিতেছে বাংলাদেশ। "

-বিচার কি বাংলাদেশের মানুষের হচ্ছিল? বিচার তো হচ্ছিল লাভালীনের ও যারা লাভালীন থেকে ঘুষ নিয়েছে তাদের; বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে জিতিতেছে? একটু ভালো খাওয়া দাওয়া করেন, না'হলে মগজ ঠিক মতো লজিক্যালী ভাবতে সক্ষম হবে না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.