নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছাত্ররাজনীতির শক্তি, প্রজন্মের মনীষা

১২ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:০০




ছাত্ররাজনীতির শক্তি, প্রজন্মের মনীষা
ফকির ইলিয়াস
================================================
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন মাননীয় চ্যান্সেলর, রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বিভাগ, ইনস্টিটিউট ও গবেষণাকেন্দ্র খোলার প্রশংসা করেছেন রাষ্ট্রপতি। সন্ত্রাসবাদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী হলেও পঁচাত্তরের হত্যাযজ্ঞের ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির লড়াই, প্রগতি ও প্রতিক্রিয়া, শুভ ও অশুভ এবং ধর্মপরায়ণতা ও ধর্মান্ধতার লড়াই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে শেষ হয়ে যায়নি। আজকের লড়াইয়ে শুভশক্তি জয়ী না হলে রাষ্ট্র হিসেবে, জাতি হিসেবে আমরা আবার পিছিয়ে যাবো। মুখ থুবড়ে পড়বে আমাদের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির চাকা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁক বদলের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই যুগের বেশি সময় ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় রাজনীতিকদের মধ্যে খেদ রয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে নাম লেখানো আবদুল হামিদ তার সময়কার এবং বর্তমানের তুলনা করে হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেছেন, আমাদের সময়ের রাজনীতি আর আজকের ছাত্ররাজনীতির মধ্যে তফাৎ অনেক বেশি। ষাটের দশকে আমরা যারা ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল দেশ-জাতির কল্যাণ। দেশের মানুষকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের কোনো স্থান ছিল না। ছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতো, নেতৃত্ব দিতো। একটা খুব সহজ প্রশ্ন এখানে করা প্রয়োজন। ছাত্ররাজনীতি কী এবং কেন তা করা দরকার। বাংলাদেশে ছাত্রসমাজ সব সময়ই সাধারণ গণমানুষের বিবেকের প্রতীক হিসেবেই প্রতীয়মান হয়ে আসছে। ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুথান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের গণআন্দোলন, এমনকি জাতির খরা, দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা, পরিবেশ আন্দোলনেও এই জাগ্রত ছাত্রসমাজ অতন্দ্র ভ‚মিকা পালন করেছে। যা জাতির ইতিহাসে স্বর্ণোজ্জ্বল হয়েই লেখা আছে এবং থাকবে। গরীয়ান ছাত্রসমাজ অতীতে কখনই ভোগবাদী ছিল না।
এই ছাত্রসমাজকে ভোগবাদী করে গড়ে তুলতে অত্যন্ত ঘৃণ্য ভ‚মিকা রাখেন দেশের একজন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। তার বক্তব্য ছিল- ‘আই নিড ইউ ইয়াংম্যান’। বিনিময়ে তিনি চালু করেছিলেন ছাত্রদের মাঝে ‘গিভ এন্ড টেক’-এর রাজনীতি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশে সামরিক জান্তারা দাপট বাড়াতে শুরু করে। তখন তাদের নিজস্ব ভিত টিকিয়ে রাখার জন্য দুটো ঘৃণ্যতম কাজ করতে হয়। প্রথমটি হচ্ছে মৌলবাদী রাজাকার শক্তিকে সর্বতোভাবে পুনরুত্থান করা। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে দেশের শাণিত ছাত্রসমাজকে লোভ-লালসা দিয়ে কলুষিত করা।
জেনারেল জিয়া প্রথমে যে দলটি করেন এর নাম ছিল জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল)। পরে নাম পাল্টিয়ে তাকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) করেন। এর পাশাপাশি ছাত্রদের দিয়ে দল গঠনের খায়েশে জিয়াউর রহমান বিভিন্ন জেলা সফর করেন এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ছাত্রনেতাদের লোভ-লালসা দেখিয়ে ছাত্রদলে টানার চেষ্টা করেন সরাসরি। একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বলতে পারি, জিয়াই সেই ব্যক্তি যিনি ১৯৭৭-৭৮ সালে জেলা পর্যায়ের ছাত্রনেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে ‘যে কোনো মূল্যে’ ছাত্রদল দাঁড় করার ঘোষণা দেন। জাসদ ছাত্রলীগের বেশকিছু ছাত্র নেতা, ডানপন্থী এবং বামপন্থী বিভিন্ন দলের ছাত্রনেতাকে বাগিয়ে বিভিন্ন প্রধান প্রধান জেলাগুলোতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি গঠনে সমর্থও হন।
বাংলাদেশের ছাত্রসমাজকে ভোগবাদী এবং সন্ত্রাসী করে তুলতে এতে নতুন মাত্রা যোগ করেন আরেক সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদ। তিনি ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছাত্রদেরই নিজেদের প্রতিপক্ষ করে গড়ে তোলাতে আন্ডারগ্রাউন্ড জোগানদারও নিয়োগ করেন। যারা প্রাক্তন ছাত্রনেতা হিসেবে ছাত্রদের মধ্যে যোগসাজশ তৈরি করে মূলত শিক্ষাঙ্গনকে নৈরাজ্যক্ষেত্র বানাতে ভূমিকা রাখেন। সে সব ঘটনা বাঙালি জাতি ভুলে যায়নি। কোনোদিন যাবেও না। প্রায় একই প্যারালাল সূত্রে বাংলাদেশে ক্রমশ বিস্তার লাভ করে ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’। অখণ্ড পাকিস্তানে ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ নামে জামায়াতের যে ছাত্র সংগঠনটি ছিল, পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে এরাই নতুন নামে আবির্ভূত হয়। এটা দেশবাসীর স্পষ্ট মনে আছে, শুরুতে ছাত্রশিবির কিন্তু কোনোমতেই নিজেদের জামায়াতের ছাত্রসংগঠন বলে পরিচয় দিতে রাজি হতো না। তারা নিজেদের স্বতন্ত্র ইসলামী ছাত্র সংগঠন বলে দাবি করলেও তা বেশিদিন চালাতে পারেনি। উন্মোচিত হয়ে পড়ে তাদের মুখোশ। জামায়াত ও শিবিরের একই এজেন্ডা দেখে দেশবাসীর বুঝতে অসুবিধা হয়নি, একটি মিথ্যা পরিচয় দিয়েই এরা যাত্রা শুরু করেছিল। এরপর তারা এ দেশের শিক্ষাঙ্গনে, কিরিচ, কুড়াল, রামদা প্রভৃতিসহ রগকাটার সংস্কৃতি চালু করে, যা ক্রমে ক্রমে গোটা দেশের শিক্ষা পরিবেশকে দূষিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করে। ছাত্রদের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত, তা বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে তাকালেই জানা এবং বোঝা যায়। বাংলাদেশের ছাত্ররা গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে জাতীয় প্রয়োজনে। বলা দরকার, এখনও রাজনীতিকরাই ছাত্রদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন নিজেদের স্বার্থেই। যদিও তারা তাদের সন্তানদের পাঠাচ্ছেন বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নেওয়ার জন্য। আমি মনে করি এটাও রাজনীতিকদের এক ধরনের আত্মপ্রতারণা।
রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে যা বলেছেন- তা আমাদের ভাবিয়েছে। এখনকার অবস্থা তুলে ধরে করে তিনি বলেছেন, ছাত্ররাজনীতির বর্তমান হালচাল দেখে মনে হয় এখানে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থের প্রাধান্য বেশি। কিছু ক্ষেত্রে অছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতির নেতৃত্ব দেয়, নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ছাত্ররাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের, এমনকি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা, সমর্থন ও সম্মান হ্রাস পাচ্ছে। এটি একটি দেশ ও জাতির জন্য শুভ নয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে ছাত্র রাজনীতিকে সঠিকপথে পরিচালিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থক ছাত্রলীগের বিষয়ে কিছু কথা বলা দরকার। ছাত্রলীগের সুনাম ক্ষুণ্ন করছে কারা? তা খতিয়ে দেখা দরকার। বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে গতিশীল করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডকেই নিতে হবে। আচ্ছা, আজ যারা ছাত্রলীগ করেন- তারা কি বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পড়েছেন? বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সুযোগ্য নেতৃত্বের হাতে তুলে দেওয়া দরকার। ছাত্র নামধারী অছাত্রদের হাত থেকে বাঁচিয়ে ছাত্রলীগে গণতান্ত্রিক নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা দরকার। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ছাত্রলীগের যোগ্য নেতৃত্বই পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এসেছে। তাই অঞ্চলভিত্তিক নয়, জাতীয়ভিত্তিক মেধা বিবেচনায়ই ছাত্রলীগের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ বিষয়ে ভূমিকা নেওয়ার জন্য ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতাদের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হোক। আমরা জানি, ছাত্রলীগের সব সদস্যই অপরাধকর্মে জড়িত নয়। তাই যারা বিবেক জলাঞ্জলি দিয়ে ছাত্রলীগে কোন্দল, সন্ত্রাস করছে এদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বিষয়টি খুবই স্পষ্ট, বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। তাই আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই ছাত্রলীগকে ঢেলে সাজাতে হবে। একই কাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল দলের করা দরকার। ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রসমাজ মুখ্য ভ‚মিকা পালনের কথা। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার লক্ষ্যে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ঘোষিত কর্মসূচিকে বাংলাদেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ সকল পেশার লোক পূর্ণ সমর্থন করে। ২৭ নভেম্বর পুলিশের গুলিতে ডাক্তার মিলনের মৃত্যুতে এ আন্দোলন আরও জোরদার হয়। ২৮ নভেম্বর ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মিছিলে নামলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের লোকেরা ছাত্রদের সমর্থন জানায়। উপায়ান্তর না দেখে এরশাদ সরকার পদত্যাগ করে। এর মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিদেশের অনেক দেশের মতো নয়। এখানে প্রজন্মের মনীষাকে শাণিত করতে সঠিক ইতিহাসের চর্চা করতে হবে। যারা ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে কথা বলছেন, তাদের যুক্তি হলো, রাতারাতি বড় হওয়ার আকাক্সক্ষা, হীনস্বার্থের মানসে সরকার ও কতিপয় রাজনৈতিক দল কর্তৃক সন্ত্রাসকে উৎসাহ প্রদান করছে। এরাই ছাত্ররাজনীতিতে সন্ত্রাসের জন্ম দিচ্ছে। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার প্রয়োজন। পক্ষান্তরে ছাত্ররাজনীতির পক্ষের বিশ্লেষকেরা বলছেন, আমরা মাথাব্যথা হলে ওষুধ সেবন করি কিন্তু মাথা কেটে ফেলে দিই না। অনুরূপভাবে, দুর্ঘটনা ও বহিষ্কারের ভয়ে গাড়ি চালনা ও পরীক্ষা বন্ধ রাখি না। তাই সন্ত্রাসের ভয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার কোনো যুক্তি নেই। সবাইকে বুঝতে হবে ছাত্ররা জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রক। তাই তাদের অবশ্যই সন্ত্রাসমুক্ত থাকতে হবে। এখন সময় এসেছে, ছাত্রদের জ্ঞানী হয়ে দেশের কল্যাণ সাধনের। নিশ্চয়ই ২০১৭ আর ১৯৪৭ এক সময় নয়। তাই প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের দিকে তাকাতে হবে। আর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই হতে পারে এই ক্ষেত্রে মূল পাথেয়।
-------------------------------------------------------------------------
দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ১১ মার্চ ২০১৭ শনিবার

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.