নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

যে সবে বঙ্গেতে জন্মি

৩১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৭:৫৪




যে সবে বঙ্গেতে জন্মি
ফকির ইলিয়াস
=================================================
মধ্যযুগের নমস্য কবি আব্দুল হাকিম ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় লিখেছেন- যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।/ সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
আমরা অনেকেই আমাদের অতীত ভুলে যাই। আবার এই অতীতই খুঁড়ে বের করে ফেলে আসা ইতিহাস। বাঙালির জীবন গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে কতিপয় বাঙালি আর্মি (যারা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে ছিল) এই বাংলার মাটিতেই খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ করেছিল। বিষয়টি আবার আমাদের মাঝে আলোচনায় এসেছে। এসেছে কেন তা বলছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাবেক এক সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ নামে সাবেক ওই বাঙালি ক্যাপ্টেনের বিরুদ্ধে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, লুটপাট-অগ্নিসংযোগ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে তা খুবই গুরুতর। প্রথম অভিযোগটি হচ্ছে- একাত্তরের ৭ জুন বিকালে মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর ৮/১০ জন সদস্যসহ দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালিয়ে হোমিও চিকিৎসক হাবিবুর রহমানকে আটক করেন। পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতনের পর দাউদকান্দি ফেরিঘাটের পাশের গোমতী নদীতে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। পরে লাশ ফেলে দেওয়া হয় নদীতে। দ্বিতীয় অভিযোগটি হচ্ছে- একাত্তরের ১৬ জুন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শহিদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর ৪০/৫০ জন সদস্যকে সঙ্গ নিয়ে দাউদকান্দির উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি ও গোলাপেরচর গ্রামে হামলা চালান। তারা স্বাধীনতার পক্ষের ২০ জনকে আটক করেন এবং পাঁচটি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন ধরিয়ে দেন। আটকদের মধ্যে ছয়জনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি ১৪ জনকে দাউদকান্দি সেনা ক্যাম্পে নেওয়ার পথে গোলাপেরচর টেকে তাদের লাইন ধরে দাঁড় করানো হয়। সেখান থেকে একজনকে বের করে গোমতী নদীর পাশে নিয়ে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেন শহিদুল্লাহ। পরে অন্যদের ক্যাম্পে এনে নির্যাতনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে খবর দেওয়ার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তৃতীয় অভিযোগটি হচ্ছে- একাত্তরের ২১ জুলাই শহিদুল্লাহ পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালান। সেখান থেকে কালামিয়া নামে এক গাড়ি চালককে ধরে নির্যাতন চালানো হয়। পরে কালামিয়াকে চান্দিনা থানার চান্দিনা হাসাপাতালের পিছনে নিয়ে গুলি করে হত্যার পর লাশ খালে ফেলে দেন শহীদুল্লাহ। একাত্তর আমাদের সাক্ষ্য দেয়, বেসামরিক রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর পাশাপাশি বাঙালি সেনা সদস্যদের কেউ কেউ সে সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হয়ে স্বজাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল। তারা অনেক অপকর্ম করেছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে- এমন অনেক বাঙালি কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই তদন্ত চলছে। তা মিডিয়াকে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক সানাউল হক। তিনি বলেছেন, ‘তদন্তের স্বার্থেই তাদের নাম-ঠিকানা বা পরিচয় প্রকাশ করতে চাই না। আশা করি পরে ধাপে ধাপে তা আপনাদের কাছে তুলে ধরতে পারবো।’ আমি একটি কথাই সবসময় ভাবি। ত্রিশ লাখ শহীদ আমাদের বলছেন- ‘মনে রেখো তোমাদের স্বাধীনতার জন্য আমরা প্রাণ উৎসর্গ করেছিলাম।’ হ্যাঁ- তারা প্রাণ না দিয়ে আজও একটি বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী হতে পারতেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দিকে তাকালে কিংবা তা পড়লে অনেক কিছুই জানতে পারি। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে নিয়মিত ‘দৃষ্টিপাত’ নামে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হতো। সেখানে ভাষ্য লিখতেন বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপক আবদুল হফিজ রচিত নিচের এই ভাষ্যটি প্রচারিত হয় ২০ জুলাই, ১৯৭১।
তিনি লেখেন- ‘...পাকিস্তান সরকার শিক্ষিত সেনাবাহিনীর নিয়মিত মৃত্যু রোধ করতে আরো কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে? যেমন- রাজাকার বাহিনী তৈরি করেছে বিভিন্ন অঞ্চলে। আকাশ থেকে নিক্ষেপ করেছে রাশি রাশি প্রচারপত্র। তাতে বলা হয়েছে- হে দেশপ্রেমিক জনগণ, দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারীরা বড্ড খারাপ কাজ করছে। আপনারা তাদেরকে ধরিয়ে দিয়ে দেশপ্রেমের পরাকাষ্ঠা দেখান। বাংলাদেশে ইয়াহিয়া খাঁ সাহেবদের জন্য এখনও দেশপ্রেমিক আছে, এ কথা ভাবলে হাসি পায়। তবে একটা কথা বলতেই হয়, বাংলাদেশের মানুষ দেশপ্রেমের বাস্তব পরাকাষ্ঠার প্রমাণ দিয়েছেন হাতে হাতে।
একজন কৃষক ভাইয়ের সাথে আলাপ করছি। তিনি জমিতে রোয়া লাগাচ্ছিলেন। বললাম- কেমন আছেন? বললেন- ভালো আছি, খুব ভালো আছি। বলেই মাথার টোপরের ভেতর থেকে একখানা কাগজ বের করে দিলেন। বললেন, এই এক্ষুণি ফেলেছে বিমান থেকে। ওখানেই বসে বসে পড়লাম। সেই প্রচারপত্র যাতে দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আবেদন জানানো হয়েছে। কৃষক ভাইটি জানালেন, মুক্তিবাহিনীকে বলবেন তাদের জন্য আমরা ধান-চাল আটা-গম সব মজুদ করে রেখেছি। এমন জায়গায় রেখেছি, খান সেনাদের চৌদ্দপুরুষও খুঁজে পাবে না। অবাক লাগলো। একজন সাধারণ চাষি মুক্তিবাহিনীর জন্য সর্বস্ব পণ করেছেন। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার দস্যু সেনাবাহিনী যা করছে, তা সমস্ত অত্যাচারের ইতিহাসকে স্নান করে দিয়েছে। প্রতিটি কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, বুদ্ধিজীবী প্রতিদিন অনুভব করছেন, পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিবাদী ধনিকদের দালাল পাকিস্তানি হানাদার সেনার হাত থেকে মুক্ত করতেই হবে স্বদেশকে তাই দেশের সমস্ত অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করছেন। দেশের সাধারণ মানুষ। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে জনগণের আন্তরিক সহযোগিতাই মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের কারণ। রাজাকার বাহিনী কিংবা শান্তি কমিটি করেও কূল পাওয়া যাচ্ছে না। জনগণের ব্যাপক অংশে বিরাজ করছে অসন্তোষের তীব্র দাবদাহ।...’
এমন ইতিহাস অনেক আছে। এসব আজকের প্রজন্মকে জানা দরকার। মহান মুক্তিযুদ্ধের বইগুলো তাদের পড়া দরকার। আমাদের বিজয় সহজে আসেনি। তাই এই স্বাধীনতাকে ছোট করে দেখার কোনো উপায় নাই। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জন্য ১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ড. মযহারুল ইসলাম লেখেন- ‘যাদের চক্ষু আছে এবং চক্ষু থেকেও যারা অন্ধ নন, আজ তাদের একবার বাংলাদেশের রণাঙ্গনে দিকে দৃষ্টিপাত করতে অনুরোধ করবো। একবার চোখ খুলে দেখুন আমাদের সংগ্রামী বীর যোদ্ধা বাঙালি যুবকগণ কীভাবে পশ্চিম পাকের হানাদার পশুদের খতম করে ক্রমাগত জয়যাত্রার পথে এগিয়ে চলেছেন। বাংলাদেশের চূড়ান্ত দুর্দিনে পশু পাকসেনাদের হাত থেকে দেশকে সম্পূর্ণ মুক্ত করবার জন্য মুক্তিবাহিনীর বীর সৈনিকগণ আত্মত্যাগ, সাহসিকতা, বিক্রম, ধৈর্য এবং দেশপ্রেমিকতার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, বিশ্বের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তার নিদর্শন একান্ত বিরল। একবার চেয়ে দেখুন যশোর রণাঙ্গনের দিকে- আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের আঘাত সামালাতে অপারগ হয়ে কীভাবে খানসেনারা পশ্চাদপসারণ করছে। খুলনায় একটি জাহাজ ডুবিয়ে আমাদের সেনারা জাহাজ চলাচলের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। সিলেট, চাটগাঁ, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, কুষ্টিয়া সর্বত্রই আমাদের বীর যোদ্ধাদের অগ্রগতি এবং পাকসেনাদের পরাজয় অব্যাহত রয়েছে। ঢাকায় বেসামাল হয়ে সামরিকচক্র বারবার সান্ধ্য আইন জারি করে নিরীহ নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন করছে। কিন্তু তাই বলে বাঙালির মনোবল হ্রাস পায়নি। আমাদের বীর সেনাদের অগ্রগতি দেখুন এবং জেনে রাখুন, ইনশাল্লাহ সময় আর খুব দূরে নাই যখন ঢাকায় স্বাধীন বাংলার পতাকা গৌরবের সঙ্গেই উত্তোলিত হবে।
সে কারণেই বলছিলাম যাদের চক্ষু থেকেও যারা অন্ধ নন আজ তারা চোখ খুলে একবার দেখুন শ্রবণশক্তি যদি বধির না হয়ে থাকে তবে স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্রের এই বিজয় বার্তাগুলো শুনুন। কথাগুলো এই জন্য বলছি যে বাংলাদেশ এখনো কিছুসংখ্যক বাঙালি আছেন যারা চোখ থেকেও অন্ধ এবং শ্রবণশক্তি থেকেও বধির। ঢাকা, রাজশাহী প্রভৃতি বেতার কেন্দ্রে এই জাতীয় কিছু অন্ধ ও বধির বাঙালি এখনো পশ্চিম পাকিস্তানের প্রভুদের মনোরঞ্জনের জন্য দেদার চিৎকার করে যাচ্ছেন। এইসব বাতুলদের তখনই জ্ঞানোদয় হবে যখন মুক্তিবাহিনীর সঙ্গীন তাদের গর্দানকে স্পর্শ করবে। যে প্রভুদের মনোরঞ্জনের জন্য এখনো কিছু সংখ্যক জন্মদালাল বাঙালি গলদঘর্ম হচ্ছেন তাদের বোঝা উচিত যে আজ ঐসব প্রভুদের কি অবস্থা। পশ্চিম পাকিস্তানেও বিদ্রোহের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠছে। বেলুচিস্তানে বেলুচরা এবং সীমান্ত প্রদেশে পাঠানরা এবার অস্ত্রধারণ করেছে। এমনকি রাজনীতির ক্ষেত্রে বালকোচিতে চাপল্যই যার বৈশিষ্ট্য সেই জুলফিকার আলী ভুট্টোর খোদ জন্মভ‚মি সিন্ধুও আজ বিক্ষুব্ধ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ভুট্টো এবং ইয়াহিয়া চক্রের পালাবার স্থানটি পর্যন্ত থাকবে না। এই দুই জানোয়ারের শেষের সেই ভয়ঙ্কর দিনটির কথাই আমরা এখন ভাবছি।
জানি, বহু দুঃখ এবং বেদনা, এবং নিপীড়ন বহু রক্তক্ষয় এবং মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের দিন কেটেছে এবং এখনো অনেক ক্ষেত্রে সেভাবেই তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে। জানি, আমরা যারা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে দুদিন পর বিজয়ীর বেশে নতুন করে যাত্রা শুরু করবো, তাদের অনেকেই প্রিয়জন হারানোর গভীর বেদনাকে কোনোদিন ভুলতে পারবো না। যে জীবন আমরা হারিয়েছি, যে সম্মান এবং ইজ্জত আমরা পশুদের হাতে বিসর্জন দিয়েছি, যে সম্পদ আমাদের লুণ্ঠিত হয়েছে, জানি, সেসব আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এই অবক্ষয়, এই অপরিসীম ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা একটি জাতিকে, একটি দেশকে বিশ্বের ইতিহাসে নবজন্ম দান করতে চলেছি- এই মহান গৌরব একান্তভাবেই আমাদের বাংলাদেশের বর্তমান বংশধরদের। আমাদের পূর্বপুরুষদের এই গৌরব অর্জনের সৌভাগ্য হয়নি। সেদিকে থেকে আমরা অনেক ভাগ্যবান। দুঃখ আমাদের অনেক হয়েছে, রক্ত এবং জীবন আমাদের প্রচুর দিতে হয়েছে সত্য কিন্তু স্বাধীনতার জন্য এই মৃত্যু এই রক্তদান, এই আত্মত্যাগ সবকিছুর মধ্যেই একটি বিরাট মাহাত্ম্য আছে। সেই মাহাত্ম্যই আমাদের মহীয়ান করে তুলেছে। তার জোরেই ভবিষ্যৎ বংশধরগণ আমাদের ললাটে গৌরবের টিকা দিয়ে বলতে পারবে যে আমরা আজ দেশের কারণে মরতে শিখেছিলাম বলেই তারা মানুষের মত বাঁচতে পারবে। আমাদের আত্মত্যাগ ও মৃত্যুর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বংশধরদের সত্যিকার মানুষের মতো বাঁচবার একটি স্থান, একটি পথ আমরা আজ তৈরি করে যাচ্ছি। যে মহৎ কারণের জন্য জীবনের মায়াকে তুচ্ছ করে, অনেক অভাব ও দীনতাকে হাসিমুখে বরণ করে এবং দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগের সকল ছোবলকে দু’পায়ে দলিতমথিত করে আজ বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন, তার মূল্য মানুষের ভাষায় নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। এই মহান কারণ ও সংগ্রামের উজ্জ্বলতম আদর্শ শুধু বাংলাদেশের নয়, ভবিষ্যতে সমস্ত বিশ্বের সমাজ গঠনে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে। বাঙালি জাতি হিসাবে আমরা যে সমগ্র বিশ্বের সম্মুখে এই একট অত্যুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে সমর্থ হয়েছি, তা কম গৌরবের কথা নয়। এটা অত্যন্ত আশার কথা যে বিশ্ববিবেকের ক্ষেত্রে আজ আশানুরূপ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশ্বের বিবেকসম্পন্ন সকল মানুষ আজ উপলব্ধি করেছেন যে, আমাদের সংগ্রাম ন্যায়ের পথে, সত্যের পথে। অবশ্য বাংলাদেশের মানবতার যে অপমান সংঘটিত হয়েছে, মানবতার ইতিহাসে তুলনা হয় না। আর এই লাঞ্ছিত মানবতাকে রক্ষার জন্য সভ্যতাগর্বী উন্নত দেশগুলো সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসবেন, আমরা গোড়া থেকেই এমন আশা করেছিলাম। সে আশা আমাদের সম্পূর্ণভাবে সফল হয়েছে একথা আমরা বলতে পারবো না। গণতন্ত্রের আদর্শকে সমগ্র বিশ্বে যারা সমুন্নত রেখেছেন বলে গর্ব করেন, সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ভূমিকা আমাদের সম্পূর্ণ নিরাশ করেছে। বিশ্বের জনগণ আমাদের সাথে আছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও আমাদের সংগ্রামকে সমর্থন করেন। এ ছাড়া বিশ্বের সর্বত্রই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম মোটামুটি একটি সহানুভ‚তি লাভে সমর্থ হয়েছে। ...’
এভাবেই এসেছিল এই বাংলাদেশ। আমি শুরুতেই বলেছি, ‘যে সবে বঙ্গেত জন্মি’। না- এরা এখনো পরাজয় ভুলে যায়নি। তারা এখনো আছে মৌলবাদী জঙ্গিবাদীর আলখেল্লা পরে। এদের বিষয়ে জাতিকে সতর্ক থেকেই এগিয়ে যেতে হবে সোনালি সূর্যের দিকে।
----------------------------------------------
দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ২৫ মার্চ ২০১৭ শনিবার

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.