নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনীতির নখর, মানুষের উপলব্ধি

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৫৪



রাজনীতির নখর, মানুষের উপলব্ধি
ফকির ইলিয়াস
==============================================
বাংলাদেশে এখন রাজনৈতিক স্বার্থের খেলাটা প্রকট আকার ধারণ করেছে। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার যে রেওয়াজটি ছিল- তা অনেকেই ভুলে যেতে বসেছেন। অনেকেই ভুলে যেতে বসেছেন, এই দেশে ১৯৫২, ’৬৯, ’৭০, ’৭১ সাধিত হয়েছিল। অনেকেই ভুলে যেতে বসেছেন, বাঙালি জাতির উজ্জ্বল গৌরবের কথা। এর কারণ কী? কারণ একটাই যে কোনোভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা। এই ক্ষমতা এখন মানুষের জন্য আর থাকছে না। হয়ে যাচ্ছে, কেবলই দলের। কেবলই নিজেদের। আর এর জন্য যা যা বলা দরকার- সেটাই বলছেন রাজনীতিকরা।

ভারতের অস্ত্রের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, ‘যারা নিজেরাই অস্ত্র আমদানি করে তাদের কাছ থেকে আবার অন্য দেশে রপ্তানি করা, সেটা কী করে আশা করেন? কারণ ভারত তো নিজেরা অস্ত্র তৈরি করতে পারে না এবং তাদের অস্ত্র সেরকম উন্নত ও মানসম্পন্ন নয়।’ খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘আমাদের দেশের সশস্ত্র বাহিনী চীনের যেসব অস্ত্রশস্ত্র আছে, সেগুলোতে অভ্যস্ত। তারা আগে থেকে সেগুলো ব্যবহার করছে। আমরা যখন সমঝোতা করেছি, আগে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তা করেছি। আর আমরা কোনো পুরনো জিনিস নয়, আধুনিক অস্ত্র নিয়েছি। চীন তো শুধু বাংলাদেশ নয়, বহু দেশে তার অস্ত্র রপ্তানি করে।’ প্রতিরক্ষায় অন্য সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘দেশের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যেভাবে ভারতের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়েছে, তার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস, কারিকুলাম ও অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়াদি অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করেছেন।’

ভারত বিষয়ে খালেদা জিয়ার মনোভাব এই দেশের মানুষ ভালো করেই জানেন, বুঝেন। ভারতবিরোধী ইস্যু সম্বল করেই প্রথমে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) এবং পরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জন্ম দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশে যে মহড়া চলছে- তা হলো, মানুষকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা। রাজনৈতিক প্রতারণা করা। ১৯৭১ সালে যে দেশটি সাড়ে সাত কোটি মানুষ নিয়ে স্বাধীন হয়েছিল, এখন এর সংখ্যা সতেরো কোটি, বলা হচ্ছে। মানুষের আয় বেড়েছে। এই সুবাদে মানুষকে এক ধরনের শিকল পরিয়ে রাখার প্রবণতাও বেড়েছে বহুগুণ। বর্তমান সরকার রাজনৈতিক কৌশল যে অব্যাহত রাখছে না, তা আমি বলছি না। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এখন শুধু কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে-ই-হাদিসকে, স্নাতকোত্তর স্বীকৃতি দেয়া হবে। সরকারের কোনো প্রতিনিধি ছাড়াই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষগুলোর করা কমিটির অধীনে পরীক্ষা নিয়ে এই সনদ দেয়া হবে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষগুলোর চাওয়া অনুযায়ী এই প্রক্রিয়ায় স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিগত সরকারের শেষদিকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জন্য ‘বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ’ গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। প্রস্তাবিত এই কর্তৃপক্ষ গঠন করার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিনিধি রাখার কথা ছিল। কর্তৃপক্ষ গঠনের জন্য আইনের খসড়া অর্থ, জনপ্রশাসন ও প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় অনুমোদন শেষে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও উত্থাপন করা হয়। কিন্তু খসড়াটি আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফেরত পাঠানো হয়। মূলত মাদ্রাসাগুলোর সবাই একমত না হওয়ায় এবং রাজনৈতিক কারণে তা পিছিয়ে যায়। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। বেশির ভাগ মাদ্রাসাই মফস্বল এলাকায় অবস্থিত। লাখ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও এর আগে কোনো সরকারি স্বীকৃতি ছিল না। ২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে কওমি সনদের স্বীকৃতি দিতে উদ্যোগ নেয় সরকার। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সরকার মূলত জামায়াতের বিপক্ষে একটি প্যারালাল শক্তি তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু কথা হচ্ছে- এই শক্তি শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মিত্রশক্তি হয়ে থাকবে কিনা!

মূর্তি কিংবা ভাস্কর্য ভাঙার কথা কারা বলছে এই বাংলাদেশে? আমরা বিশ্বের দিকে তাকালে দেখব, বিশ্বে অনেকগুলো ভাস্কর্য ভেঙেছে আইসিস। খ্রিস্টপূর্ব ৯০০ থেকে ৬০০ সালের মধ্যে প্রাচীন পৃথিবীর একটি বিশাল অংশ ছিল অ্যাসিরীয় সাম্রাজ্যের অধীনে। গোটা মধ্যপ্রাচ্য ছিল এই সাম্রাজ্যের অন্তর্গত। আজকের ইরাকের উত্তরাংশে নির্মিত বিভিন্ন শহর বিভিন্ন সময়ে ছিল এই সাম্রাজ্যের রাজধানী। সম্রাট সেনাশেরিবের আমলে নিনেভাহ ছিল তেমনই এক রাজধানী। খ্রিস্টপূর্ব ৬১২ সালে পরিত্যক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তত ৫০ বছর ধরে এটি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহর। পৃথিবীর বিভিন্ন জাদুঘরে এই শহরের ধ্বংসাবশেষের নমুনা সংরক্ষিত আছে। এটি আইসিসের দখলে আসে ২০১৪ সালে। এরপর এখানে অবস্থিত অনেক ঐতিহাসিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় তারা। শহরের প্রাচীন প্রবেশদ্বারে অবস্থিত বিশাল মূর্তি বৈদ্যুতিক ড্রিল মেশিন ও হাতুড়ি দিয়ে ভাঙার দৃশ্য দেখা যায় আইসিসের প্রকাশিত ভিডিওতে। নিনেভা শহরের ধ্বংসাবশেষের ওপর গড়ে তোলা হয়েছিল ইউনুস নবীর মসজিদ। মসুলের সবচেয়ে ঐতিহাসিক মসজিদগুলোর একটি ছিল এটি। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে আইসিস বাহিনী মসজিদটি গুঁড়িয়ে দেয়। গোটা ইরাকজুড়ে আইসিস আরো গুঁড়িয়ে দেয় আল-কুব্বা হুসেইনিয়া মসজিদ, অটোমান আমলের হামু কাদো মসজিদ, জাওয়াদ হুসেইনিয়া মসজিদ, আল আরবাইন মসজিদ, খুদর মসজিদ।

ইউফ্রেটিস নদীর তীরে প্রায় ৩০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপর গড়ে ওঠা এক শহর ছিল দুরা-ইউরোপোস। এই শহরের অমূল্য সম্পদগুলোর কারণে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ চলাকালে লুটতরাজ হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। আইসিস বাহিনী এখানকার প্রাচীন নিদর্শনগুলো লুট করে বিক্রি করে দেয় তাদের যুদ্ধের ফান্ডের অর্থের জন্য। রোমের বিরুদ্ধে পালমিরার বিদ্রোহের পর ২৭৩ সালে রোমান সম্রাট অরেলিয়ান এই শহর ধ্বংস করে ফেলেছিল। পরবর্তী সময়ে সম্রাট ডায়োক্লেটিয়ান এটি আবার নির্মাণ করেন, তবে একটু ছোট আকারে। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে পালমিরার অধিবাসীরা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হয়। এরপর পঞ্চম শতাব্দী থেকে প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যে তারা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। সে সময় শহরে প্রচলিত পালমিরিয়ান ও গ্রিক ভাষার বদলে শুরু হয় আরবি ভাষার প্রচলন। ১৪০০ সালে এসে আবার ধ্বংসের শিকার হয় পালমিরা, এবারে তৈমুর লংয়ের বাহিনীর হাতে। সেই ধ্বংসযজ্ঞের পর এটি পরিণত হয় একটি ছোট গ্রামে। অবশেষে ১৯৩২ সালে শহরটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়, এর অধিবাসীরা সরে যায় অন্যত্র। দীর্ঘ আট দশক পর আধুনিক যুগের আরেক বর্বর বাহিনীর হাতে পড়ল পালমিরা। ইউনেস্কো ঘোষিত এই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটটি ২০১৫ সালে দখলে নেয় আইসিস।

পাঠক, এসব ঘটনাগুলো বলার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী? এমন কি কোনো অশুভ শক্তি অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে? বাংলাদেশে এক শ্রেণির রাজনীতিক আছেন- যারা মুখে বলেন তারা মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেন না। তারা বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক। কিন্তু আমরা দেখি, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থের জন্য প্রকারান্তরে এসব মৌলবাদী কালো শক্তিকেই মদদ দেন। যেমনটি দেয়া হয়েছিল, বাংলাভাই, শায়খ রহমান, মুফতি হান্নানকে। এরা ক্ষমতার জন্য সবই পারে। তারা এই কাজে সিদ্ধহস্ত। তা এই ২০১৭ সালেও দেখাচ্ছে তারা। আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংবিধানের দিকে তাকাতে পারি। সংবিধান বলছে-

* বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতি নিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হইতে রক্ষা করিবার জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন

জাতীয় সংস্কৃতি-

* রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন

ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা-

* ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি বাস্তবায়নের জন্য

(ক) সর্ব প্রকার সাম্প্রদায়িকতা,

(খ) রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদা দান,

(গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় অপব্যবহার,

(ঘ) কোন বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন, বিলোপ করা হইবে।

আমাদের আজ বাস্তবতার দিকে তাকাতে হবে। সরকার শান্তি চাইছে। নীতিনির্ধারকরা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নীতি প্রণয়ন করছেন। কিন্তু আমাদের সমসাময়িক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যতের কথাও ভাবতে হবে। প্রজন্মকে জানাতে হবে সত্য ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। রাজনীতি যদি নখর দেখায়, তখন মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। মানুষের উপলব্ধিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বীজ সমুন্নত রাখতে চাইলে সেই আলোকেই রাষ্ট্রকে শিরদাঁড়া উঁচু করে স্থির থাকতে হবে। কৌশল গ্রহণ ভালো। তবে তা যেন মেরুদণ্ডকে বাঁকা না করে।
---------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২২ এপ্রিল ২০১৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.