নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

দখলের মহোৎসব, পাহাড় ও মানুষের কান্না

১৭ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৮:৫৪




দখলের মহোৎসব, পাহাড় ও মানুষের কান্না
ফকির ইলিয়াস
===========================================
পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাঙ্গামাটি শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় প্রবল বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসে কমপক্ষে ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি সদরে দুই সেনা কর্মকর্তা ও দুই সেনা সদস্যসহ ২০ জন, কাপ্তাইয়ে ১১ জন ও কাউখালীতে ২১ জন, বিলাইছড়িতে ২ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালে আহত ৫৬ জন ভর্তি রয়েছেন। প্রকাশিত খবর আরো জানাচ্ছে, টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে এর মধ্যে রাঙ্গামাটিতে ৮৮ জন, চট্টগ্রামে ৩০ জন এবং বান্দরবানে ছয়জনের লাশ উদ্ধারের তথ্য এসেছে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। এই সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। অতীতের নিরীক্ষণগুলো বলছে- ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের সাতটি স্থানে মাটিচাপায় ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।২০০৮ সালের ১৮ অগাস্ট চট্টগ্রামের লালখানবাজার মতিঝর্ণা এলাকায় পাহাড় ধসে চার পরিবারের ১২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রামের টাইগার পাস এলাকার বাটালি হিলের ঢালে পাহাড় ও প্রতিরক্ষা দেয়াল ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ২৬-২৭ জুন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে ৯৪ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৫ সালের ২৬-২৭ জুন টানা বর্ষণ, ধস আর পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে ১৯ জনের মৃত্যু হয়। অনেকেই এসব ঘটনাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলবেন। কিন্তু কথা হচ্ছে, পাহাড়গুলো কাটছে কারা? এর নেপথ্যে কে? দখলের এই যে মহোৎসব চলছে, তা বাধা দেয়ার কি কেউ নেই?

নির্বিচারে গাছ কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছ উজাড়ের কারণেই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। তুমুল বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধসের পূর্বাভাস মানুষকে জানানো হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতামূলক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি। পদক্ষেপ নিলে প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতি আরো কম হতে পারত। বন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল এবং গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন শক্ত রাখে। কিন্তু লোভী মানুষেরা অব্যাহতভাবে পাহাড় কাটছে। অনেক ক্ষেত্রে দরিদ্র মানুষ বসতির প্রয়োজনেও পাহাড় কাটছে। এতেই পাহাড় ধসের পথ তৈরি হয়। ফলে টানা বৃষ্টিপাত হলে পাহাড় ধসে পড়ে। এ কারণে প্রায় প্রতি বছরই ছোটখাটো দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এর আগে ২০০৭ সালে এ বর্ষাকালেই বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তখন ১২৭ জন নিহত হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল মিডিয়াকে বলেছেন, পাহাড় ধসের প্রধান কারণ দুটি। ভূতাত্তি¡ক ও মানবসৃষ্ট। কোনো অঞ্চলে ৩টি ভূতাত্তি¡ক কারণে পাহাড় ধস হতে পারে। সেগুলো হলো- পাহাড়ের ভূতাত্তি¡ক গঠন, বালুর বিন্যাস এবং পাহাড়ের ঢালুতা। আর মনুষ্যসৃষ্ট কারণের মধ্যে রয়েছে- পাহাড়ে চাষাবাদ এবং বন উজাড়। এসব কারণ যখন তৈরি হয় তখন অধিক বৃষ্টিপাতে পাহাড়ের ফাটল দিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করে। এতে পাহাড় ভারি হয়ে যায়। ফলে পাহাড় ধসের মতো ঘটনা ঘটে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে তিনি যে কোনো মূল্যে পাহাড় কাটা বন্ধের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া পাহাড়ে পর্যাপ্ত উপযুক্ত গাছপালা লাগানো, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পাহাড় থেকে বসতি উচ্ছেদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গরিব মানুষকে অন্যত্র পুনর্বাসন করার পরামর্শ দেন তিনি। ২০০৭ সালের ১১ জুন কেবল চট্টগ্রামেই পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। ওই ঘটনায় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি কমিটি করা হয়, যার সচিব ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক মো. জাফর আলম। ওই কমিটি পাহাড় ধসের ২৮ কারণ চিহ্নিত করেছিল। রক্ষা ও ধস ঠেকাতে প্রণয়ন করেছিল ৩৬ দফা সুপারিশ। কিন্তু সে সব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি গত ১০ বছরেও।

কী নির্মম বাংলাদেশের বন ও পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রণালয়! তাদের চোখ-কান কি খোলা নেই? একটি সবুজ বনাঞ্চলকে এভাবে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে কেন?

কমিটি যে সুপারিশগুলো করেছিল, তার দিকে নজর দেয়া যাক। কমিটি ২৮টি কারণের উল্লেখযোগ্য হিসেবে বলেছিল- ভারি বর্ষণ, পাহাড়ে বালির আধিক্য, পাহাড়ের উপরিভাগে গাছ না থাকা, গাছ কেটে ভারসাম্য নষ্ট করা, পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস গড়ে তোলা, পাহাড় থেকে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রাখা, বনায়নের পদক্ষেপের অভাব, বর্ষণে পাহাড় থেকে নেমে আসা বালি ও মাটি অপসারণে দুর্বলতা ইত্যাদি।

কমিটি সুপারিশ করেছিল- পাহাড়ের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে হাউজিং প্রকল্প গড়ে না তোলা, পাহাড়ে জরুরি ভিত্তিতে বনায়ন করা, ঢালু পাহাড়ে গাইডওয়াল নির্মাণ, নিষ্কাশন ড্রেন ও মজবুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পাহাড়ের পানি ও বালি অপসারণের ব্যবস্থা করা, যত্রতত্র পাহাড়ি বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা, পাহাড়ি এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নিষিদ্ধ করা, মতিঝর্ণা ও বাটালি হিলের পাদদেশে অবৈধ বস্তি উচ্ছেদ করে পর্যটন স্পট করা, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন নিষিদ্ধ করা, পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ, যেসব পাহাড় প্রায় খাড়া অবস্থায় রয়েছে সেখানে স্বাভাবিক বনায়ন সম্ভব না হলে মুলি বাঁশ রোপণ ইত্যাদি।

চট্টগ্রামে যারা পাহাড় কাটছে এরা খুবই শক্তিশালী। স্থানীয় সাধারণ মানুষ ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এমনকি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধেই পাহাড় কাটার অভিযোগ আছে। আবার প্রভাবশালীরা পাহাড় কাটা অব্যাহত রাখছেন। তাদের বিরুদ্ধে চোখে পড়ার মতো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রভাব খাটাচ্ছেন সব সময়। যে কারণে চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও বসতি স্থাপন অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রয়েছে প্রশাসনের অবহেলা ও গাফিলতি।

বাংলাদেশে যে দখলদারির ত্রাস চলছে, তা সভ্যতার জন্য অশনিসংকেত। এমনটি চলতে দেয়া যায় না। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ কিংবা জৈন্তাপুরের পাথর কোয়ারিগুলো থেকে পাথর খনন করেও ধস তৈরি করা হয়েছিল। তা নিয়েও বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। এখন পাহাড় কাটার নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেই সবুজ নিধন চলছে। মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র যখন এমন হীন কাজে বাধা দেয় না তখন সেটা রাষ্ট্রীয় মদত বলেই পরিগণিত হয়। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে সবুজ টিলা পাহাড়কে বাঁচাতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের ওপর যে নির্যাতন চলছে, তার তীব্র প্রতিবাদ এবং ঘৃণা জানিয়ে একটি কথাই বলতে চাই- একাত্তরে কিন্তু এই আদিবাসীরাও আমাদের বিজয়ের জন্য রক্ত দিয়েছিলেন। আমরা তা ভুলে যাই কেন?
---------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ১৭ জুন ২০১৭

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৫৫

ঢাকাবাসী বলেছেন: দখলদারিত্বে আর খুনোখুনিতে দক্ষ হল সরকারী ....।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.