নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কূটনীতিকদের গৃহকর্মী ও অভিবাসীদের আত্মসম্মান

১৭ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:৩০



কূটনীতিকদের গৃহকর্মী ও অভিবাসীদের আত্মসম্মান
ফকির ইলিয়াস
---------------------------------------------------------------------------
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের গৃহকর্মী জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ‘জটিলতা’ বলছি এ জন্য, গৃহকর্মীরা পালিয়ে যাচ্ছেন কূটনীতিকদের বিদেশের বাড়ি থেকে। গিয়ে অভিযোগ করছেন, তারা নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। অবশ্য মতলব আছে আরেকটি অন্যখানে। তা হলো- কূটনীতিককে ফাঁসিয়ে দিয়ে এসব গৃহকর্মী বিদেশে স্থায়ী হওয়ার কাজটিও করে নিচ্ছেন খুব নির্লজ্জভাবে। ছবি নাই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ভারতের কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়ে আলোচনায় এসেছিলেন ২০১৩ সালে। দেবযানী ছিলেন নিউ ইয়র্ক সিটিতে ভারতীয় কনস্যুলেট জেনারেলের ডেপুটি কনসাল জেনারেল। ২০১৩ সালে ১১ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে সঙ্গীতা রিচার্ড নামের এক ভারতীয়কে গৃহকর্মী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার জন্য ভিসা আবেদনে মজুরি নিয়ে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। একইসঙ্গে অভিযোগ করা হয়, তিনি গৃহকর্মীকে চুক্তি অনুযায়ী পারিশ্রমিক না দিয়ে বেশি কাজ করিয়েছেন। পরদিন, অর্থাৎ ১২ ডিসেম্বর দেবযানীকে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে মার্কিন ফেডারেল আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাকে তল্লাশির অভিযোগ আলোচিত হয় গোটা কূটনীতিক পাড়ায়। অভিযোগ উঠে যে একজন কূটনীতিক হওয়ার পরও এ ধরনের পরিস্থিতিতে কূটনীতিকের প্রাপ্য সম্মান বা সুবিধাগুলো তিনি পাননি। একজন সাধারণ কয়েদির মতো দেবযানীকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অপরাধীদের মতো বিবস্ত্র করে তার দেহও তল্লাশি করা হয়। শুধু তাই নয়, তার ডিএনএ সংগ্রহ করে কারাগারে মাদকাসক্তদের সঙ্গে একই কক্ষে রাখা হয়।
দেবযানী অবশ্য কোনো ধরনের অনিয়ম করার কথা অস্বীকার করেন। এক পর্যায়ে জামিনে ছাড়া পান তিনি। একজন কূটনীতিককে এভাবে ‘হয়রানি’ করার ঘটনায় ভারতজুড়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ভারত দেবযানীর কূটনৈতিক দায়মুক্তি বা ছাড়ের দাবি পরিত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল মার্কিন সরকারের কাছে। দিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এ আচরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনারও দাবি জানিয়েছিল।
এর পরের ঘটনাটি বাংলাদেশি কূটনীতিককে নিয়ে। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ দূতাবাসের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে গৃহকর্মীর বেতন না দেওয়ার। তা ২০১৪ সালের মার্চের ঘটনা। মরক্কোয় রাষ্ট্রদূত হিসেবে মধ্য এপ্রিলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল মনিরুল ইসলামের। এর মধ্যে ঢাকা থেকে নতুন কনসাল জেনারেল শামীম আহসান নিউ ইয়র্কে এসে কাজে যোগ দেওয়ার কথা। কয়েক সপ্তাহ ধরে মনিরুল ইসলাম নিউ ইয়র্কে নানা বিদায় সংবর্ধনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন।
এর মধ্যেই দেশ থেকে নিয়ে আসা গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ তার বাড়ি ছেড়ে চলে যান। মার্কিন আইনজীবীর সহযোগিতায় তিনি মজুরি বঞ্চনা ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করেন মনিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ফাহিমা তাহসিন প্রভার বিরুদ্ধে। সংবাদমাধ্যমে গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি অভিযোগ করেন, গৃহকর্মী তার সঙ্গে মরক্কোয় না যাওয়ার জন্য মামলা-নাটকের আশ্রয় নিয়েছেন। এরপর মার্কিন আইনজীবীর পরামর্শে গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ স্বেচ্ছা আত্মগোপনে চলে যান। এই সময়ে জানা যাচ্ছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ড পেয়েছেন। অতি সম্প্রতি তিনটি একই রকমের ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে। গত জুন মাসে গৃহকর্মীকে নির্যাতন, মজুরি দাবি করায় হত্যার হুমকি ইত্যাদি অভিযোগে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে নিউ ইয়র্কের পুলিশ। গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর নিউ ইয়র্কের কুইন্সে অবস্থিত সুপ্রিম কোর্টে তাকে সোপর্দ করা হয়। বিচারক ডেনিয়েল লুইস ৫০ হাজার বন্ড অথবা নগদ ২৫ হাজার ডলারের বিনিময়ে তার জামিন মঞ্জুর করেন।
এই মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি রিচার্ড এ ব্রাউন বলেছেন, অভিযুক্ত শাহেদুল ইসলাম নিজ দেশ বাংলাদেশ থেকে ২০১২ সালের শেষের দিকে গৃহকর্মী হিসেবে নিউ ইয়র্কে আনেন মোহাম্মদ আমিনকে। এরপরই তার পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আটক করে দৈনিক তাকে ১৮ ঘণ্টা করে কাজ করিয়েছেন। বিনিময়ে একটি পয়সাও দেওয়া হয়নি। যখনই মজুরির দাবি করেছেন তখনই তাকে প্রহার করা হয়েছে। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মোহাম্মদ আমিন কাজ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে চাইলে শাহেদুল তাকে হত্যার হুমকি, এমনকি বাংলাদেশে তার বৃদ্ধা মা ও পুত্র-কন্যাকেও হত্যার হুমকি দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কনসাল জেনারেল শামীম আহসান মিডিয়াকে জানান, মোহাম্মদ আমিন গত বছর বাসা থেকে নিখোঁজ হওয়ার পরই আমরা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অবহিত করেছি। কনসাল জেনারেল আরো জানান, গৃহকর্মী নিয়োগ থেকে পারিশ্রমিক ভাতা, ভ্রমণ ভাতার সবকিছুই ডেপুটি কনসাল জেনারেলের ব্যক্তিগতভাবে করার কথা। তাই বেতন একেবারেই পাননি বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি সত্য না মিথ্যা তা আমি বলতে পারবো না। তা নিতান্তই শাহেদুলের ব্যাপার। শেষ খবর হলো, শহীদুল ইসলামকে এখন জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে বদলি করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
গত জুন মাসে আরেকটি ঘটনা ঘটেছে গৃহকর্মীবিষয়ক। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে কর্মরত হামিদুর রশীদ নামে এক বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাকে আদালতে তোলা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে আপাতত জামিন পেয়েছেন তিনি। হামিদুর রশীদ জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির ডেভেলপমেন্ট পলিসি অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ডিভিশনের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া গৃহকর্মীর ভিসা জালিয়াতি, কর্মী নিয়োগ চুক্তি জালিয়াতি এবং সেই কর্মীর পরিচয় জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যে জানা যায়, হামিদুর রশীদ বাংলাদেশ থেকে আনা গৃহকর্মীর জন্যে প্রযোজ্য জি-৫ ভিসার নিয়ম অনুযায়ী যে মজুরি দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন তা পরবর্তীকালে মানা হয়নি। সাপ্তাহিক ৪২০ ডলার মজুরিতে গৃহকর্মী নিয়োগের চুক্তিপত্র পররাষ্ট্র দপ্তরে দাখিল করা হলেও ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে গৃহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে নতুন একটি চুক্তিপত্রে সই নেন। যেখানে সাপ্তাহিক মজুরি দেখানো হয় ২৯০ ডলার। এছাড়া চুক্তি অনুযায়ী গৃহকর্মীকে সাপ্তাহিক ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করানোর অভিযোগও আনা হয়। জানা গেছে, এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে হামিদুর রশীদের সর্বোচ্চ ২৯ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
খবর বেরিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আরেক বাংলাদেশি কূটনীতিকের গৃহকর্মী নিখোঁজ হয়েছেন। ওই কূটনীতিক বাংলাদেশ দূতাবাসের লসঅ্যাঞ্জেলেস কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল। তার নাম কাজী আনারকলি। জানা গেছে, ছয়মাসেরও বেশি সময় ধরে তার গৃহকর্মী সাব্বির (৪০) নিখোঁজ রয়েছেন। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং লসঅ্যাঞ্জেলেস কনস্যুলেটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা খবর নিশ্চিত করেছেন। তবে ডেপুটি কনসাল জেনারেল আনারকলি এ ঘটনা অস্বীকার করেছেন।
জুন মাসে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের ঘটনায় নিউ ইয়র্কে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই বাংলাদেশি কূটনীতিক গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা হলেন নিউ ইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল শাহেদুল ইসলাম ও জাতিসংঘের বাংলাদেশি কর্মকর্তা হামিদুর রশীদ। তাদের গ্রেপ্তারের ঘটনার পর কাজী আনারকলি অন্য কোনো দেশে বদলি নিয়ে দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে। বিদেশে কূটনীতিকদের এই গৃহকর্মী আমদানি বিষয়টি অভিবাসী সমাজের জন্য চরম অসম্মান বয়ে আনছে। প্রশ্ন উঠছে, বিদেশে এসে কূটনীতিকদের দ্বারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি তো উজ্জ্বল হওয়ার কথা। তা ক্ষুণ্ন হচ্ছে কেন? এই বিষয়ে নিউ ইয়র্কের ‘সাপ্তাহিক আজকাল’ একটি রিপোর্ট করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘গৃহকর্মীর নামে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আসেন কূটনীতিকরা!’
রিপোর্টটিতে আরো বলা হয়েছে- ‘সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের গৃহকর্মী কেলেংকারির নেপথ্যের নানা কারণ এখন প্রকাশ পাচ্ছে। কোনো প্রকার নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে কূটনীতিক পদে সরাসরি রাজনৈতিক নিয়োগের বিষয়টি নিয়েও এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে কূটনৈতিক পদে তাদের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা নিয়ে। বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত এইসব কূটনীতিকের এই পেশার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে যেমন কোনো জ্ঞান নেই তেমনি কোনো প্রশিক্ষণও নেই। কোনো প্রকার পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি নিয়োগ পাওয়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব কূটনীতিক দায়িত্ব পালনে যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেন না। আবার পেশাদার কূটনীতিকদেরও কেউ কেউ গৃহকর্মী পদে তাদের আত্মীয়স্বজনদের নিয়োগ দিয়ে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে এনে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। এই সব কারণেই গৃহকর্মী সংক্রান্ত এহেন দুঃখজনক অনিয়মের সূত্রপাত। আবার গৃহকর্মীরা নিজেরাও নানা অজুহাতে কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলা করে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিন কার্ড পাওয়ার সুবিধা নিতে সচেষ্ট। সব মিলিয়ে গৃহকর্মী বিষয়ক জটিলতায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি মারাত্মক ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
এসব বিষয় বাংলাদেশেও আলোচিত হচ্ছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত আছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র। জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন মিশনে কাজে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের কূটনীতিকরা এখন থেকে আর গৃহকর্মী নিতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলা করার কারণে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। মূলত নতুন করে যারা ইউরোপ ও আমেরিকা ওই দুই মহাদেশের কোনো দেশে নিযুক্ত হচ্ছেন তাদের আর গৃহকর্মী নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘নিউ ইয়র্কে একাধিক বাংলাদেশি কূটনীতিকের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। এ কারণে এখন নতুন করে যেসব কূটনীতিক আমেরিকা-ইউরোপে বাংলাদেশের দূতাবাস বা মিশনে যাচ্ছেন তাদের আর গৃহকর্মী নেওয়ার অনুমতি দিচ্ছি না আমরা। এছাড়া, যারা গৃহকর্মী নিয়ে গেছেন তাদের বলেছি পর্যায়ক্রমে তাদের গৃহকর্মীদের দেশে পাঠিয়ে দিতে।’ তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশি মিশন প্রধান যে দেশে নিয্ক্তু সে দেশের মানদণ্ড অনুযায়ী তার বাসায় একজন পাচক রাখার একটি প্রস্তাব আমরা জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। তবে এটি এখনো অনুমোদন পায়নি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অর্থাৎ ইউরোপ বা আমেরিকার মানদণ্ডে বেতন না দিলে এ ধরনের মামলা আরো হওয়া আশঙ্কা রয়েছে।’
এই বিষয়ে একটি কথা বলা খুবই জরুরি। বিদেশে অনেক বাঙালি ধনী ব্যক্তি রয়েছেন, যারা বাড়িতে বাবুর্চি, মেইনটেন্যান্স পার্সন রাখেন। তাদের আমেরিকান লেবার ল’ অনুযায়ী বেতন দেওয়া হয়। বিদেশে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা চাইলে তাদের বাড়িতে স্থানীয় এজেন্সি থেকে লোক নিতে পারেন। এবং বিদেশে এখন বাঙালি পাচক পাওয়াটা দুঃসাধ্য কিছু নয়। বাংলাদেশ থেকে যাদের আনা হয়, তাদের আমেরিকান লেবার ল’ অনুযায়ী বেতন ও সুবিধাদি দেওয়ার সাধ্য ও মানসিকতা অনেক কূটনীতিকেরই নাই। তাই বাংলাদেশ থেকে যাদের আনা হবে- এরা গ্রিনকার্ড পাওয়ার জন্য, স্থায়ী হওয়ার জন্য যা যা করার তা করবেই। তা যতই হীন কাজ হয় না কেন।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিদেশে অন্য সবাই নিজের ঘরের কাজ নিজেরা করতে পারলে কূটনীতিকদের ম্যাডামরা তা করতে এত দ্বিধান্বিত কেন? অথবা স্থানীয় এজেন্সি থেকে লোক আনিয়েও তারা তা করাতে পারেন। বাস্তবতা হচ্ছে, কূটনীতিকদের গৃহপরিচারকেরা অন্য কোথাও কাজ করেন, করতে দেওয়া হয়- তার বেতন তোলার জন্য। আর কূটনীতিকরা নামমাত্র বেতন দেন। কাজও করান কম। সপ্তাহে হয়তো দুই-তিনদিন। কিন্তু এই যে ‘মিচ্যুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ তা কিন্তু আর টিকে থাকছে না। কারণ একজন গৃহকর্মী তার ‘কূটনীতিক প্রভুর’ বিপক্ষে আইনি মামলা না করলে গ্রিনকার্ড, স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ পাবে না। এই বিষয়টির জরুরি সুরাহা দরকার। তা না হলে বিদেশে বাংলাদেশের মান-সম্মান বারবার ভূলুণ্ঠিত হবে।
-----------------------------------------------------------------------
দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ১৫ জুলাই ২০১৭ শনিবার

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: বিদেশে আমাদের কুটনীতিকরা একেকজন মহারাজা বা মহারানীর মত থাকতে পছন্দ করেন। ৯৯% কুটনীতিক কাজের নামে অশ্বডিম্ব অথচ ঠাট বাট দেখলে গা জ্বলে। এদের অধিকাংশই কাজ পায় রাজনৈতিক কানেকশনে বা কোনমতে নকল করে বিাসিএস পাশ করে। আমাদের কোন নাগরিক বিদেশে এদের কাছ থেকে এক পয়সার কাজ করাতে পারেনা। এদের প্রত্যেকে একেকজন মহারানী ভিক্টোরিয়ার নাতি নাতনী! গাড়ী থেকে মাল নামাবার জন্য ড্রাইভারকে বা ঐ কাজের বিটিকে বলা ছাড়া চলতেই পারেননা! পাসপোর্ট বা অন্য যে কোন সাহায্যের জন্য গেলে এই অপিসারদের দেখা পাওয়া আকাশের চাঁদ পাওয়ার চাইতে কঠিন! আমাদের বদনাম যা হওয়ার হয়েই গেছে আর লাগবেনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.