নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস

এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্যনয়। তা সৃজনশীল কাজের পরিপন্থী। লেখা অন্য কোথাওপ্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

ফকির ইলিয়াস › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্ষিতা ধরণীর ছায়া

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৫৫




ধর্ষিতা ধরণীর ছায়া
ফকির ইলিয়াস
================================
বিষয়টি নিয়ে লিখতে বিবেকে বাধে। কী লিখবো! কেন লিখবো! এই লেখা কি মানুষ পড়ে? পড়বে? যদি পড়তো- তবে আজকের বাংলাদেশ কেন এমন হবে? বাংলাদেশে ধর্ষণ একটি চরম ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। কারা এসব করছে? তাদের শাস্তি হচ্ছে কি? বিচার হয়েছে কি? এরা কি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী? যদি তাই হয়- তাহলে বাংলাদেশে রাজনীতি করছে কারা?
বাংলাদেশেও সাইবার ক্রাইম মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সর্বত্র। দুটি প্রতিকী ঘটনার দিকে নজর দেওয়া যাক। কলেজপড়ুয়া এক তরুণীর সঙ্গে এক যুবকের বিয়ে ঠিকঠাক হয়েছিল। বিয়ে ঠিক হয়েছিল দুই পরিবারের সম্মতিতেই। এনগেজমেন্ট দিনও ঠিক হয়। এরই মধ্যে ছেলেটি ওই তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। নানা প্রলোভন আর প্ররোচনার এক পর্যায়ে তরুণী ওই যুবকের ঘনিষ্ঠ হয়। অন্তরঙ্গ সেসব মুহূর্তের ছবি ছেলেটি মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করে রাখে। পরে ছেলেটি ওই তরুণীর পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এত টাকা যৌতুক দিতে অস্বীকার করায় তরুণীর পরিবারের সদস্যদের ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করা হয়। টাকা না দিলে ওই ছবি সে ওয়েবসাইটে দেওয়ার হুমকি দেয়। লজ্জা, ঘৃণা, অপমানে ওই তরুণী দু’দফা আত্মহত্যার চেষ্টাও চালায়। বিষয়টি তরুণীর বন্ধু-বান্ধবীরা জেনে যাওয়ায় লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যায়।
আরেকটি ঘটনা আরো ভয়াবহ। একজন কলেজ ছাত্রী তার সেলফোনের লক খুলতে যান একটি দোকানে। ওই দোকানের কর্মচারী ছাত্রীর সেলফোনের লক খুলে দেয়। তবে ওই সেলফোনে থাকা ছাত্রীর দুটি ছবি ব্লুটুথ দিয়ে ডাউনলোড করে নেয়। ছাত্রীর অজান্তেই সে এই কাজটি করে। এরপরই ওই ছাত্রীর মোবাইলে ফোন করে তাকে ভালোলাগার কথা জানায়। এক পর্যায়ে প্রস্তাব দেয় প্রেমেরও। রাজি না হওয়ায় কলেজের ওই ছাত্রীর মুখাবয়বের সঙ্গে নগ্নদেহের ছবি মিলিয়ে ফোন নম্বরসহ ছেড়ে দেওয়া হয় পর্নোসাইটে। কী মারাত্মক জিম্মি দশায় পড়ছে এই প্রজন্ম!
বাংলাদেশে প্রায় প্রতিদিনই ধর্ষণের খবর বেরুচ্ছে। প্রশ্ন আসছে, প্রতিদিন এত ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরও মানুষ উদাসীন ও নিশ্চুপ থাকে কেন? আবার কোনো কোনো ঘটনায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ ফেটে পড়তে দেখি কেন? কেউ কেউ কারণ হিসেবে ঘটনার নৃশংসতার মাত্রাকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। কিন্তু আসলে প্রতিটি ঘটনাই তো সমান। বাংলাদেশে অধিকাংশ দরিদ্র শ্রেণিই অপরাধের অসহায় শিকার। এদের সিংহভাগ সমাজের আর্থিকভাবে সবচেয়ে পিছনের সারিতে থাকা নারীরা। আরো সুচিহ্নিতভাবে বললে শ্রমজীবী-দলিত শ্রেণি।
এই ছবি শুধু আজকের নয়। চার হাজার বছর ধরে এই অসভ্য অত্যাচার চলে আসছে। শূদ্রকে অস্পৃশ্য অশুচি চিহ্নিত করে শূদ্রাণী ভোগে অতি তৎপর। ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য যদি শূদ্রাণীকে ধর্ষণ করে তাহলে শাস্তি নামমাত্র অর্থদণ্ড। এই রীতি এখনো চলছে। এই যুগেও। কথাটা প্রতিকী অর্থেই বলছি।
এখন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের যুগ। কিন্তু আজও আদিবাসীরা থাকেন জঙ্গলে আর পাহাড়ে। আজও দলিতেরা থাকেন নগরের প্রান্তে ঝুপড়ি বস্তিতে কিংবা গ্রামের বাইরের প্রান্তরে। তথাকথিত উন্নয়নের চাঁদমারিতে অবস্থা এখনো অনেক এলাকায় ভয়াবহ। আর এমন ঘটনার নায়ক যদি হয় রাজনীতির শীর্ষ নেতা!
বাংলাদেশে সম্প্রতি শিশু ধর্ষণের ঘটনা বেড়েছে। ধর্ষণের শিকার হচ্ছে ছেলেশিশুরাও। পুলিশের ধারণা শিশুরা একশ্রেণির মানুষের যৌন বিকৃতির টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
শিশু ধর্ষণের এরকম হাজার হাজার পরিসংখ্যান রয়েছে শুধু গণমাধ্যমের হিসাবে, বাস্তবে নিশ্চয়ই আরো বেশি। সারা পৃথিবীতেই শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তবে আমাদের দেশে সংখ্যাটা উদ্বেগজনক। এসব একেকটি ঘটনা পূর্বের নৃশংসতাগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শিশুরা যেভাবে নির্যাতিত হচ্ছে তা ডাক্তারদেরও হতবাক করছে। অনেক ঘটনায় গণমাধ্যম সরব, সামাজিক মাধ্যমও সরব স্বাভাবিকভাবে। মূলত বিচার চেয়ে সবাই সরব। কিন্তু বিচার হয়েছে কি? পাশাপাশি প্রতিরোধ এবং প্রতিকার চেয়েও সরব হওয়া সকলের সামাজিক দায়িত্বও।
জানা দরকার, শিশু ধর্ষণ কারা করে, কেন করে। অপরাধ-বিজ্ঞানটা কিন্তু আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। সামাজিক দিকটায়ও আলোকপাত হচ্ছে না। বিচার তো চাইতেই হবে। এতটা সরব না হলে এরকম ঘটনায় ভিকটিমের ঠিকমতো চিকিৎসা পাওয়াও হয় না, বিচার ব্যবস্থাও ঠিকমতো কাজ করে না। তাই আমাদের চিৎকার অবশ্যই লক্ষ্যভেদি। জনগণের দায়িত্ব জনগণ পালন করছে। কিন্তু গাফিলতি থেকে যাচ্ছে সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী এবং অপরাধবিজ্ঞানীদের। দায় আছে সরকার তথা দায়িত্বপ্রাপ্ত বাহিনীর।
প্রতি বছর হাজার হাজার ঘটনা ঘটছে, তারপরও কেন কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়বে না? শুধু আবেগঘন লেখা তো মুহূর্তের, দীর্ঘ মেয়াদে তা কোনো কাজে আসে না এসব ক্ষেত্রে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারের লোকেদের দ্বারা শিশুরা ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ঘটলেও পরিবারের বাইরের লোকেদের দ্বারাই ৮৩% ঘটনা ঘটে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষ্য এক্ষেত্রে আরো উদ্বেগজনক। শিশুদের প্রতি যেসব পুরুষ যৌনেচ্ছা অনুভব করে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তাদের পিডোফাইল বলে। বিষয়টিকে সাইক্রিয়াটিক ডিজওর্ডার হিসেবে শনাক্ত করা আছে। নির্যাতকরা, ধর্ষকরা সবাই যে পিডোফিল তা নয়, আরো অনেক কারণ রয়েছে। তবে ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো সাধারণত পিডোফিলরাই ঘটায় বলে জানা যায়। এছাড়াও হেবফাইল, এফবোফাইল রয়েছে- এরা মূলত কিশোরীদের ওপর আক্রমণ চালায়।
বিষয়টির উপর বিবিসি বাংলা একটি বিজ্ঞান-প্রতিবেদন করেছিল। ‘শিশু যৌন নির্যাতনকারীদের মস্তিষ্কের গঠন কি আলাদা?’ শিরোনামে।
ক্যানাডার টরন্টোর মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষক ড. জেমস ক্যান্টর শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনকারীদের মস্তিষ্ক নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। তার গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ কিন্তু বিতর্কিত তথ্য। তিনি বলছেন, ‘পিডোফিলিয়া একটা যৌন প্রবণতা এবং মানুষ এই প্রবণতা নিয়ে জন্মায়। সময়ের সঙ্গে এর পরিবর্তন ঘটে না।’ ড. ক্যান্টর বলছেন সাধারণ মানুষ যেমন শিশুদের দেখলে আদর করে, তাদের সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করে- এই পিডোফাইলদের মধ্যে সেধরনের প্রবণতা জাগে না, শিশুদের দেখলে তাদের মধ্যে যৌন প্রবণতা সৃষ্টি হয়।
তার তত্ত্ব অনুযায়ী এধরনের প্রবণতা জন্ম নেয় যখন মাতৃগর্ভে একটা শিশু বেড়ে ওঠে এবং তার মস্তিষ্ক গঠিত হয়। তিনি গবেষণায় দেখেছেন মা গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ ও অপুষ্টিতে ভুগলে শিশুর মস্তিষ্কের যথাযথ বিকাশ হয় না। তবে এ নিয়ে আরো গবেষণা করে তিনি দেখতে চান এই প্রক্রিয়াকে বন্ধ করা যায় কি না। তার এই গবেষণাকে বিতর্কিত বলছেন ক্যানাডারই অটোয়ার একজন গবেষক ড. পল ফেডোরফ। তিনি মনে করেন না এটা জন্মগত সমস্যা। তার মতে এর চিকিৎসা সম্ভব।
তিনি বলেছেন অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন ওষুধ দিয়ে এধরনের অপরাধীদের যৌন প্রবণতা বন্ধ করা সম্ভব। তার মতে ওষুধ ব্যবহার করে শিশুদের ওপর তাদের যৌন নির্যাতনের প্রবণতা যদি রোখা যায় তাহলে এদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সহায়তাদান সম্ভব।
দেখা যাচ্ছে, বিষয়টিতে বিজ্ঞান এখনো একটি বিতর্কিত জায়গায় রয়েছে। কিন্তু এটা প্রমাণিত যে পিডোফাইল একটা মানসিক রোগ, তা সে জন্মগত হোক বা না হোক। এক্ষেত্রে সামজিকভাবে আমাদের করণীয় হতে পারে এরকম কোনো রোগীর (বিকৃত মানুষ) সন্ধান পেলেই তা গোপন না রাখা। অন্তত প্রথমদিকে নিকট আত্মীয় এবং প্রতিবেশীদের জানানো। আপনজন হলেও এক্ষেত্রে আবেগশূন্য হতে হবে। প্রয়োজনে থানায় একটা জিডি করেও রাখা যায়।
পর্নোগ্রাফি প্রমোটের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাইবার ক্রাইম বাড়ছে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ‘ট্রেড মাইক্রো’র একটি গবেষণা প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনেক দেশেই মোবাইল ইন্টারনেটের জন্য ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন এবং জিএসএম মডেম হ্যাক করার ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। ভুয়া অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের লোভ দেখিয়ে ফোন ব্যবহারকারীকে ফাঁদে ফেলে তার সিম ক্লোনিং করে একই নম্বর যেমন মেসেজ পাঠানো এবং কল করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে, তেমনি গ্রাহকের ই-মেইল পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ড, পিন নম্বর প্রভৃতি হ্যাক করা হচ্ছে। কয়েক বছর আগে ঢাকার উত্তরায় তাইওয়ান ও চীনের একটি সংঘবদ্ধ ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতচক্র ধরা পড়ে যারা প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছিল চীন ও তাইওয়ান থেকে। এসব বিষয়ে মানুষের সচেতনতা এখন খুবই জরুরি বিষয়।
যে সত্যটি সব অভিভাবককেই মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে, তার সন্তান যেন সুষ্ঠু গাইডেন্স পেয়ে বড় হতে পারে। প্রযুক্তি মানবসমাজের জন্য আশীর্বাদ হলেও তা মানবজীবনের একমাত্র নিয়ন্ত্রক কিংবা নিয়ামক নয়। মনে রাখতে হবে, কম্পিউটারের ডেটাবেইসে যে তথ্য আপলোড করা হবে, তাই কিন্তু সার্চ করে পাওয়া যাবে। কম্পিউটার এমন কোনো শক্তি নয় যা অদৃশ্য, অস্পর্শ কিছু বলে দিতে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে এবং বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশেও সাইবার নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা জরুরি। যাতে ইন্টারনেট প্রযুক্তির বিয়োগাত্মক দিকগুলো আমাদের প্রজন্মকে ধ্বংস করতে না পারে। মুক্তপ্রবাহের যুগে তথ্য নিয়ন্ত্রণ নয়, অসাধু তৎপরতা, অসামাজিক কর্মকাণ্ড যাতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে হতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে নজর রাখতে হবে। প্রযুক্তির দরজা দ্রুত উন্মুক্ত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমরা যেন প্রমাদজনিত ভাইরাসে না ভুগি। কারণ, কোনো অপস্বাধীনতা মানবজীবনে কল্যাণ বয়ে আনে না। আনতে পারে না।
ধরণী ধর্ষিতা হচ্ছে। মানুষ আর মানুষের মুখ দেখতে চাইছে না। কী অসহনীয় এই যাতনা। মানবিক বিবেককে জাগাতে হবে। তা না হলে কারোই উদ্ধার নেই।
----------------------------------------
দৈনিক খোলাকাগজ ॥ ঢাকা ॥ ৪ আগস্ট ২০১৭ শুক্রবার


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.