নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ফাহমিদা বারী

আমার ব্লগ মানে গল্প। গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাই :)

ফাহমিদা বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

রৌদ্দুর খুঁজে ফিরি (৩য় ও শেষ পর্ব)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৫


তিন
সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই কনকের দেখা হয়ে গেল তার দুলাভাইয়ের সাথে।
কনক সবসময় চেষ্টা করে যাতে এই লোকটির মুখোমুখি হতে না হয়। বদরুদ্দিন ঘুম থেকে ওঠার আগে সে বাসা থেকে বের হয়। বাসায় ফেরে অনেকরাতে, বদরুদ্দিন ঘুমিয়ে যাবার পরে। শৈলী টেবিলে ভাত চাপা দিয়ে সোফায় বসে ঢুলতে থাকে ভাইয়ের অপেক্ষায়।
ভাগ্যের এমন ফের! আজ একেবারে দু’জনে মুখোমুখি হয়ে গেল।
বদরুদ্দিন শিকারকে হাতেনাতে ধরতে পারার খুশিতে দাঁত বের করে বলে,
‘এই যে, একটার সাথে আরেকটা ফ্রি...(এই নামেই বদরুদ্দিন তার শালাকে সম্বোধন করে)! সারাজীবনই কি দুলাভাইয়ের ঘাড়ে কাঁঠাল ভাইঙ্গাই দিন পার হইবো নাকি কিছু কাম কাজ করার ইচ্ছা মর্জি আছে? আমি তোমার বোনরে ওয়ার্নিং দিয়া রাখছি! আর ছয়মাস দেখমু আমি। এর মইধ্যে কিছু বন্দোবস্ত না করবার পারলে এই বাড়ি থাইক্যা খাওয়াদাওয়া বন্ধ। এইটা কুনো ফ্রি হোটেল না! মেলাদিন সময় দিছি। আর না! যত্তসব ছোটলোকের গুষ্ঠি...বাপ-মা জন্ম দিয়াই খালাস...’
কনক বের হওয়ার উদ্যোগ নিয়েও আর বের হলো না। একবার দেখা যখন হয়েই গেছে, আর পালিয়ে গিয়ে কাজ নেই। সে চুপচাপ নিজের ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়লো। অনেক চিন্তাভাবনা করেও সে এই চক্র থেকে বের হওয়ার কোন উপায় খুঁজে পায় না। তার দুলাভাই লোকটা হয়ত মানুষ বেশি সুবিধার না। কিন্তু তার কী দোষ! সে কেন দিনের পর দিন তার বোঝা বহন করে যাবে? অনেকদিন তো করেইছে। আর কত করবে?
চিল্লাচিল্লি করতে করতে বদরুদ্দিন বাসা থেকে বের হয়। কনকও তার ঘর থেকে বের হয়ে আসে।
রান্নাঘরের মেঝেতে উবু হয়ে বসে শৈলী তরকারী কাটছিল। মুখ নীচু। কনক রান্নাঘরে ঢুকে মোড়া টেনে বসতে বসতে বলে,
‘দেখিস, হাত কাটিস না!’
শৈলী মুখ তুলে কনককে দেখে অপ্রস্তুত হয়। চোখের পানি লুকোতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। কনক সেদিকে না তাকিয়েই বলে,
‘দুলাভাই আজকাল কোথায় যায়, কী করে জানিস কিছু?’
শৈলী আরো চুপ করে বসে থাকে। তাকে দেখে মনে হয়, কনকের প্রশ্ন যেন তার কানেই ঢোকেনি। কনক প্রশ্নটা আবার জিজ্ঞেস করে। শৈলী এবারে মুখ তোলে। সরাসরি তাকায় কনকের দিকে। স্পষ্ট ভাষায় বলে,
‘হ্যাঁ, জানি। সে একজন মহিলার সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে। আমার কাছে তো কিছু লুকায়নি। সে তাকে বিয়েও করতে চায়। আমি জানি।’
‘জেনেশুনে চুপ করে বসে আছিস?’
‘কী করবো? কোথায় যাবো? বাবার কাছে? নাকি মা’র কাছে? তারা কোনো খোঁজ নিয়েছে আজ এতগুলো বছরে? তুই আর আমি আছি নাকি মরে গেছি...কোনো কিছু জানার দরকার পড়েছে তাদের?’
কনক মনে মনে বাতাসে ঘুষি মারে। খুব সত্যি কথা! কই যাবে তারা?
হঠাৎ কী একটা ভেবে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে কনকের। শৈলী সেটা লক্ষ্য করে। প্রশ্নবোধক চোখে তাকাতেই কনক বলে ওঠে,
‘কিছু না এমনি! ভাবছি এবার আমরা কোন চুলায় যাবো। হাহ হা...’
শৈলী অবাক হয়। কনকের কী মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেল! তার একরাশ বিস্ময়ের মধ্য দিয়েই কনক হাসতে হাসতে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
এর বেশ কয়েকদিন পরের কথা।
বাসা থেকে বের হওয়ার আগে বদরুদ্দিনের মাথাটা হঠাৎ কেমন ঘুরে ওঠে। তাড়াতাড়ি একটি চেয়ারে বসে পড়ে স্ত্রী শৈলীকে ডাক দিয়ে বলে,
‘এই শোন, দেখ তো দেখি...আমার চোখদুটো কি লাল দেখাচ্ছে?’
শৈলী বদরুদ্দিনের চোখ দেখে বলে,
‘কৈ, কিছু তো হয়নি! ঠিকই তো দেখছি! কেন খারাপ লাগছে নাকি তোমার?’
বদরুদ্দিন হুঁ হাঁ একটা কিছু বলে। বিমর্ষ মুখে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।
তার বুক পকেটে একটা টাইপ করা চিঠি। এই চিঠির সূত্র ধরে কিছুদিন আগে প্রিয়ন্তীর সাথে তার খুব একচোট হয়ে গেছে। ঠিক ছিল, প্রিয়ন্তীকে সে সামনের মাসেই বিয়ে করবে। সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলেছিল। গোল্লায় যাক, চরিত্রহীন বাপ-মায়ের অকাজের ছেলে মেয়ে! সে বসে বসে তাদের খাওয়াতে পারবে না সারাজীবন। প্রিয়ন্তীকে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যাবে।
এর মধ্যে এই চিঠি এসে সব উলটাপালটা করে দিয়েছে। চিঠিটা ছোট, কিন্তু ঠিক যেন একটা আগুনের গোলা!
‘জনাব,
আপনাকে সাবধান করা কর্তব্য মনে করে সাবধান করছি। সাবধান হওয়া না হওয়া আপনার বিবেচনা। আপনি যে মহিলার সাথে মেলামেশা করছেন তার কাছ থেকে সাবধান থাকবেন। আপনার সাথে তার পরিচয় হওয়ার আগে আমার সাথে তার মেলামেশা ছিল। সে একজন এইচ আই ভি পজিটিভ। তার জন্য আজ আমি মৃত্যুপথযাত্রী। আপনি যদি এখনো সুস্থ থাকেন, তাহলে আর দেরি না করে সরে পড়েন। যদি আপনার এখনো বাঁচার ইচ্ছা অবশিষ্ট থাকে...’
বদরুদ্দীন গুজুগে মানুষ। একেবারেই কান পাতলা যাকে বলে! এই চিঠি পড়ে সত্য মিথ্যা বিবেচনা না করে সে প্রিয়ন্তীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে বেরিয়ে এসেছে।
কিন্তু বের হয়ে এসেও নিস্তার নেই। এর পরে থেকেই বদরুদ্দিনের কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে। শরীরটাও কেমন যেন অবশ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে বুঝি জ্বর আসবে! মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। আজ সকালে দাঁত ব্রাশ করার সময় মুখ থেকে রক্ত বেরুতে দেখে তার আত্মা শুকিয়ে গেছে। অবস্থা দেখে শুনে মনে হচ্ছে, তারও বুঝি শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে। অথচ কাউকে বলতে পারছে না। ডাক্তারের কাছে যাবে সেই সাহসও বদরুদ্দিনের নেই।
শৈলী এখনো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বদরুদ্দিনের দিকে। বদরুদ্দিন কেমন ঘাপ্টি মেরে পড়ে আছে বিছানায়। শৈলী কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কাজে যাবে না? কী হয়েছে তোমার?’
‘না, আজ একটু শুয়ে থাকবো। দরজাটা চাপায়ে দিয়ে যাও।’
শৈলী কিছু বুঝতে না পেরে ডাইনিংরুমে এসে দেখে কনক মহা আরামে পাউরুটিতে জেলি লাগাচ্ছে। এই সময়ে সে কখনোই বাসায় থাকে না। আজ তার দুলাভাইয়ের উপস্থিতিতে কনকের এই নিশ্চিন্ত আচরণে অবাক হয় শৈলী। কনক শৈলীকে আসতে দেখে বলে,
‘একটা ছোটখাট চাকরির ইন্টারভিউ আছে আপা। দোয়া করিস।’
শৈলী বিড়বিড় করে বলে,
‘ভালো করে দিস ইন্টারভিউ। তোর দুলাভাই যেন কেমন করছে! কিছু হয়েছে নাকি তাও তো বুঝতে পারছি না...’
কনক পাউরুটিতে কামড় বসাতে বসাতে বলে,
‘ঔষধ পড়েছে তো! কাজ শুরু হয়েছে! এসব পার্শ প্রতিক্রিয়া।’
শৈলী বোকার মতো তাকায় ভাইয়ের মুখের দিকে।
‘কীসের ঔষধ? কী বলছিস এসব?’
কনক নিরীহ মুখে বলে,
‘সবকিছুই বুঝতে হবে তোকে? আর আমি তো দেখলাম দুলাভাইয়ের চোখ লাল। তুই মিথ্যা বললি কেন?’
শৈলী কিছুই বুঝতে পারে না। পুরোটাই যেন বিরাট এক হেঁয়ালি। কনক খুশি খুশি মনে খাচ্ছে। মায়া লাগে শৈলীর।
আহা রে! কতদিন ভাইটাকে এমন খুশি হতে দেখে নাই সে! ওর সুখের বিনিময়েও যেন ভাইটা সুখী হয়।
খেতে খেতে তখন কনকও মনে মনে একই কথাই ভাবছিল...
‘হে বিধাতা! আমি চুলোয় যাই, কিন্তু এই বোকাসোকা মেয়েটাকে তুমি সুখী করো...’ (সমাপ্ত)

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০৩

স্বল্প বাঁধন বলেছেন: চাকুরী টা কি হবে কনকের?

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৫

ফাহমিদা বারী বলেছেন: :) কী উত্তর দিব বুঝতে পারছি না!
রৌদ্দুরের অপেক্ষায় দিন গুনছে শীতে কাতর হতভাগ্য দুটি ভাইবোন। বিধাতা কি কখনো এত নিষ্ঠুর হবেন যে, তাদেরকে শীতে জবুথবু দেখেও তার সূর্যের ভাণ্ডার খুলে দেবেন না?

২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:০৯

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর হয়েছে।






ভালো থাকুন নিরন্তর। ধন্যবাদ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৫

ফাহমিদা বারী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনিও ভাল থাকুন। :)

৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
গল্প ভালো হয়েছে +++




শুভ কামনা ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২২

ফাহমিদা বারী বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ। :)

৪| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৫

জাহিদ অনিক বলেছেন: শেষ হলো,


কি বলব, ওল্ড ওয়াইন ইন নিউ বটল নাকি নতুন বোতলেই নতুন ওয়াইন ! বুঝতে পারছি না ।




দুলাভাইকে এমন সাজা দেয়ার বুদ্ধিটা দারুণ।



অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে ......

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩৪

ফাহমিদা বারী বলেছেন: পাঠক না বুঝলে চলবে? পাঠক কী বলে লেখক তো সেই আশাতেই বসে থাকে! :)
অনেক ধন্যবাদ গল্প পাঠের জন্য।

৫| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩৭

জাহিদ অনিক বলেছেন: পাঠক কী বলে লেখক তো সেই আশাতেই বসে থাকে! - এইত এটা বলে আবার বিপদে ফেলে দিলেন!


আমি আপনার কাছে সেই রকম একটা গল্প আশা করি ঐ যে, চাকরী থেকে বদলি করে পাহাড়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় বসের বউকে বিয়ে করতে চায় বলে !


ওটা দারুণ ছিল ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪২

ফাহমিদা বারী বলেছেন: 'বসন্তের বাতাস'। হুম, ওটা আমারও প্রিয় গল্প ছিল। কিছুদিন আগে ভারতের এক বইএ প্রকাশের আশায় সেই গল্পটি পাঠিয়েছিলাম। গল্পটি মনোনীত হয়নি। তারা ভিন্ন জাতীয় কিছু খুঁজছিলেন। কারণ সেই গল্পে গভীর জীবনবোধের ছোঁয়া ছিল না।
সেই ভিন্ন কিছু কি এই গল্পটাতে পাওয়া যায়নি? হয়ত গিয়েছে হয়ত যায়নি, তবে ভিন্ন কিছু তো ছিল তাই না?
:) ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা অশেষ।

৬| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪৪

জাহিদ অনিক বলেছেন: তবে ভিন্ন কিছু তো ছিল তাই না? - নাহলে আর গল্পটার কথা মনে রাখলাম কেন ??

আপনিও ভাল থাকুন।

৭| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২১

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:



গল্পটা সাবলীল... কিন্তু একটা ছকে বাধা... আর সে ছকের ছত্রেছত্রে বুদ্ধিমত্তার আভাষ.... ভাল না লেগে উপায় নেই! যথারীতি মুগ্ধ হ'লাম!

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১৭

ফাহমিদা বারী বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.