নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ফাহমিদা বারী

আমার ব্লগ মানে গল্প। গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাই :)

ফাহমিদা বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুটি অণুগল্প

০৩ রা অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৪৮


#গল্প_১_লজ্জা

রিলিফের ট্রাক চলে এসেছে! চাচাকে খবরটা দিতে হবে!
হায়দার লজ্জিত হয়ে নিজের ছোট্ট পুটুলিটা সরিয়ে ফেলে। সামান্য কিছু খাবার ঘরে ছিল। ওটুকুই নিয়ে এসেছিল চাচার জন্য। খুবই সামান্য কিছু চাল ডাল। কত বড় ট্রাকভর্তি করে খাবার নিয়ে এসেছে বড় মনের সব মানুষ! কত কত দান করছে তারা! আর হায়দার এইটুকু মোটে খাবার নিয়ে সাহায্য করতে যাচ্ছিল!

রিলিফের ট্রাকের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে সবাই। পোঁটলা হাতে নিয়ে তাদের প্রত্যেককে ছবির জন্য দাঁড়াতে হচ্ছে। কড়া নির্দেশ দিতে থাকে রিলিফ বিতরণকারীরা,
‘এ্যামনে না মিয়া! ক্যামেরার দিকে মুখ কইরা তাকাও! আরে আরে! ব্যাগটা দ্যাখা যাইতাছে না তো! হাত থেইকা লইতাছ বুঝন যাইতাছে না! আরেকবার খাড়াও! হ...এইবার হইছে! মুখে হাসি নাই ক্যান মিয়া?’

বৃদ্ধ কলিম মিয়া ছবি তুলতে মৃদু আপত্তি জানায়। অভাবে পড়ে অন্যের দ্বারস্থ হতে ভারি লজ্জা লাগে। ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে ছবি তুলতে হবে! এ তো আরো লজ্জার বিষয়!
রিলিফ প্রদানকারী ছেলেকে কথাটা বলতেই হাতের পোঁটলাটা কেড়ে নিয়ে রূঢ়গলায় বলে ওঠে, ‘যাও মিয়া...ছবি না তুললে রিলিফ নাই! সজ্ঞলে ছবি দিয়া ফেসবুক ভরাই দিতাছে! হালা আমি খালি বেগার খাটতাছি! কী লজ্জার কথা!’

কলিম মিয়া খালি হাতে ফিরে আসে হায়দারের কাছে।
‘ও বাপ... ছবি তুলতে বড় শরম করে রে বাপ! দুজ্ঞা চাউল দিবার পারবি? দুইদিন ভাত খাইনিরে বাপ!’
বাবার বয়সী কলিম মিয়ার দিকে সস্নেহে তাকায় হায়দার। নিজের সামান্য দানটুকু দেখে ভেতরে ভেতরে মরমে মরে যায় সে। খুবই কুন্ঠাভরে সেটাকে তুলে দেয় কলিম চাচার হাতে!
এত লজ্জা লাগে তার! এইটুকু জিনিস কেউ কাউকে দেয়!


#গল্প_২_ক্ষুধা

কে এফ সি’র বিশাল বাকেটটা প্রায় সাবাড়। গতকাল সন্ধ্যায় আসিফ এনেছিল। দুজনে মিলে সকালের মধ্যেই শেষ করে ফেলেছে। তলানিতে দুটো লেগপিস পড়েছিল। সকালে কাজে এসে টেবিলের ঝুটা বাসন সরাচ্ছিল শেফালি। বাকেটের দিকে চোখ পড়তেই মিতা বলল... ‘খাবি? নে না!’

শেফালি হাত বাড়িয়ে নেয়। মিইয়ে আসা ঠান্ডা মাংসের টুকরোটা খেতে কেমন যেন গা গুলিয়ে আসে। মিতা বলে... 'থাক। তুই খেতে পারবি না! সবাই সবকিছু খেতে পারে না!'

******
পুরো পৃথিবী এতদিন পুড়ল মহামারীতে। এখন শুরু হয়েছে নতুন মহামারী...ক্ষুধা। আসিফদের কোম্পানি অনেককেই ছাঁটাই করেছে। যারা আছে তাদের বেতন হচ্ছে না দু’মাস। গতকালও চাল ডাল কেনা হয়নি। কিছু টাকা ছিল। কিন্তু বাজার থেকে নাকি সবকিছু হাওয়া। আজ সারাদিন চুলা জ্বলেনি বাসায়।

দুপুরের পরে হঠাৎ শেফালি আসে। ওকে বাদ দিতে হয়েছে আজ অনেকদিন। শেফালি এসেছিল কিছু চালের আশায়। কোঁচাভর্তি কী যেন কালো কালো ফল শেফালির। সেদিকে চোখ ফেলতেই বলে... 'শালু...খাইবেন আপা? সিদ্ধ কইরা খাওন লাগে।’ তারপরে কী মনে হতেই বলে... ‘থাক। আপনি খাইতে পারবেন না!সজ্ঞলে সগল কিছু খাইবার পারে না! ’

মিতার ভেতরে কী যেন একটা জ্বলছে। সে হাত বাড়িয়ে দুটো শালু নেয়। চলে যেতে যেতে শেফালি আপনমনেই বলে... ‘ঐ জ্বলুনির স্বাদটাই খালি সজ্ঞলের কাছে একইরকম লাগে গো আপা!’


(ছবি- অনলাইনে পাওয়া, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:৫২

হাবিব বলেছেন: গল্প দুটিতে বাস্তবতার করুণ ছবি দেখতে পেলাম

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২১ রাত ৯:৫৯

ফাহমিদা বারী বলেছেন: ধন্যবাদ অনেক গল্প পড়ার জন্য :)

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: ৭১ সালের পর রিলিফ দেওয়া বন্ধ আছে। আচ্ছা, রিলিফ আর ত্রান কি একই জিনিস?
কেএফসির চিকেন ওভেনে গরম করে নিলেই তো হয়। আমি নিয়মিত খাই।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:০০

ফাহমিদা বারী বলেছেন: রিলিফ শব্দটা ভুল হয়েছে। ত্রান লিখতে হতো।

হা হা। কাজের মেয়ে শেফালি ওভেনে গরম করার কথা ভাবেনি। এমন কিছু ভেবে নিন না কষ্ট করে!

৩| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৫৭

ইসিয়াক বলেছেন: কখন কোন ফাঁকে এক নিমেষে বদলে যায় সবকিছু কেউ জানে না। অহংকার করাই ভুল। দুটোই গল্পই ভালো তবে ২্য় গল্পটা বেশি ভালো লেগেছে।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২১ রাত ১০:০১

ফাহমিদা বারী বলেছেন: সেটাই! দুইদিনের এই দুনিয়ায় কিছুই চিরস্থায়ী না! তবু আমরা কত সহজে সব কিছু ভুলে থাকি!

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.