নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ফাহমিদা বারী

আমার ব্লগ মানে গল্প। গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানাই :)

ফাহমিদা বারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ- ভাঁটফুলের সৌরভ

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৩৮



আমার সদ্য প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ 'ভাঁটফুলের সৌরভ নিয়ে নিচের রিভিউটি লিখেছে লেখক সুমাইয়া আমান নিতু।
.।.।.।.।.।।।
ভাঁটফুলের সৌরভ
লেখক- ফাহমিদা বারী
প্রকাশনী- চলন্তিকা
মূল্য- ২০০ টাকা
প্রথম প্রকাশ- অক্টোবর ২০২১
ধরণ- গল্প সংকলন

১১৯ পৃষ্ঠার ছোট্ট বইতে গল্পের সংখ্যা সাত। সমাজ, প্রেম, না পাওয়ার হাহাকার, আলো-আঁধারিত জীবন আর ছোট ছোট অনুভূতির নিয়ে গল্পগুলো সাজানো। প্রতিটা গল্পের নাম ভীষণ পছন্দ হয়েছে।

প্রথম গল্পটি হলো 'এক চিমটি অ-সুখ'
শুরুতে দেখা যায় আসিফ আর রেশমার অতি মিষ্টি সুখের সংসার৷ ছোট ছোট জিনিসেও জড়ানো নতুন সব অনুভূতি৷ এর মাঝে হুট করে ঢুকে পড়ে এক চিমটি অসুখ। খানিক চেনা গল্প হলেও আমার এটি খুবই ভালো লেগেছে। প্রেমের গল্প তো তাই সম্ভবত। পড়ে মনে হয়েছে, শেষমেশ ভিলেন হলো কি না দারুচিনি!

দ্বিতীয় গল্প 'চেয়ার'
গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র রাশেদ, যে কি না অফিসের পিয়ন৷ তবে অল্প শিক্ষিত নয়, রীতিমতো কেমিস্ট্রিতে অনার্স পাশ করা। তার স্বপ্ন একটাই, একদিন সে পিয়নের টুল ছেড়ে চেয়ারে বসবে, অন্যদের মতো সম্মান পাবে। কিন্তু একদিনের সময়ের একটু হেরফেরও যে জীবন বদলে দিতে পারে! শেষ পর্যন্ত রাশেদের কপালে কী জোটে সেটাই দেখার বিষয়। দীর্ঘদিন অপেক্ষার ফল কি তবে শূন্য?
এই গল্পটিও আমার ভালো লেগেছে। নিম্নবিত্ত লোকেরও যে চোখভর্তি স্বপ্ন থাকে সেটি বুঝি আমরা ভুলেই যাই।

'নো ম্যান'স ল্যান্ড'
বহুদিন পর বিদেশের মাটিতে পুরানো বন্ধু নোমানের সাথে দেখা হওয়া, যে কি না নিজের মনকে দাবি করত নো ম্যান'স ল্যান্ড। কী কারণ এর? ফেলে আসা জীবনের ভুল বোঝাবুঝির কী ব্যাখ্যা দেবে নোমান? নো ম্যান'স ল্যান্ডের রহস্যটাই বা কী?
দারুণ গল্প! শেষটা কিছুটা প্রেডিক্টেবল হলেও ভীষণ হৃদয় ছোঁয়া ছিল। তবে এর ইউনিক নামের জন্যই হয়তো অনেকদিন মনে থাকবে গল্পটা।

'প্রবোধ'
মায়ের সংগ্রামের গল্প। দিন ঘুরে যাওয়ার গল্প। স্বামী মারা যাওয়ার পর লতিফার যখন শ্বাশুড়ির গা জ্বালানো কথা আর অভাবের তাড়নায় জেরবার অবস্থা, তখন সব ছেড়ে চলে যাওয়ার চেষ্টামাত্র না করে ছোট্ট শিশুটির মুখ চেয়ে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নেয়া মায়ের গল্প। শেষ পর্যন্ত সংসার কি তাকে দেবে সব দুঃখের ফল?
এইটা কষ্টের গল্প। তাই খুব সুন্দর হলেও আমার একটু কম ভালো লেগেছে।

'মাস্টারমাইন্ড'
স্কলার বাবা আর পরিশ্রমী মায়ের একমাত্র ছেলে যে সবদিন দিয়েই ফেলটু। না বাবার গুণ পেয়েছে, না মায়ের। যখন বহু চেষ্টায়ও ছেলের মধ্যে কোনো গুণাবলি খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন মা একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিল, আর বাবা হলো উদাসীন। ছেলের একসময় জেদ চাপল কিছু করতে হবে। বাবার মতো সাহিত্যিক হওয়ার চেষ্টায় লেগে গেল সে। তবু চারদিক আঁধার। শেষে এক টুকরো আলোর দেখা মিলল। আলোটুকু কি আলেয়া হয়ে তাকে আরও আঁধারে ছুঁড়ে ফেলবে নাকি নিয়ে যাবে আলোকিত প্রান্তরে সেটাই দেখার বিষয়৷ আর সবশেষে আছে দারুণ চমক।
এটা আমার সবচেয়ে পছন্দের গল্প। চেনা গল্পের বাইরে একেবারে নতুন কিছু।

'মঞ্জুদি'
স্মৃতিচারণের গল্প। এটি পড়তে পড়তে ফিরে যাওয়া হবে উনিশ শতকে কলোনিতে, যেখানে মা চাচীরা বিকেল হলেই আড্ডায় বসে। যেখানে গায়ে গা লাগানো বাড়িঘর সব একে অপরের আপন। প্রেম হয় বইপত্র আদান প্রদান আর লাজুক সংলাপের মধ্যে দিয়ে। সেই সময়কালে শিল্পানুরাগী পরিবার হলো মঞ্জুদির পরিবার। সময়ের তুলনায় আধুনিকা, স্বাধীন, আত্মবিশ্বাসী মেয়ে মঞ্জুদিম জীবনের গল্প, আর শেষের ট্র্যাজেডি। প্রথমদিকে মনে হচ্ছিল মূল গল্পের বাইরে এত চরিত্র, এত ঘটনা কেন? শেষে বোঝা গেল শুরুটাই গল্পের বেইস ছিল। এটার সমাপ্তি ট্র্যাজিক হলেও খুব ভালো লেগেছে। শেষটা মনে দাগ কেটে গেছে।

'অফোটা'
সুজন-স্বর্ণর গল্প। গ্রামীন প্রেক্ষাপটের দুই চরিত্র, এক ডানপিটে, অন্যজন মায়াবতী। ঝগড়া করেই সময় পার করা মনে প্রেম বলে বস্তুটি কি খুঁজেপেতে পাওয়া যাবে? আর বললে স্পয়লার হয়ে যাবে৷ ছোট্ট গল্প। খুব ভালো লেগেছে। তবে লেখকের অভিমত অনুয়ায়ী এটা গতানুগতিকের বাইরে, হ্যাঁ সব প্রেমের গল্পের মতো নয়, কিন্তু আমার কাছে কেন প্রেমের গল্প মাত্রই গতানুগতিক মনে হয় জানা নাই।

বইটা পড়তে গিয়ে প্রথমবার উপলব্ধি করলাম অনলাইনে ফেসবুকের পাতায় গল্প পড়তে যতটা ভলো লাগে, তারচেয়ে অনেক বেশি ভালো লাগে বইয়ের পাতায় পড়তে। বইয়ের পাতার প্রতিটা লাইন মনোযোগ দিয়ে পড়া হয়, উপলব্ধি করা যায়৷ মুখবইয়ের মতো অপর পাতায় নোটিফিকেশনেরা সাড়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকে না, কেউ মেসেঞ্জারে ডাকাডাকির সুযোগ পায় না৷

ফাহমিদা বারী আপুর সাথে পরিচয় মুখবইতেই। তার ছোটগল্প আমার ভালো লাগত। আবার কিছু গল্পে ধৈর্য রাখতে পারতাম না৷ মূল গল্পে না গিয়ে এত বর্ননার কি আছে! অথচ এই জিনিসটাই বইতে উপভোগ করেছি। একটু একটু করে শব্দ বুনে পরিণতিতে পৌঁছে যাওয়া। সবচেয়ে ভালো লেগেছে লেখার ভেতর পরিমিতিবোধ (শব্দটা ঠিকঠাক আছে কি না যদিও বুঝতে পারছি না)। মানে যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই আছে। বাড়তি কিছু মনে হয়নি। বলতে দ্বিধা নেই, মুখবইয়ের বদৌলতে কালজয়ী লেখকদের গন্ডির বাইরে অনেক নবীন লেখকের সাথে পরিচয় হয়েছে। অনেকের বই পড়া হয়েছে। কালজয়ী লেখকদের লেখা পড়ে যেমন মুগ্ধতা কাজ করত, সেটা কম লেখকের লেখা পড়েই এসেছে। তার মধ্যে ফাহমিদা বারী একজন।

বইয়ের প্রোডাকশন ভালো হয়েছে। প্রচ্ছদটা দেখলে কী যেন মনে পড়ে যায়! সব মিলিয়ে ছোট প্যাকেটে সুন্দর বই। পড়তে নিলে সময়টা খুব ভালো কাটবে।

©সুমাইয়া আমান নিতু


মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৫৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: শুভকামনা রইলো।

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৭

ফাহমিদা বারী বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:২২

Abida-আবিদা বলেছেন: গল্পগ্রন্থের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি। দোয়া রইল, আপু।

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৬

ফাহমিদা বারী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: নিতু রিভিউ ভালো লিখেছে।
নিতুকে বলেন সামুতে লেখালেখি করতে।

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৮:৪৬

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর রিভিউ। আপনা বইছি সংগ্রহ করবো ইনশাল্লাহ।

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:২৬

ফাহমিদা বারী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। বইটি ভালো যাচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।

৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৩০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: শুভ কামনা রইল। প্রবাসে আছি বলে এখনি নিতে পারছি না। তবে দেশের কারোর মাধ্যমে সংগ্রহ করাবো।

২২ শে নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১০

ফাহমিদা বারী বলেছেন: আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। আপনি বই নিতে চাইছেন অথচ প্রবাসে আছেন। অথচ যারা দেশে আছে তাদের বই নেওয়ার ইচ্ছা নাই। ;) অবস্থা কেমন শোচনীয় দেখুন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.