নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফকির আবদুল মালেক

ফকির আবদুল মালেক

আমি এক উদাস ফকির তারা দানা তসবী গুনিপ্রাণীসম দেহ মাঝে মানুষ নামে স্বপ্ন বুনি

ফকির আবদুল মালেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনন্দঘন হোক পহেলা বৈশাখের উৎসব

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ ভোর ৬:২৯


মধ্যযুগে বাংলা সনের প্রচলনের আগে কৃষি ও ভূমি কর বা খাজনা আদায় করা হতো ইসলামিক হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে। কিন্তু চাষাবাদ করা হতো সৌর বছর অনুযায়ী। কারণ চন্দ্র ও সৌর বছরের মধ্যে ১১ বা ১২ দিনের পার্থক্য ছিল। ফলে ৩১ টি চন্দ্র বছর ৩০ টি সৌর বছর এর সমান হয়ে যেতো। তাতে কৃষিজীবীদের ফসলহীন ঋতুতে কর বা খাজনা দেবার জন্য বাধ্য করা হতো।

সম্রাট আকবর তাঁর শাসনের প্রথমেই এই সমস্যা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন এবং এর একটি বৈজ্ঞানিক কিন্তু কার্যকর সমাধান খুঁজছিলেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মুঘল সম্রাট আকবর (শাসনকাল ১৫৫৬ খৃষ্টাব্দ হতে ১৬০৫ খৃষ্টাব্দ) বর্ষপঞ্জি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী ও রাজকীয় জ্যোর্তিবিদ আমির ফতেউল্লাহ্ সিরাজী চান্দ্রমাস নির্ভর হিজরি বর্ষপঞ্জি এবং সৌরমাস নির্ভর হিন্দু বর্ষপঞ্জি গবেষণা করে একটি নতুন বর্ষপঞ্জি প্রস্তাব করেন। এর ফলেই সূচনা হলো বাংলা বর্ষপঞ্জির বা বাংলা সনের। বাংলা সনের সূচনা হয় ফসল তোলার সময়ে যখন কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে বছরের অন্য সময়ের চাইতে সচ্ছল থাকে। নতুন বর্ষপঞ্জি প্রথম দিকে ফসলী সন হিসেবে পরিচিত ছিল।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যুগ ধরে চৈত্র মাসের শেষ দিনে চৈত্র সংক্রান্তি পূজা’ উদযাপন করে আসছে । বাংলা উইকিপিডিয়াতে প্রদত্ত তথ্য থেকে দেখা যায় হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে, এ দিনে স্নান, ব্রত, উপাসনা প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম পূণ্য জনক।

এ ছাড়া বাংলা পিডিয়াতে আরো বলা হয়েছে, “চৈত্রসংক্রান্তির দিন বাংলায় শিব কেন্দ্রিক একটি বিশেষ উৎসব পালিত হয়। এটি “চড়ক পূজা” নামে পরিচিত। চড়ক পূজা পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব। চৈত্রের শেষ দিন এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী চড়ক পূজার উৎসব চলে।”

“চড়কপূজা উপলক্ষ্যে, আগের দিন চড়ক গাছকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। তারপর এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয় যা পূজারীদের কাছে “বুড়োশিব” নামে পরিচিত। পতিত ব্রাক্ষণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করে। পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হল, কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুঁড়ির উপর লাফানো, শিবের বিয়ে, অগ্নি নৃত্য, চড়কগাছে দোলা ইত্যাদি। এইসব পূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেত ও পুনর্জন্মবাদের উপর বিশ্বাস। এর অনুষ্ঠানাবলী প্রাচীন কৌম সমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা “চড়ক সংক্রান্তি” বা “চৈত্র সংক্রান্তির মেলা” নামে পরিচিত।”

পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বাংলা সনের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নেন। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব। বিশ্বের সকল প্রান্তের সকল বাঙালি এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেন। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা একে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ্য হিসেবে বরণ করে নেন।

নানা অানুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে বাংলা বর্ষবরণকে সাজায় বিশ্বের নানা প্রান্তের বাঙালীরা।

বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখের উৎসব নিজের মত করে গুছিয়ে নিয়েছে এবং এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাত্রা।

গত বিশ বছর আগেও শহুরে মধ্যবিত্ত বাংলা নববর্ষ তেমন গুরুত্ব দিয়ে দেখতো না আর উচ্চবিত্তরাতো নাই ই। বাংলা সন ছিলো গ্রামের মানুষের (চাষাভূষার) সন। তাদের মহাজনের সাথে ঋনের হিসাব করা – ব্যবসায়ীদের হালখাতা করা আর কৃষকদের খাজনা দেওয়ার জন্যে অবশ্যই এই দিনটি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ন ছিলো।

ছায়ানট মুলত একে টেনে এনেছে শহরে – রবীন্দ্রনাথকে ভর করে মধ্যবিত্তের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে এই নববর্ষ। ১৯৬৭ সালে প্রথম ছায়ানট রমনার বটমুলে গানের আসর করে – স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এর পরিধি বাড়ছে। আর মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয় ১৯৮৯ সাল থেকে – এর উদ্যোক্তার এইটাকে সার্বজনীন ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব হিসাবে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

নাগরিক আবহে সার্বজনীন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে নতুন মাত্রা যোগ হয়৤ ১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের সর্বপ্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। সে বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীগন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে৤।

১৯৮৯ সালে প্রথম আনন্দ শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, ঘোড়া, হাতি। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের আনন্দ শোভাযাত্রায়ও নানা ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি স্থান পায়। ১৯৯১ সালে চারুকলার শোভাযাত্রা জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা লাভ করে। চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিল্পীদের উদ্যোগে হওয়া সেই শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর, বিশিষ্ট লেখক, শিল্পীগণ-সহ সাধারণ নাগরিকরা অংশ নেয়।

শোভাযাত্রায় স্থান পায় বিশালকায় হাতি, বাঘের প্রতিকৃতির কারুকর্ম। কৃত্রিম ঢাক আর অসংখ্য মুখোশখচিত প্ল্যাকার্ডসহ মিছিলটি নাচে গানে উৎফুল্ল পরিবেশ সৃষ্টি করে। ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ শোভাযাত্রার সম্মুখে রং বেরংয়ের পোশাক পরিহিত ছাত্র-ছাত্রীদের কাঁধে ছিল বিরাট আকারের কুমির। বাঁশ এবং বহু বর্ণের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল কুমিরটি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘১৪০০ সাল উদযাপন কমিটি’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরর চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শোভাযাত্রার আকর্ষণ ছিল বাঘ, হাতি, ময়ূর, ঘোড়া, বিভিন্ন ধরনের মুখোশ। চারুকলার সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় দিয়ে শিশু একাডেমি হয়ে পুনরায় চারুকলায় এসে শেষ হয়।

জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা বা ইনট্যানজিবল (ইং: Intangible ) সাংস্কৃতিক ঐতিহ‌্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।

গ্রামের “বছর পয়লা” শহরে এসে পহেলা বৈশাখ হওয়ার সাথে সাথে নতুন একটা উপসর্গ এসে জড়িয়ে গেছে – তা হলো পান্তা-ইলিশ। বিত্তবানদের ইলিশ কেনার প্রতিযোগীতা আর তার ছবি ফেইসবুকে দেওয়ার রেওয়াজটা যে হাজার বছরের সংস্কৃতি না এইটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিত্তবানদের সম্পদের প্রদর্শনী শুধু যে পহেলা বৈশাখেই হয় তা না -হয় ধর্মীয় উৎসবেও। যাদের অনেক আছে তারা দেখাবে – আর যাদের নাই তারা দেখবে – এইটা অবশ্য হাজার বছরের ঐতিহ্য।

রমজান, ঈদ আর শবেবরাতে এর চেয়ে অনেক বেশী অনিয়ম হয় – যা ইসলামের দৃষ্টিতে কঠিন অন্যায় – আমার মনে হয় যারা ইসলাম নিয়ে ভাবেন – তারা আগে নিজের ঘর সাফ করা উচিত।

পহেলা বৈশাখ ধর্মীয় উৎসব না – সেখানে ধর্ম পালন করতে কেউ যায় না। তার বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া মানেই হলো সীমার বাইরে যাওয়া।

অন্যদিকে বাংলাদেশে ধর্মনিরপক্ষবাদীদের মধ্যে নাস্তিকপন্থীরা ইসলামধর্মের প্রতি এতোটাই অসহিষ্ণু যে – কোন অনুষ্টানের আগে এরা নিশ্চিত করে এই ধর্মের অনুসারীরা যথেষ্ঠ বিরক্ত হয়েছে কিনা! এটা খুবই দুঃখজনক আর চরম বাড়াবাড়িও বটে।

আর প্রতিটি বাড়াবাড়ি নিয়ে আসে বেদনাদায়ক ঘটনা। আমরা সব ধরণের বাড়াবাড়ি পরিহার করে আনন্দঘন পরিবেশে পহেলা বৈশাখের উৎসব পালনের আহ্বান জানাই।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আমাদের মোট ৩টা নববর্ষ থাকা উচিত, বাংগা, ইসলামিক ও আন্তর্জাতিক

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৩৯

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৩৮

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনি হয়তো ঠিক বলছেন।

৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:০৯

নিশাত১২৩ বলেছেন: নতুন বছর মঙ্গলময় হোক।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:১৯

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: পোস্টে মন্তব্য করার জন্য ধ ন্য বা দ।

নতুন বছর মঙ্গলময় হোক।

৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১১:৫২

শোভ বলেছেন: পহেলা বৈশাখ ধর্মীয় উৎসব না – সেখানে ধর্ম পালন করতে কেউ যায় না। তার বিষয়ে ফতোয়া দেওয়া মানেই হলো সীমার বাইরে যাওয়া।-------সহমত পোশন করছি কিন্তু আপনার এই কথাটা কি পান জরদাখোর মোল্লারা বুঝার চেস্টা করবে ?

১১ ই এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৪

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: জরদাখোর মোল্লারা বুঝবে না কথা সত্যি, কিন্তু প্রকৃত ইসলামি চিন্তাবিদ তারা হয়ত কথাটা গুরত্বহীন নাও ভাবতে পারেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৫১

নিঃসঙ্গ যোদ্ধা বলেছেন: শুভ নববর্ষ। নববর্ষ নিয়ে বানানো আমার ভিডিও। আশা করি ভালো লাগবে।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ ভোর ৬:৪৫

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে এখানে ভিডিওটি শেয়ার করার জন্য।

আমার বেশ ভাল লেগেছে। তবে পুরো চিত্রটি একই রকম মনে হয়েছে।

আবারো ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.