নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফকির আবদুল মালেক

ফকির আবদুল মালেক

আমি এক উদাস ফকির তারা দানা তসবী গুনিপ্রাণীসম দেহ মাঝে মানুষ নামে স্বপ্ন বুনি

ফকির আবদুল মালেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সস্তা এবং বাজারি লেখালেখিঃ হুমায়ূন আহমেদ থেকে কাশেম বিন আবুবাকারঃ শেষ পর্ব

০৩ রা মে, ২০১৭ দুপুর ১২:২৯


সস্তা এবং বাজারি লেখালেখিঃ হুমায়ূন আহমেদ থেকে কাশেম বিন আবুবাকারঃ প্রথম পর্ব


যাদের বই বাজারে পাওয়া যায় না, তাদের বাড়িতে কার্টুন ভর্তি থাকে, তারা মহান লেখক, মুক্তবুদ্ধি লেখক, কমিটেড লেখক, সত্যসন্ধানী লেখক। তাঁদের বেশিরভাগের ধারণা তাঁরা কালজয় করে ফেলেছেন। এঁরা বাজারি লেখকদের কঠিন আক্রমণ করতে ভালোবাসেন।

আমাদের আলোচনা কোন মহান, মুক্তবুদ্ধি, কমিটেড, সত্যসন্ধানী লেখক নিয়ে নয়। আমরা বাজারি লেখকদের নিয়ে আলোচনায় করছি এবং এক আত্মস্বীকৃত বাজারে লেখক হুমায়ূন আহমেদকে বিশ্লষণ করেছি। এবার অন্যদিকে যেতে চাই।

এই সময়ে যে লেখক সবচেয়ে আলোচিত তিনি হুমায়ূন আহমেদ নন, তিনি কাশেম বিন আবুবাকার। এএফপি তাকে নিয়ে নিউজ করার আগে আমরা শুদ্ধবাধি লেখকরা অনেকেই তার নামই শুনি নি।

এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, কাসেম বিন আবুবাকার ১৯৭০ দশকের শেষের দিকে একজন বই বিক্রেতা হিসেবে প্রায় সব উপন্যাসের মধ্যে শুধু শহুরে অভিজাতদের জীবনযাত্রার কথা দেখতে পেয়ে নিজেই হাতে কলম তুলে নেন।

ইসলামী মূল্যবোধকে সামনে রেখে কাসেমের লেখা একের পর এক প্রেমের উপন্যাস প্রকাশিত হতে থাকে। এসব উপন্যাস দ্রুতই তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। লাখ লাখ পাঠকের হাতে হাতে ঘুরতে থাকে তার উপন্যাস।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সেক্যুলার লেখকরা এমন এক দুনিয়ার গল্প বলেছে, যেখান থেকে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের প্রধান অংশের গ্রামীণ ও ধর্মীয় জীবনের অস্তিত্ব মুছে ফেলা হয়েছে। কাসেম এ শূন্যতার বিষয়টি অনুধাবন করে তার উপন্যাসের বাজার গড়ে তুলেছেন।

অনেকে আকাশ থেকে পড়ছি, কাশেম বিন আবুবাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় , কীভাবে? সত্যিটা হচ্ছে, পৃথিবীর সবদেশে সবসময় কাটতি বেশি যথাক্রমে রেসিপি, পর্নোগ্রাফিক এরপর ধর্মীয় বই।

গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার অরিজিত রায়চৌধুরী একবার বলেছিলেন প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে পঞ্জিকা অন্তত বিশ লাখ কপি বিক্রি হয় । অথচ বাংলা উপন্যাস পাঁচ হাজার বিক্রি হলেই বেস্টসেলার – আনন্দ পাবলিশার্সের সুবীর মিত্র বলেছিলেন সেবারই।

প্রশ্ন হচ্ছে কাশেম বিন আবুবাকার এর যে লেখাগুলি এত এত কপি বিক্রি হয় তা কি রেসিপি, পর্ণোগ্রাফি, ধর্মীয় পুস্তক বা পঞ্জিকা। এসব কিছুই নয়, এমনকি এগুলি হুমায়ূন আজাদের ভাষায় অপন্যাস ও নয়, এগুলিকে চিহ্নিত করা হচ্ছে ইসলামি উপন্যাস হিসাবে।

বেশি বিক্রি হওয়া উপন্যাসের মধ্যে একটি ক্যাটাগরি হচ্ছে রোমান্স উপন্যাস।

রোম্যান্স উপন্যাস বা রমন্যাস পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে, বিশেষত ইংরেজি-ভাষী জগতে বিকশিত একটি সাহিত্যধারা। এই বর্গের উপন্যাসগুলির মূল উপজীব্য দুই ব্যক্তির প্রেম ও প্রণয়সম্পর্ক, যার পরিসমাপ্তি হবে “সর্বদা মানসিকভাবে সন্তুষ্টিবিধায়ক ও আশাব্যঞ্জক”

১৯৭২ সালে অ্যাভন বুকস প্রকাশিত ক্যাথলিন উইডিউইস রচিত দ্য ফ্লেম অ্যান্ড দ্য ফ্লাওয়ার উপন্যাসটি আধুনিক রোম্যান্সের সূচনা করে। এটিই ছিল মূল পেপারব্যাক আকারে প্রকাশিত প্রথম সিঙ্গল-টাইটেল রোম্যান্স উপন্যাস। ১৯৮০-এর দশকে এই ধারাটি সমৃদ্ধিলাভ করে। অনেকসংখ্যক ক্যাটেগরি উপন্যাসের পাশাপাশি সিঙ্গল-টাইটেল উপন্যাসের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। জনপ্রিয় লেখকগণ এই ধারার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং প্লট ও চরিত্রচিত্রণে আধুনিকতার ছোঁওয়া লাগে।

উত্তর আমেরিকায় ২০০৪ সালে বিক্রীত সমস্ত পেপারব্যাক বইয়ের ৫৫% রোম্যান্স উপন্যাস। এই অঞ্চলে আধুনিক সাহিত্যে জনপ্রিয়তম ধারা তাই এইটিই।

রোমান্স ক্যাটাগরীর উপন্যাসের মধ্যে যৌনতা, নগ্নতা ইত্যাদিও ব্যবহৃত হতে দেখা যায় যা অনেক সময় পর্ণগ্রাফির পর্যায়ে পরে। তবে এর বিপরীতে ধর্মীয় ভাবধারায় ও রচিত হতে দেখা যায় অনুপ্রেরণামূলক রোম্যান্স উপন্যাস যে সব উপন্যাস বিক্রির দিক থেকে সফল হতে দেখা যায়।

বর্তমান বিশ্ব বাজারে বিদ্যমান অনুপ্রেরণামূলক রোম্যান্স উপন্যাসগুলি খ্রিস্টান ভাবধারা ও প্রণয়সম্পর্কের বিকাশ কেন্দ্রিক কাহিনির সংমিশ্রণ। ২০০৪ সালে, এই উপবর্গে ১৪৭টি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল। এই উপন্যাসে সাধারণত অপ্রয়োজনীয় হিংসাত্মক কার্যকলাপ বা অশ্লীল বাক্যাদি ব্যবহৃত হয় না। কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলির প্রণয় হয় সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। যৌনতার উল্লেখ যদি বা থাকে, তবে তা ঘটে বিবাহের পর এবং তার বিস্তারিত বর্ণনাও বাদ রাখা হয়। অনেক উপন্যাসেই নায়ক বা নায়িকার বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়। যার হলে প্রেমকাহিনিটি পরিণত হয় “নায়ক, নায়িকা ও ঈশ্বরের সহিত তাদের সম্পর্ক নিয়ে গড়ে ওঠা একটি ত্রিভূজ”-এ। ক্ষমা, সততা ও বিশ্বাস এই উপবর্গের সাধারণ কয়েকটি থিম।

স্পষ্টত কাশেম বিন আবুবাকার এর উপন্যাসগুলি অনুপ্রেরণামূলক রোমান্স উপন্যাস। প্রশ্চাত্য জগতে খ্রীষ্টান ভাবধারায় রচিত হয়, আর বাংলাদেশে কাশেম বিন আবুবাকার রচনা করেছেন ইসলামি ভাবধারায় এবং তিনি ব্যাপক পাঠক প্রিয়তা পেয়েছেন।

পৃথিবীব্যাপী ইসলামি ভাবধারার উপন্যাস সাহিত্যের অবস্থান একটু পর্যালোচনা করে নেই।

শাহনেওয়াজ বিপ্লবের লেখা আধুনিক আরবি উপন্যাস ঃ মহাকাব্যের প্রতিচ্ছবি হতে উদ্ধৃতি করছি, একটু সময় দেই লেখাটিতে।

‘উপন্যাস’ নামের আধুনিককালের জনপ্রিয় সাহিত্য আঙ্গিকটি পশ্চিম ও লাতিন আমেরিকার পরম্পরায় চিরঋণী যাঁদের কাছে, তারা হলেন আরব দেশের আরবি ভাষার মানুষ। বসবাস তাঁদের আলজেরিয়া, বাহরাইন, কমেরো, জিবুতি, মিসর, ইরাক, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মৌরিতানিয়া, মরক্কো, ওমান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, সুদান, সোমালিয়া, সিরিয়া, তিউনিসিয়া, আরব আমিরাত ও ইয়েমেন; এক কথায় যেসব দেশ আরব বিশ্ব বা আরবি ভাষাভাষী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। মানব সভ্যতায় পুরো মধ্যযুগ ধরে যখন পদ্য, পয়ার আর কবিতার দোর্দণ্ড প্রতাপ চলেছে, ঠিক তখন স্রোতের বিপরীতে গিয়ে আরবরাই উপহার দিয়েছেন আরব্য উপন্যাস, ‘আলিফ লায়লা ওয়া লায়লা’ বা এক হাজার এক রাতের গল্প, যা পুরো বিশ্বকে তুমুল আলোড়িত করে রেখেছিল কয়েক শতাব্দী ধরে। আরব্য উপন্যাসের বৈচিত্র্যময় সিন্দবাদ, আশ্চর্য প্রদীপের মালিক আলাদীন অথবা আলীবাবা ও ৪০ চোরের বিস্মৃত গল্প-পথ ধরে আজকের আধুনিক সাহিত্যাঙ্গিক গল্প ও উপন্যাসের জন্ম, ব্যবধান শুধু এতটুকুই যে মধ্যযুগের আরব্য উপন্যাস রচিত হয়েছিল দৈত্যদের নিয়ে, পরীদের নিয়ে, রাজা-বাদশা বা অসাধারণদের নিয়ে। আর আধুনিক উপন্যাসে আধিপত্য অতিসাধারণ মানুষের সাবঅলটার্ন মানুষদের নিয়ে। আধুনিক ঔপন্যাসিকরা আবিষ্কার করেন যে মানুষের মধ্যেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি গল্প; তার ঘরে, তার মনে, তার চারদিকে, তাকে ঘিরে আছে গল্প এবং তা শোনার মতো, তা উপন্যাস হয়ে ওঠার মতো।

কাশেম বিন আবুবাকার অনুপ্রেরণামূলক রোমান্স ধারায় ইসলামি ভাবধারায় উপন্যাস লিখে ব্যাপক সফলতা পান।

পুস্তক বিক্রির দিক দিয়ে কাশেম বিন আবুবাকার অত্যন্ত সফল কিন্তু প্রচারনামূলক হওয়ায় তা সাহিত্যের মানদন্ডে উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ। এ ধারার উপন্যাসগুলি সকল সময়ই মূল ধারায় উপহাসিত, নিন্দিত, হাস্যরস সৃষ্টিকারী হয়ে থাকে, আবুবাকার এর ব্যতিক্রম নন। তাই বলে তিনি ব্যর্থ তা বলা যাবে না, তিনি পাঠকের কাছে কিছু ম্যাসেজ পৌছে দিতে চেয়েছেন তা তিনি পৌছে দিতে পেরেছেন এবং ব্যাপকভাবে তা পেরেছেন।

সস্তা ও বাজারি লেখক হওয়া সত্ত্বেও হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসগুলি সকলকে নির্মল আনন্দ দেয় এবং কিছু প্রচার করেন না। তাই আমাদের বিবেচনায় তিনি অনেক বোদ্ধাদের দ্বারা অপন্যাসিক অাখ্যা পেলেও কালের বিচারে হয়ত তিনি টিকে থাকবেন প্রজন্মের পর প্রজন্মের পাঠকদের হৃদয়ে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৫

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: উনি খুশি হয়েছেন। উনার পাঠকরাও ‍খুশি। আমার মাথা ব্যথা নেই।

আপনি আসলে পাকাপোক্ত বিশ্লেষক।

০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ৮:৪৯

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনি আসলে পাকাপোক্ত বিশ্লেষক।



আমার এ লেখাটি আমার কাছে আনন্দদায়ক করে তুলল আপনার এই মন্তব্য। ধ ন্য বা দ।

২| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ৯:০৫

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: আমি কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়েছি।

০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ৯:০৯

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আমার ভাল লাগছে বুঝে যে কেউ একজন ো মনোযগ দিয়ে লেখাটি পড়েছে। আবারও ধন্যবাদ।

৩| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ৯:১৫

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: কৃতজ্ঞতা।

৪| ০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ৯:২৪

নাগরিক কবি বলেছেন: আপমার কথার সাথে আমিও সহমত। :( আমিও কাশেম সাহেবের নাম শুনিনি আগে। হুমায়ূন এর অনেক বই কিনতেই বাজারে গিয়েছি অনেক সময় কিন্তু কাশেম সাহেবের বই আমার চোখে পরেনি। ইদানীং তাকে নিয়ে যেভাবে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে তাহলে'তো ১/২ টা পড়তেই হয়। যদিও অনেক ব্যস্ত থাকি। তবুও কৌতুহল মিটানো উচিত। কী বলেন? ;)

০৪ ঠা মে, ২০১৭ রাত ৯:২৭

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: জি। এত আলোচিত ব্যাক্তির বই পড়ব না তা কি হয়! কিছু অন্তত পড়া উচিত।

৫| ১৭ ই মে, ২০১৭ রাত ৮:১৪

মিঃ আতিক বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণ, ভালো লাগলো।

২৭ শে মে, ২০১৭ সকাল ৯:২৫

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ০৭ ই জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


পাঠককে বুঝে লিখতে হয়; আমাদের গ্রামের বাজারে এখনো প্রেম কাহিনীর ৪ পাতার কবিতার বই বিকরয় হয়; অনেকে কিনেন কিন্তু পড়তে পারেন না, অন্যদের দেন পড়ে শোনানোর জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.