নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফকির আবদুল মালেক

ফকির আবদুল মালেক

আমি এক উদাস ফকির তারা দানা তসবী গুনিপ্রাণীসম দেহ মাঝে মানুষ নামে স্বপ্ন বুনি

ফকির আবদুল মালেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্রশ ফায়ারে গনতন্ত্র, জঙ্গলে যাবার আগে

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:০৫

ক্রস ফায়ার, গুম-অপহরন একিট মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় গুম-অপহরণ রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার নামান্তর। রাষ্ট্রের একজন নাগরিক গুম হয়ে যাবে, খুন হয়ে যাবে, লাশ খুজে পাওয়া যাবে না আর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তার হদিস করতে পারবে না, এটা সভ্য রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় হতে পারে না। এ অবস্থা যখন কোন রাষ্ট্রে প্রতিয়মান হয় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আস্থা হারাতে হয়। কিংম্বা আর একটি বিষয় উঠে আসে তা হলো, রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা তা করা হয়েছে। দুটি অবস্থাই একটি রাষ্ট্রের জন্য চরম ক্ষতিকর। প্রথম অবস্থা হলে বুঝতে হবে, আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছ , আইন শৃঙ্খলা সরকারের নিয়ন্ত্রনে নেই আর দ্বিতীয় অবস্থায় প্রতিয়মান হয় রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ধ্বংসপ্রায়।

এ ধরনের ঘটনা বন্ধ না হলে দেশ জুড়ে বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে। কেউ অপহরন হলে , খুন হলে বা নিখোঁজ হয়ে গেলে তাকে খুজে বের করার দায়িত্ব সরকারের। সরকারের দায়িত্ব খুনীকে বের করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।

মানবাধিকার সংস্থা ও পুলিশের হিসাবে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের প্রথম টার্মের প্রথম সোয়া তিন বছরের মেয়াদে (39 মাস) দেশে তের হাজার একশ উনচল্লিশটি খুনের ঘটনা ঘটে। গড়ে প্রতিদিন এগার জনের বেশি খুন হয়েছে। আলোচিত কয়েকটি খুনের বা গুমের ঘটনার মধ্যে ঢাকা ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র, নাটোরের বড়াইবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ বাবু হত্যাকান্ড, 11 ফেব্রুয়ারী 2012 সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি ও 5 মার্চ 2012 ঢাকায় সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খুনের ঘটনা রয়েছে। এছাড়া 2011 এর 1 নভেম্বর নরসিংদী পৌর মেয়র ও আওয়ামীলীগ নেতা লোকমান হত্যাকান্ড ঘটে। যশোর জেলা বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও ঝিকরগাছা উপজেলা সভাপতি নাজমুল ইসলাম 2011 এর 14 ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে অপহৃত হন। পরদিন গাজীপুরের দক্ষিণে সালনা এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ বছর 23 ফেব্রুয়ারী রাজধানী জুরাইন কমিশনার রোডে সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে কদমতলী শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোহাম্মদউল্লাহ ও তার গাড়ি চালক হারুন-উর রশিদকে। যুবদলের ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি ও 70 নং ওয়ার্ডের কমিশনার হাজী আহমেদ হোসেন, পুরান ঢাকা ঢিশ ব্যবসায়ী আজগরকে হত্যা করে লাশ 15 টুকরা করার ঘটনাও রয়েছে এর মধ্যে।

বর্তমানে পরিস্থিতি আরও মারত্মক আকার ধারণ করেছে। বেড়ে গেছে ধর্ষণের ঘটনা যা প্রায়াসই দেখা যায় সরকারী দলের নানা অঙ্গ সংগঠের প্রভাবশালী নেতা কর্মী দ্বারা সংগঠিত হয়। ভেঙ্গে পড়েছে সমস্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়া, গ্রাম্য সালিশি থেকে নিম্ন আদালতের বিচারব্যবস্থা সরকারী ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী আর টাকা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আছে, চলছে সর্বোচ্চ আদালতের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রন এবং তা চলছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।

একটি দেশে যদি গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে না উঠে অর্থাৎ সরকার যদি ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠে, ভিন্নমতকে সহ্য করতে না পারে, এবং প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় আস্থাহীন হয়ে উঠে তখন গুম বা ক্রশফারের মতো ঘটতে পারে সরকারী পৃষ্টপোষকতায়। এছাড়া জনগন যদি ব্যাপক হারে পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয় তখন এ ধরনের গুমের ঘটনা ঘটে থাকে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ব্যাপকভাবে গুমের ঘটনা ঘটে। এসময় বিখ্যাতদের মধ্যে চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান নিখোঁজ হয়েছিলেন। পার্বত্যাঞ্চলের বিরোধের সময় কল্পনা চাকমা নিখোঁজ হয়েছেন।

গনতান্ত্রিক দেশে গুম-অপহরন নির্যাতন চলতে পারে না। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বলতে আমরা যা বুঝি তা হচ্ছে , নির্বাচন সুষ্ঠ করা। গনতন্ত্রের আর কোন ব্যবহার দেখার সৌভাগ্য হয়নি কখনও। শেখ মুজিবের বাকশাল গঠন করে একদলীয় সরকার গঠনের প্রচেষ্টা, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংঘাতময় সামরিক খুন খারাপি, এরশাদের স্বৈরশাসন আর কারচুপির নির্বাচন, দুইজনের ক্ষমতার পালা বদলের দৃশ্য দেখে আমরা অভ্যস্থ । আমরা অভ্যস্থ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে বিরোধীদলের ইয়েস আন্দোলন আর সরকারীদলের নো আন্দোলন দেখে। ব্যক্তির অধিকার ও মর্যদার স্বীকৃতি এবং তা রক্ষা করা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মৌল ভিত্তি। গনতন্ত্রের এটি অতি এক প্রথমিক পাঠ। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর চর্চা কখনো দেখা যায় নি। ক্ষমতায় গেলে প্রত্যেকটি দলের আচরণ হয়ে পড়ে স্বৈরতান্ত্রিক। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে কোন ধরনের আন্দোলনের ইস্যু হিসাবে সত্যিকারের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা কখনো উচ্চারিত হতে দেখা যায় না। বিরোধী দল ক্ষমতা যাওয়ার জন্য যা যা করনীয় তা করতে দেখা যায়, তাদের আন্দোলনগুলি পরিচালিত হয় ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া হিসাবে।

রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যক্তির অধিকার ও মর্যদার স্বীকৃতি ও রক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লড়াই হতে হবে গণতান্ত্রিক জনগনের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি। আমরা এখন যে অবস্থায় বসবাস করছি এখানে আমরা রাষ্ট্রের দাস হিসাবে আছি, আমরা কিছুতেই রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে উঠতে পারিনি। সরকারী দল ও বিরোধীদল পেশী শক্তিবহুল রাজনৈতিক সংগঠন পরিচালনা করে । নাগরিকদের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালিত হয় না। পরিচালিত হয় কতিপয় মস্তান বা মাফিয়া ধরনের সংগঠনের হুকুমে। এই অবস্থায় রাষ্ট্রের গনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আগ্রহী মানুষ হিসাবে আমরাদের সামনে দুটি পথ খোলা থাকে। হয় আমাদের রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা পরিহার করে জঙ্গলে গিয়ে সাধু সন্নাসীর জীবন বেছে নিতে পারি কিংবা এই দুইটি অসুস্থ ধারার রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারি । একটি অন্দোলনের সূচনা করতে পারি যা আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্টার দিকে আমাদের ধাবিত করবে।

যারা রাজনৈতিক চিন্তা চেতনা ছেড়ে দিয়ে সাধু সন্নাসীর জীবন যাপন করতে পারে তারা হয়ত অসাধারণ মানুষ হতে পারে কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আমি তা পারি না। আর আমার এতটুকু সামর্থ্যও নেই একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করার। কিন্তু আশার বিষয় এই যে এই মূহুর্তে আমি একা নই। আমার মতো হাজার হাজার মানুষ আজ জেগে উঠছে।

এমনি এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমি আশা করছি কোন একদিন বাংলাদেশে শুরু হবে সত্যিকারের এক গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলন, সেই আন্দোলনে রেখে গেলাম আমার নিশর্ত সমর্থন । যদিও আমার এই সমর্থন কেবল একজন সাধারণ নাগরিকের যাতে বিশাল ক্ষমতাধর সরকার বা বিরোধীদলের কোন ক্ষতি লাভ নেই তবু জঙ্গলে গিয়ে সাধু সন্নাসীর জীবন বেছে নেয়ার আগে নিজের বিবেকের কাছে আমার এক অক্ষম প্রতিবাদ আর নিস্ফল আশাবাদ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১০:৫৭

নিরাপদ দেশ চাই বলেছেন: ''গুম'' শব্দটা একটা নিরব ত্রাসের মত গ্রাস করেছে পুরো দেশকে। রাজণিতিবিদদের কথা তাও গনমাধ্যধ্যমে ও সোসাল মিডিয়ায় বারবার প্রচার করছে তাদের সমর্থকেরা। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হচ্ছে অরাজনীতিদ গুম। দুইদিন আগেও কেবল বাংলা ট্রিবিয়নে এসেছে আইএফাইসি ব্যাংকের এক কর্মকর্তার অপহরনের খবর।। ব্যংকের সামনেই এক হোটেলে অপহরঙ্কারীরা খাওয়া দাওয়া সেরে প্রকাশ্যে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গেছে সেই কর্মকর্তাকে!! আশ্চর্যজনকভাবে আর কোন গন্মাধ্যমে এই খবর আসেনি এবং এর পরবর্তীতে তার ভাগ্যে কি ঘটেছে তাও অজানা। এছাড়া গত কিছুদিন আগে প্রথম আলোতে এসেছে এক ব্যাবসায়ীকে বিমানবন্দর রোডে গাড়ি থামিয়ে তুলে নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে কি ঘটেছে সেই ববসায়ীর কপালে সে খবরও আর আসেনি গন্মাধ্যমে। আজকে এক অনলাইন নিউজ পোর্টালে খবর বেড়িয়েছে যে ''ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশে বেলারুশের অনারারি কনসাল অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। রোববার বিকালে তার ভাগনে কল্লোল রায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
বাংলাদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান আরএমএম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হলেন অনিরুদ্ধ কুমার রায়।
পরিবারের একটি সূত্র জানায়, রোববার বিকালে গুলশান-১-এ নিজের গাড়িতে ওঠার সময় ৭-৮ জন লোক এসে নিজেদের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে অনিরুদ্ধ কুমার রায়কে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।''আশ্চর্যজনকভাবেমে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া নিরব!!

মানুষের এখন যৌথভাবে গুম খুনের বিরুদ্ধে সরব হওয়া প্রয়োজন। যেহেতু কোন বিচার আচার নেই তাই এই ঘটনা যে কোন মুহুর্তে যে কারো জীবনে ঘটতে পারে। একজন বিচারপতি জীবনের পরোয়া না করে দেখিয়ে দিয়েছে বিচার ব্যবস্থা ধংসের নাটের গুরু কারা। কিন্তু তার একার পক্ষে সম্ভব না এই ভয়ঙ্কর শৃংখল থেকে জাতিকে মুক্ত করা। তরুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে, সোচ্চার হতে হবে আপন নিরাপত্তার প্রশ্নে।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: আপনার মন্তব্য আমার পোষ্টের অপূর্ণতাগুলি পূর্ণতা দিল। অনেক ধন্যবাদ।

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:২৮

বিজন রয় বলেছেন: এদেশের মতো দেশে গণতন্ত্র চলে না।

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪০

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: চেষ্টাটাতো থাকতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.