নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফকির আবদুল মালেক

ফকির আবদুল মালেক

আমি এক উদাস ফকির তারা দানা তসবী গুনিপ্রাণীসম দেহ মাঝে মানুষ নামে স্বপ্ন বুনি

ফকির আবদুল মালেক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মীয় কুসংস্কসরে ভেক্সিন দিন

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০১

আপনার মনে আছে কি ‘The Croods’ নামে একটা অ্যানিমেটেড মুভি বের হয়েছিল। মুভিটা অনেকেই দেখেছেন। Croods রা মূলত গুহামানব। সারা পৃথিবী থেকে তারা বিচ্ছিন্ন। গুহাতেই তারা তাদের জীবনের প্রায় পুরোটাই কাটিয়ে দেয়। প্রকৃতির নানা প্রতিকূলতার সাথে তারা দিন রাত যুদ্ধ করে টিকে থাকার জন্যে। প্রকৃতির ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা তারা জানে না। তাই তারা ঘটনাগুলোকে নিজের মত করে ব্যাখ্যা করে। আর তৈরি হয় নান মিথ।



মানুষের ইতিহাসও অনেকটা Croods দের মত। মানুষের কাছে যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগে নি। তখন তারা প্রকৃতির কাছে এমনটাই অসহায় ছিল। আর মানুষের চরম শত্রু ছিল নানা প্রাণঘাতী রোগ। এমন একটি রোগ হলো গুটি বসন্ত বা Smallpox। যে রোগ ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর কারণ। আঠারো শতকের শেষ দিকে প্রায় চার লক্ষ ইউরোপিয়ানদের মৃত্যুর কারণ ছিল এই গুটি বসন্ত। আর যারা মৃত্যু থেকে রেহাই পেত তাদের ভাগ্যে জুটতো অন্ধত্বসহ নানা ধরণের পঙ্গুত্ব।

চীনের মানুষের ধারনা:

সেই সময়ে মানুষ মনে করতে থাকে গুটিবসন্ত দেব-দেবীর অসন্তুষ্টির কারণ। তাই তারা দেবদেবীর সন্তুষ্টির জন্যে পূজা করা শুরু করে। চীনারা তো গুটিবসন্তের দেবীও বানিয়ে ফেলেছিল। তারা দেবীর নাম দিল ‘T’ou- Shen Niang-Niang’।


ভারতীয় শীতলা দেবী:


আর এক্ষেত্রে ভারতীয়দের দেবী ছিল ‘শীতলা’। ‘শীতলা’ একই সাথে মঙ্গল ও অমঙ্গলের দেবী। তারা মনে করত শীতলা দেবীর ডান হাতে থাকে ঝাড়ু যা দিয়ে তিনি রোগ ছড়িয়ে দেন আর তার বাম হাতে থাকে ঠাণ্ডা পানির পাত্র যা দিয়ে তিনি রোগ সারিয়ে দেন। দেবীর সন্তুষ্টির জন্যে বাড়ির মহিলারা ঘরের চালার উপর ঠাণ্ডা খাবার ও পানি রেখে দিত।

পশ্চিম আফ্রিকা:

পশ্চিম আফ্রিকার নাইজেরিয়ার ইউরোবা জনগোষ্ঠীর ধর্মের নাম ‘ইউরোবা । এই ধর্মের লোকেরা মনে করতো ‘সপোনা’ দেবতার অসন্তুষ্টির কারণে তাদের গুটিবসন্ত হয়। সমাজে সপোনা নামটি উচ্চারণ করাও ছিল কঠোর নিষেধ।

যখন কুসংস্কার, দুর্নীতি আর ধর্মের অপব্যাখ্যার অন্ধকারে নিমজ্জিত, তখন বিজ্ঞানীরা হয়ে উঠেন আলোর পথের যাত্রী হয়ে। তারা আবিস্কার করল রোগ সৃষ্টির কারণ। আবিস্কার করলো রোগ প্রতিরোধের উপায় টীকা বা Vaccine.

সর্বপ্রথম ১৭৯৬ সালে ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেন এডওয়ার্ড জেনার।




তিনি এক গোয়ালিনীর কাছ থেকে জানতে পারেন তার কখনও গুটিবসন্ত হয় নি কারণ তার আগে গোবসন্ত হয়েছিল। জেনার গোয়ালিনীর এই তথ্যকে তার পরীক্ষায় ব্যবহার করেন। জেনার আট বছর বয়সী এক ছেলের বাহুতে গোবসন্তের ফুস্কুড়ি প্রবেশ করান। ফলে ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর ছেলেটি আর কখনও গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয় নি। কিন্তু এটি কিভাবে কাজ করেছে এডওয়ার্ড তা জেনার জানতেন না।


পরবর্তীতে এ পাস্তুর বের করেন কিভাবে এ পদ্ধতিটি কাজ করে। পাস্তুর এর নাম দেন ভ্যাক্সিন। ভ্যাক্সিন নামটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘Vacca” যার মানে গরু। জেনারের কাজের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পাস্তুর এই নামটি রাখেন। পাস্তুর রেবিস ও এন্থ্রাক্সের ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেন। ভ্যাক্সিন আবিস্কারের ক্ষেত্রে অন্যতম একজন ব্যক্তিত্ব হলেন Maurice Hilleman। তিনি হাম, মাম্পস, হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, জলবসন্ত, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া ও ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাক্সিন আবিস্কার করেন।


ভ্যাক্সিনের বিপরীতে ধর্মীয় কুসংস্কার

জেনার গুটিবসন্তের ভ্যাক্সিন আবিস্কারের আগে Edmund Massey নামের একজন ইংরেজ ধর্মতত্ত্ববিদ বলেন, ‘ঈশর রোগ দেন পাপীদের শাস্তি দেয়ার জন্যে। তাই ভ্যাক্সিন দিয়ে রোগ প্রতিরোধ শয়তানের কাজ’ একইভাবে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালেবানরা ফতোয়া দিয়েছে, ভ্যাক্সিন নেয়া মানে আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া। বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে নাইজেরিয়ার কিছু মুসলিম ধর্মীয় নেতা তাদের অনুসারীদের শিশুদের পোলিও টীকা খাওয়াতে নিষেধ করেন। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে নাইজেরিয়াসহ পার্শ্ববর্তী দেশে পোলিও ছড়িয়ে পড়ে।


আবার কিছু খ্রিষ্টান বিরোধীরা বলতেন, ‘ঈশ্বর ঠিক করেন কে গুটিবসন্তে মারা যাবে। তাই ভ্যাক্সিন দেয়া ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া। যা পাপের শামিল’ আরেক গোষ্ঠী হলো ইসরাইলের Haredi Burqa Sect সম্প্রদ্বায়। তারা কোন চিকিৎসাতেই বিশ্বাস করে না। ভ্যাক্সিন তো দূরের কথা!
এগুলো শোনার পর মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা এত পথ অতিক্রম করার পর, এত জ্ঞানের আলো জ্বালানোর পর কি সেই Croods দের মত মিথের জগতেই পরে আছি?!


বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের অবদান


ইসলাম এবং বিজ্ঞান বলতে বুঝানো হয় ইসলাম ধর্ম ও তার অনুগামী মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বিজ্ঞানের সম্পর্ককে।

মুসলিম পণ্ডিতেরা কোরআনে বর্ণিত বিষয়গুলির সাথে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি মতবাদ তৈরি করেছেন । কোরআন মুসলমানদের প্রকৃতি অধ্যয়নের এবং সত্যের তদন্ত করার জন্য উত্সাহ দেয়। মুসলিমরা প্রায়ই সূরা আল বাঁকারা থেকে ২৩৫ আয়াত উদ্ধৃত করেন - "তিনি তোমাকে তাই শিখিয়েছেন যা তুমি জানতে না ।" তাদের মতামত এটাই সমর্থন করে যে কোরআন নতুন জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহ প্রদান করে । কিছু মুসলিম লেখকদের মতে, বিজ্ঞান অধ্যয়ন তওহীদ থেকে উৎপন্ন হয়েছে ।

মধ্যযুগীয় মুসলিম সভ্যতার বিজ্ঞানীরা (যেমন ইবনে আল-হায়থাম) আধুনিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখেছিলেন। এই সত্য আজ মুসলিম বিশ্বে পালিত হয় । একই সময়ে, মুসলিম বিশ্বের অনেক অংশে বৈজ্ঞানিক সাক্ষরতার অভাব সম্পর্কে উদ্বেগ উত্থাপিত হয়েছে।

কিছু মুসলিম লেখক দাবি করেছেন যে কোরআন বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিবৃতি তৈরি করেছে যা পরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল । যাইহোক, সবাই এর সাথে একমত না, এমনকি কিছু মুসলিম এর নিন্দা করেছেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের অবদান হ্রাস পেতে থাকে তাছাড়া বিজ্ঞানের ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রগুলি, গবেষণার এবং বিকাশের বার্ষিক ব্যয় এবং গবেষণা বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে বৈজ্ঞানিক উত্পাদনে মুসলিমদের ভূমিকা অপ্রতুল ও ক্ষুদ্র পরিমাণে প্রকাশিত হয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে সমসাময়িক মুসলিম বিশ্ব বৈজ্ঞানিক নিরক্ষরতা ভোগ করবে। কিছু মুসলমানের মধ্যে বিজ্ঞান বিষয়ে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন উত্তর নাইজেরিয়া থেকে পোলিও টিকা প্রতিরোধের বিষয়গুলিতে তা প্রতিফলিত হয়েছিল। কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে "পশ্চিমে একটি কাল্পনিক জিনিস তৈরি করা হয়েছে বা এটি আমাদের এই মন্দ এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাধ্য করে।" এছাড়াও পাকিস্তানে স্নাতকোত্তর পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্ররা ভূমিকম্পের জন্য "পাপ, নৈতিক শিথিলতা, ইসলামী সত্য পথ থেকে বিচ্যুতি" কে দোষারোপ করা হয়েছে। "কেবলমাত্র কয়েকজন ভয়যুক্ত কণ্ঠে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করে যে ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক বিষয় যা মানুষের কার্যকলাপ দ্বারা প্রভাবিত হয়না।"


ভ্যাক্সিন স্বর্গীয় আশীর্বাদ



বিভিন্ন ধর্মে স্বর্গকে বর্ণনা করা হয়েছে রোগজরা মুক্ত জায়গা হিসেবে। আর ভ্যাক্সিন এই ধুলোমাখা পৃথিবীতে কাজ করছে রোগ নির্মূলের লক্ষ্যে। সেক্ষেত্রে ভ্যাক্সিনকে স্বর্গীয় আশীর্বাদ বললে মনে হয় না খুব একটা দোষ হবে!

মানুষের চিন্তা চেতনা বিজ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত হলে সমস্ত কুসংস্কার, ধর্মীয় গোরামী দুর হয়ে যায়। বিজ্ঞান চর্চা হয়ে উঠতে পারে সামাজিক কুসংস্কসরের ভেক্সিন।

ছবি ও তথ্যসূত্রঃ

*উইকিপিডিয়া
*লেখার কিছু অংশ হুবুহু উইকিপিডিয়া থেকে অনুবাদ করা হয়েছে
https://bn.m.wikipedia.org/wiki/ইসলাম_ও_বিজ্ঞান.

http://fcbiotechltd.com/biogeny/

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৪৭

রুফিয়াস মিলেনিয়াম বলেছেন: মেডিসিনের ইতিহাস এবং ধর্মের কন্ট্রিবিউশন নিয়ে আমার পড়ালেখার বিষয় ছিল। সেখানে দেখেছিলাম রয়াল সোসাইটি অফ মেডিসিন কিভাবে একজন গরীব স্কুল শিক্ষকের আবিষ্কার করা ভ্যাক্সিন বন্ধ করানোর জন্য, নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার জন্য, পত্রিকায় কার্টুন ছাপিয়েছিল। মেডিসিনের ইতিহাস এবং ধর্মের কন্ট্রিবিউশন নিয়ে আমার পড়ালেখার বিষয় ছিল। সেখানে দেখেছিলাম রয়াল সোসাইটি অফ মেডিসিন কিভাবে একজন গরীব স্কুল শিক্ষকের আবিষ্কার করা ভ্যাক্সিন বন্ধ করানোর জন্য, নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার জন্য, পত্রিকায় কার্টুন ছাপিয়েছিল।

আবার মধ্যযুগের কথা মনে করলে দেখা যাবে ইউরোপিয়ান চার্চ গুলো কিভাবে মেডিসিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। আমার মতে ধর্মীয় কুসংস্কারগুলো ন্যাচারালি ধর্ম থেকে আসেনি। এক ধর্মযাজকেরা রাজা, রাজ্য, আইন, সমাজ এসকল নিজেদের কন্ট্রোলে রাখার জন্য ধর্মীও বাণীর খামখেয়ালি ইন্টারপ্রিটেশন করেছে। আর জ্ঞানই যেহেতু শক্তি, তাই তারা মানুষের কাছে জ্ঞান না পৌঁছানোর ব্যাবস্থা করেছে। যেই জ্ঞান তাদের অধীনে নেই, সেই জ্ঞান ব্ল্যাস্ফেমি। ধর্মীয় কুসংস্কার আর রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা অনেকটা একই ভাবে কাজ করেছে।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৪

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: ধর্মের আবরনে অনেক কুসংস্কার দেখা যায়। মাজারে মানত করা, পীর ফকিরের তাবিজ ইত্যাকার কুসংস্কারগুলো ধর্মের আবরনে হয়ে থাকে। ইসলামে ভাগ্য ব্যাখ্যা নিয়ে অনেক ধরনের মতবাদ, কুসংস্কার জন্ম হতে দেখা যায়।

সমাজপতি থেকে রাষ্টীয় ক্ষমতাবানরা নিজেদের প্রভাব বলয় তৈরি করার জন্য ও ধরে রাখার জন্য মানুসকে অন্ধলকারে রাখতে চায়, আপনি সঠিক কথাই বলেছেন। ধন্যবাদ।

২| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬

রসায়ন বলেছেন: অনেক দারুন একটি পোস্ট পড়লাম । প্লাস

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৬

ফকির আবদুল মালেক বলেছেন: অনেক দারুন একটা ধন্যবাদের আপনি পাওনাদার। ধন্যবাদ।

৩| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:২৫

নাঈমুর রহমান আকাশ বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.